কয়েক বছর আগে আমার অনেক খারাপ একটা অসুখ হয়েছিল। প্রথমে মেডিকেল তারপর সেখান থেকে ক্লিনিকে। আমার সাথে ক্লিনিকে ছিলেন আমার মা। খাওয়াদাওয়া বন্ধ, এমনকি এক ফোঁটা পানিও না। স্যালাইন চলছে তো চলছে। মেজাজ অসম্ভব খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল। কারো সাথে কথা বলতে বললেই মেজাজ খারাপ হতো। মোবাইলের রিংটোন শুনলে, আত্মীয়স্বজন এমনকি বন্ধুরা দেখা করতে আসলে পর্যন্ত বিরক্তি লাগত।
তখন সারদিন মোবাইল টিপাটিপি করতাম। এজন্য বাড়িতে বকাও শুনতাম। একদিন ক্লিনিকে রাতে কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙে। খেয়াল করে দেখি আমার মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছেন(শব্দে যেন আমার ঘুম না ভাঙে) এবং ফোনে আমার বোনের সাথে কথা বলছেন। অথচ আমি জেগে থাকলে কখনোই তিনি কাঁদেন নি। আমাকে সাহস দিতেন। তিনি বলছিলেন;-
“সে মোবাইলের শব্দ শুনলেই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারছে না। ভেবে দেখ কেমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আগে আমি কত বকা দিয়েছি এই মোবাইলের জন্য। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।”
আমি তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলি যেন মা বুঝতে না পারেন আমি জেগে আছি। সব শুনলাম। সেদিন সকালেই মা কে একটা ঝারি দিয়েছিলাম। তখন এত অনুশোচনা হচ্ছিল। এরপর সুস্থ হওয়ার ডাক্তার পরামর্শ দিলেন বাড়িতে চলে যেতে। বাড়িতে গিয়ে শুয়ে বসে দিন কাটত। অনেকদিন ভেবেছি মা কে স্যরি বলব।
“কিরে কিছু বলবি?-
– না কিছু না।
কিছু না তো পিছনে ঘুরঘুর করিস কেন?
– না এমনি।”
আমি মুখচোরা টাইপের। যা কিছু বলার দরকার তা বলতে পারি না। এরপর আরো অনেক বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে হালকা কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে স্যরিও বলেছি। শুধু এই ঘটনার জন্য আমি আজও মাকে স্যরি বলিনি।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনদিন এটার জন্য স্যরি বলবও না। কিছু বিষয় অমীমাংসিত থাকাই ভালো। স্যরি বললে এই রাতটার অনুভূতি আমার কাছে আর এমন থাকবে না। কতকিছুর জন্যই তো মা ক্ষমা করে দিয়েছেন। অসুস্থতার সময় কি বলেছি তা উনার মনেই থাকবে না। কিন্তু আমার মনে থাকবে। আমি যতদিন বেঁচে থাকব এই স্যরি না বলার খচখচানিটা আমার সাথে বেঁচে থাকবে।
আহা একটা জীবনে কত গল্প থাকে………..
১৪টি মন্তব্য
খেয়ালী মেয়ে
মায়েরা কখনো সন্তানের দেওয়া কষ্ট মনে রাখে না–কিন্তু সন্তান যাতে কষ্ট না পায় সেদিকটায় সজাগ দৃষ্টি রাখেন–
সব মায়েরাই হয়তো এমনি….
একদিন সব গল্প হয়ে যায়, এটাই সত্যি..জীবনটা গল্পে ভরপুর..
জুলিয়াস সিজার
একদিন সব গল্প হয়ে যায়। এটাই সুন্দর বলেছেন।
জিসান শা ইকরাম
স্যরি না বলার ব্যাখ্যাটি মনে ধরেছে।
থাকুক না কিছু এমন স্মৃতি,যা একটি আলাদা জীবনের গল্প।
লেখা ভালো হয়েছে………
জুলিয়াস সিজার
ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
একটা জীবনে কতো ছোট ছোট গল্প থাকে তার বিশাল আবহ নিয়ে। হ্যাঁ তাই, কিছু স্যরি না বলাই থাকুক। এই না বলার জন্য মায়ের পেছন ঘুরঘুর করা বাড়িয়ে দিলে ক্ষতি কি? 🙂 দারুন লেখা দাদা।
জুলিয়াস সিজার
ধন্যবাদ ধন্যবাদ। 😉
লীলাবতী
ভালো লেগেছে ভাইয়া।মা এর কাছে অবশ্য স্যরি বলার কিছু নেই,কারন মা সন্তানের কোন অন্যায় মনে রাখেন না।
জুলিয়াস সিজার
🙂
রিপন তালুকদার
কিছু ‘না’ যদি মায়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় তবে সেই স্যরি ‘না’ বলাই থাক ।
জুলিয়াস সিজার
হুম 🙂
মিজভী বাপ্পা
দারুণ লিখেছেন ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ 🙂
জুলিয়াস সিজার
আপনাকেও ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
কৃন্তনিকা
মার সাথে আমরা হাজারোবার খারাপ আচরণ করি। কিন্তু মায়েরা কেন জানি তা কখনোই মনে রাখেনা, হয়ত এজন্যই তারা মা।
ভালো লাগলো লেখাটি… খুব আবেগঘন
জুলিয়াস সিজার
অনেক অনেক ধন্যবাদ।