এক মুঠো ভালোবাসা ( ২৪ তম পর্ব)

ইঞ্জা ১২ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩০:১০অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

সবার খাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে, ছায়া নিজের বানানো ফুড কাস্টার্ড নিয়ে এলো, সবাইকে বাটি ভর্তি ফ্রুট কাস্টার্ড সবার হাতে হাতে তুলে দিয়ে এক বাটি নিয়ে অনিকের রুমের দিকে এগুলো।

অনিকের রুমে নক করলে অনিক দরজা খুললে ছায়া বাটিটা এগিয়ে দিলো।
ছায়া ভিতরে আসো, বসো।
খুব টায়ার্ড না?
হুম তা তো একটু আছিই।
ওহ একদম ভুলে গিয়েছিলাম, লেভিন একটা ডকুমেন্টস দিয়ে গেছে।
হুম কথা হয়েছে।
আমি নিয়ে আসছি বলেই ছায়া উঠতে গেলো।
দরকার নেই, তোমার কাস্টার্ড কই?
আছে পরে খাবো।
কোন সমস্যা হয়নি তো এ কদিন?
না কিসের সমস্যা, সব ঠিক ছিলো।

অনিক ব্রেসলেটটা হ্যান্ডব্যাগ থেকে বের করে ছায়াকে দিয়ে বললো, এইটা তোমার জন্য।
ছায়া হাত বাড়িয়ে নিয়ে ভালো করে দেখে বললো, এতো অনেক দামী, এ আমি নিতে পারবোনা।
কেন নিতে পারবেনা?
না আমি নিতে পারবোনা।
নাও মা, নাও, এইটা আমি চয়েজ করে কিনেছি।
কখন যেন অনিকের মা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন ওর কেউ খেয়াল করেনি।
মা আসো, দরজায় দাঁড়িয়ে কেন, অনিক বললো।
মেয়েটির দেখছি আত্মসম্মানবোধ বেশ, মুগ্ধ চোখে অনিকের মা বললেন।
অনিক হাসলো, ছায়া মাথা নত করে আছে।

আন্টি আমি এতো দামী জিনিস নিতে পারবোনা, ছায়া মিনমিন করে বললো।
ছায়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন অনিকের মা, বালাটা নিজের হাতে ছায়াকে পড়িয়ে দিয়ে বললেন, মা দিলে না করতে পারবে?
ছায়া চুপ করে গেলো।

পরদিন সকাল সকাল ছায়া উঠে পড়লো, ফ্রেস হয়ে এসে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে লেগে গেলো, কিছুক্ষণ পর অনিকের মা এলেন কিচেনে।
সালামালেকুম আন্টি।
ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কি করছো?
ব্রেকফাস্ট রেডি করছি?
না মানে কি কি তৈয়ার করছো?
তেমন কিছু না আন্টি, মুরগীর কলিজি গুর্দা ফ্রাই, মিক্সড ভেজিটেবল এবং ডিম, সাথে লুচি।
বাহ, বেশ বেশ, আমি হেল্প করি তোমাকে, বলেই উনি লুচি বেলতে শুরু করলেন, ইতিমধ্যে অনিকরা সবাই চলে এলো ডাইনিংয়ে, ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে সবাই আড্ডায় মজে গেলো।
অনিক মনে আছে আজ আফরিনের বাসায় দাওয়াত, অনিকের মা স্মরণ করিয়ে দিলেন।
হাঁ মা মনে আছে, ছায়া, আনকেল আপনাদেরকেও দাওয়াত দিয়েছে ও।
তাই, ঠিক আছে সবাই যাবো ইনশা আল্লাহ, রওশনের বাবা সায় দিলেন।

অনিক বাবা বলছিলাম কি, অনেকদিন দেশে যাওয়া হয়না, আমি আজ টিকেটটা করে ফেলতে চাইছিলাম আমাদের জন্য।
অনিক মনে এক ধাক্কা খেলো, অবাক হয়ে তাকালো ছায়ার দিকে।
কি বলেন ভাই, আমরা এলাম আর আপনারা চলে যাবেন, অনিকের বাবা বলে উঠলেন?
না মানে, অনেকদিন হলো তো?
ভাই তা হবেনা, আমরা এসেছি এক বিশেষ কাজে, আপনিও শরিক হোন আমাদের সাথে, এরপর নাহয় যাবো এক সাথে, অনিকের মা হাসতে হাসতে বললেন।

মা আমি উঠছি অফিসে যাবো, অনিক উঠে পড়লো নিজ রুমের উদ্দেশ্যে, রুম থেকে ওর বিজনেস ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসতেই চোখাচোখি হলো ছায়ার সাথে, দেখলো ছায়া চোখ নামিয়ে নিয়েছে।
কয়টায় আসবি, অনিকের মা জানতে চাইলেন?
সন্ধ্যার আগেই ফিরবো, বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো ও।
পিছন পিছন ছায়াও ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসে লিফটের সামনে চলে এলো।
কি হলো?
আগে বললে না তোমরা যাচ্ছো?
না এখন কই যাচ্ছি, শুনলে না আন্টি না করলো।
লিফট এসে যাওয়ায় অনিক উঠে পড়তেই ছায়াও উঠে গেলো।
তুমি রাগ করছো কেন অনিক, একদিন তো যেতেই হতো?
কেন তোমার পড়ালেখা শেষ।
না।
তাহলে?
বললাম তো এখন যাচ্ছিনা।
আচ্ছা আসি এখন।
আল্লাহ্ হাফেজ।
লিফটের দরজা খুলে গিয়েছে ইতিমধ্যে, অনিক বেরিয়ে গেলো, ছায়া লিফটে উপরে উঠে এলো।

ওদিকে ড্রয়িংরুমে অনিকের বাবা মা গল্প করছিলেন রওশনের বাবার সাথে।
ভাবী বললেন না কি বিশেষ কাজে আমাদের আটকালেন, রওশনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন?
ভাই আসলে আমরা এসেছি অনিককে বিয়ে করাতে।
তাই বাহ খুব ভালো হবে ভাবী।
আসলে গত ছয় বছরে আমরা ওকে বিয়ে করাতে উঠে পড়েছিলাম, কিন্তু ছেলেটা মানছে না, কিন্তু ও প্রতিবারই বিষয়টা এড়িয়ে যায়, অনিকের বাবা বললেন।
তাহলে তো থাকতেই হয় রাশেদ ভাই, এইবার আমিও ছাড়ছিনা, ওকে বিয়ে করিয়েই তারপর যাবো।
ছায়াকে বাইরে থেকে আসতে দেখে অনিকের মা বললেন, মেয়েটা বেশ লক্ষ্মী।
বড় এ নিশ্বাস ফেলে রওশনের বাবা বললেন, লক্ষ্মী তো অবশ্যই, সাথে জনম দুঃখি মা আমার।
অনিকের বাবা রওশনের বাবার হাত ধরে বললেন, ভাই আমি জানি, এই ক্ষতিটা আপনাদের দুজনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আমি দুঃখিত।

….. চলবে।
ছবিঃ গুগল।

৬৯৪জন ৫২৮জন

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ