এক পিতার মহানুভবতা

শাহানা আক্তার ২৫ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ০১:৪৮:৩০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, বিবিধ ৬ মন্তব্য

একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনেঃ

প্রিয়ার বয়স যখন পাঁচ বছর তখনই প্রিয়ার মা মনিকা মারা যায়। প্রিয়ার দেখাশোনা করার জন্যই হোক বা নিজের সংসারের প্রয়োজনেই হোক প্রিয়ার বাবা শান্তনু আবার বিয়ে করে। যাকে বিয়ে করে তার নাম জয়া। জয়ারও আগে একটি বিয়ে হয়েছিল সে সংসারে ঝুমা নামের ছয় বছরের একটি মেয়ে আছে। যাইহোক, ঝুমা এবং প্রিয়া এই দুই মেয়েকে নিয়ে জয়া ও শান্তনুর সংসার বেশ ভালোই চলছিলো। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন জয়ার আগের প্রেমিক নিখিলের সাথে জয়ার দেখা হয়ে যায়। এরপর থেকে নিখিল প্রায়ই জয়ার সাথে দেখা করতে তাদের বাসায় আসতো। শান্তনুর চোখে একদিন নিখিল আর জয়ার ব্যাপারটা ধরা পড়ে যায়। জয়া অনুতপ্ত হয় এবং শান্তনুর কাছে ক্ষমা চায়। শান্তনু উদার মনের মানুষ সে জয়াকে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু জয়া আর নিখিলের যোগাযোগ তবু বন্ধ হয়নি। তারা একে অন্যের সাথে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ে। দুজনে এখন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু নিখিলতো বেকার ছেলে। এই বেকার অবস্থায় ঘর বাঁধলে তাদের চলবে কি করে। এজন্য তারা প্রিয়াকে অপহরণের এক ভয়ংকর পরিকল্পনা আঁটে। অপহরণের মুক্তিপণের টাকা দিয়েই তাদের বেশ চলে যাবে এই ভাবনা থেকেই প্রিয়াকে অপহরণ করে। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী জয়া নিজেই প্রিয়াকে নিখিলের হাতে তুলে দেয়। শান্তনুর কলিজার টুকরা এই প্রিয়া। প্রিয়ার জন্য শান্তনু যেকোন কিছু করতে পারে। প্রিয়ার নিখোঁজ হবার সংবাদে শান্তনু পাগলের মতো হয়ে যায়। সে প্রথমেই প্রিয়ার নিখোঁজ হবার সংবাদটি পুলিশকে জানায়। সন্দেহের তালিকায় নিখিলকেও রাখা হয়। শান্তনুর ধারনা ছিলো যেহেতু শান্তনুর কারনে নিখিল জয়াকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারেনি তাই হয়তো শান্তনুর প্রতি ক্ষোভ থেকেই সে প্রিয়াকে অপহরণ করেছে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও সে একবারের জন্যেও জয়াকে সন্দেহ করেনি। পুলিশ তাদের তদন্ত শুরু করেছে। নিখিলকে খুঁজতে শুরু করেছে। এদিকে শান্তনু পুলিশকে সব জানিয়ে দিয়েছে বলে জয়া ভয় পেয়ে নিখিলকে ফোন করে বলে দেয় প্রিয়াকে মেরে ফেলতে। কারন প্রিয়া যেহেতু নিখিলকে চিনে ফেলেছে তাই প্রিয়া জীবিত ফিরে এলে জয়া নিখিল দুজনেই ধরা পড়ে যাবে। জয়ার কথা অনুযায়ী নিখিল প্রিয়াকে মেরে ফেলে। এর পরপরই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নিখিল। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সবকিছুই স্বীকার করতে বাধ্য হয়। জয়ার বুদ্ধিতেই সে সবকিছু করেছে তাও বলে। পুলিশ জয়াকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রিয়ার অপহরণের সাথে জড়িত থাকার কথা জয়া অনবরত অস্বীকার করে। পুলিশ হয়তো জয়ার কথা বিশ্বাস করতো, জয়া হয়তো বেঁচেই যেতো যদি প্রিয়াকে অপহরণের সময় ঝুমা আড়াল থেকে সবকিছু দেখে না ফেলতো এবং ওদের সবকথা শুনে না ফেলতো। ঝুমা ওর নিজের মায়ের বিরুদ্ধে প্রিয়ার অপহরণের ঘটনার সাক্ষী দেয়। প্রিয়াকে অপহরণ এবং খুনের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে জয়াকে গ্রেফতার করা হয়। বিচার চলছে, উপযুক্ত শাস্তি হবে নিখিল ও জয়ার। জয়ার এমন ঘৃণিত কাজে জয়ার বাবার বাড়ির লোকজন লজ্জিত। তারা ঠিক করে ঝুমাকে তারা তাদের নিজেদের কাছে রেখে বড় করবে। কিন্তু এতে বাঁধসাধে শান্তনু। সে বলে ঝুমা আমার মেয়ে, সে আমার সাথেই থাকবে, আমিই ওর দেখাশোনা করবো। ঝুমার মায়ের এমন অপকর্মের পরও তার বাবা তাকে পর করে দেয়নি অথচ এই বাবা তার জন্মদাতা নয়। ঝুমা ভাগ্যবতী, সে এমন একজন মহানুভব বাবার সান্নিধ্যে বড় হচ্ছে। সব বাবাই হয়তো ভালো তবুও কোনো কোনো বাবা অনেক বেশিই ভালো।
(নামগুলো কাল্পনিক)

৫৫২জন ৫৫২জন
0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ