আমার মায়ের হঠাৎ শখ হলো থ্রি পিস বানাবেন। বাসার পাশেই শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য একটা দোকান হয়েছে, ওখান থেকে বানাবেন। তিনি দুপুর থেকে আমাকে অনুরোধ করে যাচ্ছেন :
“বাসার পাশের ঐ দোকানটাতে একটু যাবা আমার সাথে?”
“আমি তো গজ কাপড়ের হিসাব বুঝি না। আমি টাকার হিসাব বুঝি না।”
(তিনি এস এস সি অব্দি পড়ার পর বিয়ে হয়ে যায়।)
“তোমরা কেউ সাথে না গেলে আমি একা কথা বলতে পরব না।”
“যাবা আমার সাথে? ”
একবার ভাবতে পারেন, তিনি কতটা অসহায়? আমাদের সমাজ মেয়েদেরকে এই অসহায় বানিয়ে রাখতেই পছন্দ করে বেশি। কারণ মেয়েরা যত অসহায় হবে, তত পর নির্ভরশীল হবে। যত পর নির্ভরশীল হবে তত বাধ্য হবে। পুরুষের হ্যাঁ মানে হ্যাঁ, না মানে না প্রতিষ্ঠিত হবে! মজা না ব্যপারটা?
হুম, ঐ যুগের মেয়েদেরকে এরকমই একটা অথর্ব প্রাণ ওয়ালা প্রাণি তৈরি করা হত, শুধু মাত্র বিয়ে দিতে যা যা লাগে তাই শেখানো হত। বিয়ে হয়ে গেলেই জীবন ধন্য!
বিয়ের পর মেয়েটা কিভাবে জীবন যাপন করলো, কি কি সহ্য করতে হলো, কিভাবে বাঁচল, তা দেখার বিষয় না।
ঐ সমাজের কি আদৌ কোন পরিবর্তন হয়েছে? হুম যুগের সাথে ভোল পাল্টেছে। আজকাল বৌ অশিক্ষিত হলে প্রতিবেশীর কাছে পরিচয় দেবে কি? তাই শিক্ষিত গৃহবধূ চাই। কিন্তু এই শিক্ষিত গৃহবধূর আবার আত্মসম্মান থাকা চলবে না, মাথা উঁচু করা চলবে না, মিনমিন করা লাগবে। অবশ্যই কর্তার ওপর নির্ভরশীল থাকা লাগবে, নয়ত আবার যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বসে? ভাত কাপড়ের জন্য, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তার শত অন্যায় সহ্য করেও পরে থাকা চাই। সুতরাং চাকরি করা চলবে না!
আবার যে মেয়েটা বিয়ে করছে না, বা দেরি করছে, তাকে শত কটুক্তি করা চাই, রোজ রোজ তাকে বিয়ের খোঁটা দেওয়া চাই, তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে, “বিয়েই তোমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। যে মেয়ের জীবনে পুরুষ নাই, তার জীবন বৃথা!” এরকমভাবে একটা মিথ্যা সমস্যা সমাজে সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে! সুতরাং মেয়ে তুমি তোমার রূপ ঘষো, মাজো, চুল আঁচড়াও যে করেই হোক একটা বিবাহ তোমার হওয়াই লাগবে!
আমি অস্বীকার করছি না জীবনে সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তাকে। কিন্তু একটা মেয়ের জীবনে যেমন সঙ্গীর প্রয়োজন তেমনি একটা ছেলেরও প্রয়োজন। তাহলে একটা মেয়ের বিয়ে নিয়ে সমাজের এত মাথা ব্যাথা হতে হবে কেন? নারী পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। তাহলে একজনকে জীবনের শুরু থেকে হাঁটু ভেঙে অন্যের পায়ে ভর দিয়ে চলা শেখাতে হবে কেন? অপরজনকে নিজের এবং সঙ্গীর উভয়ের বোঝাই নিতে হবে কেন?
আমরা যদি ছেলেদের প্রতি প্রত্যাশা একটু কমাই, মেয়েকেও সমানভাবে বিকশিত হবার সুযোগ দেই, তাহলে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে একটা ছেলে একটা মেয়ে নিজেরাই নিজেদের দায়িত্ব নিতে পারবে। তখন ছেলেটাকেও ৩৫ বছর অব্দি চাকরির পেছনে ছুটে জীবন ধ্বংস করা লাগবে না, মেয়েকেও বোঝা হয়ে বেড়ে ওঠা লাগবে না!
নেন, অনেক উপদেশ দিলাম। এবার কার কার ঘরে বালিকা আছে? ঘাড় ধরে ৩০+ বয়সের ধামড়ার কাছে বাল্য বিবাহ দিয়ে দেন, বলেন কবুল!…
১১টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
আসলেই, মেয়েদের সুযোগ সুবিধা বাড়লেও এখনো ঐ তথাকথিত নিয়মের বেড়াজালেই বন্দি। শুধু মেয়েরা পড়ালেখা শিখলো। আর সবকিছুতে ছেলেদের মতেই চলতে হবে।
আমি মনে করি, ছেলেদের মানসিকতার বদল জরুরি।
ভালো লাগলো আপনার লেখাটা।
শুভকামনা
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন আপু।
মেয়েরা পড়ালেখা কেন শিখলো? সেটাও ছেলেদের প্রয়োজনে। যেন তারা সবাইকে বোঝাতে পারে, “আমি একটা শিক্ষিত শো পিস ঘরে এনেছি।” কিন্তু আসল লাগাম তারাই ধরে রাখলো! সুন্দর না?
মনির হোসেন মমি
বর্তমান যুগে একজনের কামাইয়ে সংসার চালানো বড় কঠিন আয়তো দুরের কথা সেক্ষেত্রে আপনার শেষের কথার সাথে এককমত। স্বামী স্ত্রী দুজনে কর্মঠহলেসংংসার সুখের হয়।বাকীটা একান্তই মনমানষিকতার বিষয়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মেয়েরা পুরুষের মনোরঞ্জন এর জন্য ই জন্মায়। শিক্ষিত অশিক্ষিত কোন বিষয় নয়। যেভাবেই হোক পুরুষ কে খুশি করা, তাদের মতেই চলতে হবে তানা হলে সে নারী বেয়াদব, উগ্র, অসভ্য। অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম। ভালো আছেন নিশ্চয়ই। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
নারী শক্তির জয় হোক।
বর্তমান সময়ে নারীরা অনেক এগিয়ে আছে
শুভ রাত
রোকসানা খন্দকার রুকু
“বিয়েই তোমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। যে মেয়ের জীবনে পুরুষ নাই, তার জীবন বৃথা!” এরকমভাবে একটা মিথ্যা সমস্যা সমাজে সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে! সুতরাং মেয়ে তুমি তোমার রূপ ঘষো, মাজো, চুল আঁচড়াও যে করেই হোক একটা বিবাহ তোমার হওয়াই লাগবে!*** একদম ঠিককথা বলেছেন। প্রতিবাদ হওয়া খুব জরুরি। শুভ কামনা।🌹🌹
আলমগীর সরকার লিটন
জীবনে কম বেশী সবই প্রয়োজন শুধু এক জন সংসার গোচাবে তা হয় না দুই জন সংসার দেখবে—————-
রেজওয়ানা কবির
যদিও এখন আমরা এ ব্যাপারে অনেকটা সচেতন আগের তুলনায় কিন্তু পুরোপুরি বদলাতে এখন পর্যন্ত পারিনি। আমরা মুখে বলি সমঅধিকার, কিন্তু কাজে এখনো ১০০% হয় না। আমরা মেয়েরা সত্যি কোন না কোন দিক থেকে অসহায়। তবে এর জন্য দায়ী সমাজের গোড়ামী,কুসংস্কার আর বিকৃত রুচি বা মানসিকতা। তবে আমাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে,নিজের স্থান ঠিক করতে হবে। সেই দিন আসবে কিন্তু। খুব সুন্দরভাবে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন আপু। ভালো থাকবেন।
নীরা সাদীয়া
আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপু।
শুভকামনা নিরন্তর।
জিসান শা ইকরাম
এখনো মেয়েদের অবস্থা খুব একটা পালটে গিয়েছে বলা যাবে না। মেয়েদের বিয়ে দেয়ার জন্যই পড়াশুনা করানো হয়। প্রতিবছর দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ হতে যত মেয়ে মাস্টার্স পাশ করে তার কয়ভাগ মেয়ে জব বা নিজে কিছু করে? বিয়ের পরেই সবাই সংসারী হয়ে যায়, যেন বিয়েটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ। সমাজের দৃষ্টি ভঙ্গি এমনই।
পোষ্টের বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করছি।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
এখন মেয়েরা এগিয়ে আসছে, জাগরণ হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও হবে। ধন্যবাদ আপনাকে।