অবশেষে ছুটির ফাঁদ থেকে মুক্ত হলো দেশ। পুরোদ্দমে যার যার কর্মে ব্যাস্ত সবাই। শহরের রাস্তাগুলিও চিরচেনা জ্যামের শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে । কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা শহর। সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে এসে রহিমও ব্যাস্ত তার নিজ অফিসে কর্মজীবনে। কিন্তু রহিমের মা’য়ের ব্যাস্ততা কমেনি একটুও। প্রতিক্ষায় ছিলো শবে-বরাতে আসবে তার নাড়িছেঁড়া ধন একমাত্র আদরের পুত্র। এখনও জানালার শিঁকের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকেন রাস্তার পানে। এই বুঝি আসলো..!! কত মানুষ চলাফেরা করে। আসে-যায়। কিন্তু রহিম আসে না। মা’য়ের কান্না কেউ দেখতে পায় না। একটু ভয়ও পান স্বামীকে অর্থাৎ রহিমের বাবাকে। যদি বকা-ঝকা করেন। তাই রান্না ঘরে একা একা হাঁড়িতে খুঁন্তি দিয়ে ভাত নাড়া-চড়া করেন আর আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুঁছে ফেলেন। মনে মনে ভাবনে কেন এমন হয়? রহিমের বোন বানু’ মাঝে মাঝে শিঁকায় ঝুলানো কুমড়ার মোরব্বার বোয়ামের পানে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে হয় একটুকরা মোরব্বার স্বাদ নেবার। কিন্তু অনেক কষ্টে লোভটি সংবরন করে রাখে। আর মনে মনে ভাবে তার একমাত্র ভাতিজি ফাতু’ আসবে। ফুফুর কাঁধে চড়ে শূণ্যে ঝুলানো বোয়াম থেকে কুমড়ার মোরব্বা নিজ হাতে নামিয়ে খাবে। চিনির রস বানুর মাথায় টপটপ করে ঝরবে। তাই নিয়ে ফুফু-ভাতিজির খুঁনসুঁটি লেগেই থাকবে। বানুর কল্পনা কল্পনাই রয়ে যায়। কক্সবাজার থেকে ফিরে এসে বউ তার শ্বাশুড়িকে ফোন কল দেয়। বলে আমরা ঢাকাতে এসেছি।
শ্বাশুড়ি মা’ বলেন বউ’মা বাড়িতে আসবা না?
রহিমের বউ উত্তরে বলে কিযে বলেন আপনি?
এতটা দূরের পথ ঘুরে এসে শরীরটা খারাপ করেছে। আর আপনার ছেলের অফিসও খুলেছে। এখন আর আসতে পারবো না।
তাহলে ফাতুকে দিয়ে রহিমকে পাঠিয়ে দিও মা”। নারিকেলের নাড়ু আর কুমড়ার মোরব্বা রেখেছি। নিয়ে যাবে তোমার জন্য।
শ্বাশুড়ীর আবেগের কথা শুনে বউ বলে আমার মেয়ে তো এসব পছন্দ করে না। আর আমিও ছোটবেলায় এসব খাবার খাইনি। আপনার নাতনির পছন্দ পিৎজা, বার্গার, বারবিকিউ আর ফাষ্টফুড। কিছু না বুঝেই জবাব দিলেন খুব ভালো খাবার বউমা’।
আমার দাদা ( রহিমের বাবা ) এখন আর তেমনটা চিন্তা করেন না। মাঝে মাঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন আর বলেন-
আ ল্লা হ।
বানুর বিয়ের চিন্তা দাদাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। আমাকে কল দিয়ে বললেন- ভালো একটা ছেলে দেখ বানুর জন্য।
আমি যেন ওর বিয়াডা দিয়া যবার পারি। ওর বিয়াডা অইলে মাইয়্যাডা আমার একটা ঠিহানা পাইবো।
উত্তরে আমি বললাম দেখবো।
আপনারাও দেখেবেন বানুর জন্য একজন সৎ ও চরিত্রবান ছেলে।
(চলবে)
৩০টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
আশা করি সবাই পড়বেন। কৃতার্থ থাকবো।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম মন্তব্য আপনিই করলেন !!
শামীম চৌধুরী
জ্বী আপু,
সবাইকে অনুরোধ করতে।
সাবিনা ইয়াসমিন
কিন্তু আমি প্রথম কমেন্ট দিতে চেয়েছিলাম ☹
শামীম চৌধুরী
ওহ…!!
সাবিনা ইয়াসমিন
হু 😔😔
সাবিনা ইয়াসমিন
এভাবেই ছুটি গুলো ফুরিয়ে যায়, রহিম সাহেবরা কাজেকর্মে যোগ দেয়। রহিম সাহেবদের স্ত্রীরাও আনন্দ ভ্রমনের ক্লান্তি নিয়ে দৈনন্দিন জীবন শুরু করে দেন। শুধু ফুরায় না, রহিম সাহেবদের মা-বোনের অপেক্ষার পালা। একমাত্র মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে তার সুখী জীবন গড়ার স্বপ্নটা নিয়ে বেঁচে থাকেন বৃদ্ধ বাবা।
আপনি লেখা চালিয়ে যান। আমরা পাঠক নিবিষ্ট পাঠকের মতো করেই পড়বো। খুব ভালো থাকুন, শুভ কামনা অবিরত। 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
খুব খুশী হলাম আপু সাথে থাকার জন্য।
শুভ কামনা রইলো আপনার জন্যও।
মাছুম হাবিবী
চলবে মানে একদম দৌঁড়াবে অনেক সুন্দর গল্প।
শামীম চৌধুরী
ভাই, দৌড়াতে দৌড়াতে যেন হাঁপিয়ে না উঠে। সেদিকটাও খেয়াল রাখবেন।
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো আমার কল্পনাটা আপনাকে জানাতে পারলাম বলে।
ছাইরাছ হেলাল
সাথে কিন্তু আছি, ছিলাম যেমন,
দেখি আপনি কঠিন বাস্তবতায় আমাদের কোন ঘাটে নিয়ে যান!
শামীম চৌধুরী
হেলাল ভাই,
আপনার সুন্দর ও গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আর ভয়ও কাজ করছিলো এই ভেবে যে আপনাদের সামনে কি লিখছি?
ভালো থাকবেন ভাই। ভালোবাসা অবিরাম।
ছাইরাছ হেলাল
আমরা এখানে আমরাই, লিখুন, ভাল বা অন্য কিছু বললে বন্ধু ভেবে গ্রহন করবেন।
আমরা সবাই ছাত্র।
সঞ্জয় মালাকার
অনেক ভালো লাগলো আপু।
শামীম চৌধুরী
খুব মজার লোকতো আপনি আপু।
মোঃ মজিবর রহমান
খাবারের কাহীনিটা ভাল লেগেছে ভাইজান।
ার ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করেনি কিন্তু বাস্তবতায় রেখেছে।
শামীম চৌধুরী
জ্বী মজিবর ভাই। এ যুগের বউ ও কন্যাতো। তাই এসব খাবারেই অভ্যস্ত। শিকায় তোলা মোরব্বা ও নারিকেলের নাড়ুর মর্ম কি করে বুঝবে। তবে আমার কিন্তু খুব পছন্দের খাবার।
ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা এইসব খাবারের স্বাদ এখনকার মানুস বুঝবেনা এটা জানি।
শাহরিন
ভাইয়া আছি, আজকের গল্পটা আরেকটু বড় হলে ভাল হতো, রেডী হয়ে বসলাম পড়ার জন্য, তারপর…….
শামীম চৌধুরী
শাহরিন ভাই।ছোট আকারে কয়েক পর্বে লিখলে পাঠক পড়ার উৎসাহ পাবে আর ঘটনা চক্র পাঠকদের চোখে চোখে থাকবে। আপনার গল্পটার শেষ পর্যন্ত পড়ার প্রস্তুতির কথা শুনে কৃতজ্ঞ।
ভালো থাকবেন সবসময়।
শাহরিন
আমি আপু🙃
শামীম চৌধুরী
ওরে আমার কপালরে। মুই মোর আপুরেও চিনলাম না।
মনির হোসেন মমি
দেখা যাক পরের পর্বে কি ঘটে,কি আছে বানুর ভাগ্যে।লেখাটা খুবই ভাল লাগছে…কষ্ট লাগছে মা বাবার জন্য।
শামীম চৌধুরী
মমি ভাই আপনি একজন দক্ষ লেখক ও কবি। যে কোন লেখকই তার গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে পাঠকদেরকে উত্তেজিত রাখার জন্য। ভাবছি এমন ভাবে শেষ করবো যেন পাঠক কোনদিন চিন্তা করতে না পারেন।
অনেক ধন্যবাদ মমি ভাই।
মনির হোসেন মমি
মনে মনে একটা দৃশ্য ভেবে রেখেছি…দেখা যাক।মিলে কি না।তবে মিথ্যে বলবো না মিলে গেলে বা না গেলে যাই হোক সত্য বলব।আপনার লেখার ভক্ত হয়ে গেলাম।চমৎকার ভাবে উপস্থপনে পারদর্শি আপনি।শুভ কামনা রইল।
আরজু মুক্তা
সবাই অপেক্ষা করে।।ফুরায় না এ চাওয়া।আমি ও অপেক্ষা করছি গল্পের শেষ কোথা
শামীম চৌধুরী
মুক্তা আপু,
গানের সুরে বলি
এ গল্প যদি শেষ না হয়
তবে কেমন হতো বলেনতো আপু?
তৌহিদ
সকল মায়েদের এমন আশা পূর্ন হোক। সময় চলে যায়, আশারা আশাহত হয়ে পড়ে রয় মনের কোণে। ব্যস্ততা দেয়না ক্ষনিকের অবসর।
শামীম চৌধুরী
চিরন্তন সত্য কথা তৌহিদ।
ভালোবাসা অবিরমা।
জিসান শা ইকরাম
মা বাবার আবেগ এমনই ভুলন্ঠিত হয় আজকাল অনেকক্ষেত্রে।
বানু একজন ভাল বর পাক।
শুভ কামনা।