
,,রিতু ইতিহাসের টুকরো কথনঃ
পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ -জাপান পর্ব
জাপান একটি দ্বীপ রাস্ট্র। প্রায় ৬৮৫২ টি দ্বীপ নিয়ে জাপান গঠিত।
জাপান একটি ইংরেজী শব্দ। আসলেই আমি হিসেব করে দেখলাম একমাত্র ইংরেজী ভাষা এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ভাষা।
যাইহোক, ম্যান্ডারিন চীনা বা উ-চিনাদের জাপানেন উচ্চারণ থেকে জাপান শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। উ-চিনারা জাপান উচ্চারণ করে জেপপেন এবং জাপানের মালয় শব্দ জেপাং। জাপান জাপানি ভাষায় নিপপন বা নিহোন।
জাপানেও আছে কয়েক যুগের ইতিহাস।
জাপানের প্রথম দিকের ইতিহাস লোককাহিনীর মধ্যে হারিয়ে গেছে। লোককাহিনীতে জাপান সৃষ্টি হয়েছে সূর্য দেবতা দ্বারা, যার থেকে সম্রাটরা অবতরণ করেছে। জাপানে আদি ধর্মকে সিনথো বলা হয়, যার অর্থ ‘দেবতার পথ’ সিনথো ধর্মে কোনো নবি বা ধর্মগ্রন্থ নেই কিন্তু এর শিক্ষা পৌরাণিক কাহিনির মধ্যে দিয়ে এগিযে যায়। এতে ধারনা করা হয় প্রতিটা ধর্মেই পুরাণ কাহিনি বিদ্যমান।
সিনথো ধর্ম পার্থিব জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
কিন্তু ৫৫২ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ার রাজা কয়েকশো ভিক্ষু পাঠান জাপানীদের বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য। বৌদ্ধ এবং সিনথো উভয় ধর্মের ধর্মাবলম্বিরা জাপানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে এবং অনেক জাপানী দুই ধর্ম পালনে খুশি হয়।
সিনথো অর্থ “দেবতার পথ” অর্থাৎ তাদের ধারনা সম্রাটগন দেবতার পথ ধরে আসে বলেই জাপান রাষ্ট্র এবং জাপানি জাতির জাতীয় আধ্যাত্মিকতা এবং প্রচলিত ধর্ম। এটিকে আচারনির্ভর ধর্ম বলা হয়। আসলে প্রাচীন সব ধর্মই ছিলো তখনকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর।
পশুপাখি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা এবং আচারের মাধ্যমে এই ধর্ম পালিত হয় যা বর্তমান এবং অতীতের মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। জাপানী পুরাণ খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্তো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করে খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে কোজিকি এবং নিহন শকি’র ঐতিহাসিক দলিলে শিন্তো আচারের কথা লিপিবদ্ধ।
গুহা থেকে মানুষ যখন একটা নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের চিন্তা করে পশুপাখি লালনপালন করার চিন্তা করে তখন সে পশুপাখি তারা ছেড়ে দিতো অজানা কোনো শক্তির উপর নির্ভর করে।
সন্ধ্যায় সূর্যকে পূজা করে আকুতি করতো যেনো অন্ধকার কেটে সে আবারও ওঠে পূব আকাশে।
সিনথো ধর্মেও আছে সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনী।
সিনথো জাপানের প্রধান ধর্ম বলে মনে করা হয় এখনোও। দেশটির ৮০% মানুষ বিভিন্ন ভাবে সিনথো রীতিনীতি পালন করে কিন্তু আদমশুমারীর সময় খুব অল্প সংখ্যক লোক নিজেদেরকে সিনথো ধর্মানুসারী বলে পরিচয় দেয়। প্রকৃতপক্ষে, জাপানে সিনথো একটি পরম্পরাগত ব্যাপার। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সিনথো ধর্মাবলম্বী হওয়ার মতো কোন ব্যাপার নেই । কিছু প্রথাগত বিশ্বাস এবং তার ভিত্তিতে বিশেষ বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে সিনথো ধর্মস্থান গুলিতে মানুষের জমায়েত হওয়া থেকেই অনুমান করে নেয়া যায় যে জাপানে ৮১০০০ সিনথো ধর্মস্থান এবং ৮৫০০০ ধর্মগুরু রয়েছেন।
যাদের মধ্যে প্রথম সম্রাট ছিলেন জিম্মু। যিনি ৬৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং পরম্পরা ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলে।
জাপানের লিখিত ইতিহাস শুরু হয় ৪০০ খ্রিস্টাব্দে যখন ইয়ামাতো বংশ মধ্য এবং পশ্চিম জাপানের অন্যান্য বংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
জাপানের প্রাচীন ইতিহাসকে প্রভাবান্বিত করেছে সাম্রাজ্যিক চীন এবং পশ্চিম ইউরোপ।
শেষ বরফযুগের সময় জাপান এশিয়ার মূল ভূখন্ডের সাথে স্থলপথে সংযুক্ত ছিলো এবং প্রস্তর যুগের শিকারি সংগ্রহহকারীরা হেঁটে যেতে পারতো।
১০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর জাপান দ্বীপে পরিণত হয়।
এশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে জাপান দ্বীপপুঞ্জে মানুষ প্রথম কখন এসেছে তা সঠিকভাবে জানা যায় নাই। এটা বিশ্বাস করা হয় যে কমপক্ষে ৩০,০০০ বৎসর ধরে জাপানে মানুষ বাস করছে। সম্ভবত মানুষ প্রথম আসে উত্তর জাপানের দ্বীপ হোককাইদোতে।
জাপানে প্রথম যে যুগ শুরু হয় তার নাম ‘জোমোন যুগ’৩০০খ্রিস্ট পূর্ব থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ।
জোমেন শব্দের অর্থ দড়ির ছাপ কারন ঐ সময় মানুষ মৃৎপাত্র তৈরি করতো তার চারদিকে দড়িয়ে পেঁচিয়ে।
তারপর আসে ‘কোফুন যুগ’ ৩০০-৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ।
এ সময়ে জাপানে চিনাদের অত্যধিক প্রভাব ছিলো। বিশেষ করে বন্দরগুলো ব্যবহারের জন্য। জাপানিরা চীনাদের কাছ থেকে কাগজ, চীনামাটি ও রেশম উৎপাদন শেখে।
এরপর আসে মধ্যযুগ
মধ্যযুগের শুরুতে আমরা দেখি জাপানে ‘আশুকা যুগ’ ৫৩৮ থেকে ৭১০ ক্রিস্টাব্দ।
জাপানের প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক সমাজের পর জাপানের সম্রাজ্ঞী শুইকো ছিলেন প্রথম মহিলা সম্রাজ্ঞী।
পরে তার পুত্র সোকেতু ক্ষমতায় আসেন।
এরপর ৭ম শতাব্দীর শেষের দিকে জাপান একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সভ্য রাজ্যে পরিণত হয়।
তারপর এক এক যুগের উত্থান থেকে আধুনিক জাপানের সূচনা।
,,রিতু জাহান,,
২৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
“জাপানেও আছে কয়েক যুগের ইতিহাস।” এটি লক্ষ্য করুন।
এত বিস্তারিত জানা ছিল না। পড়ে ভাল লাগল।
রিতু জাহান
এখানে কয়েক যুগ বলতে আসলে, পৌরাণিক যুগ, মধ্যযুগ, আধুনিক যুগ, বর্তমান যুগ বোঝানো হয়েছে যেটা অন্য দেশেরও আমরা দেখেছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ কবি।
তৌহিদুল ইসলাম
আপনার ইতিহাসভিত্তিক এনং পৌরানিক লেখাগুলি দারুণ তথ্যসমৃদ্ধ হয় বলে পড়তে অনেক ভালো লাগে। জাপানীদের ইতিহাস আগে জানা ছিলোনা, আজ জানলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা জানবেন।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই, ভালো থাকবেন সব সময়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জাপান সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেল। ধন্যবাদ।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জ্বি আপা, আপনিও সুস্থ এবং ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক জানলাম রিতু আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই,,, ভালো থাকবেন সব সময়।
ইঞ্জা
জাপান সম্পর্কে এতো বিস্তারিত জানা ছিলোনা কখনো, আজ প্রথম জানলাম, বেশ কয়েক শতাব্দীর বা সহস্র শতাব্দীর ইতিহাস জেনে আশ্চর্য হলাম, বেশ সমৃদ্ধ এই জাতির ইতিহাস।
চমৎকার এই পোস্টটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আপু, আরও বেশি বেশি লিখুন এই কামনা রইলো।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইজু, ভালো থাকুন সব সময়।
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু।
দালান জাহান
তথ্য নির্ভর সুন্দর লেখা। অনেক কিছু জানা হলো। বিভিন্ন ধর্ম। ধর্ম বিশ্বাস এবং যুগ গুলোর উপর ধারণাটাও নেওয়া হলো আবার। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ,, শুভকামনা রইলো
সৌবর্ণ বাঁধন
খুব সাবলীল ভাষায় লিখেছেন। কয়েক হাজারের বছরের ইতিহাসের সারসংক্ষেপ প্রচন্ড গুছিয়ে আমাদের জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ,, শুভকামনা রইলো ভালো থাকবেন সব সময়
হালিমা আক্তার
জাপানের দু-একটি পৌরনিক কাহিনী পড়েছিলাম। আপনার লেখায় জাপান সম্পর্কে অনেক কিছু জানা হলো। শুভ কামনা অবিরাম।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সব সময়
আরজু মুক্তা
ইতিহাস ঝালাই করলাম নতুন করে।
শুভ কামনা
রিতু জাহান
সিনথো ধর্ম সম্পর্কে আমার ধারনা ছিলো না,,,, বিশ্বের ইতিহাস বইটা পড়তে গিয়ে পেলাম।
রেজওয়ানা কবির
জাপানীদের ইতিহাসের কিছু অংশ জানতাম আপনার লেখায় পুরোটা রিভিউ করতে পেরে ভালো লাগল, ধন্যবাদ আর শুভকামনা আপু।
রিতু জাহান
আপনিও ভালো থাকুন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন লাগলো। ওদেরকে আমার কেন জানি খুব ভালো লাগে। ছোটবেলায় ওদের শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতার গল্প শুনতে শুনতে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ জাপানী দের নিয়ে বিস্তারিত সারসংক্ষেপ রূপে জানানোর জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রিতু জাহান
আপনিও ভালো থাকুন আপু,, জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা খুব ভালো।