আজ ভয়াল ২৩শে আগস্ট
আজ নিজের কথাই বলবো…!!!

মৃত্যুপথ থেকে কিভাবে বেচে আসছি।
২০০৭ এর এই দিনে স্যার এ এফ রহমান হল এর সামনে থেকে বিকেলে পিকেটিং অবস্থায় পুলিশের ছুড়া স্পিন্টার খেয়ে আমিই প্রথম রাস্তায় পড়ে যাই।হাজার হাজার স্টুডেন্ট মুহসীন হলের মাঠে। আমাকে ধরা ধরি করে মিছিল শুরু হয়,মিছিল সহকারে বসুনিয়ার গেটে দাড়িয়ে থাকা ‘চ্যানেল-১’এর গাড়িতে তোলে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার জন্যে।মিনিট ৫ এর মতো সেন্স ছিলো না।একটা পর্যায়ে চোখ খুলে দেখি গাড়ির চারোপাশে ফোটো সাংবাদিক আমার ছবি তুলছিলো,হাসপাতালেও একই অবস্থা যেহেতু কার্ফিউ জারি হওয়ার পর আমি প্রথম গুলি খাই ফলে সাংবাদিকদের আগ্রহের কমতি ছিলো না।হাসপাতালে প্রায় ৪০/৪২ টির মত স্পিন্টার বের করে। ঠিক ২০ মিনিট পরে আরো গুলি খাওয়া স্টুডেন্ট এসে যায় একে একে, এক অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়। এদিকে রাত ৮ টার ভিতর হল ছাড়ার নির্দেশ। এম্বুলেন্স করে হল গেটে নামিয়ে দিয়ে গেলো।

হল এ আসার সাথে সাথেই বোমি শুরু,কোনমতে কে যেনো কিছু কাপড়সহ একটা ব্যাগ হাতে ধরিয়ে যে যার মত ছুটছে নিরাপদ গন্তব্যে। বড় ভাই সোয়েব আর নীল ভাই আমার বোমি থামাতে হাজারীবাগের এক ক্লিনিকে নিয়ে গেলো কিন্তু বোমি থামছে না।ততক্ষনে ভেবেই নিছি আমি বোধয় আর বাচতে পারলাম না।কারন আমি ভাবতেছিলাম, মানুষের ৩ ঘন্টা বোমি হলে টিকে না । না ক্লিনিকেও থামাতে না পেরে সোয়েব ভাই সংকর তার বাসায় নিয়ে গেলো।অবস্থা বেদিক দেখে সে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে যায়,সেখানে ডাক্তার থাক্লেও অপারেশন করতে নিষেধ আছে বলে জানায় এবং পাশেই আরেকটা ক্লিনিকেও একই কথা জানায়। নিরুপায় হয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয় ভাইটা।বোমি কিন্তু চলছেই এবং সারারাতই বোমি করলাম। মূখ দিয়ে বাতাশ ডুকলেও যেনো বোমি হচ্ছে ।

আযান দেয়ার সাথে সাথেই ভাই আমাকে নিয়ে বের হয় কার্ফিউএর ভিতর। আমার স্পষ্ট মনে আছে উনার উয়াইফ আর বাচ্চা কান্না করতেছিলো যেনো কার্ফিউএর ভিতর বের না হয় আমাকে নিয়ে।আমি মানা করতে পারলাম না যে থাক ভাইকে বের হতে হবে না। কার না বাচতে ইচ্ছে করে বলেন। বের হলাম,সারা রাস্তা ফাকা কোথাও কেউ নেই।কোনমতে ঘটনা খুলে বলে একটা রিক্সা ম্যানেজ করলো ভাইটা,উদ্দেশ্য ঢাকা মেডিকেল। সারা রাস্তায় আর্মি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিলো। আমরা যখন জগন্নাথ হল আর শহীদ মিনারের কোনার গেটে তখন ১৪/১৫ জন রেব, আর্মি রিক্সা থামায় জিজ্ঞাসা করে কই যাস? ভাইই উত্তর দিচ্ছিলো- আমার ছোট ভাই ওর জ্বর, মেডিকেলে নিচ্ছি।এক,দুই করে অনেক কথায় পেচিয়ে ফেলে এবং ভাই বলতে বাধ্য হয় ‘আমাদের হলের ভিতর গিয়ে  পুলিশ গতকাল গুলি করেছে। আমার ঝাঝড়া পিঠ ওদের দেখায়। সাথে সাথে ৫/৬ জন ভাইকে বারি দিয়ে রাস্তায় শুয়ায় ফেলে এবং পিটাইতেই থাকে। তখন বোমি করতে করতে আমিও বলি আংকেল আমাকে মারেন কিন্তু উনাকে ছেড়ে দিন ।আমাকেও সাথে সাথে বাকি আর্মিরা ধরে মাজা থেকে পা পর্যন্ত বারিতে বারিতে শূয়িয়ে ফেল্লো। একটা পর্যায়ে আমাকে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের গেটে মরা মানুষের মত টেনে ফেলে দিয়ে আসলো। সাথে সাথে মেডিকেলের ডাক্তার ও কর্মচারীরা আমাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায় এম্বুলেন্স করে।

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ডাক্তার আমাকে হেড ডিপার্টমেন্টে পাঠায় মাথা স্ক্যন করাতে, সেখানে ৩০ মিনিটের মত লাগে।ফিরে আসলে আমাকে ডাক্তার বড় ভাই সরিয়ে নিয়ে বলে–” ভাইয়া একটু আগে আর্মির লোক আসছিলো তোমাকে খুজতে,তোমাকে নিয়ে যেতে – আমরা অস্বীকার করেছি এইরকম রোগী এখানে আসেনি,তোমার ভাগ্য ভালো ঐ সময়ে ছিলে না। ভাই আমি তোমাকে বাচাতে চাই,ওরা পেলে তোমাকে মেরে ফেলবে। তার চে তুমি বের হউ আমার শার্টটা পড়ে। ”
আমি বের হয়ে চানখারপুল হয়ে আজিমপুর কবরস্থান গেটে গিয়ে এক রিক্সাওয়ালা মামাকে অনুরোধ করি আমাকে গাবতলি একটু নিয়ে চলেন,মামা রাজি হলেন এবং বোমি আমার তখনো থামেনি।

গাবতলি আমার জন্যে চারুকলার রুন্টি আপু অপেক্ষা করতেছিলো আর বার বার ফোন দিচ্ছিলো। দেরী হওয়ায় আপু আমাকে আদাবর আগায় নিতে আসছিলেন।আপুর বাসা গাবতুলিতেই। আপু আরেক্টা ডাক্তার ম্যানেজ করে আরো ৪০ টার মত স্প্লিনটার বের করলেন,আমার মনে আছে দুই-তিন দিন ধরে মোট ৮৭ টা স্প্লিনটার বের করা হয়।১৩ দিন আপুর বাসায় অবস্থান করি।

তারপর অনেক পথ,পলাতক,
নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হলো,জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি,জনগন স্বস্তি আর আমি চলছি দ্বিতীয় জীবন নিয়ে…

১২১৮জন ১২১৭জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ