ইলিশ

সাজেদুল হক ১৩ জুলাই ২০২০, সোমবার, ০২:৪৮:৩৬পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৭ মন্তব্য

আজ সকাল থেকে বৃষ্টি। কেমন উদাস করা।মন খারাপের বৃষ্টি।কখনো প্রবল, কখনো ঝির ঝির।তবে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ব্যাপ্তিটাই বেশি। মনটাকে এলোমেলো করে রাখছে। 

সাগর সেনের কন্ঠে ‘আমার  দিন ফুরাল ব্যাকুল বাদলসাঁঝে আমার দিন ফুরালো’ গানটি শুনছিলাম।গানটিকে মনে করিয়ে দিলো আমার এক বন্ধুর পোস্ট। অসাধারণ গান। 

এখন অনেক রাত।রাতের প্রায় শেষ প্রহর। আমার দিনের বন্ধুরা আমাকে রাতে সময় দেয়।ওরা দেশের বাহিরে থাকে। ঘুমা,আর জাগিস না! বলে সতর্ক বার্তা পাঠায়। আমি ঘুমাতে পারি না।আর রাতের বন্ধুরা তখন গভীর নিদ্রায়।কেউ কেউ অবশ্য জেগে থাকে আমি তাদেরও স্পর্শ পাই।নিরব স্পর্শ।

 বারান্দায় এসে দাঁড়াই।রাতের সৌন্দর্য দেখতে।এখন বৃষ্টি নেই। আকাশে মেঘের ভেসে যাওয়া দেখি। কিভাবে একখন্ড মেঘ অন্যটিকে ঢেকে দিচ্ছে।গভীর রাতের এক আলাদা সৌন্দর্য আছে।প্রতিটি প্রহরেরও কি নির্মল সৌন্দর্য।ফুল-পাখি-নদী-পাহাড়-সমুদ্র কিংবা ঝড়-বৃষ্টি-চাঁদ-জোছনার মতো প্রহরগুলোরও অপার এক মাধুর্য আছে। গভীর উপলব্ধিতে তা উপভোগ করতে  হয়।

হঠাৎ পেট মোচড় দেয়া ঘ্রাণ ভেসে এলো নাকে।ইলিশের।ঠিক ভাজা ইলিশের নয়।ইলিশ-কোর্মা বা ইলিশ-পোলাও মনে হলো।অবাক হলাম

এতো রাতে কার আবার ইলিশ খেতে ইচ্ছে করলো।ঘ্রাণ ক্রমে প্রবল হচ্ছে। নাক থেকে দেখছি মনেও ঢুকে যাচ্ছে নিমিষেই। খেতে ইচ্ছে করছে খুব। বারান্দা থেকে রুমে চলে এলাম।দু’টো টোস্ট বিস্কিট আর পানি খেলাম।

 কিন্তু ভাবনায় ইলিশ।মন এবার ইলিশের দখলে।মনে পড়লো খুব তো বেশি দিন হয়নি ইলিশের জোড়-ডিম ভাজা খেতে তিনশত ফিট রাস্তার পাশের রেস্তোরাঁয় ক’জন বন্ধু মিলে ছুটে যাওয়ার কথা। একবার দু’বার নয় বেশ কয়েক বার।কি স্বাদ।তবে ইলিশের সত্যিকারের স্বাদ হয়তো আমরা কোনদিন পাইনি আর হয়তো পাবোও না। হাতে গোনা সৌভাগ্যবান কিছু মানুষের তা গ্রহণের সুযোগ হয়।কেননা আমরা  হয় বরফ দেয়া না হয় ফ্রিজের ইলিশ খাই। 

 আমাদের জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক স্যার ইলিশের আসল স্বাদ পেতে বলেছেন ইলিশ মাছ কাটার পর না ধুঁয়ে রক্ত ভালোভাবে সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিয়ে যেদিন রান্না সেদিনই খাওয়া।দুই বার গরম করলেও নাকি ইলিশের স্বাদ নষ্ট হয়।

আসলে এ তো যেন তেন বিষয় নয়,ইলিশ বলেই এতো কথা।

কত গল্প চালু আছে। একবার এক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে তার শেষ ইচ্ছার কথা জিজ্ঞেস করলে আসামী দুইটা ইচ্ছার কথা জানালো ১.একবেলা পুরো ইলিশ মাছ দিয়ে খেতে চায়   ২. মৃত্যুর পরে দাফনের সাথেও যেন  দুইটা ইলিশ মাছ দিয়ে দেয়া হয়।

 তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আচ্ছা এতো মাছ থাকতে ইলিশ কেন?আসামি জানালো, হুজুর সব ধর্মগ্রন্থেই স্বর্গে ভালো ভালো খাবারের কথা বলা আছে কিন্তু কোথাও ইলিশের কথা বলা নাই। তাই ভাবছি যদি না পাই।আর তুমি কি করে নিশ্চিত যে তুমি স্বর্গে যাবে।আসামি বলে-হুজুর কেউ বলে নাই।আর যদি নরকেও যাই,

অন্ততঃ বলতে তো পারুম এখানে আসার আগে একবেলা প্রাণ ভইরা ইলিশ মাছ দিয়া ভাত খাইয়া আইছি। 

এই হলো ইলিশ! 

 সৈয়দ মুজতবা আলী’র একটা চমৎকার গল্প দিয়া লেখা টা শেষ করি-

 গোয়ালন্দগামী স্টীমারে ঝোল সহ ইলিশ মাছ আর গরম ভাত!না খেলে নাকি কাউকে বোঝানো যায় না।দাম চার পয়সা।তাও লোকের খাবার ক্ষমতা নেই।তাই শুধু ঝোল আর ভাত, দাম এক পয়সা।

এছাড়া আরও একটা রেট আছে। ইলিশ মাছের দ্যাখনাই -দাম দেড় পয়সা।মাছ সমেত ঝোল ভাত দেবে।মাছটা দেখে ঝোল মেখে ভাত খাওয়ার পর মাছটা ফেরত নিয়ে যাবে। 

 এক মিঞা দ্যাখনাই নিয়েছে।

খাবার পর দাম দিতে গেছে। বিল কেটে নিয়েছে দুই পয়সা। 

মিঞা তেড়িয়া হয়ে বললো,দুই পয়সা ক্যান! মুই তো দ্যাখনাই লইছি!

ক্যাশিয়ার জবাবে বললে,হালা!! মুই দেখি লাই?

                                  তুই চোষছস!

৯৫৮জন ৭৫৩জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ