শেষে ক্লাসে গমন। স্বপন স্যার ছিলেন প্রচন্ড রকমের রসিক শিক্ষক। ক্লাসে এসে বললেন কিরে চৌধুরী প্রেমের ক্লাস কেমন হল। স্বপন স্যার ছিলেন বাবার বন্ধু কিন্তু তিনি বাসষ্ট্যান্ডের দিকে আসতেন না, তাই বাবার সাথে দেখা হবার সম্ভাবনা কম। স্বপন স্যার জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন চেম্বারে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারী করতেন এবং ডাক্তারী ডেরাতেই প্রাইভেট পড়াতেন। উনি আমার প্রাইভেট শিক্ষকও ছিলেন।স্যারের সাথে আমার শত শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যেমন- একদিন বিকেলে প্রাইভেট পড়ছি। আমি বসতাম স্যারের টেবিলের পশ্চিম পাশে। টেবিলের পূর্ব পাশে ঔষধ রাখার আলমিরা (আলমারি) ছিল। সামনের পাল্লা কাঁচের ছিল। যে কারনে রাস্তা দিয়ে কে যাচ্ছে, সেটি ওই পাল্লার মধ্যে দেখা যেত। তখন বালিকা বিদ্যালয় পৌরসভায় একটায় ছিল। স্যারের কাছে অংক করতাম। স্যার অংক দেখার ছলে আমার চোখের দিকে মাঝে মাঝে তাকাত।স্যার কিছুটা বন্ধ সুলভ আচরনও করত। বালিকা বিদ্যালয় ছুটির সময় এ কাজটি বেশি করত। আর যদি অংক ভুল হত তাহলে বলত এত আমার ঔষধের আলমারি দেখলে অংক সঠিক হয় কেমনে? আমি বিষয়টি তখনও বুঝতে পারিনি স্যার কেন এমন সব কথা বলেন। পরে একদিন বললেন এ পর্যন্ত প্রেম-ট্রেম করিসনি।করবি কেমনে সহপাঠি যদি মেয়েরা না থাকে পড়াশোনা একটু নিরসই হয়। বললাম-চেষ্টা করেছি ভাগ্যে জুটেনি। উল্লেখ্য সে সময় ডিজে হাইস্কুলে মেয়েরা পড়ত না। শোন আমাদের সময় প্রেম ছিল কিছুটা চন্ডিদাসের বড়সি ফালানোর মত। একটার পিছনে লেগে থাকলে জীবন শেষ হয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত হয়ত প্রেমটাও হয়ে ওঠেনি। তোরাতো কাউকে প্রেম নিবেদন করলে স্যান্ডেল ফিক্কা মারলেও স্যান্ডেল তুলে নিয়ে বার চুমা খাবি।বলতাম স্যার আগে প্রেমে পড়ি তারপর কি হয় দেখা যাবে। আবার মাঝে মাঝে উদ্ভট গল্প করতেন। যেমন- শোন ভারতে কোন এক আত্মীয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম।দুপুরের খাবারের জন্য পেট চো চো করছে কিন্তু বিয়ে বাড়ির লোক খাবারের কিছু বলছে না। কিছুক্ষন পর দেখি লুচি আর বন্দিয়া নিয়ে এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি খেতে বসলাম। আমার লুচি বোন্দিয়া শেষ। যে দিচ্ছে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। ব্যাট্যা সামনে দিয়ে ঘোরে আর বলে দাদা বোদে দিব, বোদে? আমার লুচি শেষ, ক্ষুধায় মাথা গরম। রাগে বলে ফেললাম- ”বোদে তোমার পুদে দেও, আমার লাগছে ভাতের ক্ষিদা।” আবার শোনালেন- আমার বাড়ির সাথে একবাড়িতে বিদঘুটে একটা কান্ড ঘটেছিল। একজন পায়খানায় গেছে কেবলি চাপ মারছে উপরের বাঁশ ছিল পচা। ভেঙ্গে একেবারে কুয়োর মধ্যে। উল্লেখ্য আগেকার দিনে অনেক বাড়িতে গোলপাট কুয়োর ভীতরে বসিয়ে উপরে বাঁশ দিয়ে পায়খানা নির্মান করা হত। স্যার বললেন- ভীষন চেচামেচিতে গেলাম বাড়ির ভীতর। গিয়ে দেখি পায়খানার কাছে ভীড়। পায়খানার কাছে গিয়ে দেখি ও নিচ থেকে সেই চিল্লাচ্ছে। আমি কুয়োর ভিতর তাকাতেই দেখি পানির ভীতর গোল গোল হলুদ জিনিস ভাসছে আর ও একবার ডুবে যাচ্ছে আবার উঠছে। যখন উঠছে তখন ওর মুখমন্ডোলে গোটাটা সাদা ছোট ছোট পোকা দিয়ে ভর্তি। অনেক ছাত্রের ঘৃনা একটু বেশি ওরা বার বার বলছে স্যার থামেন। স্যার আর থামছেই না।বললেন বহু কষ্টে ওকে কুয়ো থেকে তোলার পর দুখান সাবান দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল নদীতে। দীর্ঘ কয়েকমাস নাকি অনেকে ওর সাথে গা ঘেষতেও চায়নি। আমাকে প্রশ্ন করলেন কিরে বলতো ও যখন হঠাৎ পড়ে গেল দুচারটে গোল গোল হলুদ জিনিস খেয়ে ফেলেনিতো। আমি মুচকি হেসে বললাম স্যার আচমঙ্কা গিলেতেও পারে।
চলবে –
৯টি মন্তব্য
রিতু জাহান
হা হা হা।
আহা! ছাত্র জীবন। মাস্টার মশাই তো বেশ রসিক ছিলেন।
কাঁচের আর কি দোষ। দৃষ্টি তো যাবেই।
চলুক,,,
মামুন চৌধুরী
রিতু জাহান
কৈশরের অনেক অম্লমধুর স্মৃতি জীবনের সাথে লেপটে থাকে যা একেবারেই অমোছনীয়। আর কিছুদিন পরে বার্ধক্যের ছকে চলে যাব। তবে ভাবতে ভাল লাগে। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা রইল।
তৌহিদ
ছাত্র জীবনের মজার স্মৃতিগুলি আমাকেও বড্ড হাসায় আজও। ভাল লাগছে আপনার ধারাবাহিকটি পড়তে।
মামুন চৌধুরী
তৌহিদ
প্রতিটি মানুষের জীবনের স্মৃতি থাকে সেটা কোন এক বয়সে এসে প্রচন্ড রকমের নাড়া দেয়। যা ভেবে একা একাই অনেক সময় হাসতাম। সেই ভাবনা থেকেই লেখাটি লিখেছি। ভাল থাকার প্রত্যাশা রইল। শুভ কামনা।
তৌহিদ
ধন্যবাদ
শুন্য শুন্যালয়
ইয়াক ইয়াক। স্যার আপনাদের উপর অত্যাচার চালাতো বলে এখন আমাদের উপর চাপাচ্ছেন? 🙂
ঔষধের আলমিরায় তাকালে অংক ভুল হবেই। এইটা বেশ মজার ছিলো।
সিরিজটা খুব ইন্টারেস্টিং হচ্ছে।
আপনি যেহেতু নতুন এখানে, তাই সোনেলারর একটি নিয়ম বলি ভাইয়া। চব্বিশ ঘন্টায় একটি পোস্ট দিতে হবে। আপনার পরের পর্বটি খসড়ায় রেখেছি। ২৪ ঘন্টা পর পোস্ট করে দেবেন। অপেক্ষায় থাকলাম মজার পোস্টটির।
মামুন চৌধুরী
শুন্য শুন্যালয়
আপনার আইডির নামটি কিন্তু খুব সুন্দর – শুন্য শুন্যালয় । চব্বিশ ঘন্টায় একটি পোষ্ট দিতে হবে বুঝলাম কিন্তু পরের পর্বটি খসড়ায় রেখেছি। ২৪ ঘন্টা পর পোষ্ট করে দিব। কথাটা বুঝিনি ভাই। যদি পরামর্শটি যদি আরো বিস্তারিত হত তাহলে আমার জন্য সুবিধা হত। পরামর্শ দেওয়ার জন্য শুভ কামনা ।
ছাইরাছ হেলাল
একটু লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনি চব্বিশ ঘন্টায় একটি মাত্র লেখা দিতে পারবেন।
এখানে এমন নীতি আছে বলেই জানি।
নীতিমালাটা একটু সময় নিয়ে পড়ুন, প্লিজ।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহা, এটা পড়ে আমার ছোট বেলার একটা ঘটনা মনে পরে গেলো। গ্রামে আমার দাদাবাড়ীতে এই রকম বাঁশের টয়লেট ছিলো। বাড়ির বাইরের পুরুষ লোকজনরা সেটা ব্যবহার করতো। একবার এক এক লোক একটি ছাগল চুরি করে ছাগল–সহ ওখানে লুকাতে গিয়ে টয়লেট ভেঙে নীচে পরে গিয়েছিল। নীচে একটা সরু খাল ছিলো। চোরের সারা শরীরে এতো নোংরা লেগেছিল যে কেউ আর চোরকে ধরতেই যায়নি। ছাগল ফেলে পালিয়ে গেছে।
সিরিজ ভালো হচ্ছে মামুন। বড় লেখার মাঝে একটু ফাঁকা দিয়ে লিখবেন। এতে পড়তে সুবিধা হবে। ভালো থাকবেন, শুভকামনা অবিরত 🌹🌹