ম্যালাদিন আসা হয় না সোনেলাতে! এতো ব্যাস্ত থাকি যে যখনই সুযোগ পাই একটু ঘুমাই। ইদানিং নিজেকে নিয়েও ব্যাস্ত হতে পারছি না। নিজের দিকে খেয়াল রাখতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছু ছিঁড়ে ফেলি। চোখের সামনে যত বই খাতা আছে সব। কিছু মানসিক সমস্যা আছে বোধহয়! নইলে এমন আজগুবি চিন্তা মাথায় আসতো না। আমার নিজেরও মনে হয় যে আমার কিছু সমস্যা আছে। ইদানিং আমার সাথে এক ভূত থাকে। ভূত না পেত্নি নাকি পরী কে জানে। যেহেতু আমার কোন ক্ষতি হয় নাই সেহেতু ধরে নিচ্ছি ভালো কিছু। সমস্যা ঠিক কেমন জানি। ঘুমাইতে গেলে মনে হয় কেও একজন আমার রুমে খালি পায়ে হাঁটতেসে। কি বিপদ!! বার বার চোখ খুলে অন্ধকারে তাকাই। বাইরে থেকে একটু আলো আমার ঘরে আসে, সে আলোতে দেখি, কেও নেই। তাইলে শব্দ আসে কোথা থেকে? নানা রকমের হ্যালুসিনেশনের মুখোমুখি আমি হয়েছি। হচ্ছিও। যেমন সেদিনের ঘটনা, রাত আড়াইটা বাজে, ঘুম ভেঙ্গে গেল! মনে হচ্ছিল আমার টাইলস দেয়া ফ্লোরে কেও হাঁটতেসে। উঠে বসলাম, চারদিক তাকিয়ে দেখি কেও নাই। মুহূর্তেই গলাটা কেমন জানি শুকিয়ে গেল। ভয় পাইসি তা ঠিক নয়। এই হাঁটার ব্যাপারটাতে আমি অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেসি। তো যাই হোক, গলা যখন শুকাইসে ভিজাইতে তো হবেই। টেবিলে বোতলটা নিয়ে দেখলাম পানি নাই। বেচারা বোতলও একদম শুকিয়ে গেসে। দরজা খুলে ফিল্টারের কাছে গেলাম পানি ভরতে। এই সুন্দর রাতে এটুকু কাজের জন্য লাইট জ্বালিয়ে চারপাশে কৃত্রিম আলো ছড়িয়ে দেয়ার কোন মানে হয় না। অন্ধকারেই গেলাম পানি ভরতে। ফিল্টারের পানি ছাড়লাম, মনে হল বোতলের তলা ফুঁটো হয়ে পানি আমার পায়ের উপর পড়ছে। ব্যাপার কি? বোতল ফুঁটো হল কি করে? পাশের রুম থেকে ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছিল, যা ক্রমেই আমার বোধগম্য হচ্ছিল। “যা করার এখনই করতে হবে। মুখটা চেপে ছুড়িটা ধরে একটা টান মারলেই শেষ। কোন আওয়াজ হবে না।” ভয়ে আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। একটা চিৎকার দিতে হবে। আমার আপন মানুষগুলোকে একটু জানাতে পারলেই হয়তো আমি বেঁচে যাব। কিন্ত আমার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না। একটুও না। মাসল গুলো সব প্যারালাইস হয়ে গিয়েছে। তারপর সবকিছু চুপ। দেখলাম বোতল ভড়ে গিয়ে পানি উপচে আমার পায়েই পড়ছে। সবকিছু বন্ধ করে বাতি জ্বালালাম। কিছুক্ষণ আগে কি হল সেটাই মাথায় ঘুরছে। আসলে ব্যাপারটা হল কি? বোতলে পানি ভড়তে যতটুকু সময় লেগেছিল ততটুকু সময়ের হিসাব আমি মেলাতে পারিনি এখনও। যাই হোক। হ্যালুসিনেশন কে অন্যরুপে পেয়েছি। এটার এমন ভ্যারিয়েশন আছে না হলে তো জানতামই না। অন্যরকমের অভিজ্ঞতা।
ছোট থাকতেও এমনটা হত। আসলে এমন ভয়াবহ হতো না ব্যাপারটা। হরর মুভি আমার পছন্দের। এসব মুভির সাথে এই হ্যালুসিনেশনের কোন সম্পর্ক আছে কিনা আমি জানি না। ছেলেবেলা কেটেছে আমাদের পুরানো বাসায়। পুরানো বলতে পুরানো। গাছপালা দিয়ে ঘেরা একতলা বাসাটাতে দিনের বেলায়ও লাইট জ্বালাতে হত। সেখানেও এই ব্যাপারটা কাজ করতো। পরিবেশই কি এমন সিচুয়েশনে ফেললো কিনা আমাকে কে জানে। তো যাই হোক। সেখানে আমি ভয় পেতাম অনেককিছুতেই। মনে হতো ওই রুমটাতে কেও একজন আছে। কেও কথা বলছেন আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি না। কিন্ত কেও একজন আছেন এবং সে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। আমার এমন আজব চিন্তা শুনে সবাই দোষ দিতে লাগলো আমার হরর মুভি দেখার উপর। যথারীতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ হল। টিভিতে খেলা আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারী ছাড়া কোন চ্যানেল দেখা যাবে না। তাই মানলাম। কিন্ত একদিন দেখলাম ডিসকভারী চ্যানেলে কিছু ভৌতিক বাড়ি নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব বাড়িতে অনেক বছর আগে খুন হয়েছিল। কে বা কারা বাড়ির কর্তাকে মেরে রেখে গেছেন কেও জানেন না। এসব বাড়িতে কেও থাকতে পারে না। এখানে নাকি অশরীরি আত্মারা ঘুরাঘুরি করে। মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ পাওয়া যায়। এই বিষয়টার প্রতি আমার আগ্রহ জাগে। আমি টিভি শো টা দেখতে থাকি। আমি শোটা দেখতেসি জানার পর আমার বাড়ির লোকজন আমার টিভি দেখার উপরেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মেনে নিলাম। কিন্ত এতোকিছুর পরেও আমার সমস্যাটা দূর হয়নি। উল্টো দিন দিন আমার সমস্যাটা আরও জটিল হতে লাগলো। একটা সময়ে পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হল। তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে আমাকে থেরাপী দেয়া হল। বেশ কিছুদিন থেরাপী মেডিটেশনের পরে সব ভূত মাথা থেকে নেমে গেল। এতে সময় লেগেছে অনেক। ওসব কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।
ব্যাপারটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। এতোদিন কোন সমস্যা হয় নাই। ইদানিং হ্যালুসিনেশন জিনিসটা আমার সামনে চলে এসেছে। একটু ফ্ল্যাশব্যাক করলাম। ব্যাপারটা নিয়ে আগ্রহ বাড়তে থাকলো। হ্যালুসিনেশন নিয়ে পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে দেখলাম পুরান ভূত আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখন আমার ঘরেই কেও হাঁটে। কথাগুলো অনেকের কাছে হাসির উদ্রেক হলেও ব্যাপারটা মারাত্নক। এটা আস্তে আস্তে বেড়ে যায়। এবং যার সাথে ঘটতে থাকে সেই জানে যে সে কতটা মানসিক চাপে আছে। হ্যালুসিনেশন মাঝে মাঝে অনেকের সাথেই ঘটে কিন্ত কন্টিনিউ কম জনের সাথেই হয়। আমি আমার এই হাটাহাটি নিয়ে এখনও খুব একটা চিন্তিত না। তবে মাঝে মাঝেই খুব বিরক্ত লাগে। আপনি আরাম করে ঘুমাচ্ছেন। হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনতে পেলেন, আপনার কাছে মনে হবে চোর ঢুকেছে বাসায়। কিন্ত তার সাথে অজানা একটা ভয়ও কাজ করবে। যখন দেখবেন চোর ডাকাত কিছুই নেই এবং নিশ্চুপ রাতে পায়ের আওয়াজ যেখানে আপনি ছাড়া আর কেও নেই এসব মনে করলে ভয় পেয়ে যাবেন। রাত আড়াইটায় যখন এমনটা ঘটে তখন আমি বিছানায় হাত পা গুটিয়ে বসে থাকি। ঘুম বাবাজি এমনিতেই আমার চোখে ধরা দেয় না। যাও দেয় তাও এসব কারনে পালায়। ঘুম হয়না দেখে দিনের বেলায় ঝিমাতে থাকি। ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে একটু ঘুমাই। সেখানে প্রথম প্রথম কোন সমস্যা হয়নি। বুঝলাম হাওয়া বদল করেছি তাই এখানে সমস্যাটা হচ্ছে না। কিন্ত বিপদ লেগেই আছে। কদিন পরে সেখানেও ঘুমের মধ্যে হাটাহাটি শুরু হয়ে গেল। নাহ! এজীবনে আর এই প্যারাটা মাথা থেকে নামবে না। বন্ধু সমাজে যাকেই সমস্যাটা নিয়ে বলেছি সেই হেসেছে। শুধু একজন বাদে। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় ঐ একজনের কারণেই। আমি আমার সমস্যার কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারি। তবে যাই হোক। এই হ্যালুসিনেশন নিয়ে খুব একটা ভাববো না বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্ত কোনকিছু যখন আপনার আরামের ঘুমে সমস্যার কারণ হবে তখন আপনি বিরক্ত হয়েই সেটাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন। ইদানিং মনে হয় পায়ের শব্দটা কোন এক মেয়ের। আমি কি করবো বলুন!? আমার কাছে কেন জানি মনে হয়! যাকগে এসব কথা। এমন পাগলামি আর আজাইরা কথা পড়ে হয়তো আপনি ভাববেন আপনার সময়গুলো আমি নষ্ট করেছি। কিন্ত কি করার আমার সাথে এমন আজাইরা জিনিসই ঘটে। আর ঘটে যাওয়া কিছু শেয়ার করা যেতেই পারে!!!!
১৪টি মন্তব্য
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আপনি তো একটা ঘোরের মধ্যেই আছেন দেখি। ঐদিন আপনাকে দেখে মনে হয়েছিলো আপনি ইনট্রোভার্ট।
কাহিনী বর্ণন ভালোই হইছে। আজকেই প্রথম আপনার লেখা দেখলাম।
হিলিয়াম এইচ ই
হাহাহা!! ধন্যবাদ 🙂
মেহেরী তাজ
বড্ড ভয় পান আপনি! এতো ভয় পেলে হয় না কি? একটা সাজেশন! রুমের আলো বন্ধ না করে ঘুমানোর চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আর শব্দ টা একটা মেয়ের পায়ের তা মনে হওয়ার কারন কি??? ;?
হিলিয়াম এইচ ই
আমি ধরেই নিসি এটা মেয়ের!! 😀
ব্লগার সজীব
হ্যালুসিনেশন সংক্রামক নয় তো ভাইয়া? সংক্রামক হলে কিন্তু সোনেলায় ছড়িয়ে পরতে পারে
আমি যে কত চেষ্টা করি আমার যেন একটু হ্যালুসিনেশন হয়, কিন্তু হয়ই না 🙁 :p কোন কারনে মন আপনার দুর্বল, এটি হতে পারে প্রিয় কারো বড় ধরনের কোন সমস্যা, বা নিজের। মন সবল থাকলে এসব মনে আসতে পারেনা ভাইয়া। যাই হোক এমনটা সত্যি সত্যি হলে, কোন মনের কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে দ্রুত পরামর্শ নিন।
আবু খায়ের আনিছ
সজু ভাই, রাতে ঘুমানোর আগে ভৌতিক বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাবেন, ব্যস হয়ে যাবে।
অরুনি মায়া
আপনার পোস্ট পড়ে মোটেও আমার হাসির উদ্রেক হয়নি। এটাতো অত্যন্ত চিন্তার কথা। ঘুম না হলে শরীর ভেঙে পড়বে, লেখাপড়া শিঁকায় উঠবে। নাহ ভাই সাহস বাড়াতে হবে। যাই ঘটুকনা কেন এইসবে মোটেও পাত্তা দেওয়া যাবেনা।নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাবেন। ঐসব শব্দকে ঘুম পাড়ানি গান ভাববেন। মনে সাহস বাড়ান। দেখবেন আপনি নিজেই এই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন।
শুভ কামনা রইল। ভাল থাকবেন।
আবু খায়ের আনিছ
ডাক্তারকে চিকিৎসা করবে অন্য ডাক্তার। ধ্যান করতে পারেন, যোগব্যায়াম।
হ্যালুসিনেশন কিনা জানিনা, কিন্তু ইদানিং ভৌতিক কোন বই পড়া শুরু করলে পড়ে শেষ করতে পারি না, যখন উদ্ভট কিছু ঘটবে বলে মনে হয় বা হচ্ছে তখনই বই বন্ধ করে ঘুম।
খসড়া
সুন্দর বর্ননা করেছেন। আবহটা ভৌতিকরূপ পেয়েছে। আপনার লেখা সত্যি ভেবে অনেকেই অনেক মন্তব্য করছে। আপনার লেখার সার্থকতা এখানেই।
মৌনতা রিতু
এরকম অনেক সময় আমার সাথে হয়,যেমন মনে হয় আমায় কেউ ডাকছে।আবার কখনো মনে হয় পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
ভুতের পায়ের শব্দে কিন্তু বোঝা যায় না,কে মেয়ে কে ছেলে।অতএব সাবধান।
আপনার অনুভূতি গুলোর বর্ণনা সুন্দর হইছে।
আর ম্যালাদিন শব্দটাতে মনে হল আপনি দক্ষিন অঞ্চলের।
জিসান শা ইকরাম
এমনটা হতে পারে খুব বেশি টেনশনে
আমারও হয়, এতে ভয় পাবার কিছু নেই।
ভালো লেগেছে লেখা
শুভকামনা।
নাজমুস সাকিব রহমান
মনের ভয় কমান। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বহু দিন পর আমিও অন লাইনে সোনেলায় প্রথমে মনে হয়েছিল আমি আপনার পোষ্টে মন্তব্য কিন্তু এখন দেখছি না….তাহলে আমিও কি ঐ ;?
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনার লেখা আমার ভালো লাগে। অনেকক্ষণ লাগে বুঝতে, ঘটনা কি সত্যি নাকি শুধুই কাহিনী? ;?