দেশে এতো এতো শিশুসন্তান ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এ নিয়ে একটিবারও যাদের কথা বলতে দেখিনি, তারাও এবার আকাশের (আকাশ-মিতু) ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়েছেন।
জন প্রতিক্রিয়া:
আকাশ স্বেচ্চায় সজ্ঞানে হতাশা থেকে অপমানবোধে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় বহুগামিনি স্ত্রী মিতু বিদ্বেষে ফেসবুক উত্তাল। ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন!
আত্মহত্যায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা না থাকলেও প্ররোচনার অভিযোগে অপরাধীর সাজা আবশ্যক কারণ ভিকটিম একজন পুরুষ আর অপরাধীটি নারী, প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে সে অপরাধীই বটে।
অথচ একই এলাকায় পরেরদিন নির্যাতিত গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, এ নিয়ে কারো মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত শুনা যায়নি! কোত্থাও না। যেনো এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এমন হতেই পারে।
পুড়িয়ে মারাতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও অপরাধীর সাজার আবশ্যকতা নিয়ে কোন আওয়াজ উঠেনি কারণ এখানে ভিকটিম নারী, আর আক্রমণকারী পুরুষপক্ষ।
দুদিন আগে শহরে আরেকটি অনাচারের খবর আসলো এক মায়ের অভিযোগ থেকে পিতা কর্তৃক শিশুসন্তান ধর্ষণের! অভিযোগকারী মা রীতিমতো মেডিকেল রিপোর্টসহ হাজির হয়েছিলেন।
এর পরদিন অভিযুক্তও বক্তব্য পেশ করেছেন। অস্বাভাবিক কারণে এরপর থেকেই যেনো এ ব্যাপারে নিরবতা নেমে এসেছে চারপাশে। কোত্থাও কোন সাড়াশব্দ নেই!
কোন সংগঠনকেও তেমন দেখতে পাচ্ছি না। এমনকি নারী সংগঠন বা মানবিধাকার সংগঠনকেও না।
এসবের ফল কি হবে? অসহায় নারীটি নিজেতো সাহস হারাবেই আর ভবিষ্যতে কতিপয় উশৃঙ্খল পুরুষ দ্বারা নারীজীবনে ঘটিত এসব অপরাধ আর আলোর মুখ দেখবে না।
প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া:
আকাশের আত্মহত্যার পরদিন প্ররোচনার দায়ে মিতুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাথেসাথে এরেস্ট, ইতোমধ্যে তিনদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর হয়েছে। উপাদান, আকাশের সুইসাইডাল রেফারেন্স।
অথচ গতকালের বাবা কতৃক কন্যা সন্তান ধর্ষিত ঘটনাটি থেকে জানা যায়, কন্যার মা দাম্পত্যকালীন সময়ে চরমভাবে অত্যাচারিত হয়ে কন্যার বাবার বিরুদ্ধে দু’বার মামলা করতে গেলেও থানা থেকে মামলা নেয়া হয়নি।
পিতা কর্তৃক শিশুসন্তান ধর্ষণ ঘটনার ব্যাপারে মেডিকেল রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক কার্যক্রমের কোন খবর পাচ্ছি না।
আজব একচোখা নীতির নগ্ন চেহারা!!
ব্যক্তিজীবন/ পারিবারিক জীবনের কথা না হয় না-ই বললাম।
একজন আকাশের ঘটনাতে আকাশাবাতাস কাঁপিয়ে মানুষজন একাট্টা হয়েছে খুনের প্ররোচনাকারী নারীটির বিরুদ্ধে, শুধুমাত্র সেই নারী আকাশের সুইসাইডাল রেফারেন্স অনুযায়ী বহুগামিনী বলে। নারী বহুগামী? কেনো হবে? আকাশের পাশাপাশি তাদেরও অহমে লেগেছে। নারীর কেনো এত্তো সাহস হবে স্বামীত্বকে অবহেলা করে ইচ্ছামতো পথচলা?
অথচ রেফারেন্স হিসেবে সেই ভিডিওতে মিতুকেই ভয়ার্ত চেহারায় দেখা গেছে, যেখানে স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, নির্যাতনের মুখে এ স্বীকারোক্তি। কাজেই তা প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার।
কথা হচ্ছে, সত্যিই যদি বহুগামিতার অপরাধকে গুরুতর বিবেচনা করেই এ আন্দোলন হয়ে থাকে, তো এ সমাজে বহুগামিতাজনিত অঘটন তো বহু ঘটেছে। সেখানে তো এভাবে আকাশাবাতাস কাঁপিয়ে কাউকে একাট্টা হতে দেখিনি! কারণ কি? কারণ, সেখানে অপরাধী কোন মিতু ছিলো না, তাই এ ব্যাপারে তাদের কোন বিকারও ছিলো না। আর এ ঘটনায় অপরাধী মিতু একজন নারী!!! পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রবলেমটা মূলত সেখানেই। অহম! মিতু তাদের অহমে আঘাত হেনেছে।
ভাবছেন, ব্যক্তি আকাশের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে এই প্রতিবাদ? মোট্টেই না। ব্যক্তি আকাশের প্রতি সহমর্মিতা থাকলে অন্যসকল ভিকটিমের প্রতিও একই ধরণের সহমর্মিতা উতলে উঠতো। মূলত তাদের সমর্থন দাঁড়িয়েছে পুরুষ আকাশের প্রতি। এটি কিন্তু সহমর্মিতা নয়, সমর্থন। যে সমর্থনের পক্ষে রায় নিয়ে মিতুদের দমন করা যায়। নিজেদের নিশ্চিত সম্পত্তিতে পরিণত করা যায়। আর নিশ্চিন্তে নিজেদের অবাধ চলাফেরার পথ কন্টকমুক্ত করা যায়।
অপরদিকে সন্তান ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টসহ ভিকটিমের মা হাজির হওয়ার পরও তা আকাশাবাতাস কাঁপাচ্ছে না। কারণ কি? এখানেও কারণ পুরুষতান্ত্রিক অহম। কিছুতেই তা হল্লা করে ক্ষুণ্ণ হতে দেয়া যাবে না। এমনকি তা সন্তানের বিরুদ্ধে হলেও অহমের দুর্বলতা দেখানো যাবে না। বরং চুপ থেকে তা ধামাচাপা দিতে পারলেই হয়।
পুরুষতান্ত্রিকতার নগ্নরুপ দিনেদিনে বিভৎস চেহারায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
যুগেযুগে এভাবেই পর্যুদস্ত করে রাখা হয়েছে নারীদের। এগিয়ে যেতে চাওয়া নারীর পথচলায় বিঘ্ন সৃষ্টি করা, অকারণ ভুল আবিষ্কার করা, পদেপদে সমস্যা বাঁধিয়ে তাকে দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা আর তারপরেও এগুতে থাকলে লঘুভুলে গুরুদণ্ড দিয়ে বিদ্বেষী মনষ্কামনা পূর্ণ করা।
এমন চেহারা কোথায় নেই? জায়গায় জায়গায় দৃষ্টি ফেললে, তাই দেখা যায়।
সমানাধিকার এখানেই পরাভূত। অধিকারের মর্যাদা এখানেই পর্যুদস্ত।
এভাবেই প্রতি পদেপদে নারীকে শ্বাপদসংকুল কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই এগুতে হয়, হচ্ছে। বনাঞ্চলে নয়, মনুষ্যজগতেই।
৫টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
কিছুই বলার নেই যেমন আমরা তেমনি সরকার,সরকারের নীতি নির্ধারকরা।এ দেশে ক্ষমতা যার হাতে আইন তার হাতে।প্রয়োজন সম্মেলিত প্রতিরোধ আন্দোলন।
জিসান শা ইকরাম
চরম বৈষম্য হচ্ছে নারীদের প্রতি, আকাশ আত্মহত্যা করায় তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে রিমাইন্ডে নেয়া হলো, অথচ এক নরপশু তার কন্যাকে ধর্ষন করার পরেও গ্রেফতার হচ্ছে না, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যন্ত আমলে নেয়া হচ্ছেনা। আকাশ যে ভিডিও পোষ্ট করেছে, তাতে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে নির্যাতনের মুখে এই স্বীকারোক্তি করেছে মিতু।
ভালো পোষ্ট।
মোঃ মজিবর রহমান
বিচার কাজে বেবিচার হলে কি আশা করা যায় বলুন। আমাদের দেশে সরকারি ও ক্ষমতাবানরাই তাঁদের ইচ্ছামত অন্যায়কারিকে শাস্তি না দিয়ে , টাকা নিকট বিচারকার্য ফিনিশ। ফান্দে পরে সাধারণ মানুষ।
সাবিনা ইয়াসমিন
নারী পুরুষের বৈষম্যতা প্রাচীন কাল থেকেই চলে এসেছে। সমানাধিকার এখনো খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।
আর বিচার ব্যবস্থায় ক্ষমতাশীনরা কখনোই আইনের আওতায় আসে না। তাদের বাচানোর জন্যে আইন যতটা চেষ্টা করে তাদের সাজা নিশ্চিত করার জন্যে তার অর্ধেকও করে না।
ক্ষমতাধরদের বেলায় আইন নারী-পুরুষ উভয়কেই প্রটেক্ট করে। সেখানে ক্ষমতা জয়ী হয়।
ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে আপু। শুভ কামনা।
তৌহিদ
এসবের মুল কারন হচ্ছে ক্ষমতায়ন। পুরুষ শাসিত সমাজে আমরা অন্যকে ক্ষমতা দিতে চাইনা। এর প্রভাব পড়েছে বিচার ব্যবস্থায়। আইন আছে শাসন নেই। নাম কামানোর জন্যেও আজকাল আইনের বেড়ি পড়ানো হচ্ছে হাতে।
ভালো লাগলো লেখাটি আপু।