কেস স্টাডিঃ মেয়েটা কবিতা ভালোবাসে, গান ভালোবাসে। ভালোবাসে ছবি আঁকতে। উচ্ছল চঞ্চল তার মন। ৫ বছর আগে বিয়ে হয়েছে । পাত্র ভালো ও সজ্জন ব্যাক্তি, উচ্চ শিক্ষিত এবং ভালো জব করে। মেয়েটার বর্তমান বয়স ২১ বছর। বিয়ের পর তাদের সুখেই দিন কাটছিল। স্বামীও বেশ রোমান্টিক। এর মধ্যে এক কণ্যা সন্তানের মা হয় মেয়েটি। কিভাবে কিভাবে স্বামীও যেন কেমন বদলে যেতে থাকে। তার রোমান্টিকতা উধাও হয়ে যায়। ধর্মের প্রতি বেশ ঝুকে পড়ে। স্ত্রীকে আবদ্ধ করে কঠিন বাধা নিষেধের শৃংখলে। মুক্ত মনের মেয়েটি হাসফাস করতে থাকে। সৃজনশীল মেয়েটির সৃষ্টির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বামী নিজেই। প্রেমময়ী মেয়েটি প্রেমহীন জীবন কাটাতে শুরু করে। একটা ছবি এঁকে স্বামীকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো-”দেখো তো কেমন হয়েছে?” স্বামী অত্যন্ত বিরস মুখে জবাব দেয়-”এসব না করে এই সময়টা জিকির করলেও কাজে দিত।” ছবি আকার সময়ও নানা কটুবাক্যে তাকে বিদ্ধ করে স্বামী। এটা একটা মাত্র উদাহরণ। তাদের দুজনের মানসিক দূরত্ব বাড়ছে। মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন চলে মেয়েটির উপর। কোন সম্মান নেই তার । মেয়েটিও এক সময় রুখে দাঁড়ায়। তাতে অশান্তি আরো বেড়ে যায়। মেয়েটা পড়াশোনা কন্টিনিউ করছে অবশ্য। বাট সে না পারছে সব মেনে নিয়ে স্বামীর ঘর করতে আর না পারছে শিশু কন্যাকে নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে যেতে। একটা পর্যায়ে মেয়েটা জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়। স্বপ্ন দেখে নতুন প্রেমিকের সাথে ঘর বাধার। উজার করে দেয় নিজেকে প্রেমিকের পদতলে। কিন্তু এখানেও ধোকা খায় মেয়েটি । ওকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নাই ছেলেটার । দ্বীমুখি আঘাতে মেয়েটা দিশেহারা। কাউকে আর বিশ্বাস করতে পারে না। নিজের উপরই ঘৃণা চলে আসে । সুইসাইড করার চিন্তা মাথায় ভর করে প্রায়শই। শিশু কণ্যার মুখের দিকে চেয়ে তাও করতে পারে না।
একই ছাদের নিচে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করা এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা দুজন মানসিকতার দিক দিয়ে দুই মেরুর বাসিন্দা। হয়তো দুজনেই তাদের অবস্থানে সঠিক কিন্তু দুজনের মিলছে না। লোক নিন্দার ভয়, অনিরাপত্তা ইত্যাদি কারণে এই অশান্তি বিয়েই তারা একত্রে বাস করছে নিজেদের মধ্যে অসীম দূরত্ব রেখে। কেউ জড়িয়ে যাচ্ছে অবৈধ সম্পর্কে। দিন যায় রাত যায়…তাদের ব্যাথা না ফুরায়!!!
৩০টি মন্তব্য
বনলতা সেন
একই ছাদের নীচে বাস করলেও প্রকৃত সম্পর্ক অনেক সময় তৈরি হয় না। আপনার ঘটনাটি এর একটি
উদাহরণ। পাথর চাপা কষ্ট থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই।
শিপু ভাই
উপায় আছে বাট সেটাও সুখকর কিছু না।
স্বপ্ন নীলা
খুবই যত্ন নিয়ে পড়লাম—
এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে সমাজে কিন্তু কেউ প্রকাশ করছে আবার কেউবা প্রকাশ করছে না—সাইকোলজির ভাষায় এটাও কিন্তু এক ধরনের আত্মহত্যা অর্থাৎ নিজকে দূরে সরিয়ে রাখা বা দূরে সরিয়ে রাখতে বাধ্য হওয়া–। শিপু ভাই, এখানে নারীদের কিছু করার থাকে না, বেশির ভাগ নারী অনেক বিষয় মেনে নেয়-মেনে নিতে বাধ্য হয়—-
কেস পড়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল—সব অশান্তি দূর হয়ে যাক, শান্তি ফিরে আসুক পরিবারে—
শিপু ভাই
সব অশান্তি দূর হয়ে যাক, শান্তি ফিরে আসুক পরিবারে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!!!
মেহেরী তাজ
নারীদের প্রতি পুরুষের মনোভাব না পাল্টালে এমন হতেই থাকবে।নারী শুধু সংসার,সন্তান পালন,রান্না,ঘর গোছানর জন্য সৃষ্টি হয়েছে-সমাজের এই চিন্তাই পালটে ফেলতে হবে।নারীও যে একজন মানুষ তা ভুলে যায় এই সমাজ।আপনার লেখায় সমাজের এই ক্ষতটি উদাহরন হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।কি হয় ছবি আঁকলে বা সাহিত্য চর্চা গানবাজনা করলে? আরো লিখুন এখন কেস হিস্ট্রি।
শিপু ভাই
আমি এই পোস্টে আসলে কারো দোষ বিচার করতে চাইনি। আমি শুধু দুজনের মানসিক দূরত্বটা ফোকাস করতে চেয়েছি। দেখুন, এই ঘটনায় স্বামীও নিশ্চই ভালো নেই। তার দৃষ্টিতে তার স্ত্রী অবাধ্য।
হাহাহাহাহ
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
নিয়মিত ঘটনা -{@ ভাল লাগল বর্ননায়।সমাজের এসব মুখোস দারী ভাল মানুষেরা এর জন্য মূলত দায়ী -{@
শিপু ভাই
ধন্যবাদ প্রিয় মা মাটি দেশ
শাহানা আফরিন স্বর্ণা
মন খারাপের দিনে আরও খারাপ হয়ে গেল মন 🙁
মানুষের আয়ু আরও কম হলে ভাল হয়। সবকিছু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।
শিপু ভাই
বিয়েতে দুজনের মানসিক সাদৃশ্য জরুরী বিষয়।
নুসরাত মৌরিন
কেন এমন হয়?
🙁
এর সমাধান কি নেই?এই ক্ষত এখন চারিদিকে এতই দগদগে যে প্রতিনিয়ত শুনছি শুধু ভাঙ্গনের কথা,নয়ত অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা।মানুষে মানুষে আস্থা আর বিশ্বাসের জায়গা মনে হয় কমে যাচ্ছে খুব বেশি!!
🙁 🙁
শিপু ভাই
হুম, চারিদিকে শুধু ভাঙ্গনের শব্দ। আমার ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন নারী আছেন যারা ডিভোর্সড। ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে তাদের বয়স। তারা প্রত্যেকেই “ভালো মানুষ”।
জিসান শা ইকরাম
মেহেরী তাজ এর মন্তব্যের সাথে একমত। স্ত্রীর গুন প্রকাশিত হতে দিতে হবে।স্ত্রী যে গান,কবিতা,গল্প বা ছবি আঁকতে পারে এটি তাঁর যোগ্যতা।এই যোগ্যতায় স্বামীর গর্বিত হওয়া উচিত।তাতেই এ সমস্যা আর সৃষ্টি হবেনা।ভালোবাসা এবং সন্মান সবাই চায়।এর ঘাটতি হলে তা পাওয়ার জন্য মানুষ অন্যদিকে যাবেই।মানুষ কোন যন্ত্র না।
গুড শেয়ার।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ মামা 🙂
ছাইরাছ হেলাল
একত্রে থাকলেই স্বামী স্ত্রী প্রকৃত স্বামী স্ত্রী হয়ে ওঠে না তা এখানে দেখতে পাচ্ছি।
এর সহজ সমাধান ও আমরা জানি না।
শিপু ভাই
ছাড় দেয়ার মানসিকতা, মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এধরণের পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
লীলাবতী
সমাজের এক হতাশাকে নিয়ে এলেন ভাইয়া।এমন সমস্যা প্রায় সঙ্গসারেই।কারোটা জানি আমরা কারোটা নয়।ইচ্ছের মুল্য দিলেই এ সমস্যা থেকে উত্তরন সম্ভব।আপনাকে এখানে দেখে ভালো লাগছে খুব ভাইয়া -{@
শিপু ভাই
অনেক ধন্যবাদ লীলাবতী
শুন্য শুন্যালয়
কি বলবো ভাইয়া? সবকিছুর পরে মেয়েটির পরকিয়াই নজরে পরবে। ক্ষতের সৃষ্টি কোথায় হচ্ছে কেউ জানছেনা। মানসিক বোঝাপড়াটা খুবই দুস্কর হয়ে পরছে। কেস ফাইল টা সবসময় চালু রাখুন ভাইয়া।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ আপু
নীলাঞ্জনা নীলা
এমনই হয়।মেয়েরা সব সময়ই উপেক্ষিত।তারা মানুষ না হয়ে পুতুল হলেই সমস্যা থাকেনা আর।যেমন ইচ্ছে রাখা যায় পুতুলকে।
শিপু ভাই
অনেকাংশে সত্য
খসড়া
জীবন কোন তথ্য উপাত্য দিয়ে চলে না। এর হিসাব নেই সুত্র নেই একেবারেই জঘন্যতম খাপ ছাড়া।
শিপু ভাই
সহমত
স্বপ্ন
এমন লেখা আরো চাই ভাইয়া।
শিপু ভাই
জ্বী ধন্যবাদ। চেষ্টা থাকবে। 🙂
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
Case study gulo valo, zodio ei porber ta khub sadharon bapar, sobai jane, somossata koi tao jane, just nijer dharona othoba egor barrier par hote parena. Esob dur korte extra kono sense grow korar dorkar nai, common sense ta use korlei enough…
শিপু ভাই
হাহাহাহহাহা ঠিক বলেছেন। একমত পোষন করছি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মেয়েরা অতিমাত্রায কোমলমতি হওয়ার কারনেই প্রতারিত হয় বেশি। মেয়েটির জীবনে প্রথম ঘটনাটিতে তাঁর কোন হাত ছিলোনা কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনাটি ছিলো তাঁর বোকামীর ফল। হয়তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিষ্ঠুর চেহারাটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি বলেই সে প্রতারণার স্বীকার হয়ে গেলো। হয়তো প্রথম পুরূষটির সঙ্গে টানাপোড়েন চলাকালীন চরম দুর্দশাগ্রস্থ সময়ে দ্বিতীয় পুরুষের আগমন ঘটায় সে তাল সামলাতে পারেনি। প্রথম পুরূষটি থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় দ্বিতীয় পুরূষটিকে তাঁর বেশি আপন মনে হয়েছিলো আর তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে সে নিজেকে উজার করে বিলিয়ে দিয়েছিলো। মনোজগতে মারাত্মক ক্ষত থাকার কারনে মেয়েটি বুঝতেই পারেনি প্রেমিক নয়, সে একজন খেলোয়াড়ের পাল্লায় পড়েছিলো। বুঝাই যাচ্ছে, মেয়েটি প্রেমিকপুরুষটির সঙ্গে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা না হওয়ায়, সে চরম দুর্বল মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকে স্বাভাবিক হিসাবে মেনে নিতে না পেরে বারবার সুইসাইড করতে চাইছে।
আমি মেয়েটাকে জানি না, তবুও বলছি, বলছি এজন্য; এমন মেযের সংখ্যা সমাজে অনেক। সুইসাইড কেনো করবে বোকা মেয়েটি? সুইসাইড করলে কার কি এসে যায়! খেলারাম তো খেলা শেষ, তাই চলে গিয়েছে। আর সে ফিরেও তাকাবে না। মাঝখান থেকে কোলের মেয়েটি বিড়ম্বনার স্বীকার হবে।
বরং ঘুরে দাঁড়াও মেয়ে! তোমার কোন দোষ নেই, দিনের পর দিন স্বামীর থেকে বিরুপ আচরণের স্বীকার হতে হতেই তোমার জীবনে এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
কাজেই নিজেকে অপরাধী মনে করে কোন অনুশোচনা নয় বরং ভুলে যাও এবং ঘুরে দাঁড়াও। শক্তমনে দাঁড়াতে পারলেই দেখবে জীবন অনেক সুন্দর। স্বামীটিও দেখবে তুমি নিজের মতো করে বাঁচতে পারো। আর প্রেমিক? ধুর ছাই!! ও তো প্রেমিকই ছিলোনা, ও ছিলো প্রতারক। প্রতারকদের প্রতি কখনো আবেগ দেখাতে নেই, ঘৃনাই ওর প্রাপ্য।
শিপু ভাই
চমতকার মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ!!! 🙂