ছায়া ছবিটির দিকে তাকিয়ে অতীতে ফিরে গেলো, ইউনিভার্সিটির দিন গুলোতে অনিক ছিলো তুখোড় ছাত্র নেতাদের একজন, রওশন ছিলো অনিকের বেস্ট ফ্রেন্ড, ছায়াদের নবীন বরণ অনুষ্টানের আয়োজন করে ছাত্র সংঘঠন, অনিক নেতাদের মতো দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে নতুনদের করণীয় বললো, সাথে নিজেদের সংঘটনে যোগদান করার আহবান জানালো, এরপর রওশনের পালা, রওশন সবাইকে বিমোহিত করে কবিতা পাঠ করলো।
ছায়ার নতুন ক্লাস শুরু হয়ে গেলো, নতুন পুরাতঅন বান্ধবীদের নিয়ে, একদিন হটাৎ হৈ চৈ শুনে সবার সবার সাথে বারান্দায় এসে দেখলো অনিক তিন চারটা ছেলেকে বেদম পেটাচ্ছে, ছেলে গুলো দ্বিকবিদিক পালাতে চাইলেও অনিক ধরে পিটাচ্ছে, সবার চোখ মুখ রক্তাক্ত, হাত জোর করে মাফ চেয়েও রেহাই নেই, এইসব দেখে আঁতকে উঠলো ছায়া, কিছুক্ষণ পর দেখলো দুইজন মেয়েকে অভয় দিতে দিতে উপরের ক্লাসে এনে বসিয়ে বললো, চিন্তা করোনা, আমরা থাকতে তোমাদের কোন ভয় নেই।
পুরা ইউনিভার্সিটির স্টুডেনটদের মধ্যে রওশন সবার প্রিয় ছিলো আর অনিক ছিলো মূর্তিমান আতংক যেন, সবাই ওকে দেখলে ভয়ে কুঁকড়ে যেতো।
যেকোন সমস্যার সমাধান করতে এক পায়ে খাঁড়া থাকতো রওশন, ওদিকে যত মারামারি কাটাকাটি সব গুলোতেই অনিক আগে থাকতো।
ছায়া এসাইনমেন্ট ডকুমেন্টস সাইন করাতে পারছিলোনা, ওগুলো জমা দিতে হবে দ্রুত, রওশন এগিয়ে এসে দ্রুত করিয়ে দিলো, একদিন ছায়া অনিকের সামনে পড়ে গিয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো, রওশন এগিয়ে এসে বলেছিলো “ওকে ভয় পাচ্ছো কেন, ওর মতো ছেলে তুমি পুরা ইউনিভার্সিটিতে পাবেনা”, এরপরেও অনিককে ভয় পেতো ও।
বিভিন্ন কারণে ছায়া রওশন কাছাকাছি এসেছিলো, প্রেম হয়ে গিয়েছিলো ওদের মাঝে।
অনিক আর রওশন ছিলো যেন জমজ সবসময় এক সাথে চলাফেরা করতো, স্বাভাবিক ভাবে ছায়ার সাথে এক সময় বন্ধুত্ব হয়ে যায় অনিকের, ওরা তিনজনই প্রায় এক সাথে চলাফেরা করতো।
একদিন অনিক ছায়াকে প্রেম নিবেদন করে, ছায়া প্রথমে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়ে, ওর হাত পা কাঁপছিলো, অনেক করে নিজেকে সংযত করে জবাব দেয়, ” অনিক আপনি রওশনের সাথে একবার কথা বলুন”।
কেন, কেন রওশনের সাথে কথা বলবো, অনিক আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে।
প্লিজ আপনি রওশনকে বলুন।
অনিক চিন্তিত মনে গিয়ে ধরলো রওশনকে।
এর এক মাস পর্যন্ত অনিক আর ইউনিভার্সিটি আসেনি, এক মাস পর এসেছিলো শুনেছে ছায়া, কিন্তু পরে জানতে পারে ইউনিভার্সিটি থেকে ওর কাগজপত্র উইতড্র করে নিয়ে যায় অনিক, এরপরের মাসে রওশন বললো ও খবর পেয়েছে অনিক আমেরিকাতে চলে যাচ্ছে।
শুনে ছায়ার মাঝে কোনো বিকার না থাকলেও রওশন খুব মুচড়ে পড়েছিলো, ছায়া বুঝতো ওরা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ ছিলো, ওদের ছিলো হৃদয়ের বন্ধন, যে বন্ধন ওদের ছিন্ন হচ্ছিলো, স্বাভাবিক ভাবে ছায়া নিজেকেও দোষী ভাবতে শুরু করে কিন্তু এরই মাঝে ওরা দুজনের বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়াতে দুজনই স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
ছায়া যখন অনিককে এইখানে দেখে তখন ও আশ্চর্য হয়েছিলো, ওর আচার ব্যবহার দেখে এখনো আশ্চর্য হয়, যে অনিককে সে আগে দেখেছে সেই অনিক যেন কোথায় হারিয়ে গেছে, নেই সেই আগের মেজাজ, নেই ওর রাফ এন্ড টাফ চরিত্র, এখন অনেক ধীর স্থীর, শুধু বদলেছে ওর সিগারেট খাওয়া, মদ খাওয়া, যা আগে কখনো দেখেনি ছায়া, এখন অনেক শান্ত হয়ে গেছে অনিক।
বড় এক নিশ্বাস ফেললো ছায়া, এরপর সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
মা ছায়া এদিক আয় তো মা, ড্রয়িংরুম থেকে রওশনের বাবা ডাক দিলেন।
জ্বি বাবা কিছু লাগবে?
না মা আমার কিছু লাগবেনা, শুন ঘরে বাজার সদাই কিছু আছে?
কেন বাবা?
আরে অনিকের বাবা মা আসবে, ভালো কিছু রান্না করে খাওয়াবি না?
তা তো অবশ্যই বাবা, কিছুক্ষণ পর বেরুবো।
শুন অনিকের বাবা হাঁশ বেশ পছন্দ করে, এইখানে কি পাবি?
বাবা এইখানে সবই পাওয়া যায় কিন্তু আপনি তো খেতে পারবেননা।
আমি, আমি এক পিছ খাবো আর কি, এতে আর কি হবে, হে হে হে হে করে হাসলেন রওশনের বাবা।
অন্য দিকে হংকংয়ে লম্বা ঘুম দিয়ে জেগে উঠলো অনিক, হাত ঘড়িতে দেখলো সকাল ৭ টা, অনিক উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলো টয়লেট থেকে, এরপর ওর বাবাকে জাগিয়ে দিলো।
অনিক ইন্টারকম উঠিয়ে পাশের রুমে কল দিলো, দুইটা রিং বাজতেই আফরিন রিসিভ করলে অনিক বললো, তোমরা দ্রুত রেডি হয়ে চলে আসো, ব্রেকফাস্ট করতে হবে।
আটটার দিকে সবাই মিলে দোতলার রেস্টুরেন্টে চলে এলো, সবাইকে বসিয়ে অনিক ওর মা বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, কি খাবে তোমরা?
তুই যা তোরটা নিয়ে আয়, আমাদেরটা আমরাই নিয়ে নেবো, অনিকের মা বললেন।
সবাই গিয়ে বুফে থেকে যার যার চয়েজ মতো ব্রেড, অমলেট বা কেউ পোস্ট এগ নিলো, অনিক নিলো চায়নিজ বান (এক ধরণের চার কোনা রুটি যা দেখতে পিঠার মতো), সাথে সবাই অরেঞ্জ জুস নিলেও অনিক নিলো গরম এক গ্লাস দুধ।
কিরে তুই দুধ নিলি, অনিকের বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
বাবা মাঝে মাঝে খাই আমি, হেসে জবাব দিলো অনিক।
ওহ তাই, ভালো ভালো।
তা এই চায়নিজ বান খেতে তোর ভালো লাগে, আমার কখনো ভালো লাগেনি, বলেই ডিম কেটে মুখে দিলেন।
বাবা তোমার ভালো লাগেনি, কি বলো এতো খুব টেস্টি হ্যান্ডমেইড।
ইয়াক, বলে ব্রেডে কামড় দিলেন উনি।
স্যার আমি একটা নিয়ে আসি আপনার জন্য, খেয়ে দেখুন আরেকবার, আফরিন জিজ্ঞেস করলো।
না না আমি যা খাচ্ছি তাতেই ঠিক আছি, আর তুমি আমাকে স্যার স্যার করছো কেন, তুমি তো আর আমার জব করো না, তুমি আমাকে আনকেল ডাকতে পার।
জ্বি আনকেল, হেসে বললো আফরিন।
………চলবে।
ছবিঃ গুগল।
পূর্বের গল্পঃ
৩৭টি মন্তব্য
মোস্তাফিজুর খাঁন
প্রথম হলাম ।
ফিরে আসছি । ভাইজান
মোস্তাফিজুর খাঁন
গল্পটা সিনেমার মত চোখের সামনে ভাসছে ।
খুব সুন্দর একটা গল্প পড়লাম,,, ভাইজান ।
ইঞ্জা
অশেষ ধন্যবাদ ভাই, আপনার মন্তব্য আমাকে আরও ভালো লেখার জন্য অনুপ্রেরিত করবে। 😊
ইঞ্জা
😍
মোস্তাফিজুর খাঁন
ভাইজান, আমার কিন্তু রহস্য চাই ।
ইঞ্জা
কেমন রহস্য চান ভাই খুলে বলুন?
আরজু মুক্তা
গল্প কিন্তু ভালোই জমছে।
শুভকামনা, ভাই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অহর্নিশ প্রিয় আপু। 😊
ছাইরাছ হেলাল
ফ্লাশ ব্যাক চালু হলো, সেটার সত্যি দরকার ছিল। এবার বুঝতে পারছি অনেক পর্ব
পাচ্ছি আমরা, সেটাই চাইছি।
ইঞ্জা
প্রথম পর্বে অনিকের চরিত্র, রওশন ও ছায়ার প্রেম পর্ব প্রায় সবার কাছে অজানা ছিলো, আজকের পর্বে তা উঠে এলো ভাইজান, পাশে থাকবেন, ধন্যবাদ। 😊
রেজওয়ান
অসাধারণ এক উপন্যাস পড়ছি! পরের পর্ব তাড়াতাড়ি আসবে আশাকরি❤
ইঞ্জা
আসলে সময় থাকলে দ্রুত লিখে ফেলি, কিন্তু নিনের পেটের কথা তো আগে আসে নাকি? 😂
রেজওয়ান
হ্যাঁ ভাইজান😂চালিয়ে যান❤
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ
সঞ্জয় মালাকার
অনেক ভালো লাগার একটা গল্প,
পড়ে বেশ ভালো লাগা দাদা।
কিছু পর্ব পড়া হয়নি আমার সময়ের অভাবে,
সে জন্য আমি দুঃখিত।
শুভ কামনা দাদা।
ইঞ্জা
আপ্লুত হলাম দাদা, যে কয়টি মিস করেছেন তা এই ব্লগেই পড়ে নিতে পারেন। 😊
সঞ্জয় মালাকার
অবশ্যই পড়বো দাদা, ,
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
মোঃ মজিবর রহমান
সরি লাস্টের দুই লাইন উপরের শেস লাইনে জব হব অব হয়ে আছে সঠিক করুন।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ঠিক করে দিয়েছি। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ
ইঞ্জা
অপরিসীম ভালোবাসা 😍
মোঃ মজিবর রহমান
অনবদ্য ভাল লাগছে ভাইয়া। খুব উপভোগ্য।
ইঞ্জা
আপ্লুত হলাম ভাই, ধন্যবাদ অহর্নিশ। 😍
মোঃ মজিবর রহমান
অহরনিশ ভালবাসা
ইঞ্জা
😍💕
নিতাই বাবু
সাথে আছি দাদা। চলুক পর্ব সাথে থাকবো আশা করি।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম দাদা। 😊
তৌহিদ
ত্রিভুজ প্রেম কাহিনী তাহলে কলেজেই শুরু হয়েছিলো!! অনিকই আসল ছাত্রনেতা ছিলো। মাইরের উপ্রে ওষুধ নাই। রওশন ছিলো কবি। এ দু’য়ের মাঝখানে এসেছিলো ছায়া!!
ভালো লাগলো দাদা, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
প্রথম পর্বে ইচ্ছাকৃত ভাবে আমি অনিক, রওশন ও ছায়ার কাহিনী লিখি নাই, যা এই পর্বে এসেছে। 😊
ধন্যবাদ প্রিয়, দোয়া রাখবেন। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
ভাই ইম কোণ চেহারা কি চিনব কিভাবে।
💜💟❤💙💛💚💓
ইঞ্জা
বুঝলামনা ভাই, ফিচার ছবির কথা বলছেন?
ফিচার ছবিটা ছায়ার দ্বিধাদ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছে। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
মেয়েরা কবিদের প্রেমে পরে এটাই বাস্তব। লড়াকু অনিকের চাইতে নরম মনের অনিককে তাই এতো ভালো লাগছে ছায়ার কাছে।
ভাইজান, পর্ব যেহেতু আরো বাড়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি, সেহেতু গল্পটি উপন্যাস ক্যাটাগরিতে ট্রান্সফার করেন। ভালো হবে তাহলে।
শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, সুন্দর মন্তব্য দিলেন, বিশ্লেষণও চমৎকার।
আপু আমি যখন একটি গল্প লিখি, তা কত পর্বে শেষ হিবে তা হিসাব করিনা, যেমন সবাই মনে করেছিলো “নদী” গল্পটা উপন্যাস হবে কিন্তু তা দ্রুতই শেষ হয়ে যায়, তেমনি এই গল্প কতদূর যাবে তা সময় বলে দেবে, দেখি ভবিষ্যতে কি হয়, ধন্যবাদ প্রিয় আপু। 😊
মনির হোসেন মমি
নীরবে স্বেচ্ছায় বনবাসী হল অনিক।বন্ধুর প্রতি বন্ধুর এ মানবিক গুণ না থাকলে কি তারে আর বন্ধু বলা যায়!! খুব সুন্দর উপস্থাপনা। চলুক।
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাই, আজকাল এমন বন্ধু কই পাবেন?
পাশে থাকবেন ভাই।
ভালোবাসা অনিঃশেষ। 😍
কামাল উদ্দিন
অনিক তাহলে এক সময় ক্যাডার ছিল, আসলে এমনি হয়, অনেক দেখেছি সংসারের জোয়াল কাধে পড়লে ওদের চেয়ে ভদ্র আর হয় না। তবে অনিক তো মূলত ছ্যাকা খেয়ে সোজা হয়ে গেছে, কি বলেন ভাই? কোন দিন সুযোগ হলে চাইনিজ বান চেখে দেখবো।