সাজিদ একসময় গল্প উপন্যাস লিখত এখন লেখে না । কিভাবে লিখবে ! ও এত কষ্ট করে লিখবে আর মানুষ পড়ে বলবে সুন্দর হয়েছে তবে পড়ে মনে হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা । কি অবাক কথা !!! এত কষ্ট করে লিখে সব প্রশংসা হুমায়ুন আহমেদ এর !!!! রাগ করে লেখাই ছেড়ে দিয়েছে । রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কবিরা নাকি এমন সমস্যায় পড়েছিলেন । তাঁরা যা লিখতেন তা নাকি রবী ঠাকুরের মত হয়ে যেত । এর নাম ছিল রবীন্দ্র বলয় । সাজিদ এখন হূমায়ুন বলয়ে আবদ্ধ ।
আজ বছরের নতুন দিন । সাজিদ নতুন বছরে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নতুন কোন কাজ করে । যেমন আগের বছর বাসে হকারী করেছিল । এবার কি করবে সেটাই ভাবছে । অনেক ভেবে পাওয়া গেছে । এই বার সে ভিক্ষা করবে । কাজটা বেশ সহজ । কম পরিশ্রম আবার কপাল ভাল হলে ইনকামও খারাপ হবে না ।
সাজিদ একটা পুরানো প্যান্ট ছেড়া জামা আর একটা থালা নিয়ে ফার্মগেট ফুট ফ্লাই ওভারের এক প্রান্তে বসে পড়ল । এতদিন ব্রিজের কোনায় একজন কানা বসত , আজ দেখি সেই কানাটা ওর দিকেই আসছে ।
কি ব্যাপার ভাই ! এই লাইনে কতদিন ? তাছাড়া এই ব্রিজে আমরা ছাড়া কেউ ভিক্ষা করতে পারবে না । ভাইয়ের নির্দেশ আছে ।
নে বাবা ভিক্ষা করেও শান্তি নেই । এখানে ও সিন্ডিকেট !!!!
ইয়ে আপনি চোখে দেখেন ?
হ্যাঁ না দেখার কি আছে ? ভালো মানুষকে কেউ ভিক্ষা দেয় না । তাই অন্ধ সেজে ভিক্ষা করতে হয় ।
অহ । আসলে ভাই আমি খুব গরিব বাবা নেই মা অসুস্থ , বাড়িতে খাবার নেই মায়ের চিকিৎসার টাকা নেই তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে এসেছি ।
বুঝছি ঠিক আছে তুই আজ আমার জায়গায় বস । আমি আজ আমি একটু ব্যাস্ত আছি ।পরে ভাইয়ের সাথে কথা বলে তোর একটা ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি । কিন্তু ইনকাম যা হবে অর্ধেক অর্ধেক ঠিক আছে ?
হু
যাক বাবা বাঁচা গেল ।
রাখ তোর ফিফটি ফিউটি ভাগ । কষ্ট করে ভিক্ষা করে ওকে দিতে হবে । সখ কত !!!
সাজিদ প্রথমে যা ভেবেছিল ভিক্ষা করা সহজ আসলে কাজটা ততটা সহজ না । রোদের মধ্যে এই সব ছেঁড়া জামা আর থালা নিয়ে বসে থাকলেই হয় না আবার অভিনয় ও করতে হয় । আজকাল মানুষের মন ও সহজে গলেনা । আরে বাবা ভিখারী এত কষ্ট করে ভিক্ষা করে এদের দু এক টাকা দিলে কি কমে যাবে !!
বিকাল পাঁচটা । টাকা পয়সা ভালোই ইনকাম হয়েছে । এখন ঐ বাটপার আসার আগে এখান থেকে কেটে পড়তে পারলেই হয় । টাকা পয়সা বাড়ি গিয়ে হিসাব করা যাবে ।
এই রিক্সা যাবে ?
চলেন ।
সাজিদ এতক্ষণ খেয়াল করেনি এখন দেখল । রিক্সা চালকের একটা পা নেই , সেই ভাবেই রিক্সা চালাচ্ছেন । অবশ্য মটর চালিত রিক্সা ।
চাচা আপনার একটা পা নেই ?
না গো বাজান । গত বছর রডের কারখানায় কাজ করার সময় এই পা টা মেশিনে আঘাত লাগছিলো । ডাক্তার বলেছেন পা টা না কাটলে রোগী বাঁচানো সম্ভব নয় । এর পর চাকরী ও গেল আবার অনেক টাকাও খরচ হল ।
আপনার ছেলে মেয়ে নেই ?
তাছাড়া এই বয়সে !
ছিল এখন নেই । আমার কোন সন্তান নেই । যারা মা বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পায় তাঁদেরকে আমিও সন্তান মানি না । ওরা এখন বড় অফিসার হয়েগেছে তাই এই গরিব মা বাবাকে চেনে না ।
আপনার চাচী অসুস্থ আমি কাজ না করলে কে খাওয়াবে ?
চাচা আমি আপনার ছেলের বয়সী একটা কথা বলব রাখবেন ?
জ্বী বলেন ।
আপনি এই টাকা কয়টা রাখুন ।
লাগবে না বাজান আপনি যে আমারে সাহায্য করতে চাইছেন এতেই আমি খুঁশি । । যতদিন কাজ করে খাওয়ার মত সামর্থ্য আছে ততদিন কারও সাহায্য নিয়ে বাঁচাতে চাই না । ওটা আপনার কাছেই রাখুন ।
সাজিদ রিক্সা থেকে নেমে দ্রুত বাসার দিকে রওনা দিল ।
অনেকদিন পর আজ আবার লিখতে মন চাইছে ।
১৮টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
সাজিদ লিখুক নিয়মিত।ভালো লেগেছে যাপিত জীবনের গল্প।
সঞ্জয় কুমার
অবশ্যই লিখবে ধন্যবাদ আপু ।
শুন্য শুন্যালয়
এরকম ব্যক্তিত্ববান মানুষ শ্রদ্ধা জাগায়। লেখা ভালো হয়েছে বেশ। বিভাগের ঘরে এতোকিছু কেনো ভাইয়া?
সঞ্জয় কুমার
হুম । । এমন মানুষ পাওয়া ই এখন কষ্টকর । ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
লীলাবতী
ভালো লেগেছে লেখা।
সঞ্জয় কুমার
অনেক ধন্যবাদ দিদি ।
অরণ্য
আপনার লেখাটি থেকে একটা লাইন নিলাম নিজের জন্য – “আপনার চাচী অসুস্থ আমি কাজ না করলে কে খাওয়াবে ?” ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
তাহলে কি আপনার স্ত্রী অসুস্থ ?!!! উনার জন্য শুভ কামনা ।
ব্লগার সজীব
আপনার লেখা যতটা মনে করতে পারছি, এটিই আপনার সেরা লেখা ভাবছি আমি। (y)
সঞ্জয় কুমার
অনেক ধন্যবাদ সজিব ভাইয়া ।
স্বপ্ন
ভালো লিখেছেন ভাইয়া
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা ।
মরুভূমির জলদস্যু
আমার পরিচিত একজন আছে, ও কিছু লিখে দিলে আপনি ধরতেই পারবেন না যে এটা হুমায়ূন ছাড়া অন্য কেউ লিখেছে।
সঞ্জয় কুমার
উনি তো হূমায়ুন বলয়ে পড়ে গেছেন । ধন্যবাদ ভাল থাকবেন ।
জিসান শা ইকরাম
লেখাটি আগেই পড়েছি।
বেশ ভালো লেখা।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ আপনাকে । ভাল থাকবেন ।
নুসরাত মৌরিন
খুব ভাল একটি লেখা।
জীবনবোধ আর জীবন নিয়ে উপলব্ধি করতে শেখায় এমন লেখা।
ভাল লেগেছে অনেক…। (y)
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ আপু । ভাল থাকবেন ।