২০০৮ এ যেবার শেষবারের মতো দেখা, সেবার বাবা জোর করে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিলেন__ প্রতিরাতে এক মিনিটের জন্য হলেও ফোন করি যেনো। কতো ছোট্ট আকুলতা, চাওয়া ছিলো আমার বাবার_!! এদেশে ফিরে ব্যস্ততা, সংসার,বাস্তবতায় প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে রইলাম। আমার বাবার রাত যে আমার দিন__!! হন্তদন্ত হয়ে ছেলেকে স্কুল থেকে পিকআপ করা, গোসল করানো, লাঞ্চ করানো__ রাজ্যের ব্যস্ততা আমার__!! যখন মনে পড়তো, বাবাকেতো ফোন করা হলো না___ ততক্ষনে ওই প্রান্তে বাবা ফোন হাতে অধীর অপেক্ষা শেষে ঘুমিয়ে ! ক’দিন পর পর ফোন দিলেও বাবা আমার যেখানেই থাকুক__ কি সেলুনে, মসজিদে কিংবা বাজারে__এক রিং এর সাথে সাথেই রিসিভ করতেন ফোন। ওই প্রান্তে অন্তহীন উচ্ছ্বাস আর খুশীর চিৎকার করা কণ্ঠস্বর__!! বলতেন, জানতাম তুই এখনই ফোন করবি। পাল্টা জিজ্ঞেস করতাম… কেমন করে জানতে? বলতো, মনের টান থাকলে এমনই হয় বুঝলি? আজো সে উচ্ছ্বসিত ডাক কানে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে আছড়ে পড়ে আমার। অন্য প্রান্তের বাবা আমার আকুল স্বরে অসহায়ের মতো বারবার জানতে চাইতেন, “তুই কবে আসবি রে মা,আর একবার তোকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে হয়।” আমিও কেমন যেনো নির্দয় ভাবে বলে যেতাম___”প্রয়োজন না হলে বাবা এসে কি করবো?” এইযে ছোট ছোট চাওয়া, দিতে না পারার অতৃপ্তি আমায় নির্মম ভাবে বিরামহীন কাঁদায় প্রতিদিন, প্রতিরাত, প্রতিনিয়ত।
দু’জনের মাঝে আজ এমন এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর, চাইলেও তা ভেদ করে যেতে পারিনা। কতকাল দেখা নেই, ছোঁয়া নেই !! ছেলেকে কোচিং এ দিয়ে দুই ঘণ্টা গাড়িতে অপেক্ষা করি।একা একা কতো না বলা কথা বলে যাই আমার প্রানাধিক বাবার সাথে। সব প্রয়োজন ছাপিয়ে আজ আমার হাতে কতো সময় কথা বলার ! ব্যস্ততা, সংসার, বাস্তবতা___বড় বেশি নির্মম, নিষ্ঠুর। এপার আর ওপারের মাঝের দেয়ালটা বড় বেশি দুর্লঙ্ঘ্য। এই নিষ্ঠুর, নির্দয় পরিহাসের বিচার আমি কার কাছে চাইবো___সৃষ্টিকর্তার কাছে ? রাত গভীরে কিংবা একাকী কোলাহলের মাঝে দিনে দুপুরে হেঁটে যাবার সময় কতো কি ভাবি ! সবার অলক্ষে নয়ন বেয়ে শ্রাবণধারা গড়িয়ে যায়। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে গেলেও তার গড়িয়ে গড়িয়ে যাওয়া ফুরায় না, শুকায় না ! চুপিসারে অভিমানে বলে উঠি___ “বাবা, তোমার জন্য যে শ্রাবণধারা ঢেলে দিচ্ছি তার কোনো সীমা পরিসীমা নেই কেনো? আমি আর কতো কাল অপেক্ষা করবো তার ফুরিয়ে যাবার, শুকিয়ে যাবার ? কতোকাল___ আর ক-তো-কা-ল !!
## বাবা দিবসে সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা… ভালোবাসা … শুভকামনা ।
১২টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
অনেক বেশি টাচ করলো, আপনি লেখেনই এমন।
সব বাবাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, আর শ্রদ্ধা এমন সন্তানের জন্যও, যে কেঁদে যায় তার না পারাতে…
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন সব সময়…
ছাইরাছ হেলাল
ছুঁয়ে যাওয়ার মত করেই বলতে পেরেছেন ।
বাঁধা পেরিয়ে একদিন ঠিকই পৌঁছুতে পারবেন আপনি ।
রিমি রুম্মান
শুভ কামনা রইলো…
জিসান শা ইকরাম
এ শ্রাবণধারা ফুরাবে না কোনদিন ।
লেখাটি হৃদয় স্পর্শ করে গেলো ।
সব বাবাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ।
বাবারা ভালো থাকুক ।
ভালো থাকুন আপনিও প্রবাসে ।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুক সবাই…
মশাই
হৃদয়স্পর্শী লেখা। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না আসলে। সব বাবাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ।
বাবারা ভালো থাকুক ।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন সবার ভালবাসায়…
স্বপ্ন
এত ভালো লেখেন কিভাবে আপু ? আমি তো নিজের কথা প্রকাশে চরম ভাবে ব্যর্থ । বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর শুভেচ্ছা ।
রিমি রুম্মান
আপনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেছেন, তাই লেখাটিকে “ভাল লেখা”র মর্যাদা দিয়েছেন… ধন্যবাদ অশেষ
সঞ্জয় কুমার
মন ছুয়ে গেল । সুন্দর হয়েছে
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন … ধন্যবাদ