নিশ্চুপ পৃথিবীটা আবার কর্মচাঞ্চল্যে জেগে উঠুক খোদা। আর তো ভালো লাগছে না। কর্মহীন জীবন যে বড়ই কষ্টের।
আমরা মানুষেরা পৃথিবীটাকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছিলাম। আমাদের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায় পৃথিবী তার স্বাভাবিক রূপ হারাতে বসেছিল। প্রকৃতি রুগ্ন হয়ে গিয়েছিল। আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম পৃথিবীতে আরো আরো আরো প্রাণীর অধিকার আছে।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীব করোনা ভাইরাস আমাদের গৃহবন্দী করে প্রকৃতিকে জেগে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে। হাসি ফুটেছে প্রাকৃতিক জগতে। আমরা অনুভব করছি আমরা এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। সাময়িক থাকা যায় যদিও এবং থাকছিও। কিন্তু কতোদিন? মানুষ তো সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়েই মানুষকে চলতে হয়।
জানি, দুঃসময় দীর্ঘদিন থাকেনা। করোনাকালও থাকবে না, কেটে যাবে একদিন। কিন্তু সে স্বাভাবিক দিনটা যে কবে আসবে সেই অপেক্ষাতেই প্রহর কাটছে।
ভাবছি, রমজান মাস তো শুরু হলো। রমজানের পরই ইদ। এবারের ইদটিও কী তবে ঘরে বসেই কাটবে যারযার মতো করে অসামাজিক নিয়মে? অথচ ইদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই না, পাশাপাশি একটি সামাজিক উৎসবও।
মাসব্যাপী রমজানের প্রার্থনা কি আমাদের করোনামুক্ত পৃথিবী ফিরিয়ে দেবে না? পাপ আমরা আসলে অনেক বেশিই করে ফেলেছিলাম। আমাদের সীমালঙ্ঘন ঘটেছিল মারাত্মকভাবে। করোনাকাল কী আমাদের মধ্যে বোধের জাগরণ ঘটাতে পেরেছে? বিচ্ছিন্ন হয়ে টিকে থাকা যে সম্ভবপর নয়, সেটা কি আমরা অনুভব করতে পারছি? আমরা প্রতিনিয়ত কি অনুভব করছি না যে আমরা সামাজিক জীব? আমরা একে অন্যের পরিপূরক, চাইলেই একা একা জীবন যাপন করা যায়না। বন্দী থেকে থেকে আমাদের নাভিশ্বাস ওঠেছে। আমরা মুক্তির অপেক্ষায় হাহাকার করছি। আমাদের মুক্ত জীবন আমাদের মধ্যে যে বেপরোয়া গতি এনে দিয়েছিল আমরা সেটা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এবার অঙ্গীকারাবদ্ধ হই পরষ্পর পরষ্পরের প্রতি সহযোগী মনোভাবাপন্ন হয়েই পথ চলবো। আমাদের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ প্রকৃতির জন্যও আশীর্বাদ হবে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে, পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারস্পরিক সহযোগিতাই একমাত্র পথ। আমাদের বোধের পূর্ণতা আসুক।
আজকের রিপোর্ট অনুযায়ী করোনায় পৃথিবীতে মৃত্যু প্রায় দুই লাখ ছুঁইছুঁই, আক্রন্তের সংখ্যাও ত্রিশ লাখের ঘরে আসতে খুব বেশি দেরি নেই। করোনা মোকাবেলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যে দেশেই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হোক সমভাবেই সারাবিশ্বে বন্টন করা হবে। বিশ্বনেতারাও একমত হয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সে পরিকল্পনায় এখনো সম্মতি দেয়নি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই শক্তির আচরণে দম্ভভাব এখনো কাটেনি, অথচ সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা তাদেরই।
আশা রইলো, দ্রুতই তাদের মধ্যেও বোধের জাগরণ ঘটবে। যদি ঘটে, তবেই পৃথিবী আবার পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণভাবে জীবন যাপন করবে।
৯টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অনন্য লেখা। শুভেচ্ছা । দোয়া রইলো আপনিও করবেন
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অবশ্যই ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার লেখনীটা অসম্ভব ভালো লেগেছে। সবাই কি এভাবে ভাবছি আমরা? আমরা তো করোনার প্রাদুর্ভাব চলে গেলেই নিজেদের অহংকার জাগিয়ে তুলবো। যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার এখনো বজায় রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কতটা বদলাবো আমরা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ধন্যবাদ আপনাকে
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অহংকার নয়, পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ আচরণই মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একা মানুষ নয়, বন্যপ্রাণী পর্যায়ে চলে যায়।
কামাল উদ্দিন
কর্মচাঞ্চল্যে যেন পৃথিবীকে আমরা আবারো বিষাক্ত করে না ফেলি সেদিকে নজর রাখতে হবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অবশ্যই। পরিবর্তন তো একটা আসবেই, কিন্তু কেমন পরিবর্তন নিয়ে আসবে তাই বিষয়।
কামাল উদ্দিন
সেই সময়টা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তায় আছি আপু।
হালিম নজরুল
আবার সমহিমায় জেগে উঠবে পৃথিবী
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সে আশাতেই পথ চেয়ে!