পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। তবে তা কেবলই সাধারণ জনগন এবং শুভচিন্তকদের জন্য। মৌলবাদে ছেঁয়ে গেছে গোটা দেশ। এরাই এখন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, কর্ণধার, জাতির ইজ্জত, ধর্মের মাথা। পরিস্থিতি তাদের কনিষ্ঠ আঙুলের ইশারায় নিয়ন্ত্রিত।
তারাই এখন ঈশ্বর, মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক; মৃত্যুর পয়গম্বর। তাদের কালো তালিকায় লাল অক্ষরে লেখা আছে মৃত্যুর ফরমান। উর্ধ্বতনের এক ইশারায় দন্ড ধার্য হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে ধড় হতে পৃথক মুক্তচিন্তকদের মস্তক। সাধারণ মানুষ যেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, মুক্তমনারা সেখানে নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায়।
বাকস্বাধীনতা কি তবে বিলুপ্তির পথে? উগ্র ধর্মতন্ত্রই কি জারি হবে চতুর্দিকে? হ্যাঁ। সেই দিন বেশি দূরে নেই। তালিকা অনুযায়ী আর ক’টাকে মারলেই কিচ্ছা খতম। দেশ এখন এই বর্বর মৌলবাদের দখলে।
এই হত্যা জিঘাংসা সংঘটন কি একা মৌলবাদীদের পক্ষে সম্ভব? কখনোই না। এর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ক্ষমতালোভী ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উদাসীনতা, বেহাল ও ভঙ্গুর আইনী ব্যবস্থা, ঘুষখোর-অদক্ষ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এরাই দিনের পর দিন মদদ দিয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীদের। এদের প্রশ্রয়েই মৌলবাদীরা নিজেদের শক্তিমান ঈশ্বরজ্ঞান করছে এবং প্রকাশ্যে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েও আইনের ফাঁক গলে তারা ঠিকই বেরিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর আমাদেরই চোখের সম্মুখে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। ব্যাপারটা খানিকটা এমন, “মুখ খুলবি তো জান খতম”।
বুড়ো মানুষের দাঁতের মত নড়বড়ে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বিচরণ করছে এই বর্বরেরা। কিন্তু প্রমাণের সামান্যতম অভাব না থাকা সত্ত্বেও এতোগুলো নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটে যাওয়ার পরেও বিচার তো দূরের কথা, নূন্যতম জোরালো আইনী সাড়াও জোটে নি। এমনই দায়সাড়া ভাব আমাদের আইন ও বিচার বিভাগের। সর্বোপরি আমজনতাও কিন্তু এসব অন্যায় অবিচারের জন্য কম দায়ী নয়। আমি অনেককেই বলতে শুনেছি, ” নাস্তিক জাহান্নামিটারে মাইরা ভালোই করছে”! এরাও কিন্তু পরোক্ষভাবে হত্যার জন্য দায়ভার বহন করে। সাহস জোগায় উগ্রপন্থীদের।
কোনো ধর্মই সহিংসতাকে সমর্থন করে না। যারা ধর্মের নামে এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়, তারা যে কোনো ধর্মেরই বাইরে। ধর্মকে পুঁজি করেই এরা অধর্মের বীজ বপণ করে সাধারণ মানুষের মনে এবং সেখান থেকেই উগ্র ধর্মতন্ত্রের ফসল ফলায়; নাস্তিকতার দোহাই দিয়ে ধ্বংস করে মুক্তচিন্তা। এরা প্রকৃত ধার্মিকও না; নাস্তিকও না। এরা লিঙ্গহীন নরপশু কিংবা দুর্গন্ধময় নর্দমার কীটস্বরূপ। আস্তিক কিংবা নাস্তিক কেউই এদের হাত থেকে নিরাপদ নয়।
উগ্র ধর্মান্ধতা মৌলবাদীদের চোখে যে সহিংসতার পট্টি বেঁধে দিয়েছে তার উন্মোচন বা নির্মূল সম্ভব না হলে আগামী একশো বছরেও বঙ্গমাতার উন্নয়ন তো সম্ভবই নয়; বরং অবনতি, দুর্নীতি আর অপমৃত্যুর হার যে কয়েক’শ গুণে বৃদ্ধি পাবে তা হলফ করে বলা যায়। মানুষ হারাবে বাক স্বাধীনতা; হারাবে ধর্ম পালনে স্বাধীনতা। জঙ্গী, মৌলবাদীরা হয়ে উঠবে অপ্রতিরোধ্য শক্তিমান। স্বাধীনতার চেতনা হারাবে ঐতিহ্য ও মর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার নির্মম কষাঘাতে জাতি নিমজ্জিত হবে গভীর অন্ধকারে।
১২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এর শেষ কোথায় জানিনা।
আদৌ শেষ হবে কিনা তাও জানিনা।
যে কোন কিছুর সাথে ধর্মকে যোগ করলেই তা গ্রহন হয়ে যায় সাধারনের কাছে, তা ধর্মে থাকুক বা না থাকুক।
অত্যন্ত ভালো লিখেছেন।
সাবরিনা
দ্ব্যর্থহীন অনিশ্চয়তায় ডুবে আছি আমরা। শিক্ষিতরাও সচেতনতার বাইরে এটিই সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
কোথাও আলো নেই।অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছি কেবল।মন্তব্য করতেও ভয় করে,কবে আবার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভালো লিখেছেন সাবরিনা।
সাবরিনা
হুম তবু চুপ করেই বা কদ্দিন?!
আশা জাগানিয়া
তারাই এখন ঈশ্বর, মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক; মৃত্যুর পয়গম্বর। যেন জীবন ও মৃত্যুর মালিক তারা।এরা জীবনের পথ দেখায় জীবন হত্যা করে।
অত্যন্ত গুছানো লেখা,লেখার সাথে একমত।
সাবরিনা
ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
তালিকা শেষ হবেনা, এই লিস্ট লম্বা হতে থাকবে। অবশ্যই বিচার বিভাগকেই দায়ী করতে চাই আমি। কএকজন যুদ্ধাপরাধী কে শাস্তি দিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে আমাদের, আর দেশ চলে যাচ্ছে আরেক খাদে, সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের ঐরশেই।
ভালো পোস্ট।
সাবরিনা
হুম ভাবতেই অবাক লাগে মানুষের মাথার কোনো মূল্যই নেই। কোনো বিচার নেই। অথচ আমরা নাকি স্বাধীন দেশে বাস করছি!
সীমান্ত উন্মাদ
অনেক আগে থেকেই জানতাম যে এরকম ঘটবেই। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির যে দাবী তুলছি এবং যে শ্লো মোশন ছায়াছবির মত চলছে তাদের বিচার আর তার কার্যকর করার প্রক্রিয়া এতে করে ধিরে ধিরে তাদের ঔরসজাতো সন্তানরা মাথা চাড়া দেবার সুযোগ পাবে বেশি বেশি আর তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠার জন্য হত্যাকান্ডগুলো ঘটাবে। তবে হাঁ এটুকু বলতেপারি প্রতিটা আন্ধকার রাত্রীর পর আলো আসে এটা একটা বাস্তব সত্য তাই হতাশ হবার কিছু নাই। এদের ছোবল থেকে আমরা মুক্ত হবই এবং আমরা বাঁচব, সাধীন বাংলাদেশের বাতাসে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে হলেও একবার শ্বাস নিয়ে বলতে পারবোই আমার দেশ আমার বাংলাদেশ এখন রাজাকার আর মৌলবাদের ছোবল থেকে মুক্ত।
জুলিয়াস সিজার
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক ছিল কখন? আর তারা কোন ধর্মের নয় এই কথাটি মানতে পারলাম না। তারা অবশ্যই ধার্মিক এবং নির্দিষ্ট কোন একটা ধর্মের।
জুলিয়াস সিজার
তবে ব্যক্তিগতভাবে আপনি প্রতিবাদ করেছেন তাই ব্যক্তি আপনার প্রতি শ্রদ্ধা।
ইমন
আম্রা বলি, লিখি, কিন্তু কাজে নামি না। আমাদের মডধে আবার অনেকেই আছেন, ভাবে-“আমি লিখতেছি। লেখার মাদ্ধমে প্রতিবাদ কর্তেছি। ”
জারা রাস্ট্রনিতি ভাল বুজেন তারা কেনো রাজনিতিতে আসেন্না! জারা প্রশাসঙ্কে দুসারুপ করেন তারা কেনো বিসিয়েস হচ্ছেন না! কেনো পলিশে, আর্মিতে, প্রশাসনে তারা আস্তেছেন না!
হিন্দি মুভি “রাং দে বাসান্তির” উধাহারন দিবো কিন্তু আম্রা আসবনা। হায়! সেলুকাস! এই দেশতাই নাকি বির মুক্তিযুদ্ধারা প্রান দিয়ে আমাদের মত চাপাবাজ স্বার্থপর্দের মত মানুসের জন্ন স্বাধিন করেছিলো!