কুদ্দুস ভাই রাতে ঘুমাইলে কে যেন তারে কাতুকুতু (শুরশুরি) দেয়। তিনি ঘুম থেকেই হাসতে হাসতে উঠেন এবং ধীরে ধীরে গম্ভীর হয়ে যান। গম্ভীর হওয়ার একমাত্র কারন তিনি ঘুম থেকে যখন উঠেন তখন কাউকে দেখতে পান না। তার রুমে তার এক ছোট ভাই ঘুমায়। তার বয়স ১৩। সে এতবড় রসিকতা করার সাহস পাবে না। তাই তিনি বিষয়টা নিয়ে জারপরনাই চিন্তিত।

তার ছোট মামা একবার তার বাসায় এসেছিলো। একদিন থেকেই বাসায় যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলো। রাতে নাকি তাকে কে উপরের দিকে তুলে বিছানায় ধপাস করে ফেলে দিয়েছিলো। ফজরের আযান দেওয়ার আগে কে নাকি তার লুঙ্গি ধরেও টানা টানি করছিলো।

কুদ্দুস ভাইর ছোট মামা বাসা থেকে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, ” ভাইগ্না তোমার রুমে দুষ্টু মেয়ের আত্মা টাত্মা আছে। শুধুই দুষ্টু না আমি বলতে চাই চরিত্রহীন পেতাত্মা। নাহলে আমার লুঙ্গি ধরে টানবে কেন! টানলে শার্ট ধরে টান! চুল ধরে টান! কান ধরে টান! নাহ্, আমার লুঙ্গিই কেন টানবে!! তুমি বরং বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলো এইরুমে কেউ আত্মহত্যা করছিলো কিনা। ”

কুদ্দুস ভাবলো মামা রসিকতা করেছে তাই আর প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নেন নাই। এখন যখন কাতুকুতুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাইলো সুতরাং তিনি বিষয়টা নিয়ে একটু ভাবনায় পড়লেন। তিনি ভাবেন ….
– আচ্ছা, যদি সত্যিই কোন মেয়ে এই রুমে মারা যেয়ে থাকে তবে কেন মারা গেল?

বৃদ্ধারা বলেন ইচ্ছাকরে প্রাণত্যাগ করলে পেতাত্মা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে!

আচ্ছা মেয়েটা কোন দুঃখে মারা গেল? নাকি কেউ তাকে খুন করে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে!?! নাকি সে ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি লাগিয়ে মরে গেছে!!

আচ্ছা মেয়েটা কি খুব সুন্দরী ছিলো! যে জন্য স্বামী সন্দেহ করতো! সুন্দরী মেয়েদের এই সমাজে সন্দেহ করা বেশি। কারন সুন্দরী মেয়ে কারো বউ হয়ে গেলেও সে সুন্দরীই থাকে! সুন্দরীর জন্য সবাই পাগল! আচ্ছা মেয়েটার সাথে কি এমন কিছু হয়েছিলো যে মেয়েটাকে তার স্বামী অপছন্দ করতো!!

ইত্যকার নানা ভাবনায় তার মাথায় জিলাপির পেঁচ লাগার উপক্রম হলো। সে খেয়ে দেয়ে রাতে তার বিছানায় ঘুমালো। হটাৎ করেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেল!

সে দেখে সে খাটের উপর বসে আছে। তার পাশে আরেকজন লোক বসে আছে। উসকু খুসকো চুল! খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি! চোখগুলা যেন কোটর থেকে বের হয়ে আছে। হাতের নখগুলা যেন পাঁচ ছয় বছরেও কাটে নাই।

কুদ্দুস ভাবলো এনি নিশ্চয়ই নোখের ব্যবসায়ী! প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আবাল, বৃদ্ধ বনিতারা তাকে দেখতে আসে। এনি নিশ্চয়ই কোন বাবা নামে প্রসিদ্ধ। আচ্ছা এনার নাম কি নোখ বাবা! মানুষ পানি নিয়ে আসে আর এনি নোখ পানিতে চুবিয়ে দ্যান! আর সবার সকল বিপদ আপদ নোখের খোঁচায় বিলীন হয়ে যায়!

হটাৎই সে লোক উঠে দাঁড়ালো! তারপর আবার বসলো। কুদ্দুস কিছু বুঝলো নাহ্! শুধু চেয়ে রইলো। লোকটার ঘরে একটা পিচ্ছি ছেলে এসে বললো..
-ওস্তাদ আজকে ২০ জন রোগী আসছে। সুন্দরী মেয়ে আসছে তিনটা।
-খুবই ভালো খবর। এক এক করে ভিতরে পাঠা।

কুদ্দুস দেখলো তার ভাবনাই সত্যি। এনি আসলেই নখ বাবা। মানুষ পানি নিয়ে আসে আর তিনি নখ চুবিয়ে দেন। তার রুমে সুন্দরী একটা মেয়ে ঢুকলো। ঢুকে নখ বাবার থেকে নখ চুবানো পানি নিলো। যাওয়ার সময় পানির বতল পড়ে মেয়ে আছাড় খাওয়ার উপক্রম হলো। নখ বাবা মেয়েটাকে ধরতে যেয়ে এক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেন। নখ বাবার ধারালো নখ মেয়েটার গলা দিয়ে ঢুকে যায়। মেয়েটা সদ্য নদী থেকে তোলা ঈলিশ মাছের মতো হাত পা ছিটিয়ে সাথে সাথে নড়াচড়া বন্ধ করে দিলো। কুদ্দুস হায় খোদা কইয়া এক চিৎকার দিয়ে খাঁট থেকে পড়ে গেল। চোখের পলকেই তার চারপাশের দৃশ্য পাল্টে গেল। যেন এতক্ষন সে স্বপ্নই দেখলো।

কুদ্দুস সকাল বেলা বাড়িওয়ালার কাছে যাইয়া কইলো ..
-চাচা! আপ্নের বাড়িতে কি কোন নখ বাবা ছিলো?
-কি কও মেয়া! তোমার মাথা টাতা ঠিক আছে নি!
-আচ্ছা! তাইলে কোন আমি যে রুমে ঘুমাই হে রুমে আগে কোন ভাড়াটিয়া ছিলো কিনা, যাদের কেউ আত্মহত্যা করছে?
-ধুর! মেয়া! সকাল সকাল কি পেঁচাল শুরু করছো! এর আগে এইখানে ব্যাচলররা থাকতো। এরও আগে থাকতো ব্যাংক কর্মজীবি ও তাদের পরিবার। দেখো এসব আজেবাজে কথা কইবা না। আমার বাসা দিয়া পেট চালাইতে হয়। পরে আমি ভাড়াটিয়া পামু না।

কুদ্দুস আর ভালোমন্দ কিছু বললো না। মুখ গোমরা করে সেখান থেকে চলে এলো।

(বাকী অংশ পরে )

৪৬৮জন ৪৬৮জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ