বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ এই যুদ্ধের সূচনা ঘটে, যখন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পঁচিশে মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে। গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙ্গালীর তৎকালীন প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন। সারাদেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে মুক্ত করতে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র তখন পাকিস্তান পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমনে পাকিস্তানের দখলদারী বাহিনীর পতন ত্বরান্বিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ :-

মূল যুদ্ধ   :  স্নায়ুযুদ্ধ

সময়কাল :  ২৬ মার্চ, ১৯৭১ – ১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১

অবস্থান   :  বাংলাদেশ

ফলাফল  :  বাংলাদেশ জয়

অধিকৃত এলাকার পরিবর্তন :  পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

বিবদমান পক্ষ : বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী

ভারত  (৩ ডিসেম্বর,১৯৭১ যুদ্ধে যোগদান)

নেতৃত্ব প্রদানকারী :-

বাংলাদেশ জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী

ভারত জেনারেল জগজিত সিং অরোরা

ভারত ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ’

পাকিস্তান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী

পাকিস্তান জেনারেল টিক্কা খান

সৈন্য সংখ্যা :-

ভারত:      ২৫০,০০০

মুক্তিবাহিনী:  ১০০,০০০

পাকিস্তানী বাহিনী:  ১০০,০০০

প্যারামিলিটারি:  ২৫,০০০

 

প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি :-

ভারত: ১,৪২৬ কঅনি

৩,৬১১ জন আহত (আনুষ্ঠানিক)

১,৫২৫ কঅনি

৪,০৬১ জন আহত

 

মুক্তিবাহিনী:  মৃত্যুবরণ করেন :-

পাকিস্তান : ৮,০০০ কঅনি

১০,০০০ জন আহত

৯১,০০০ যুদ্ধ বন্দী

(৫৬,৬৯৪ সামরিক বাহিনী ১২,১৯২ প্যারামিলিটারি বাকিরা সাধারণ নাগরিক)

সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি: ২৭,৯০,০০০ থেকে শুরু করে ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত ধারণা করা হয়।

১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লেঃ জেঃ এ. এ. কে নিয়াজী হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সামনে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে। প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করে, যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের মানুষের বহু আকাঙ্খিত বিজয় ধরা দেয় যুদ্ধ শুরুর নয় মাস পর। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও সারা দেশে সকল পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত হয়ে যায়। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিনই সপ্তম নৌবহর প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণতম প্রান্তে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।

১১৮৫জন ১১৮৩জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ