
শৈশবের শোনা গল্প সোনার ও রুপার কাঠির যাদুর স্পর্শ পেলে সবকিছু ফিরে পাওয়া যেত,যদি এরকম সত্যি কিছু হতো তাহলে আমার আম্মা সহ সকল আপনজনদের না ফেরার দেশে থেকে ফিরে পেতাম।
আমার আম্মার কন্ঠের মাধুর্য, সুস্পষ্ট উচ্চারণ, ভাষার অপূর্ব গাঁথুনিতে ছিলেন অতুলনীয়। ছোট বেলায় দেখেছি গ্রীষ্মের ছুটির সময়ই তিনি তার বাবার বাড়ি যেতেন।কারন আত্মীয় – স্বজনের ছেলেমেয়েদের ছুটি থাকতো,তারা অপেক্ষা করতো আম্মা কবে যাবেন।আম্মার গল্পবলা শোনার জন্যই অধীর আগ্রহে সবাই থাকতো।এক কথায় বলা যায় আম্মা ছিলেন ছোট, বড় সকলের মধ্যমনি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখলেও শেষ হবেনা আম্মার সম্পর্কে। এই গ্রীষ্মের সময়ই শেষবারের মত তার বাবার বাড়িতে আমরা রেখে এসেছি। গত ২৮ শে মে দিবাগত রাত ১২ টা ৫৫ মিনিটে আম্মা না ফেরার দেশে চলে যান।
মহান আল্লাহ পাক আম্মাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন—– আমীন।
” আম্মা “
এখন তুমি আমার স্মৃতির ডাইরির জ্বলজ্বল করা নক্ষত্র,
আমার বাস্তব, আমার দুর্ভাগ্য, ভাগ্যচিন্তা,
অসীম শূন্যতা ভরা মন বিষাদের কুহেলিকায়,
আঁখি ছলছল মনে হাহাকার সময়ের সীমানায়,
কখনো কেউ বুঝতে পারবেনা লুকানো কষ্ট মনের মনিকোঠায়।
বিস্মৃতির স্রোতে ভেসে যাবে নিঃশব্দের এই পথ চলা একদিন,
প্রকৃতিও সাজবে তার বিচিত্র রুপে অন্তহীন।
নির্মল আনন্দ নেই উচ্ছ্বল ঝরঝরে বৃষ্টির জলে,
আজ আর মৃদংগ বাজেনি বৃষ্টির সরোবর টলমলে।
ঝিরিঝিরি বাতাসে উড়ে গেল নিশ্চুপ ছোট্ট পাখি,
আকাশ পানে খুঁজে বেড়াই নিঃশব্দে আনমনে একাকী।
শেষ দেখা তোমার নীরব ঘুমে বিভোর শরীর,
সু- শীতল এক অকৃত্রিম মুক্তি দিলে ,
প্রতিনিয়ত সেই মুখচ্ছবির সাথে দেখা হয় এখন,
জীবন দ্বীপে জমিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো বিভ্রমে কাটবে নির্জন।
মনের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো জীবন বদলে দিবে,
রঙিন স্বপ্ন গুলো প্রসন্নতায় হারিয়ে যাবে।
এখন তুমি আমার সাহিত্যে নতুন প্রজন্ম বিদ্যাপীঠ গৃহ,
মানষিক দ্বিধাগুলো কুঁচিকুঁচি করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ,
বাস্তবতায় ফিরবো মানবিক এই ভবের সংসারে।
এখন তো তুমি আমার লেখার কালজয়ী বর্তমান,
নাহ! কারো প্রতি নেই কোনো অভিযোগ, অভিমান।
গভীর অনুভূতির ছোঁয়া পাবে তোমার মুখচ্ছবির লেখায়,
থেমে গেছে হাসি- আনন্দ,থেমে গেছে মান – অভিমান,
থেমে গেছে যেন সব কর্ম কোলাহল।
জীবন সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দ মায়ায়,
সন্ধ্যা নামে গোধূলি বেলায়, বেলা শেষে অবেলায়।
যেন থমকে গেছে জীবন——
জন সমুদ্রের মাঝে তুমি ছাড়া বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ।
সবাই জানাযার নামাজে দাঁড়িয়ে মসজিদ প্রাংগনে,
তোমার লাশের কফিন ছুঁয়ে বলতে পারিনি,
আম্মা যেওনা আমাদের ছেড়ে।
সূর্যের ঝলকানির মাঝেও আকাশ মেঘের দেয়ালে শ্রাবনের ঢেউ উঁকি দিয়েছিল।
এলোমেলো বাতাসে উড়লো বিদায় ঘন্টার পাখি,
ভবের এই সংসারে পারিনি রাখতে ধরে।
তুমি নেই চোখের জলে ভিজবে জীবনের উঠোন,
তুমি বিহীন জন্ম নিবে এক নির্জন মরুভূমি ,
অনন্তকাল বেঁচে থাকবে তোমার জ্ঞানের বাণী,
স্বপ্ন ভাঙা মনের গভীরে দিচ্ছি হয়তো কিছু শান্তনা,
এই জীবনে শত খুঁজলেও তোমার দেখা পাবোনা।
বিনম্র শ্রদ্ধা করছি নিবেদন,
ভুলে যাবনা মোরা তোমার স্নেহ,ভালোবাসা আর শাসন।
মৃত্যুকে ঘিরে রাখে চারপাশ তবুও মৃত্য চিরন্তন,
চরম সত্যিটাকে করতে পারিনা যেন আলিংগন।
সত্যকে তো সত্যিই বলতে হবে,
মিথ্যার বেড়াজালে বাকরুদ্ধ আর হবো না,
সবুজ এলেও ধূসর হয়,যখন মনে হয়,
তোমার ঠিকানা এখন মাটির বিছানা,
স্রষ্টার মাঝে যেন তোমায় পাই এটুকুই শুধু কামনা।
কিছু কথা ঃ—– আম্মা এবং আমি এক সাথেই ডাক্তারের কাছে ভিজিটে যাই ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে। দুই ভাই, আম্মা,ও আমরা দুই বোন এক সাথেই অসুস্থ হই। এক ভাই এখনো হাসপাতালে অবস্থান করছেন।তিনি আম্মাকে শেষ দেখাও দেখতে পারেন নি। আমরা কিছুটা সুস্থতা লাভ করলেও আম্মাকে হারিয়ে ফেললাম।
এই কথাগুলো হয়তো অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে আপনাদের সবার কাছে। আমার কাছে মনে হয়েছে সবাইকে জানানো দরকার, কেন আমার সোনেলায় নীরবতা ছিল??? আমি টানা চার মাস শয্যাশায়ী ছিলাম।
ভালোবাসার এই উঠোন টাকে বড্ড ভালো বাসলেও অনুপস্থিত ছিলাম অনেক দিন।
মাননীয় উপদেষ্টা গন,এডমিন ও মডারেটর গন, শ্রদ্ধেয় লেখক ও লেখিকা গন এবং প্রিয় পাঠক – পাঠিকা গন সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আম্মা চলে যাওয়াতে আবার অসুস্থ হয়ে যাই,চেষ্টা করছি ভাল থাকার বাকি আল্লাহ ভরসা।
সুস্থতা নিয়ে ফিরে আসতে চাই। শুধু সোনেলাকে ভালোবেসে যাই।সকলের জন্য অফুরান ভালোবাসা ও শুভ কামনা।
২৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঈশ্বর সহায় হোন আপনাদের সবার। আপনার আম্মার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। ঈশ্বর তাকে স্বর্গবাসী করুন। অসুস্থতা কাটিয়ে, মনের শূণ্যতাকে শক্তি তে রুপান্তরিত করে ফিরে আসুন শীঘ্রই আমাদের মাঝে। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
উর্বশী
সুপর্না ফাল্গুনী আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সময় করে পড়ার জন্য অজস্র ভালোবাসা। একটু ভাল থাকার জন্য ফিরে এলাম,কিন্তু কোথাও শান্তি খুঁজে পাইনা আমি। আশা করি আবার পাশেই পাবো।ভাল ও সুস্থ থাকুন অফুরান শুভ কামনা।
উর্বশী
সুপর্না ফাল্গুনী আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
হ্যা,সুস্থতা নিয়ে ফিরে আসতে চাই, বাকি আল্লাহ ভরসা। দোয়া করবেন।অনেক ভালোবাসা রইলো।
আরজু মুক্তা
এই করোনায় সবকিছুই পাল্টে গেছে। জীবন জীবিকা সব এলোমেলো। মা নেই। তাই হয়তো ঐ কষ্টের জায়গাটা বুঝি। ভালো থাকুন ওপারে। আপনার মন ভালো হোক, সজীব হোক। সবকিছু আগের মতো হবার নয়। কিন্তু জীবন তো চালাতেই হয়।
ভালো থাকবেন সবসময়
উর্বশী
আরজু মুক্তা আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
হ্যা, করোনায় সবকিছুই পাল্টে গিয়েছে। তবে আমার আম্মার করোনা হয়নি।তিনি কিডনি জনিত রোগে ভুগছিলেন । এই সমস্যা নিয়ে প্রায় ২০ বছর সময় পার করেছেন।আম্মার ব্লাড সেল তৈরি হতো না, ভেঙে৷ যেত। ইঞ্জেকশন দিয়ে ব্লাড সেল তৈরি করা হতো। হায়াত যতদিন ছিল,ততদিন এই অবস্থায় ই ছিলেন।কঠিন ভাবে সব মেনে চলতেন বলেই রোগ অনুযায়ী ভাল ছিলেন।
আমি ভাল থাকার চেষ্টা করছি,জীবন তো চালাতেই হবে
আল্লাহ ভরসা। অফুরান ভালোবাসা রইলো।
আরজু মুক্তা
আল্লাহ ভরসা
উর্বশী
আরজু মুক্তা আপু,
আল্লাহ ভরসা
ভাল থাকুন,শুভকামনা সব সময়।
আলমগীর সরকার লিটন
িআপনার মায়ের জন্য অনেক দোয়া রইল মহান আল্লাহ্ জান্নাত বাসি করুণ আমিন
উর্বশী
আলমগীর সরকার লিটন ভাই,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সুম্মা আমীন। ভাল থাকার চেষ্টা করছি।আশা করি আগের মত সব সময় পাশেই পাবো।অফুরান শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মা তো অতুলনীয়! মা সহ আপনাদের সবার আল্লাহ ভালো রাখুক। মাকে জান্নাতবাসী করুক
আমিন।
উর্বশী
রোকসানা খন্দকার রুকু আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সুম্মা আমীন। সময় করে পড়ার জন্য অফুরান ভালোবাসা রইলো।
হালিমা আক্তার
আল্লাহ আপনার মাকে জান্নাত বাসী করুন। সমস্ত দুঃখ কষ্টকে জয় করে আবার ফিরে আসুন আপন গতিতে। শুভ কামনা।
উর্বশী
হালিমা আক্তার আপা,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
হ্যা, ভাল থাকার চেষ্টা করছি।এই শূন্যতা পূরণ হবার নয়।
জীবন তো চলতেই থাকে।ফিরবো খুব তাড়াতাড়ি ইন শা আল্লাহ। অফুরান ভালোবাসা সব সময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
মায়ের মতন আপন আর কেউ হয় না। মায়ের শূন্যস্থান পুরণ হতে পারে যদি এমন কোনো চেষ্টা তদবির থাকতো, তাহলে হয়তো পৃথিবীর কোন সন্তানকেই মাতৃহারা হতে হতো না। আপনি সহ আপনার পরিবারের অনেকের অসুস্থতার কথা জেনেছিলাম। এখানে আপনার অনুপস্থিতির জন্য যতো না খারাপ লেগেছে, তারচেয়ে বেশি মন খারাপ হয়েছে আপনার পরিবারের উপর ক্রমাগত এমন দুর্যোগের খবর শুনে। নিয়তির উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা কেবল দোয়া করতে পারি। পরিবারের সবাই সুস্থ হয়ে গতিময় জীবনে ফিরে আসুক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।
আল্লাহ তায়ালা আপনার মাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
ভালো থাকুন আপু। অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য 🌹🌹
উর্বশী
সাবিনা ইয়াসমিন আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি। চেষ্টা করছি ভাল থাকার,যদিও শূন্যতা পূরণ হবার নয়।তবুও জীবন তো চলে জীবনের গতিধারায়।ফিরবো খুব তাড়াতাড়ি ইন শা আল্লাহ। খুব ভাল থাকুন, অফুরান ভালোবাসা সব সময়।
ছাইরাছ হেলাল
আল্লাহ আপনার আম্মাকে বেহেশতে দাখিল করুন এই দোয়া রাখি।
আপনি যেন এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন তা ও কামনা করি। যদিও এ অভাব অপুরণীয়।
আমাদের মনে রেখে ফিরছেন দেখে আমরা আনন্দিত। অন্যদের ও সুস্থতা কামনা করছি।
উর্বশী
ছাইরাছ হেলাল ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ সালাম।
আপনাদেরকে ভুলে গেলে যে সোনেলাকে ভালোবাসার ঘাটতি হবে।আমি সেটা তো পূরণ করতে পারবোনা। ভালোবাসার এই উঠোনের ভাঙ্গা অংশ হতে চাইনা ভাইয়া।
ভাল থাকার চেষ্টা করছি, জীবন তো থেমে থাকেনা।তবে শূন্যতা পূরণ হবার নয়।আমাদের চার বোনের কারোরই চোখে ঘুম নেই,আম্মা চলে যাওয়ার সাথে আমাদের ঘুম হারিয়ে গেল।হয়তো ঠিক হবে কিছুটা সময়ের ব্যাপার।
ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
মোঃ মজিবর রহমান
মা বড় আপন মা বড় স্নেহময়ী মা সকল কষ্টের দূর করার পথ্য। মা গেছে তাঁর বেদেহী আত্বার শান্তি কামনা করি। ইনশা আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসিব করবে।
উর্বশী
মোঃ মজিবর রহমান ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সুম্মা আমীন।আপনার সাথে একমত পোষণ করছি ভাইয়া।
ভাল থাকবেন,শুভ কামনা সব সময়
মোঃ মজিবর রহমান
এই করোনাকালে সবই উলোট পালোট। সব ঠিক আছে শুধুই বেহসেবি ও অন্যায়কারীদের ক্ষেত্রে তারা বদলায় নি এখন। তাঁদের নিকট মৃত্যু অসম্ভব বলে আমার মনে হই।
গতবছর করোনায় চাকরি হারিয়েছি আল্লাহর অশেষ রহমতে একটা পেয়ে বেচে আছি কোন রকম।
আমিও কিছু করোনা মৃত্যু খুব কাছ থেকেই দেখেছি, ছেলে বাবাকে ছুঁতে পারেনি, বাবা ছেলেকে এভাবেই হইতো মহান আল্লাহপাক এর সৃষ্টির রহস্য।
উর্বশী
মোঃ মজিবর রহমান ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
একদম সঠিক বলেছেন ভাইয়া করোনা জীবন অন্য রকম করে দিল।তবে আমার আম্মা কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন প্রায় ২০ বছর। খুব নিয়ম কানুন মেনে চলতেন বলেই তেমন বড় সমস্যা হতোনা।তার বড় সমস্যা ছিল তার ব্লাড সেল ( রক্ত কনিকা) তৈরি হতো না। ইঞ্জেকশন দিয়ে সেটা তৈরি করা হতো,এভাবেই মোটামুটি ভাল থাকতেন। হয়তো হায়াত এ পর্যন্ত ই ছিল। খুব ভাল থাকুন,শুভ কামনা সব সময়।
হালিম নজরুল
মায়ের জন্য প্রাণভরা দোয়া রইল।
উর্বশী
হালিম নজরুল ভাইয়া,
আমীন।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময় ।