কথোপকথন -৬
ফজলে রাব্বী সোয়েব…
মৌ এর আজ মন ভাল নেই। রাতুল আজ চলে যাচ্ছে কানাডা।মনে হচ্ছে, তার জীবন থেকেও হয়তো দূরে সরে যাবে রাতুল। রাতুল মৌকে জড়িয়ে রেখেছে বুকের মধ্যে। মৌ রাতুলের শরীরের ঘ্রাণ নিচ্ছে, হয়তো শেষ বারের মতো। কাঁদছে মৌ ফুঁপিয়ে, রাতুল টের পেল।
রাতুল- কী হলো? কাঁদছো কেন?
মৌ- আমাদের কী আর দেখা হবে না? ওখানে গিয়ে ভুলে যাবে নিশ্চয়ই।
রাতুল- দূর বোকা! কী বলো এসব। তোমাকে তো মরে গিয়েও ভুলবো না। ভূত হয়ে এসে তোমাকে মরার পরেও বিরক্ত করবো।
মৌ- বাজে কথা বলার স্বভাবটা আর গেলো নাহ। যাও, তোমার সাথে আর যোগাযোগ করবো না। (অভিমান সূচক সুর)
রাতুল- ঠিক আছে, আর বলবো না। দুটো বছর একটু ধৈর্য্য ধরো। আমাকে তো দেখতে পাবেই এই ডিজিটাল যুগে, শুধু আমার স্পর্শ পাবে না।
মৌ- সেটাই ত ভয় হয়। ভয় হয়, আমাদের অনুভূুতিগুলো যদি মরে যায়? আমাদের সুখ দু:খগুলো যদি নির্বিষ হয়ে যায়! তখন কী হবে?
রাতুল- দূর! কী যে বলো না! আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে বলো তো, এমন হওয়ার কী কোন সম্ভাবনা আছে?
মৌ- আমার ভয় হচ্ছে খুব। তোমার স্পর্শ, তোমাকে কাছে পাওয়ার সুখানুভূতি এসব তো আর থাকবে না। তাই প্রচন্ড ভয় হচ্ছে।
রাতুল- দূর বোকা মেয়ে! এসব কী বলো! আরে, তোমার চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে কেন? রাতে কি ঘুম হয় নি?
মৌ- না। দু রাত এক ফোঁটাও ঘুম নেই। কেন জানি তোমাকে হারানোর ভয় ঢুকে গেছে মনের মধ্যে। মনে হচ্ছে, কেও এসে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জানো, প্রচুর কাঁদছি গত দু দিন।মনে হচ্ছে, এই বিরহের চেয়ে মরে যাওয়াটাই ভাল ছিলো।
রাতুল- চুপ। এসব একদম বলো না। এরকম করলে আমি কিন্তু যাবো না।
মৌ- আচ্ছা, ঠিক আছে।আর বলবো না। জানো, কাল সারারাত তোমার সেই পছন্দের গানটা শুনলাম।
‘ কাঁদালে তুমি মোরে, ভালোবাসারই ঘায়ে…….’। এত কান্না পাচ্ছিলো আমার!
রাতুল- দূর বোকা মেয়ে। আমার বোধহয় আর যাওয়া হয়ে উঠলো না।থেকেই যাই।
মৌ- না না। যাবে, অবশ্যই যাবে। তোমাকে হয়তো একটু বেশিই ভালোবাসি, তাই অমনটা হচ্ছে। হেক না, এর মাঝেও তো সুখ আছে, আনন্দ আছে। কষ্টের মাঝেও অনেক সময় সুখ খুঁজে পাওয়া যায়।
রাতুল- বাহ। দারুণ বলেছো তো। তোমাকে কেন যেন অনেক ম্যাচুরড লাগছে আজ।
মৌ- যাহ্। আমি কি ইম-ম্যাচুরড ছিলাম নাকি। তবে হ্যাঁ, তোমার ভালোবাসা বদলে দিয়েছে আমাকে, আগের চেয়ে অনুভূতিগুলো এখন বেশি নাড়া দেয়।
রাতুল – এসো, আজ আমরা পুরোটা দিন রিকশায় ঘুরবো।বৃষ্টিতে ভিজবো।আবহাওয়াটা খুবই রোমান্টিক, তাই না?
মৌ- আচ্ছা, চলো।
ওরা দুজন রিকশায়। আষাঢ় মাসের একটি গুমোট দিন। যে কোন সময় ডুকরে কেঁদে উঠবে আকাশখানা।বাতাসে উড়ছে মৌ এর চুল আর তা গিয়ে পড়ছে রাতুলের মুখে। বড্ড ভাল লাগছে রাতুলের।তবে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাচ্ছে খুব।প্রায় ৩০ মিনিট পর নীরবতা ভাঙলো মৌ।
মৌ- আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর না!
রাতুল- হুম। এই দিনটা আজ এমন সেজেছে বোধ হয় তোমার জন্য, আমাদের ভালবাসার জন্য।
মৌ- এভাবে যদি প্রতিটি দিন আমাদের জন্য সাজতো, তাহলে কত্ত মজা হতো তাই না! মন চাইলেই বৃষ্টিতে ভিজতাম, মন চাইলেই ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যেতাম কিংবা মন চাইলেই ফুলের মিষ্টি সুবাস নিতাম!আবার কখনো মন চাইলেই নীল আকাশে ভেসে যাওয়া ওই সাদা মেঘ দেখতাম!
রাতুল- বাহ্।দারুণ, কল্পনা শক্তি তোমার। যদি এমন হতো, তবে দারুণ হতো। প্রকৃতির সাথে আমাদের ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতো।
হঠাৎ আকাশ কেঁদে উঠলো, ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ওরা দুজন বৃষ্টিতে ভিজছে। রাতুলের কাঁধে মাথা রাখলো মৌ। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অবিরত। আকাশের কান্নার সাথে মিশে যাচ্ছে তার কান্না। রাতুল তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। এবার সে আর মৌ এর কান্না টের পায় নি।
৪টি মন্তব্য
সৈকত দে
অনেক সুন্দর প্রচেষ্টা। মোটেও মন্দ হয়নি।
হালিমা আক্তার
বেশ ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ।শুভ কামনা রইলো।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।