গল্পকার

অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন) ২ জুলাই ২০১৩, মঙ্গলবার, ১১:৩৩:৪৩পূর্বাহ্ন গল্প ৩২ মন্তব্য


সে গল্পকার। কয়েকদিন ধরে একটি গল্প মাথায় ঘুরছে, কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারছে না। খুবই অস্থির লাগছে। গল্প লেখা তার নেশা। চায়ের নেশার মতো না বরং আফিমের নেশার মতো। সে গল্প লেখে নিজের জন্যই। নিজের লেখা দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে মাথায় থাকা গল্পটি আঙ্গুল পর্যন্ত আসছে না। পাতার পর পাতা লিখে ছিড়ে ফেলে সে। ভীষন অস্থির লাগছে। নাহ্ আমার প্রেমীর কাছে গেলে হয়তো লিখতে পারবো। সে মনে মনে ভাবে। তার প্রেমী হল ছোট্ট এক চিলতে বাগানটি। হরেক রকম ফুল, ফল আর পাতাবাহারের একটি ছোট্ট বাগান। এটাই তার প্রেমী এবং বন্ধু।
সে বাইরে আসে। কিন্তু তার অস্থিরতা না কমে বরং বেড়ে যায়। সে অস্থির মনে পায়চারি করে। সদ্য ফোটা হলুদ এবং সাদা গোলাপ তার মনে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। কি যেন বারবার তারচোখ এড়িয়ে যায়। সে গল্পটাকে জোর করে মাথা থেকে সরায়। বাগানের ফুলগুলো দেখতে থাকে। সে খানিকটা অবাক হয়। এই জিনিস আগে তো কখণও খেয়াল করেনি সে! তার বাগানে লাল রঙের কোন ফুল নেই। তার মানে কি লাল রঙের প্রতি তার কোন কন্ট্রডিকশন আছে? আশ্চর্য তো! ফুলের কথা মনে হলেই তো লাল রঙ প্রথমে চোখে ভাসে। কিন্তু তার চোখে কখনও লাল রঙ ভাসে না কেন?
সে ঘরে যায়। সেখানে ফুলদানিতে রাথা প্লাস্টিকের ফুল গুলোও হলুদ। সে তার আলমিরা খোলে। নাহ্ লাল রঙের কোন কিছু তো কখনও কেনা হয়নি! এমনকি তার প্রিয় কফি মগটিও কলাপাতা কালারের। সে তা ঘরে তন্ন তন্ন করে লাল রং খোঁজে। কিন্তু লাল রঙ্গের কিছু নেই। আগে কেন বিষয়টা খেয়াল করে নি?
সে তার রুম থেকে বের হয়। মা টিভিতে প্রোগ্রাম দেথছেন। সে যায় মার কাছে।
– মা আমার কোন লাল জামা নেই কেন?
– তুই তো সব জামা নিজের পছন্দে কিনিস। আমি কিছু বললে তো শুনিস না।
– কিন্তু আমার রুমে কোন লাল রঙের জিনিস নেই কেন?
– কি যে পাগলের মতো কথা বলিস! এখন লাল রঙ নিয়ে মেতেছিস কেন? আয় মাথায় তেল দিয়ে দিই মাথা ঠান্ডা হবে।
– না মা আমার কোন লাল রঙ্গের জিনিস নেই এই জিনিসটা খুব আশ্চর্যের মনে হচ্ছে না তোমার কাছে?
– কেন হবে? এদিকে আয় তো! তোর জ্বর হলো নাকি?
– উফ্ মা তোমার কখনও কিছু শেয়ার করে শান্তি পাওয়া যায় না!
সে ড্রয়িং রুমে যায়। নতুন কেনা কুশন গুলোর সাইডে চিকন করে খয়েরি রং এর নকশা আছে। কিন্তু এটা তো লাল নয়! তার অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ে। সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? লাল রং কেন মাথায় ঢুকে গেল? লাল রং দেখার জন্যে তার চোখ যেন তৃষিত হয়ে আছে। সে দৌড়ে ফ্রিজের কাছে যায়। টমাটো সস তো লাল রঙ্গ হবার কথা। কিন্তু ফ্রিজে সস নেই। ওখানে রাথা টমোটো গুলিও কাঁচা। সে শব্দ করে ফ্রিজ বন্ধ করে। অস্থির লাগছে খুব অস্থির লাগছে। মনে হয় সে পাগলই হয়ে গেছে।
সে নিজের রুমে যায়। আলমিরা হতে পুরোনো একটা ব্যাগ বের করে। ওখানে পেইন্টিং করার রং আছে কিনা দেখে। আছে কিন্তু টিউবটা খালি একদম পরিষ্কার। তার ভ্যনিটি ব্যাগ হাতড়ায় কিন্তু সে কখনও মেকআপ করে না তাই লাল রঙ পাওয়া গেল না।
এমন সময মা আসেন ঘরে।
– একি হাল করেছিস ঘরের? সব কিছু আগোছালো কেন?
– মা তুমি বড় জ্বালাতন করো!
– আচ্ছা ঠিক আছে এই নে, তোর জন্যে লাল রঙের একটা নাইট গাউন কিনেছিলাম। কিন্তু তুই পছন্দ করিসনি তখন। রেখে দিয়েছিলাম।
– কই দেখি?
– নে এটা।
– শিট মা তুমি লাল রঙ চেন না? এটা লাল রঙ?
– কেন এটা লাল না?
– এটা তো লাল খয়েরি, লাল না!
– এক কথাই তো!
– উফ, মা তুমি যাও তো! তুমি আমার অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছো!
মা খানিকটা ভীত হয় এবার। মেয়েটার কি হলো হঠাৎ? মেয়েটা একটু আলাদা কিন্তু কখনও তো এমন করেনি! মা দ্রুত পায়ে মেয়ের বাবাকে ফোন করতে যায়।
মেয়েটির অস্থিরতার পাশাপাশি এখন যোগ হয়েছে রাগ। অক্ষম রাগ। মাথায় ঘুরতে থাকা গল্প আর লাল রঙ মিলে তার অস্থিরতাকে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়ে দেয়।
মাথায় লাল রং এবং গল্প ঘুরছে। সে দুহাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো তার মাথায় এক আইডিয়া খেলে যায়!
সে দেরি না করে দৌড়ে রান্না ঘরে যায়। ড্রয়ার থেকে ছোট্ট কিন্তু ধারাল একটা ছুড়ি বের করে নেয়। তার রুমে আসে।
উত্তেজনায় তার হাত কাঁপছে। সে কাঁপা হতেই বাম হাতে সাবধানে একটা পোঁচ দেয়। যেন আর্টারি না কাটে। ধারাল ছুড়ি বলে ছিটকে পড়ে না রক্ত। ধীরে ধীরে রক্ত বের হতে থাকে। চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব করে সে। সে আরেকটা পোঁচ দেয়। এবার আরো রক্ত বের হতে থাকে। আহ লাল রং টকটকে লাল রঙ! সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে!
এইবার মাথায় থাকা গল্পটিকে লিখতে পারবে বলে মনে হলো তার।
সে দ্রুত টেবিলে গিয়ে বসে। মাথার গল্প এবার হাতে আসে। ঝর্ণা ধারার মতো শব্দ হয়ে গল্প বের হতে থাকে। সব অস্থিরতার অবসান ঘটে। আহা কি শান্তি, কি শান্তি! সে একনাগারে ডানহাতে গল্প লিখে যায়। আর বাম হাতটি হতে বের হওয়া রক্ত দেখে কিছুক্ষণ পরপর।

৬৮১জন ৬৮৪জন
0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ লেখা

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

  • অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)-এর গল্পকার পোস্টে
  • অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)-এর গল্পকার পোস্টে
  • অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)-এর গল্পকার পোস্টে
  • অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)-এর গল্পকার পোস্টে
  • অপ্সরা সিজেল (বনলতা সেন)-এর গল্পকার পোস্টে

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ