মাত্র গোরস্তান থেকে ঘুরে এলাম! সেখানে অনেক কবর। কবরের ও শ্রেনী রয়েছে! কিছু কিছু কবর দেখলে বোঝা যায় এটা ধনাঢ্য কোন প্রয়াত ব্যক্তির কবর। একটু উঁচু করে দামি টাইলস দিয়ে সুন্দর করে বাধিয়ে রাখা তার উপর মার্বেলে খচিত নাম ফলক। কবরের উপরে সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ লাগানো। একজনকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারলাম এখানে মাসিক চুক্তিতে কবর দেখাশোনার লোক আছে। মৃত ব্যক্তির কাছের লোকজন মাসোহারা দিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন এবং রক্ষনা বেক্ষন করেন। মধ্য বিত্ত দের কবর গুলিও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, মোটামুটিভাবে বাঁশের বেড়ার উপরে মৃত ব্যক্তির নামে কালো রঙ এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা। গরিব মানুষের কবর খুব স্পষ্ট বোঝা যায়, কবর খুড়ে কোন মতে মাটি চাপা দিয়ে মাথার কাছে একটি বাঁশ গেরে যে দিকে মাথা তার নির্দেশিকা প্রদান হয়। কবরস্থানের যায়গা সীমাবদ্ধ বিধায় নতুন কবর বানানোর সময় সেই গরিবের কবরের উপরেই আগে চাপ পরে। কবরের ভেতরে শুয়ে থাকা গরিব না করতে পারে না, বলতে পারেনা “আমি আর চাপ সহ্য করতে পারি না”। কবর জিয়ারতের প্রশ্নে গরিবেরাই এগিয়ে। মৃত গরিবের আত্মিয় স্বজনেরাই দোয়া করার জন্যে তুলনামূলক বেশিই আসেন। বড় লোক বা বিত্তবান লোকেরা কবরস্থান ভয় পান, মধ্যবিত্তরা সময় কম পান, গরিবের চোখে পানি বেশি তাই আবেগ অনুভূতি ও বেশি!
আমিও কবর ভয় পাই, নাহ! আমি কিন্তু বিত্তবান নই। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার আমার। মারা গেলে দোয়া করার লোকের ও অভাব দেখা দিতে পারে। মৃত ব্যক্তির সংগী কেউ হয় না। আজরাইল জান কবজের সাথে সাথে সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় ঘর থেকে বের করে দাফন কাফনের জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। আমার পরিচিত ব্যক্তিরা আমার কবর কিভাবে দেবে? আমার কবরের ভাগ কি শিয়ালেও পাবে?
৯টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার লেখা পড়ে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো, কবরের বৈষম্য শুনেছি আপনার কাছে আজ আবার জানলাম। মরে গেলেই ঘর থেকে বের করার তাড়া শুরু হয়।যতক্ষণ জীবন ততক্ষণ ই মায়া তাও অনেক সময় থাকেনা। ধন্যবাদ ভাইয়া
আলমগীর সরকার লিটন
অসাধারণ লেখেছেন কবি দা
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সমাজের একটি করুণ এবং অপ্রিয় সত্য নিয়ে অপূর্ব লেখা। — “কবরস্থানের যায়গা সীমাবদ্ধ বিধায় নতুন কবর বানানোর সময় সেই গরিবের কবরের উপরেই আগে চাপ পরে। কবরের ভেতরে শুয়ে থাকা গরিব না করতে পারে না, বলতে পারেনা “আমি আর চাপ সহ্য করতে পারি না”।
আসলে সবখানেই অসহায় গরীবদের ওপর চাপ আর তাপ বেশি। আপনার লেখাটি পড়ে আপ্লুত হয়েছি। মনে প্রশ্ন জাগে —- আমিও কবর ভয় পাই, নাহ! আমি কিন্তু বিত্তবান নই। নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার আমার। মারা গেলে দোয়া করার লোকের ও অভাব দেখা দিতে পারে। মৃত ব্যক্তির সংগী কেউ হয় না। আজরাইল জান কবজের সাথে সাথে সবাই ব্যস্ত হয়ে যায় ঘর থেকে বের করে দাফন কাফনের জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। আমার পরিচিত ব্যক্তিরা আমার কবর কিভাবে দেবে? আমার কবরের ভাগ কি শিয়ালেও পাবে?
রোকসানা খন্দকার রুকু।
সবখানেই বৈষম্য থাকলেও আল্লাহর কাছে নেই। তাই গরীবদের বেহেশত আগে।আমিন।
সুরাইয়া পারভীন
চিরন্তন সত্য উঠে এসেছে লেখায়।
একমাত্র হাশরের ময়দানে উঁচু নিচু সবাই সমান হবে।
চমৎকার লিখেছেন
পর্তুলিকা
ভয় পাইসি। এমন কইরা আগে ভাবি নাই। আমিও গরীব মানুষ। কিন্তু শিয়ালের ভাগা হইতে চাই না। তয় সান্ত্বনা একটাই, মরার মর দেহের কি হইলো সেটা বড় কথা না। জীবিত থাকাকালীন কর্ম দিয়াই যাচাই হইবো আমার পরিচয়।
নিতাই বাবু
কবর বা গোরস্থান নিয়ে জুতসই উপস্থাপন করেছেন, শ্রদ্ধেয় লেখক। তবে হ্যাঁ, ধনী হোক আর গরিবই হোক একদিন মরতে হবে সবাইকে। মৃত্যুর মৃত্যব্যক্তি বলতে পারবে না, তাঁর লাশে কী অবস্থা আর ব্যবস্থা হচ্ছে। বলা তো যায় না, হতেও পারে আপনার মৃত্যুর পর আপনার কবরেও টাইলস বাধা থাকবে।
আপনার লেখা পড়ে খানিকটা নিজের মৃত্যু নিয়েই ভাবতে লাগলাম। আশা করি সবার মৃত্যু সুন্দরভাবেই হবে।
আরজু মুক্তা
বৈষম্য সবখানেই।
কথাগুলো বিঁধলো মনে।