অনেকদিন আগে পড়া সমরেশ মজুমদারের “আট কুঠুরি নয় দরজা” আমার পড়া চমৎকার উপন্যাসগুলির একটি। ভালো না লেগে উপায় নেই, এতো চমৎকার এর কাহিনী। এতোটাই চমৎকার কাহিনী যে আমি এক দিনে বইটি পড়ে শেষ করে ফেলেছিলাম। এই উপন্যাসটি আমি একাধিকবার পড়েছি।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
উপন্যাসের মূল চরিত্র আকাশলাল নামের একজন বিদ্রহী নেতা, যাকে চিতা বলেও লোকো জানে। দূনীতিগ্রস্থ এক পুতুল সরকারকে হটিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই আকাশলাল ও তার দলের লোকদের উদ্দেশ্য। “ম্যাডাম” নামে পরিচিত, উচ্চপ্রদস্ত ক্ষমতা সম্পন্ন এক রহস্যময়ী মহিলাও বিশেষ ভূমিকায় উপস্থিত হয়েছে সারা উপন্যাস জুড়ে। আর আছে পুলিশ কমিশনার ভার্গিস, যার একমাত্র ব্রত আকাশলালকে গ্রেফতার করা।
যাইহোক, কাহিনীর শুরুতেই দেখা যায় এক তরুন ডাক্তার তার স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছে তাদের পার্শবতী এক দেশে, বিশেষ এক মেলা দেখতে। ঘটনা চক্রে জানা যায় ডাক্তারকে তার এক শিক্ষক প্রফেসার আমন্ত্রান জানিয়ে নিয়ে এসেছে চিকিৎসার জন্যে। আমাদের এই ডাক্তার আবার প্লাস্টিক সার্জারীর ইস্পেসালিস্ট। কার এই প্লাস্টিক সার্জারীর প্রয়োজন হয়েছে সেটা বুঝা যায় না প্রথমে। গল্প কিন্তু এগিয়েই চলে।
আকাশলালকে অনেক দিন যাবত ধরতে না পারার দরুন পুলিশ কমিশনার ভার্গিসকে তিনদিনের সময় দেয়া হয়, এই তিন দিনের মধ্যে ধরতে না পারলে তাকে চাকরিচুত্য করা হবে। আর ভার্গিস তার ডেবুটিকে দায়ীত্ব দেয় আকাশ লালকে ধরার।
এদিকে আকাশলাল কিছুতেই রাস্তায় বেড় হতে পারেনা। কারন তাকে দেখা মাত্র পুলিশ গুলি করে মারবে, তার জীবিত বা মৃত মাথার পুরুষ্কার ঘোষনা করা আছে হাজার হাজার টাকা। জনসম্মুখে যেতে না পারলে সংগ্রামের কোনো কাজও সে করতে পারবে না, তাই আকাশলাল তার চেহারা পালটে ফেলার ডিসিশান নেয়। চমৎকার এক পরিকল্পনা করে সে। পুলিশ কমিশনার ভার্গিসের কাছে ধরা দিয়ে অল্প কিছুক্ষণের জন্য মরে যাবে সে। এই অল্প কিছুক্ষণ মরার জন্য আকাশলাল এক প্রবিণ ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়। ডাক্তার এমন একটি ঔষধ তৈরি করে যা আকাশলালের হার্ড বন্ধকরে দিবে। কিন্তু হার্ড বন্ধ হলেও সে যেন মারা না যায় তার জন্য আকাশলালের বুকে অপারেশান করে একটি যন্ত্র বসিয়ে দেয়া হয়, যার কাজ মস্তিস্কে অক্সিজেন পাঠানো।
সব কিছুই হতে থাকে পরিকল্পনা মুতাবেক। আকাশলাল ধরা দেয় ভার্গিসের কাছে এবং সময় মত মারাও যায়। ভার্গিস ঘাবরে গিয়ে ফোন করে ম্যাডামকে। ম্যাডামের পরামর্শ অনুযাই কোনো রকম পোষ্টমার্টম না করেই তারাহুরো করে কবর দেয়া হয় আকাশলালকে।
এবার আকাশলালকে বাঁচিয়ে তোলার পালা। পূর্বপরিকল্পনা মতো কবর থেকে আকাশলালের দেহ সরিয়ে নেয় তার অনুসারিরা। কারণ একটা নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে পুনরায় হার্ড চালু করাতে না পারলে আকাশলাল আরা বেঁচে উঠবে না। কিন্তু দূভাগ্যবসত আকাশলালের দেহ সরানোর পরই তা জেনে যায় কমিশনার ভার্গিস, এবং কবরাস্থান থেকে ধরাপরে আকাশলালের সাথী। কমিশনার কিছুতেই বুঝতে পারে না কেনো আকাশ লালের মৃত দেহ চুরি করলো তার সঙ্গী-সাথীরা। এদিকে আকাশলালকে পূনরায় বাঁচিয়ে তোলা এবং আর চেহারা পালটানোর জন্য প্লাস্টিক সার্জারীর অপারেশান করা হয়। বেঁচে ওঠে আকাশলাল, নতুন এক চেহারা নিয়ে। কিন্তু হারিয়ে ফলে তার সরণশক্তি। মাঝে মাঝে সে মনে করতে পারে ঝাপসা ঝাপসা কিছু কথা-কিছু স্মৃতী। তারপর…
১৮টি মন্তব্য
কৃন্তনিকা
আমি অনেক ছোটকালে পড়েছিলাম বইটা। ভীষণ ভীষণ ভালো লেগেছিল। আবার মনে পড়ে গেল। খুব মন খারাপ হয়েছিল “আকাশলাল”এর তিনসঙ্গীর মৃত্যুতে, সবচেয়ে কম বয়সী সঙ্গীর (নামটা সম্ভবত ‘ত্রিভুবন’) প্রেমিকা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ায়। সব মনে পড়ে গেল…
পুরোটা উপন্যাস জুড়েই ছিল টানটান উত্তেজনা ও শিহরণ…
আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি বই নিয়ে লেখার জন্য। (y) (y) (y)
মরুভূমির জলদস্যু
উপন্যাসের বর্ননাও ছিলো চমৎকার। মনে হচ্ছিলো সব যেন চোখের সামনেই ঘটছে।
নওশিন মিশু
সম্ভবত ক্লাস ৮-এ থাকতে বইটি পড়েছিলাম। এক নিশ্বাসে পড়ার মত বই। তাছাড়া সমরেশ মজুমদার আমার প্রিয় লেখকদের একজন। ধন্যবাদ আপনাকে আমার প্রিয় লেখকের বই নিয়ে লেখার জন্য …. -{@
মরুভূমির জলদস্যু
আমি প্রথম পড়েছিলাম সিক্স থেকে সেভেনে উঠার সময়।
মামুন
বইটি পড়ি নাই। আপনি আগ্রহ বাড়িয়ে দিলেন।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
মরুভূমির জলদস্যু
পড়ে দেখেন খারাপ লাগবে না।
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
পড়া হয়নি। আপনার লেখা পড়ে পড়বো।
মরুভূমির জলদস্যু
পড়ে দেখেন খারাপ লাগবে না আপনারও।
জিসান শা ইকরাম
কেনো জানিনা সমরেশের বই আমার পড়তে ভালো লাগতনা
এই বইটিও পড়া হয়নি।
কাহিনী পড়ে তো এখন আফসোছ লাগছে, কেন পড়িনি ছোট কালে ?
ভালো লেগেছে ভাই।
মরুভূমির জলদস্যু
এটা ছোট কালে না পড়লেও বড় কালে পড়তে পারেন দাদা।
সাইদ মিলটন
দারুন জিনিস মনে করায়ে দিলেন 😀
থ্যাংকস
মরুভূমির জলদস্যু
স্বাগতম আপনাকে।
খেয়ালী মেয়ে
এই বইটা আমি পুরো পড়তে পারিনি, বইটা এখনো আমার কাছে আছে,এবার সময় করে পুরোটা পড়বো 🙂
মরুভূমির জলদস্যু
প্রথমটা হারানোর পড়ে দ্বিতীয়টা কিনেছিলাম। সেটারও শেষের পাতা গুলি কে যেন ছিড়ে ফেলেছে।
শুন্য শুন্যালয়
ফিনিশিং টা পড়ে মন খুব খারাপ হইছিল। পছন্দের বইটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মরুভূমির জলদস্যু
আমার কেন যেন মনে হয়েছিলো এর পরে আবার কিছু লিখবে…..
শিশির কনা
প্রিয় লেখকের লেখার রিভিউ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ
মরুভূমির জলদস্যু
স্বাগতম আপনাকে। -{@