
অমিত বলেছিলো ” লিলি, কোটি কোটি যুগের পর যদি দৈবাৎ তোমাতে আমাতে মঙ্গলগ্রহের লাল অরণ্যের ছায়ায় তার কোন একটা হাজার ক্রোশী খালের ধারে মুখোমুখি দেখা হয়, আর যদি শকুন্তলার সেই জেলেটা বোয়াল মাছের পেট চিরে আজকের এই অপরূপ সোনার মুহূর্তটিকে আমাদের সামনে এনে ধরে, চমকে উঠে মুখ চাওয়া চাওয়াচাওয়ি করব। ”
মাঝখানে অনেক সময় বয়ে গেছে। আজ অমিত আর লাবণ্য মঙ্গল গ্রহে বসে নীল হয়ে যাওয়া বিপদসংকুল পৃথিবীটাকে দেখছে। কৌতূহলী চোখে আঙ্গুল উঁচিয়ে অমিত বললো, লাবণ্য , পৃথিবী খুব থমথমে। মানুষ আজ বিহ্বল। ফুলের গন্ধে নেই মিষ্টতা , আকুলতা। কি এক হাহাকার ! শুধু অনুজীব নয়। মানুষও তার অহমিকায় ধূলিসাৎ। ক্ষুধা নিরাশা আর আশায় মানুষ টালমাটাল। একটা আতশবাজি পাঠালে কেমন হয় ? পুরনো সব স্মৃতি পুড়ে খানখান হোক। নিদানকাল কাটছে না মানুষের। সব এলোমেলো। মানবিকতা ঝরে পরছে টুপটাপ। মনে জোর নেই। ভার বহন করতে করতে মানুষ বিভ্রান্ত, ভীত।
লাবণ্য বলে, আশা ছেড়ে দাও। কী করে মেনে নিতে হয়, তা শিখো। পৃথিবীর সব মানুষ একই সময়ে, একই অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, এটাই বড়। মানুষ আবিষ্কার করবে নতুন করে। ঐ যে দেখছো, পতেঙ্গায় যে মানুষটি ফানুস উড়িয়ে চমকে দিতো। সব ফানুসগুলো আজ রঙ্গিন ফুল হয়ে ফুটছে। আর ভয়ের ফুরসত নেই। ভয় পেলেই তো তুমি হেরে যাবে।
অমিত বললো, তোমার কী মনে আছে? ডেডালাস তাঁর পুত্র ইকারুসকে দুটো পাখা বানিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, বাবারে, উড়ে পালিয়ে যা এই কারাগার থেকে। তবে, সাবধানে উড়িস। খুব বেশি উঁচুতে উড়লে সূর্যের তাপে পুড়ে যাবি। আর খুব নীচ দিয়ে উড়লে জোয়ারের জল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তোকে।
লাবণ্য বলে, মধ্যযুগে পৃথিবীকে স্পর্শ করেছিলো গির্জা, ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজপ্রাসাদ আর এখন বাণিজ্যের টাওয়ার। তাহলে বোঝ অমিত , কে কথা বলবে?
অমিত বলে, মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ।
লাবণ্য বলে, আর বিশ্বাস ! এখন আর আবিষ্কার নাই। সবাই সবাইকে পেয়ে গেছে। আছে আত্ম প্রেম, আত্ম তৃপ্তি। উল্লাসে লাফায় ব্যাঙ। আত্মতৃপ্তিতে ভোগা মানুষগুলো একটু একটু করে সত্য বললেই পারে। কিন্তু করে না। কেউ একজন এসে মিথ্যা আলাপগুলো, মিথ্যা সংস্কারগুলো ভেঙ্গে দিতে তো পারে।
অমিত বলে, এখন ঝড়ে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। ঝড় থামলে নিশ্চয় বিশাল আকৃতির চাঁদ উঠবে। সেই আশায় মানুষ থাকে। ভবিষ্যতে মানুষ আরও বিবেচক হবে। সব দুশ্চিন্তা কেটে মুখোমুখি এক কাপ চা নিয়ে বসবে। চেনাবে প্রেম, ভালোবাসা, নতুন নতুন আইডিয়া। কবিতা পড়বে আর বলবে ; পৃথিবীতে রাত বলতে কিছু নেই। ঘুচবে বেদনা। শান্ত ঝিলে জন্ম নিবে নীল পদ্ম।
লাবণ্য বলে, একদিন বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় ; সুশীতল বাতাসে, মহাশূন্যে ভাসবে তারকারাজি। ইস ! মায়াবী মানুষগুলোর আজ বিশ্রাম দরকার।
★★ উৎসর্গ আবু আল সাঈদকে।
১৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আবু আল সাঈদ কিডা? না কৈলে ক্যামনে কী!!
হ্যা, এখন আমদের আশাবাদি হতে লাল অরণ্য ছায়া লাগতেছে, তবুও আমরা স্বপ্ন দেখে স্বপ্ন নিয়েই বাঁচবো।
বাণিজ্যের টাওয়ার এড়িয়ে।
লেখাটি আপনাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ব্রেভো।
আরজু মুক্তা
ছেলেটা এমবিবিএস ফাইনাল দিয়েছে। ওর সঙ্গে জীবন, শিক্ষা পরিবেশ হতাশা এগুলো নিয়ে কথা হচ্ছিল সকালে। ওর সাথে কথা বলার পরপর এই লেখা। তাৎক্ষণিক লেখা।। ভাবলাম সবাই হতাশ। এই করোনাকালে।
স্বপ্ন ই আমাদের বাঁচায়।
আর আমি যে কেমনে লেখলাম। কেমনে ব্রাভো পাইলাম। Credit goes to pen…
দোয়া করবেন
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি হার মানলাম। এই লেখা আমার মাথার উপ্রে/সাইডে দিয়ে বেরিয়ে গেছে। পড়েছি,, এবং স্বীকার করছি কিছুই বুঝিনি 🙁
দেখি কেউ বুঝেসুঝে কমেন্ট দিলে আবারও পড়তে আসবোনে!
ভালো থাকুন। শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
আচ্ছা। অপেক্ষায় থাকলাম।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার লেখেছেন মুক্তা আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সামঞ্জস্যের মাঝে নিজেকে মানিয়ে চলাই আজ জীবনের ব্রত হওয়া উচিত।
সুফলা কর্ম বিনে আশায় বসে থাকলে এই পৃথিবী কেউ
নতুন করে গড়ে দিবে না। বরং সভ্যতার বিকাশ
থেকে হারিয়ে যাবে কিছু মূল্যবান সময়।
খুব ভালো লেগেছে গভীর মননশীল লেখা। মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম চিরন্তন।
আরজু মুক্তা
ভালো সারমর্ম করেছেন। মানিয়ে নিয়ে নতুন পৃথিবী গড়তে হবে।
শুভ কামনা ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক অনেক মুগ্ধতা রইলো। লেখাটি পড়ে অনেক হতাশার মাঝেও আশার আলো খুঁজে পেলাম যা আমাদের অবিরত বাঁচিয়ে রাখে, সামনে এগোতে সাহায্য করে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে।
আপনিও নিরাপদে থাকুন। শুভ কামনা
হালিমা আক্তার
কেউ একজন আসুক। সমস্ত কুসংস্কার, সমস্ত আধার তাড়িয়ে।
পৃথিবীকে গড়ে তুলুক নতুন বাসযোগ্য ভূমি। যেখানে থাকবে না মিথ্যার কপটতা। বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলা থাকবে না কোনো স্বার্থপরতা। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
আসলেই, একজনের দরকার। সব মুছে নতুন হোক পৃথিবী।
নিরাপদে থাকেন।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ কথামালা। মায়াবী মানুষগুলোর বিশ্রাম দরকার। কেউ আসুক সে বারতা নিয়ে আমরা সে কামনাই করি।
আর হ্যা আবু সাঈদের পাশেই রাখুন তাহলে আমরাও এরকম রসালো কিছু পাবো। কথা, সুর, তাল, লয় সব ঠিকঠাক।
ভালোবাসা রইলো।
আরজু মুক্তা
তাল লয় ঠিক রাখতে হাত ব্যথাও বাড়ছে। তবুও লেখা চলুক।
নিরাপদে থাকুন। শুভ কামনা সবসময়