বড় ছেলেটা যেদিন থেকে পড়তে শিখলো সেদিন থেকে তার হাতে গল্পের বই তুলে দিয়েছিলাম। মা ছেলে প্রচুর গল্প করতাম আমরা। কল্পনায় কতো কতো গল্প সাজাতো মেমন! চাঁদ, তারা, আকাশ মহাকাশ, সমুদ্র, দেশ, স্বাধীনতা। তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো আমাকে কায়দা করে। আমি খুব শিক্ষিত মা নই। আমি স্বপ্নবাজ এক মা। স্বপ্ন দেখতাম, স্বপ্ন দেখি আমার সন্তান চাঁদে যাবে, বড় বিজ্ঞানী হবে। মানবতা বড় ধর্ম তা তাকে শেখানোর চেষ্টা করেছি। সবাই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। এখানে কখনো ধর্মীয় ভেদাভেদ করতে তাকে শিখাইনি। টিভিতে সিরিয়াল দেখা বন্ধ করে দিলাম টোটালে। কারণ, সমালোচনা মূলক শব্দ দূষণ টাইপ জিনিস তাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাইনি।
ক্লাস ফোরে তাকে একসময় একটা ডায়রি কিনে দিলাম। ছোটো ছোটো কথা সে লিখে ফেলতো। খুব আগ্রহ নিয়ে মাকে দেখাতে আসতো। মা তার উচ্ছাস নিয়ে পড়তো। গর্বে তার সামনে চোখ ছল ছল করে উঠতাম। সে উৎসাহ নিয়ে আরো লিখতো।
তার মাতৃভাষা নিয়ে সে এক অনুগল্প লিখে ফেলল একদিন। আমি থরথর করে কেঁপেছিলাম সেদিন। এটা মেমনের লেখা!
একাডেমিক পড়াশোনার চাপ সব মিলায়ে এই আমি তবু তার লেখা ও গল্পের বই পড়া কমিয়ে দিলাম। কারণ, মানুষ হতে হবে, অর্থনৈতিকভাবে সফল মানুষ হওয়া যেটাকে বলে। তখন অভিমানে তার চোখ ছলছল করে উঠতো। আমি দেখেও না দেখার ভান করে প্রচন্ড কড়া মায়ের ভূমিকায় চলে আসতাম। আমি জানি আমি প্রচন্ড নিষ্ঠুর মা। নতুবা কি করে পেরেছিলাম এটা করতে! বা এখনো করি।
আমি আমার সন্তানদের মধ্যে বোধটুকু ঢোকানোর চেষ্টা করেছি যে, একটি দেশের একজন আদর্শ নাগরিক হতে হলে সে দেশের সাধীনতার কথা জানতে হবে, মহান সব মানুষের ত্যাগের ইতিহাস পড়তে হবে। পড়েছে সে। সে নিজেও এমন সব ভাবনা থেকে নিজের ভাবনায় লিখে ফেলে। তার দুই একটা লেখা শুধু আমি প্রকাশ করেছি। শুনেছি সে তার কলেজে কখনো কোনো কাজে না শব্দটা উচ্চারণ করেনি।
যাইহোক, আজ আমি ভাগ্যবান যে সে এই নিউজগুলো দেখতে পেলো না। সে দেখতে পেলো না যে তার বয়সী কিশোর কিশোরীদের যখন রাস্তায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পিষে মেরে ফেলে। তার সংবাদে এদেশের কোনো নেতা মুজিব কোর্ট বঙ্গবন্ধুর কোর্ট পরে হাসে। যে বঙ্গবন্ধুকে এখনো আমাদের প্রজন্ম আদর্শ মানে। সিঁড়িতে পড়ে থাকা তার বঙ্গবন্ধুর মৃত শরীরটা দেখে হাউমাউ করে কাঁদে।
বিচার চাইতে যাওয়া বাচ্চাদের এ দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মার খেতে হলো। আমি মনে করি এ বাচ্চাগুলো তারা প্রতিটা সঠিক দাবী নিয়ে পথে নেমেছে। আমার সব থেকে কষ্ট লাগলো তাদের কোনো শিক্ষক তাদের সাথে রাস্তায় নামলো না তাদের রক্ষা করতে।
আমি দুই একটা পোস্ট শেয়ার দিলাম বলে সে পোস্টের উপর রিপোর্ট করা হলো!
আচ্ছা, রাজপথে কি সবাই ক্ষমতা দখলের জন্যই নামে! ক্ষমতা দখল করা কি এতোই সহজ? আমাদের দেশের কোনো যানবাহন চলার মতো আছে? রাজধানীটাকে আমার মনে হয় এক মৃত্যুপুরী।
নাহ! আর কিছু আসলে লেখার নেই।
১১টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
সবকিছু সহ্যের বাইরে চলে গেছে। ভয়ংকর এক ভবিষ্যতের আভাস পাচ্ছি। অসভ্য, অমানুষদের হাতে সবকিছু চলে গেলে আমরা এর থেকে বেশি আর কি পাবো?
মৌনতা রিতু
খুব ভাগ্যবানরে তোমরা চলে গেছো এদেশ ছেড়ে। এদেশের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে তোমার সন্তানদের বেড়ে উঠতে হচ্ছে না। আসলেই আর সহ্য হয়নারে শুন্য। চিন্তা করতে পারো, আজ মানবতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! এসব কি? ভালো আছো ভালো থেকো সোনা। আসলেই ভালো আছো শুন্য। আদর রইলো। প্রথমকে ভালবাসা জানাইও।
ছাইরাছ হেলাল
গ্রাম্য-বৃদ্ধ-মানুষ হিসেবে রাজধানীটি-কে দস্তুরমত ভয়ই পাই।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে একটি লেখা লিখেছি,
দিতে ভয় পাচ্ছি, ভয় কেটে গেলে দিয়ে দেব এক সময়।
মৌনতা রিতু
আমিও গ্রামে চলে যাব। গ্রামে থাকার খুব ইচ্ছে আমার।
সত্যি লিখতে বড় ভয়। আমিও অনেক কিছু লিখতে চেয়ে লেখাটা ছোটো করে ফেললাম।
ভালো থাকুন গুরুজী।
মোঃ মজিবর রহমান
আপুরে আমার বড় ভাই, আমাকে ফেসবুকে এইসব লিখতে নিষেধ করেছে, কিন্তু মন ধামেনা, পারিনি যদিও আমিও ভিতু,
তাঁর কথা হল তোকে দেখার কেউ নায়, অর্থ খমতা না থাকলেও প্রতিবাদ করা অস্মভব কি?
আমি ডিশ বন্ধ করলাম কিন্তু বাড়ির সবার প্রতিবাদে নিতে হয়েছে হপুতো তাঁদের আমি বোঝাতে ব্যারথ।
এই শিশু কিশোর যা কি শিক্ষল সরকার, আইনের লোক, মুরুব্বী যদি শেখে ভাল না শিক্ষলে ধিক্কার তাঁদের।
মৌনতা রিতু
আমি প্রচন্ড আশাবাদী মানুষ সব সময়। তবে কেনো যেনো আমি ভয় পাচ্ছি। আমি সত্যিইভয় পাচ্ছি।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু ভয় অন্যায়ের পক্কখে সরকারের একাকধিক ব্যাক্তি জড়িত, তারাই সব নস্টের মুল। তাদেরর লজ্জা নাই, তাঁরা স্বজনহারা, হচ্ছে তবুও তাঁরা হৃদয়ঙ্গম হচ্ছে না এটাই সবচেয়ে বড় ভয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু জানো কি একজন স্বপ্নবাজ মা এ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। শিক্ষার সনদপত্র নিয়ে তো বহু মায়েদেরই দেখেছি। তুমি অনেক শিক্ষিত আপু।
তবে এ সমাজ ভাঙ্গবেই। একদিন আদর্শের উদাহরণ হয়ে উঠবে আমাদের দেশের সন্তানেরা। এই প্রজন্ম যা করে দেখাচ্ছে, আমি তাদেরকে স্যাল্যুট জানাই। তীর্থকে দেখিয়েছি মন্ত্রীর হাসি এবং পাশাপাশি এই বাচ্চাদেরও। ও অবাক হয়েছে মন্ত্রীর হাসি দেখে। বলেছি একদিন এই বাচ্চাগুলোই শাসন করবে আমাদের দেশ। সেদিন সত্যিকারের সোনার বাংলা হবেই হবে।
মৌনতা রিতু
আদৌ কি আমরা পারব? আদৌও কি আমরা সঠিক পথে আছি? মাথা কাজ করে না আমার অনেক সময়।
নীলাঞ্জনা নীলা
পারবো আপু। একদিন স্বপ্নের দিন আসবেই বাস্তবে।
মায়াবতী
রিতু , খুব অল্প বয়সে প্রথম মা হয়েছিলাম ঠিক যে সময় গুলোতে একটা মেয়ে স্বপন দেখতে আর বুঝতে শিখতে থাকে। তাই নিজের স্বপন গুলোর সাথে সাথে বাচ্চাদের ও স্বপনের স্ব্ররপ দেখাতে শিখিয়েছিলাম কিন্ত বাচ্চা গুলো যখন এই স্বপ্নবাজ মায়ের স্বপ্নের সাথে বাস্তবের গড়মিল খুঁজে পেল তখন ই গণ্ডগোল পেকে গেলো । তাই একজন মা কে শুধু স্বপ্ন বাজ হলে ই চলবেনা সাথে সাথে তাকে বাস্তব টা ও দেখাতে হয় বাচ্চা কে । মেরুদণ্ডহীন কি তুমি একা সোনা ! এই পুরো জাতি টা ই মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছে *