খাওয়ার পর্ব শুরু হলো মাত্র, আমাদের স্যামন খাওয়া চলছে এরি মধ্যে কুক খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসে চুলা (সামনের ধাতবপাত) রেডি করে প্রথমে ছোট ছোট অক্টোপাসের বাচ্চা বের করে তেলের উপর ফ্রাই শুরু করলো, অক্টোপাসের বাচ্চা গুলো আগে থেকে ব্যাটারে ডুবানো ছিলো।
আমি দেখে আৎকে উঠলাম, তাকালাম ইস্টেফেনের দিকে, ইস্টেফেন বললো, চিন্তা করোনা, এর টেস্ট চিংড়ি মাছের মতো।
কুক প্রথমে ভাজা অক্টোপাস আমাকে সার্ভ করার পর বাকি সবাইকে দিলো।
উল্লেখ্য যে কোরিয়ান যেকোন খাবার খাওয়ার নিয়ম হলো, যত বড়ই না খাবার হয়, তা একবারেই মুখে পুরে খেতে হবে, ভেঙ্গে ভেঙ্গে না, যদি ভেঙ্গে খান তা হবে অস্মানের।
সবাই যার যার প্লেট থেকে স্টিক দিয়ে একটা একটা অক্টোপাস মুখে পুরছে আর চাবাচ্চে, কি আর করা যখন এসেছি মোঘলের কাছে এই ভেবে একটা মুখে পুরে চাবাতাম লাগলাম, মনে মনে বলছি, চিংড়ি না ছাই যেন রাবার চিবুচ্ছি, এক পিছ খেয়েই রণে ভঙ্গ দিয়ে দিলাম।
এরপর ভাজা হলো বিফ, কচি বাঁশ এবং কিছু ভেজিটেবল এক সাথে, যা খেলাম তৃপ্তির সাথে, এলো চিংড়ি, এলো চিকেন, খেলাম বেশ মজা করে, সাথে কিছুক্ষণ পর পর চলছে রেড ওয়াইন।
এরপর যা এলো দেখেই বেহুঁশ, আমি তো খাবোইনা, অনেক খেয়েছি আমি সারেন্ডার।
মি. ডেভিড বললো, স্কুইড খেতে খুবই টেস্টি, তুমি এ না খেলে তোমার সব কিছুই মিস মনে করো, এরপরে তোমাকে আমাদের বেস্ট কুজিন খাওয়াবো।
সেই কুজিনটা কি শুনি?
সাপ।
শুনেই লাফ দিলাম, অস্মভব আমি সাপ খাবোইনা, মরে গেলেও না।
ওকে তাহলে স্কুইড খাও।
অসম্ভব, আমাকে ক্ষমা করো তোমরা।
শেষে ওরাই ইস্তফা দিয়ে নিজেরা স্কুইড খেলো, আমি দাঁত মুখ খিঁচে ওদের খাওয়া দেখতে লাগলাম।
খাওয়া শেষে এলো ডেজার্টের পালা, সাথে কোরিয়ান ভদকা টাইপের পানিয়।
রাত দশটা পর্যন্ত আমাদের খাওয়া দাওয়ার উৎসব চললো, এরপর ফেরার পালা।
গাড়ীতে ইস্টেফেনকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তোমরা এতো খাবারের অর্ডার করো, লাঞ্চে দেখলাম প্রচুর খাবার নষ্ট হলো, এখনো দেখলাম প্রচুর খাবার, ঘটনাটা খুলে বলবে?
ইস্টেফেন বললো, আমরা যখন কোন গেস্ট নিয়ে খেতে বসি তখন প্রচুর খাবার দাবাড়ের এরেঞ্জ করা হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগ খাবার খাওয়ায় হয়না, এইটাই আমাদের ট্রেডিসন, এতে আমরা বুঝাতে চাই আমাদের প্রচুর আছে, যা কখনোই শেষ হবেনা।
আমি অবাক হলাম, এরা কি কি ভাবে, এরা বিশ্বকে বুঝাতে চাই তাদের কিছুরই অভাব নেই, সত্যিই তাই।
আবার আমরা উল্টা কি করি, আমরা বিশ্বকে বলি আমাদের নেই, কিছুই নেই, আমাদের দাও, ভরিয়ে দাও, পারলে সব দাও।
চায়না নিজেই সয়ং সম্পূর্ণ, তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনশক্তি, যাকে তাদের সরকার খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করছে।
পরদিন আমার ফেরার পালা, দুপুরে আমার ফ্লাইট, ইস্টেফেন তার বান্ধবী সিন্ডিকে নিয়ে এসেছে, আমাকে পিক করে এয়ারপোর্ট নিয়ে গেল, আমার লাগেজ চেকইন থেকে শুরু করে বোর্ডিং কার্ড, গেইট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সব কিছুই ওরা করে দিলো।
বিদায় বেলায় সিন্ডি, ইস্টেফেন জড়িয়ে ধরলো, সিন্ডি সকাল থেকেই আমাকে ভাই ডাকছে, কারণ ওর কোন ভাই বোন নেই, আমি হলাম ইস্টেফেনের শালাবাবু। 😜
আমি গেইট ধরে এগুতে লাগলাম ওরা আমাকে যতক্ষণ দেখা গেছে ততক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়েছিল।
কুংমিং ফিরেই শুরু হলো আমার অপেক্ষার পালা, আমার ফ্লাইট ডিলে, ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের এই সমস্যা আছে যা বিরক্তিকর, অথচ সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের এমন সমস্যা কখনো দেখিনি।
রাত নয়টায় শুরু হলো চেকইন, সিকিউরিটি চেক, ডিসএম্বারকেশন, সব করে ভিতরে এসে বসলাম, কিছুক্ষণ পর আবার ফ্লাইট ডিলে হলো, এর মধ্যে চায়না ইস্টার্নের কিছু অফিসার এসে সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পাসপোর্ট দেখছে এবং সবাইকে একশ বিশ ডলার করে ফেরত দিচ্ছে তাদের ফ্লাইট ডিলের কম্পেন্সেশন হিসাবে, এরপরে এলো আমাদের প্রতিক্ষিত ফ্লাইট টাইম, একে একে এগিয়ে গিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়লাম।
আমাদেরকে নিয়ে চায়না ইস্টার্নের প্লেন উড়ে চললো আমার মাতৃভূমির উদ্দেশে।
সমাপ্ত।
২৮টি মন্তব্য
মায়াবতী
ইশ ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন কেনো ? আমার ভাই রা সব সময় বলে আমাকে নাকি আব্বা বেশি বেশি আদর করে কান্দুনী আর আল্লাদী বানায় রেখে গেছেন, আমার তো এখন এমন লেখা পাওয়ার জন্য কান্দা কাটি করতে ম্ন চাইতেছে * ইঞ্জিন ভাই ও ইঞ্জিন ভাই এমন লেখা আরো চাই, আরো চাই…. প্লিজ প্লিজ প্লিজ ;( ;( ;(
ইঞ্জা
:D) আপু কান্দাকাটি করবেননা প্লিজ, নতুন ভ্রমণ কাহিনী পাবেন দ্রুতই। 😀
জিসান শা ইকরাম
এত দ্রুত শেষ করে দিলেন! এইটা কিছু হইলো?
ইঞ্জা
এই ভ্রমণ এইখানেই শেষ, নতুন ভ্রমণ কাহিনী পাবেন, ভাবছি ক্যান্টন ফেয়ার নিয়ে লিখবো ভাইজান, কি বলেন?
জিসান শা ইকরাম
আপনার ভ্রমন কাহিনী অন্য সবার ভ্রমন কাহিনী থেকে আলাদা এবং অত্যন্ত ভাল হয়।
একারনেই বলেছি এত দ্রুত শেষ করলেন? হ্যা লেখুন ক্যান্টন ফেয়ার নিয়ে।
কত দেশ ভ্রমন করলেন, সব ভ্রমণ কাহিনী চাই ভাইসাব।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, অনুপ্রাণিত হলাম।
জ্বি ভাইজান, লিখছি। -{@
ছাইরাছ হেলাল
আপনি খুপ খ্রাপ!!
অতি দ্রুত যা করার কিছু একটা করুন।
ইঞ্জা
হ ভাইজান, ভুল কইরালাইছি মাফ কইরা দেন, ক্যান্টন ফেয়ার লইয়া আইতাছি। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
চায়না নিজেই সয়ং সম্পূর্ণ, তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনশক্তি, যাকে তাদের সরকার খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করছে।
ভালো বলেছেন।
শেষ!!!!! কোন কি।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, এইটা শেষ হইলো, অসুবিধা নাই নতুন লইয়া আইতাছি। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
অপেক্ষায় থাকলাম কি ন ত ূ
ইঞ্জা
আজই লেখা শুরু করবো ভাই \|/
মৌনতা রিতু
আমার তো মনে হয়েছিলো অক্টোপাস খেতে খুব মজা হবে।
স্কুইডিটা খেলেন না কেনো!
ভালো লাগলো ভ্রমণ কাহিনী ভাইজু।
ইঞ্জা
আপু কিছু খাবার আছে যা দেখলেই ঘৃণা চলে আসে মনে, স্বাভাবিক ভাবে খাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। 😆
শুন্য শুন্যালয়
ভ্রমণকাহিনী আমার প্রিয় বিষয়। কী যে করি, শুরু থেকে পড়ে আসবো। হুট করেই শেষ পর্বে যেতে চাইনা।
ইঞ্জা
ওকে আপু, দ্রুত ফিরে আসুন। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শেষটা এত দ্রুত হবে ভাবিনি তবে খাবারের আয়োজনরা তারা সাধারনতঃ এমনি অঢেল করেন এটা তাদের সামাজিকতায় পড়ে।এত কিছু খেলেন ভাবি খায়নিতো ওরা?
ভাল লাগল ভ্রমণ কাহিনী -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ মমি ভাই, ওদের সাথে খেতে বসলে মনটাই ভরে যায় এত্তো এত্তো খাবার টেবিলে থাকে।
ধন্যবাদ।
তৌহিদ ইসলাম
চায়না ভ্রমনের প্রত্যেকটি পর্ব অসাধারন লেগেছে কারন অনেক সুন্দর লিখনি। আরো ভ্রমণকাহিনী চাই আপনার কাছ থেকে ভাইয়া।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম ভাই, পাশে থাকবেন। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলেন!!! 🙁
এখন তাহলে নতুন কাহিনী চাই এবং খুব তাড়াতাড়ি । তা না হলে কান্না শুরু করবো। ;(
ইঞ্জা
:D)
আপু নতুন ভ্রমণ কাহিনী দিয়েছি, নিশ্চয় দেখেছেন। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
মন্তব্যও দিয়েছি ভাইয়া। 😀
ইঞ্জা
(3
সাবিনা ইয়াসমিন
স্কুইড আর সাপ খাওয়া দরকার ছিলো,,তাহলে ঐগুলোর টেস্ট কেমন আমরাও একটু জানতে পারতাম। নেক্সট টাইম অক্টোপাস না খেলেও ঐদুইটা খাবেন আর আমাদের জানাবেন 😜
ইঞ্জা
আপু, মজার ব্যাপার হলো স্কুইড আমি পরে খেয়েছি যা রাবারের মতো খেতে, সাপ আমাকে খাওয়ানো হয়েছে বলেই আমি মনে করি যদিও আমাকে বলা হয়েছে মাছ, কিন্তু মাছ কি গোলাকৃতির হয়?
সাবিনা ইয়াসমিন
ও ভাইজান,, অক্টোপাস খেলেন তার টেস্ট রাবারের মতো বললেন, স্কুইড সাপ খাওয়ার কথা বললেন তাও রাবারের মতোই লেগেছে বলছেন,,,,,আপনি কি রাবারও খেয়েছিলেন নাকি জানতে মন চায় 😜😜
ইঞ্জা
😂 তাও খেয়েছি আপু ছোটবেলায়। 😜