হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে বাংলা সিনেমার শুটিং চলছে। সবাই দাঁড়িয়ে মিলন দৃশ্য উপভোগ করছে। কেউ কেউ চোখের পানিও মুচছে। কিন্তু ঘটনা কি? চলুন ফ্লাশ ব্যাকে যাই।
প্রাচীন কাল থেকেই নাকে পানি, খুকখুক কাশি, গলা বসা, গা গরম হলে তাকে আমরা জ্বর বলেই জানি। বছরের পর বছর মানুষের মাঝে জ্বর নিশ্চিন্তে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। দুবছরই প্রায় হতে চললো মানুষজন তার নাম মুখেও নিচ্ছে না বরং ঈদানিং তাকে ভুলতে বসেছে। এমনকি তাকে নিয়ে বহু গবেষনায় ব্যবহ্নত যে ওষুধ তার দখলও অন্যে নিয়ে ফেলেছে।
অবশ্য মানুষেরই বা আর দোষ কি? যে তার রাজত্বে হাত দিয়েছে তাকে ধরতে পারলে দেখে নেবে একহাত। একদম ঘাড় মটকে দেবে। জ্বর এমন আশায় তক্কে তক্কে আছে।
আজ হঠাৎই তার রাস্তায় দেখা। বাপরে! কি সাহস মুরুব্বীদের সালাম- কালাম নাই গটগটিয়ে চলছে!
-“এই খাড়া বেয়াদব! সিনিয়র সিটিজেন দাডিয়ে দেখিস না।”
মা গো মা, হাওয়ায় যেন রঙ্গীন রঙ্গীন মন। বর্ষার কদম ফুল হয়ে কারে যেন ছোবল মারতে যাচ্ছে। জ্বরের মাথা গেল আউলায়। এক লম্ফ দিয়ে কদমফুলের গলা মটকে ধরলো। শুরু হলো সেই মারামারী। বেটার গায়ে যেন কদমফুলের নরম পাপড়ি। এত নরম যে ঠিকঠাক ধরাও যায় না।
অনেকক্ষন মারামারীর পর কদমফুলের গলা থেকে টপাস করে কি যেন পরলো। অমনি জ্বর থেমে গিয়ে অনেকক্ষন ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো। অবশেষে হাউমাউ করে তাকে বুকে জডিয়ে নিলো
– ভাই আমার এই দেখ আমার গলায়ও একই জিনিস ঝুলছে। আমাদের জন্মের সময় মা গলায় দিয়ে মারা যায়। বাবা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখেন তুই নাই। কতো খুঁজেছি তোকে, তুই ছিলি কোথায় এতদিন? তুই আমার শত্রু না, আমার ভাই ‘কর’।
কদমফুল বনাম ‘কর’ ও হোয়া হোয়া করে কেঁদে উঠলো। পরক্ষনেই আবার তার চোয়াল- মুখ সব শক্ত হয়ে গেলো।
বললো- ‘ আমি প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো। এতদিন আমাকে আটকে রাখার প্রতিশোধ। উ উ হা হা হা ছাড়বো না কাউকে।’
জ্বর তারাতারী তাকে ধরে আটকালো। ভাই কোথায় ছিলি, কিভাবে ছিলি, বল শুনে বুকটা জুডাই।
‘ কর’ বলা শুরু করলো:
সেদিন বাবা, আমি, তুমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখি তোমরা কেউ নাই। হায়! আমি একটা বোতলের ভেতরে আটকা।চিৎকার করলাম, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আমার বাবা- ভাইয়ের কাছে যাবো। তোমাদের কি এমন ক্ষতি করেছি যে আমাকে ধরে এনেছ? আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ!
কে শোনে কার কথা? সাদা খাটো, নাক বোচা লোকজন হাতির মতো কুতকুতা চোখ। মিহি গলায় আমাকে নিয়ে কি কি যেন বলে! রাতভর কি কি যেন করে? একদিন তারা বিরাট খুশি এবং আমার নতুন নাম দিলো।
আমি আবার চিৎকার করলাম- না, আমি বাবা- মায়ের দেয়া নাম ‘কর’ বদলাতে দিতে পারিনা। আমাকে ছেড়ে দাও। তবুও তারা ছাড়লো না এবং নাম বদলালো।
প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম কখন ফাঁক পাবো। পালিয়ে বেডিয়ে আসবো তোমাদের কাছে কিন্তু পারিনি। ওরা কি ধুরনধর। খুব সাবধানে কাজ করে আর আমাকে আটকে রাখে। দিনে দিনে আমার মনটাও প্রতিশোধের নেশায় কঠিন হয়ে গেলো। ছাড়া পেলে এই মানুষদের দেখে নেবার পন করলাম। কিন্তু কিছুই হলো না।
আমি হয়তো রাগে- দুখে বিধ্বংসী হবার কথা ভাবতাম কিন্তু তারা সত্যি সত্যি আমাকে সেরকম বিধ্বংসী বানিয়ে ফেললো। তারা বলাবলি করছিলো, তারা নাকি যেদিন ওষুধ আবিস্কার করবেসেদিনই আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এতে তাদের লাভ তারা পৃথিবীময় ঔষধের রমরমা ব্যবসা করবে।অথচ কেউ কিছু জানবেও না।
একদিন আমি ঠিকই সুযোগ পেলাম। গবেষক সে রাতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বোতলের মুখ আলগা করে লাগানো। আমি একধাক্কায় সরিয়ে বেডিয়ে আসি। প্রথমে ওদেরই ঘাড় মটকানো শুরু করলাম। ব্যাটারা বহুত চালাক আর ওই যে ওষুধ আছে নিজেদের সামলে নিয়ে আমাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলো। তারপর তো আমার এ অবস্থা। আমি আর তোমার সেই ভাইটি নেই। আমার ভেতরের সব নতুন সংযোজন, প্রতিনিয়ত আমায় তাড়া করে। আর তাই আমি না চাইলেও এতো বিধ্বংসী হয়ে উঠি। কেউ মরে গেলে তারচারপাশে সবাই যখন কাঁদে ,আমার অনেক কষ্ট হয় তবুও আমি আবার মানুষকে মেরে ফেলছি। কারণ আমাকে এমন করেই রুপান্তর করা হয়েছে।
‘জ্বর’ ও ‘কর’ একে অপরকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমরা মানুষরাও কাঁদছি কোন একদিন জ্বরের মতো কর বনাম ‘করোনা’ কেও আমরা জয় করে ফেলবো বর্ষার প্রথম কদম ফুল হাতে তৃষ্ণার্ত প্রেমিকার মতো!!!
ছবি নেটের।
১৯টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
কেমনে কিভাবে জ্বর আর কর 😋হাসতে হাসতে আজাদ আমাকে খাওয়ায় দিচ্ছিল ভাত মাথায় উঠে গেল। এই আইডিয়া তোমার দ্বারাই সম্ভব আপু। সত্যি জ্বর করের মিলন দারুন।।।। চালিয়ে যাও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আস্তে ম্যাডাম গলায় বেশি আটকে গেলে বিপদ হবে। হাসাতে পেরে ধন্য হলাম। শুভ কামনা ও ভালোবাসা সবসময়
আরজু মুক্তা
করোনামুক্ত হোক পৃথিবী। এমনি চাওয়া সবার।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর ভাবনার প্রয়াস ঘটাছেন আপু দোয়া করি সবাই ভাল থাকি
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই
শামীনুল হক হীরা
এর অবসান হোক।।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সিনেমা দেখলাম শুয়ে শুয়ে, ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা, মিলন দেখলাম। বড়ই চমৎকার সিনেমা। করোনা থেকে মুক্তি মিলবেই । ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও ভালোবাসা অবিরাম দিদিভাই।
হালিমা আক্তার
চমৎকার ভাবনায় দারুন রম্য রচনা। জ্বর আর করের শেষ দৃশ্যের কান্না। করোনা বনাম মানুষের যুদ্ধে, জয় হোক মানুষের। শুভ কামনা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সবসময়।
উর্বশী
করোনার ছোবল চলে যাক।মিষ্টি,শীতল পরিবেশ ফিরে পাক।
লেখা দারুন হয়েছে। সংগ্রামী আহবান আমাদের সবার জন্য, করোনাকেও একদিন করবো জয়।সৃষ্টি কর্তা সেন সাথে রয়।
অফুরান ভালোবাসা রইলো। শুভ কামনা সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও ভালোবাসা রইলো আপু। ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
তার মানে করোনা আমাদেরই সৃষ্টি, আরো নির্দিষ্ট করে বললে চায়নার সৃষ্টি। তবে গল্পটা ভালোই সাজিয়েছেন……..শুভ কামনা সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হঠাৎ মাথায় এলো। সবকিছুই আমাদেরই সৃষ্টি ভাই । অনেক ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
আপনিও ভালো থাকুন সব সব সময় আপু।
হালিম নজরুল
‘জ্বর’ ও ‘কর’ একে অপরকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আমরা মানুষরাও কাঁদছি কোন একদিন জ্বরের মতো কর বনাম ‘করোনা’ কেও আমরা জয় করে ফেলবো বর্ষার প্রথম কদম ফুল হাতে তৃষ্ণার্ত প্রেমিকার মতো!!
————চমৎকার। চিন্তাশক্তির প্রসংশা করতেই হচ্ছে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাইয়া। পাশে থাকবেন সবসময়।