-এই দেশটা যা আসলে কার কিছু বুঝি না ভাই
-কেন?
-এই দেখেন না, একটা রোডের নাম রবীন্দ্র সরনি, আরেকটার নাম জসীম উদ্দীন। সব নাস্তিকদের নাম। একটা পরহেজগার মানূষের নামে রাস্তা নাই এই এলাকায়।
– রবিন্দ্রনাথ এর ব্যাপারটা নাহয় বুঝলাম, জসীম উদ্দীন কে নাস্তিক বলতেছেন কেন?
-এই কবিতা টবিতা লেখতো, এরা কি আর ভাল হয় নাকি?
-হু, উনি আবার মওদুদ আহমেদের শ্বশুর।
-ও তাই নাকি? তাহলে তো খুবই ভাল লোক ছিলেন। উনার মেয়েকে একজন ধার্মিক লোকের কাছে বিয়ে দিয়েছেন।
আড়াই মিনিট পর
-এহ! দেশটা ধ্বংস হইতে আর বাকী নাই। একজন মহিলার ছবি দিছে রাস্তার মাঝখানে। পর্দা পুশিদা উঠে গেল দেশ থেকে…
– ভাই কি বোরখা পড়া পছন্দ করেন।
-অবশ্যই।
-কেমন বোরখা? শিফনের?
– 😮
মিনিট পাচেক পর
– এই বাসে নাকি কি জানি আছে?
-ওয়াই ফাই এর কথা বলছেন?
-হ হইতারে।
-হ্যা। ইউজ করেন। সবাই ই ত করছে।
-একটূ আমারে কানেকশন লাগায় দেন।
ফেসবুক লগ ইন করার চল্লিশ সেকেন্ড পর
-আমিও নাগরিকত্ব বাতিল চাই। সংবিধানে বলে বিসমিল্লাহ বলা নিষেধ করছে?
-কই না তো। কই পাইলেন?
-এই যে দেখেন। বাঁশের কেল্লায় দিছে এই মাত্র খবর আসছে।
-সংবিধান তো এইমাত্র পরিবর্তন হয় নাই।
-যাই হোক। এই মাত্র খবর আসছে। দেখছেন? এই যে দেখেন। আগেই বলছিলাম । এই দেশ মুরতাদের দেশ হইতেছে।
-নাগরিকত্ব বাতিল হলে তো ভোট দিতে পারবেন না। আরো অনেক সমস্যা, কই যাবেন?
-আরে ভাই পনের বছর বয়স থেকে ভোট দিতাছি। নাগরিকত্ব দিয়া কি করমু?
চার মিনিট পর
-এই ফ্লাই ওভার আসলে কিছু না বুঝছেন? এইগুলা বানানোর চে অনেক জরুরী কাজ আছে। এসব করে খালি মানূষের চোখ অন্যদিকে সরাইতাছে সরকার।
-কিরকম?
-এই যে হুজুরদেরকে মারতেছে। আর এদিকে ফ্লাই ওভার বানাইয়া মানূষকে ধোঁকা দিতেছে।
দুই মিনিট পর
-কি গরম পড়ছে দেখছেন এইবার? হুজুরদের সাথে খারাপ আচরনের ফল। সরকার পাপ করতেছে আর ভুগতেছে সাধারন মানুষ।
-জনসংখ্যা খুব বেশি আসলে। বাস গুলাতে দাড়ানোর ও জায়গা নাই। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম।
-জনসংখ্যা আল্লাহর দান। কিন্তু গরম পড়তেছে অন্য কারনে…
পাচ মিনিট পর
-ও কি, এই ফ্লাই ওভার কাপে কেন? আগেই কইছিলাম, নাস্তিক সরকারের বানানো ফ্লাই ওভার। ভাইঙ্গা পড়বে একদিন। ও আল্লাহ বাচাও
-প্লিজ ডোন্ট প্যানিক। কিছু হয় নি। আর এইটা ত এই সরকারের আমলে না। মহাখালী ফ্লাই ওভার মে বি বিএনপি সরকার এর আমলে হয়েছিল
-অ, তাইলে মনে হয় ট্রেইন যাইতাছে নিচে।
তিন মিনিট পর
-একজন মানূষের জন্য এত বড় একটা জায়গা। এইটা খুব অবিচার। এই গরিব দেশে একজন মানুষ এত জায়গা নিয়া অফিস করার কি দরকার?
-এখানে প্রধানমন্ত্রী একা অফিস করেন না তো আরো অনেক লোক এর অফিস এটা। মূল পদটা প্রধানমন্ত্রীর।
-তার পরেও …
-আর অন্যদল সরকারে আসলে তো সেই দলের প্রধানমন্ত্রী হবেন
-নাহ, সেই আশা আর নাই। বাশখালী তো
-ওটা বাকশালী হবে
-যাই হোক।
-বাকশাল কি জানেন তো।
-হ্যা। একটা নদীর নাম। গোপালগঞ্জের নদী।
-আরে না ভাই, বাকশাল হল কৃষক- শ্রমিক লীগের সংক্ষেপ
-আইচ্ছা রাখেন, আমি নামব সামনে। কথা শেষ হয় না ভাই, তার আগেই চইলা আসি হে হে হে।
-ও আচ্ছা।
-এই যে সামনে প্রথম আলোর অফিস। অইখানে চাকরি করি। আমি ফটূশপ এক্সপার্ট।
-ও তাই নাকি? আপনি আর্টিস্ট?
-না না। নাউজুবিল্লাহ। আমি খালি এডিটিং করি। ধরেন একটু কোথাও লাল রঙ টা গাঢ় করা দরকার, নায়িকার বুকের উপরে ঝাপসা করা দরকার- এইসব।
-ও আচ্ছা।
-বাঁশের কেল্লায় লাইক দিয়েন। আমার বানানো ফটূ দেখবেন।
-জ্বি আচ্ছা।
(কাল্পনিক)
১৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আপনি বেশ মজা করে লেখেন ।
সিনথিয়া খোন্দকার
ধন্যবাদ ভালো লাগার জন্য।
ব্লগার সজীব
অসাধারন লেখা । এত দীর্ঘ আলাপ এ প্রসঙ্গ ধরে রাখা কস্টকর । বেশ গুছিয়ে এবং ভালো ভাবে উপস্থাপন করেছেন আপনি । বাকশাল গোপালগঞ্জের একটা নদী :D) :D) হাসতে হাসতে গড়াগড়ি আপু ।
সিনথিয়া খোন্দকার
:p
অপরাজিতা সারাহ
দারুন লিখেছেন।শেষের অংশ তো এপিক! হা হা প গে :D) :D)
সিনথিয়া খোন্দকার
🙂
নীল রঙ
হা হা হা হা হা হা। \|/
সিনথিয়া খোন্দকার
😀
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার কথোপকথন ।
লীগের সব খারাপ , জামাত বিএনপির সব ভালো 🙂
বাশেরকেল্লা এদের কাছে হাদিসের চেয়ে বড় ।
এক্কেরে প্রথম আলোতে নামাইয়া দিলেন ? 🙂
ফান করে এমন বাস্তবধর্মি লেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে । -{@
সিনথিয়া খোন্দকার
অনেক ধন্যবাদ। ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগছে। 🙂
প্রজন্ম ৭১
অনেক দিন পরে মনের মত একটি লেখা পড়লাম । আপনার লেখার হাত খুবই ভালো (y) , শক্তিশালী ।
এমন লেখা আরো চাই । -{@
শুন্য শুন্যালয়
আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন আপু?
দারুণ দারুণ..বাঁশের কেল্লাদের এমন করে নিয়মিত বাঁশ দেয়া চাই. 😀
প্রহেলিকা
ভাল অনেক ভালো লাগলো কথোপকথন। (y)
আগুন রঙের শিমুল
তুমি নিয়মিত লেখনা ক্যান ;?
ব্লগ সঞ্চালক
আগুন রঙের শিমুল ভাই , এই মন্তব্যের কথা বলেছেন ?