সে গল্পকার। কয়েকদিন ধরে একটি গল্প মাথায় ঘুরছে, কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারছে না। খুবই অস্থির লাগছে। গল্প লেখা তার নেশা। চায়ের নেশার মতো না বরং আফিমের নেশার মতো। সে গল্প লেখে নিজের জন্যই। নিজের লেখা দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে মাথায় থাকা গল্পটি আঙ্গুল পর্যন্ত আসছে না। পাতার পর পাতা লিখে ছিড়ে ফেলে সে। ভীষন অস্থির লাগছে। নাহ্ আমার প্রেমীর কাছে গেলে হয়তো লিখতে পারবো। সে মনে মনে ভাবে। তার প্রেমী হল ছোট্ট এক চিলতে বাগানটি। হরেক রকম ফুল, ফল আর পাতাবাহারের একটি ছোট্ট বাগান। এটাই তার প্রেমী এবং বন্ধু।
সে বাইরে আসে। কিন্তু তার অস্থিরতা না কমে বরং বেড়ে যায়। সে অস্থির মনে পায়চারি করে। সদ্য ফোটা হলুদ এবং সাদা গোলাপ তার মনে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। কি যেন বারবার তারচোখ এড়িয়ে যায়। সে গল্পটাকে জোর করে মাথা থেকে সরায়। বাগানের ফুলগুলো দেখতে থাকে। সে খানিকটা অবাক হয়। এই জিনিস আগে তো কখণও খেয়াল করেনি সে! তার বাগানে লাল রঙের কোন ফুল নেই। তার মানে কি লাল রঙের প্রতি তার কোন কন্ট্রডিকশন আছে? আশ্চর্য তো! ফুলের কথা মনে হলেই তো লাল রঙ প্রথমে চোখে ভাসে। কিন্তু তার চোখে কখনও লাল রঙ ভাসে না কেন?
সে ঘরে যায়। সেখানে ফুলদানিতে রাথা প্লাস্টিকের ফুল গুলোও হলুদ। সে তার আলমিরা খোলে। নাহ্ লাল রঙের কোন কিছু তো কখনও কেনা হয়নি! এমনকি তার প্রিয় কফি মগটিও কলাপাতা কালারের। সে তা ঘরে তন্ন তন্ন করে লাল রং খোঁজে। কিন্তু লাল রঙ্গের কিছু নেই। আগে কেন বিষয়টা খেয়াল করে নি?
সে তার রুম থেকে বের হয়। মা টিভিতে প্রোগ্রাম দেথছেন। সে যায় মার কাছে।
– মা আমার কোন লাল জামা নেই কেন?
– তুই তো সব জামা নিজের পছন্দে কিনিস। আমি কিছু বললে তো শুনিস না।
– কিন্তু আমার রুমে কোন লাল রঙের জিনিস নেই কেন?
– কি যে পাগলের মতো কথা বলিস! এখন লাল রঙ নিয়ে মেতেছিস কেন? আয় মাথায় তেল দিয়ে দিই মাথা ঠান্ডা হবে।
– না মা আমার কোন লাল রঙ্গের জিনিস নেই এই জিনিসটা খুব আশ্চর্যের মনে হচ্ছে না তোমার কাছে?
– কেন হবে? এদিকে আয় তো! তোর জ্বর হলো নাকি?
– উফ্ মা তোমার কখনও কিছু শেয়ার করে শান্তি পাওয়া যায় না!
সে ড্রয়িং রুমে যায়। নতুন কেনা কুশন গুলোর সাইডে চিকন করে খয়েরি রং এর নকশা আছে। কিন্তু এটা তো লাল নয়! তার অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ে। সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? লাল রং কেন মাথায় ঢুকে গেল? লাল রং দেখার জন্যে তার চোখ যেন তৃষিত হয়ে আছে। সে দৌড়ে ফ্রিজের কাছে যায়। টমাটো সস তো লাল রঙ্গ হবার কথা। কিন্তু ফ্রিজে সস নেই। ওখানে রাথা টমোটো গুলিও কাঁচা। সে শব্দ করে ফ্রিজ বন্ধ করে। অস্থির লাগছে খুব অস্থির লাগছে। মনে হয় সে পাগলই হয়ে গেছে।
সে নিজের রুমে যায়। আলমিরা হতে পুরোনো একটা ব্যাগ বের করে। ওখানে পেইন্টিং করার রং আছে কিনা দেখে। আছে কিন্তু টিউবটা খালি একদম পরিষ্কার। তার ভ্যনিটি ব্যাগ হাতড়ায় কিন্তু সে কখনও মেকআপ করে না তাই লাল রঙ পাওয়া গেল না।
এমন সময মা আসেন ঘরে।
– একি হাল করেছিস ঘরের? সব কিছু আগোছালো কেন?
– মা তুমি বড় জ্বালাতন করো!
– আচ্ছা ঠিক আছে এই নে, তোর জন্যে লাল রঙের একটা নাইট গাউন কিনেছিলাম। কিন্তু তুই পছন্দ করিসনি তখন। রেখে দিয়েছিলাম।
– কই দেখি?
– নে এটা।
– শিট মা তুমি লাল রঙ চেন না? এটা লাল রঙ?
– কেন এটা লাল না?
– এটা তো লাল খয়েরি, লাল না!
– এক কথাই তো!
– উফ, মা তুমি যাও তো! তুমি আমার অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছো!
মা খানিকটা ভীত হয় এবার। মেয়েটার কি হলো হঠাৎ? মেয়েটা একটু আলাদা কিন্তু কখনও তো এমন করেনি! মা দ্রুত পায়ে মেয়ের বাবাকে ফোন করতে যায়।
মেয়েটির অস্থিরতার পাশাপাশি এখন যোগ হয়েছে রাগ। অক্ষম রাগ। মাথায় ঘুরতে থাকা গল্প আর লাল রঙ মিলে তার অস্থিরতাকে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে দেয়।
মাথায় লাল রং এবং গল্প ঘুরছে। সে দুহাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো তার মাথায় এক আইডিয়া খেলে যায়!
সে দেরি না করে দৌড়ে রান্না ঘরে যায়। ড্রয়ার থেকে ছোট্ট কিন্তু ধারাল একটা ছুড়ি বের করে নেয়। তার রুমে আসে।
উত্তেজনায় তার হাত কাঁপছে। সে কাঁপা হতেই বাম হাতে সাবধানে একটা পোঁচ দেয়। যেন আর্টারি না কাটে। ধারাল ছুড়ি বলে ছিটকে পড়ে না রক্ত। ধীরে ধীরে রক্ত বের হতে থাকে। চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব করে সে। সে আরেকটা পোঁচ দেয়। এবার আরো রক্ত বের হতে থাকে। আহ লাল রং টকটকে লাল রঙ! সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে!
এইবার মাথায় থাকা গল্পটিকে লিখতে পারবে বলে মনে হলো তার।
সে দ্রুত টেবিলে গিয়ে বসে। মাথার গল্প এবার হাতে আসে। ঝর্ণা ধারার মতো শব্দ হয়ে গল্প বের হতে থাকে। সব অস্থিরতার অবসান ঘটে। আহা কি শান্তি, কি শান্তি! সে একনাগারে ডানহাতে গল্প লিখে যায়। আর বাম হাতটি হতে বের হওয়া রক্ত দেখে কিছুক্ষণ পরপর।
।
৩২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম –
গল্প লেখায় লাল রং এর প্রভাব এবং লাল রং সৃষ্টির চিন্তাটা অভিনব
ভিন্নতা আছে বেশ
ভালো লেখা ।
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
ধন্যবাদ। এটা আমার অনেক আগের লেখা। 🙂
আদিব আদ্নান
এ দেখছি আত্মঘাতি লেখক ।
না না এমন হাত কেটে লেখা খুব ভয়াবহ ।
এতটা লাল রং প্রীতি বিপদজনক মনে হলেও লেখা ভালই হয়েছে ।
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
আসলে তখন হাত কাটি নাই। কিছুটা পাগলামি আনতে গিয়ে গল্পের চরিত্রের হাতটা কেটে দিয়েছিলাম। আমার ব্যাথা লাগে নি। 😀
গুরুমিয়া
সেটা আমি ভাল করেই জানি।
শিশির কনা
ভালো লিখেছেন । ভালো লেগেছে ।
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
ধন্যবাদ।
রাইসুল জজ্
প্রথম দিকে একটু কেমন জানি ছাড়া ছাড়া হলেও পরের দিকে যেয়ে ভালো লেগেছে ।
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
ধন্যবাদ। 🙂
প্রজন্ম ৭১
আমি গল্প লিখতে পারিনা । হাত কাটবো নাকি ? (y)
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
হা হা হা সেটা তো জানি না !
বনলতা সেন
আপনার সাথে সই পাতালে মন্দ হত না ।
হাত না কেটেই লিখি কিন্তু ।
আমার পছন্দের রং এর মধ্যে লাল ও একটি ।
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
আমিও হাত না কেটেই লিখি। তবে গল্পের চরিত্রদের হাত কাটাকাটি করাই! 😀 😀
সাতকাহন
রক্তই কি সবকিছুর সমাধান ? গল্প পড়ে মনে হলো আপনার কথাই লিখছেন ??? এভাবে কেনো নিজেকে কষ্ট দেওয়া ????
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
আমার কথা এখানে সামান্যই আছে। 🙂
সাতকাহন
একটি কথা বলা হয়নি আপনাকে, আপনাকে আজ থেকে আমি গুরুজী ডাকতে চাই, আশা করি অনুমতি দিবেন ?
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
মাই গুডনেস! ভয পেয়ে গেলাম তো!!! সহব্লগারই ভাল নয় কি?! ]:)
অসামান্য তব্দিত ! আমাকে আপনের খালাম্মা মনে হইছে? 😛 😛
আসলে সগব্লগারই ভালো। 🙂
সাতকাহন
খালাম্মা কেনো মনে হবে ? তবে গুরু মনে হইছে, উপরে আমার একটি গল্প আছে যেটা ধারাবাহিকভাবে শুরু করলাম, কিন্তু আপনার ধারে কাছেও যাচ্ছে না। কষ্ট করে একটু দেখলে খুশি হতাম। গুরু বলে কথা ভালো কিছু টিপস যদি পাওয়া যেতো…।
লীলাবতী
– কিন্তু আমার রুমে কোন লাল রঙের জিনিস নেই কেন?
– কি যে পাগলের মতো কথা বলিস! এখন লাল রঙ নিয়ে মেতেছিস কেন? আয় মাথায় তেল দিয়ে দিই মাথা ঠান্ডা হবে।
– না মা আমার কোন লাল রঙ্গের জিনিস নেই এই জিনিসটা খুব আশ্চর্যের মনে হচ্ছে না তোমার কাছে?
– কেন হবে? এদিকে আয় তো! তোর জ্বর হলো নাকি?
– উফ্ মা তোমার কখনও কিছু শেয়ার করে শান্তি পাওয়া যায় না!……… কথোপকথনে অস্থিরতাটি বাস্তবই মনে হচ্ছে ।
ভালো লেগেছে গল্প , অদ্ভুত সুন্দর 🙂
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
অনেক ধন্যবাদ। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
স্বাগত এখানে আপনি ।
একটি ভাল লেখা দিয়ে শুরু করছেন দেখে ভাল লাগল ।
এ দেখছি ভয়াবহ লালের ছড়াছড়ি ।
নিয়মিত লিখতে শুরু করুন ।
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
হা হা লালে লালময়! ধন্যবাদ! 🙂
মিসু
মুগ্ধ হলাম গল্প পড়ে । লালের উপরে আসক্তি আমারো :p
অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)
ধন্যবাদ। আমি অবশ্য শাদা পছন্দ করি। 😉
মর্তুজা হাসান সৈকত
লেখার হাতের তারিফ করতেই হচ্ছে । চলুক তবে এভাবেই…
সুখী মানুষ
আপনার লেখাটি পড়ে আমিও লাল খোজার চেষ্টা করলাম … কিন্তু কোথাও খুজে পেলাম না … কাটব নাকি এখন ?.. ^:^
"বাইরনিক শুভ্র"
সিগারেটের প্যাকেটে ছাড়া আমি লাল আর কিছুই কোনদিন খুজি নি । তবে এবার খুজব ।
কৃন্তনিকা
ভিন্ন ধরণের। বলতে বাধ্য হচ্ছি- it’s different,I like it. 🙂
প্রিন্স মাহমুদ
লাইক , লাইক , লাইক
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
দারুন! তব্দা খাইয়া গেলাম!
অরণ্য পুলক
মাথার মধ্যে ঘুরতাসে…..ঃ ” মাথায় লাল রং এবং গল্প ঘুরছে।”
বিষয়টা মজা লাগলো……। -_-
Imon
colorful 😀