একটি কৈশরের অস্ত্রপাচার (তিন)

মামুন চৌধুরী ২৮ মার্চ ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১২:১৭:২০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৯ মন্তব্য

শেষে ক্লাসে গমন। স্বপন স্যার ছিলেন প্রচন্ড রকমের রসিক শিক্ষক। ক্লাসে এসে বললেন কিরে চৌধুরী প্রেমের ক্লাস কেমন হল। স্বপন স্যার ছিলেন বাবার বন্ধু কিন্তু তিনি বাসষ্ট্যান্ডের দিকে আসতেন না, তাই বাবার সাথে দেখা হবার সম্ভাবনা কম। স্বপন স্যার জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন চেম্বারে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারী করতেন এবং ডাক্তারী ডেরাতেই প্রাইভেট পড়াতেন। উনি আমার প্রাইভেট শিক্ষকও ছিলেন।স্যারের সাথে আমার শত শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যেমন- একদিন বিকেলে প্রাইভেট পড়ছি। আমি বসতাম স্যারের টেবিলের পশ্চিম পাশে। টেবিলের পূর্ব পাশে ঔষধ রাখার আলমিরা (আলমারি) ছিল। সামনের পাল্লা কাঁচের ছিল। যে কারনে রাস্তা দিয়ে কে যাচ্ছে, সেটি ওই পাল্লার মধ্যে দেখা যেত। তখন বালিকা বিদ্যালয় পৌরসভায় একটায় ছিল। স্যারের কাছে অংক করতাম। স্যার অংক দেখার ছলে আমার চোখের দিকে মাঝে মাঝে তাকাত।স্যার কিছুটা বন্ধ সুলভ আচরনও করত। বালিকা বিদ্যালয় ছুটির সময় এ কাজটি বেশি করত। আর যদি অংক ভুল হত তাহলে বলত এত আমার ঔষধের আলমারি দেখলে অংক সঠিক হয় কেমনে? আমি বিষয়টি তখনও বুঝতে পারিনি স্যার কেন এমন সব কথা বলেন। পরে একদিন বললেন এ পর‌্যন্ত প্রেম-ট্রেম করিসনি।করবি কেমনে সহপাঠি যদি মেয়েরা না থাকে পড়াশোনা একটু নিরসই হয়। বললাম-চেষ্টা করেছি ভাগ্যে জুটেনি। উল্লেখ্য সে সময় ডিজে হাইস্কুলে মেয়েরা পড়ত না। শোন আমাদের সময় প্রেম ছিল কিছুটা চন্ডিদাসের বড়সি ফালানোর মত। একটার পিছনে লেগে থাকলে জীবন শেষ হয়ে গেছে শেষ পর‌্যন্ত হয়ত প্রেমটাও হয়ে ওঠেনি। তোরাতো কাউকে প্রেম নিবেদন করলে স্যান্ডেল ফিক্কা মারলেও স্যান্ডেল তুলে নিয়ে বার চুমা খাবি।বলতাম স্যার আগে প্রেমে পড়ি তারপর কি হয় দেখা যাবে। আবার মাঝে মাঝে উদ্ভট গল্প করতেন। যেমন- শোন ভারতে কোন এক আত্মীয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম।দুপুরের খাবারের জন্য পেট চো চো করছে কিন্তু বিয়ে বাড়ির লোক খাবারের কিছু বলছে না। কিছুক্ষন পর দেখি লুচি আর বন্দিয়া নিয়ে এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি খেতে বসলাম। আমার লুচি বোন্দিয়া শেষ। যে দিচ্ছে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। ব্যাট্যা সামনে দিয়ে ঘোরে আর বলে দাদা বোদে দিব, বোদে? আমার লুচি শেষ, ক্ষুধায় মাথা গরম। রাগে বলে ফেললাম- ”বোদে তোমার পুদে দেও, আমার লাগছে ভাতের ক্ষিদা।” আবার শোনালেন- আমার বাড়ির সাথে একবাড়িতে বিদঘুটে একটা কান্ড ঘটেছিল। একজন পায়খানায় গেছে কেবলি চাপ মারছে উপরের বাঁশ ছিল পচা। ভেঙ্গে একেবারে কুয়োর মধ্যে। উল্লেখ্য আগেকার দিনে অনেক বাড়িতে গোলপাট কুয়োর ভীতরে বসিয়ে উপরে বাঁশ দিয়ে পায়খানা নির্মান করা হত। স্যার বললেন- ভীষন চেচামেচিতে গেলাম বাড়ির ভীতর। গিয়ে দেখি পায়খানার কাছে ভীড়। পায়খানার কাছে গিয়ে দেখি ও নিচ থেকে সেই চিল্লাচ্ছে। আমি কুয়োর ভিতর তাকাতেই দেখি পানির ভীতর গোল গোল হলুদ জিনিস ভাসছে আর ও একবার ডুবে যাচ্ছে আবার উঠছে। যখন উঠছে তখন ওর মুখমন্ডোলে গোটাটা সাদা ছোট ছোট পোকা দিয়ে ভর্তি। অনেক ছাত্রের ঘৃনা একটু বেশি ওরা বার বার বলছে স্যার থামেন। স্যার আর থামছেই না।বললেন বহু কষ্টে ওকে কুয়ো থেকে তোলার পর দুখান সাবান দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল নদীতে। দীর্ঘ কয়েকমাস নাকি অনেকে ওর সাথে গা ঘেষতেও চায়নি। আমাকে প্রশ্ন করলেন কিরে বলতো ও যখন হঠাৎ পড়ে গেল দুচারটে গোল গোল হলুদ জিনিস খেয়ে ফেলেনিতো। আমি মুচকি হেসে বললাম স্যার আচমঙ্কা গিলেতেও পারে।

চলবে –

৮০২জন ৮০২জন
0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ