বিকেলে বই হাতে নিম গাছের নিচে পাতানো টংয়ের উপর যখন বসতাম তখন প্রায় দেখতাম হালকা পাতলা গড়নের মাঝারি সাইজের একটা শ্যামলা ছেলে মাঠের শেষ প্রান্তে রাখা গাছের গুঁড়ির উপর বসতো। প্রায় নয় রোজ বসতো। হাতে থাকতো জলন্ত সিগারেট।  সিগারেটে টানের পর টান দিয়ে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করতো তার চারপাশ। কয়েক ফুট দূরত্বে থেকে আমার সামনাসামনি বসতো। ব্যাপারটা দৃষ্টিগোচর হলেও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। একে তো হ্যাংলা পাতলা, তার উপর সিগারেট খোর। জাস্ট অসহ্য

প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত মনে গজগজ করে বলতাম সারা বাজার জুড়ে কি আর কোথাও সিগারেট খাওয়ার জায়গা নেই? কেনো যে আমার চোখের সামনে এসে সিগারেট খায় লোকজন বুঝে আসে না? অদ্ভুত তো কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এই দিকে! যেনো জন্মেও কোনো মেয়ে মানুষ দেখেনি।

ইদানিং বাড়ির ফোনে আননোন নাম্বার থেকে প্রায়ই কল আসতো। টুকটাক কথাও হতো। তবে সিরিয়াল কিছু নয়। দু এক মিনিট কথা হতো। কে আপনি, কোথায় ফোন করেছেন এবং কাকে চাই? বলেই কথা শেষ হতো

স্কুল থেকে ফিরার পথে একদিন লক্ষ্য করলাম কেউ একজন পিছু পিছু আসছে। আমি বাড়িতে ঢুকতেই দেখলাম পিছু নেওয়া ছেলেটি সেই গাছের গুঁড়ির উপর বসলো। সেদিন মনের মধ্যে খচ করে উঠলো। ছেলেটি নেহাতই সিগারেট খাবে বলে এখানে এসে বসে না। অন্য কোনো মতলব আছে। কোনো রহস্য তো আছেই, এটা উদঘাটন করতেই হবে। ব্যস কোমরে ওড়না বেঁধে লেগে পড়লাম রহস্য উদঘাটনে। হঠাৎ ই মনে হলো এই আননোন ফোন কলের মালিক ঐ সিগারেট খোরটা নয় তো! দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।

সেদিন আর বই হাতে বাইরে বের হলাম না। ফোন হাতে বসে পড়লাম দক্ষিণ পাশের জানালার কাছে। কয়েক ফুট দূরত্বে থেকে কারো বোঝার উপায় নেই জানালায় কেউ বসে আছে। কিন্তু জানালার পাশে বসে আমি দেখতে পারি সব কিছু।  ঐ দিকে ছেলেটি একবার উঠছে একবার বসছে। একবার মাঠের এ মাথায় যায় তো আরেক বার ও মাথায় যাচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ লাগছে আমার। যেনো কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকাকে না দেখতে পেয়ে ছটফট করছে। ছেলেটি পকেট থেকে মোবাইল বের করে কানে ধরল। ঠিক তখনই আননোন নম্বরে কল এলো আমার হাতে থাকা ফোনে। আমি ফোনটা রিসিভ করলাম না‌। বেজে বেজে কেটে গেলো। আবার ফোন এলো আবার বেজে বেজে কেটে গেলো।

আমি বেশ উত্তেজিত! সত্যি সত্যিই রহস্য উদঘাটন হবে বলে মনে হলো। আবার ফোন এলো আমি কেটে দিলাম। অগত্যা সে ফোন পকেটে রেখে দিল। আমি তখন নিজেই ফোন দিলাম। সে তরিঘড়ি করে ফোন বের করে রিসিভ করলো আর হ্যালো সুরাইয়া।

আমি ফোন কেটে দিলাম এবং শিউর হলাম এই ফোন কল ও ছেলেটারই।

সে আবার ফোন দিল। আমি রিসিভ করে বললাম

-আপনি ঐ ছেলেটায় তো যে সিগারেট হাতে আমার বাড়ির দিকে মুখ করে বসে আছে?

-নাহ্ তো!

-একদম মিথ্যে বলার চেষ্টা করবেন না। আমি খোঁজ না নিয়ে এ কথা বলছি না। এবার বলুন মতলব কী?  কেনো ফোন দেন, কেনো বাড়ির সামনে এসে সিগারেট হাতে বসে থাকেন এবং কেনো আমাকে ফলো করেন?

-না মানে ইয়ে!

-দেখুন আমতা আমতা করে কোনো লাভ নেই সত্যিটা বলে ফেলুন।

-হ্যাঁ আমিই, আমিই ফোন দেই তোমার কন্ঠস্বর শোনার জন্য, আমিই তোমার বাড়ির সামনে এসে বসে থাকি তোমাকে দেখার জন্য এবং আমিই তোমার পিছু করি।

-কেনো করেন এসব? এতে লাভটা কী

-আমি তোমাকে ভালোবাসি

– কী কী বললেন? শুনতে পাইনি। আবার বলেন

-আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটা একবার নয় হাজার বার বলতে পারি। চিৎকার করে সবাইকে জানাতে পারি। দেখবে তুমি।

প্রচণ্ড ভয় পেয়ে দ্রুত ফোন কেটে দিয়ে নম্বর ব্লক করে দিলাম। সত্যিই যদি চিৎকার চেঁচামেচি করে তবে মান সন্মান আর কিছুই থাকবে না। তারপর থেকে বেশ কয়েকটা নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। বেশ কয়েক মাস পিছনে পিছনে ঘুরছে। অতঃপর একদিন হুট করেই তার আশায় ছাই দিয়ে বিদায় নিলাম বাপের বাড়ি থেকে।

 

১১৪৪জন ১০২০জন
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ