সকালে অর্ডারকৃত বইগুলো আনতে রকমারি.কম এর ডেলিভারী ম্যান ফোন দিলো। আনতে গেলাম।
বাসায় এসে প্যাকেট রাখলাম। একজন জিজ্ঞেস করল
-কিসের বই?
সন্তুষ্ট করার মতো তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিলাম। তারপর কাপড় ছেড়ে বইয়ের প্যাকেট খুলে উল্টেপাল্টে দেখি।
দুপুরে এসে সবাই দেখে আমি পড়ছি। প্রথমে একজন বন্ধু বাৎসল্য সিনিয়র রুমমেট আগ্রহ নিয়ে ঝকঝকে প্রচ্ছদের বইটি দেখতে চাচ্ছেন। আমি বইটি এগিয়ে দেই।
প্রথম পাতা উল্টিয়ে পড়ল। নিতে যতটুকু দেরি হলো মনে হয় তার চেয়েও কম সময়ে বইটি আমাকে ফিরিয়ে দিলো।
অবাক হয়ে বললাম- কি হলো? পড়া শেষ?
মুখের দিকে চেয়ে দেখি উনি মুসকি মুসকি হাসছে। কিছু বলছে না।
যখন আবার জানতে চাই। তখন বলেন,
-ভাই ভয় পাইছি। কি লেখা এইসব একবারে প্রথমেই-
”হারামজাদী ছিনাল।
বজ্জাত মাগী।
খানকী বেইশ্যা।
মিঞাবাড়ির কাচারির সুমুখে লম্বালম্বি মাঠ। মাঠের পর মসজিদ। (সংশপ্তক।। শহীদুল্লা কায়সার)
আমিও শুনার পর উনার সাথে সাথে হেসে উঠি। তারপর এক মহা সমাবেশ। রুমের সবাই যেন তখন রাস্তার নিষিদ্ধ কোনো পন্যের বিজ্ঞাপনের মতো বইয়ের প্রথম পাতাটি পড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
বই সম্পর্কে এবং আমার সম্পর্কে জন্ম নেওয়া তাঁদের নানান ভুল ধারণা ভাঙতে বলতে হয়
-আরে ভাই এসব কিছু না। জনপ্রিয় উপন্যাস ক্রীতদাসের হাসিও পড়বেন? এসব ঐতিহাসিক উপন্যাস। সাহিত্য এইরকমেই হয়।লুকানো থাকে না কিছু। সাহিত্যে সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তুলেন লেখকরা। তবে উপন্যাস ইতিহাসের মতো না।
১১টি মন্তব্য
নিতাই বাবু
নাজমুল হুদা
ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাইয়া 😍
তৌহিদ
সাহিত্যে সবকিছু উন্মুখ থাকলে লেখক এবং তার গল্প থেকে পাঠকরা অনেক কিছু বুঝতে পারেন। ভালো লেখকের এটাই গুন।
তবে এটাও ঠিক, আপনি আমি আমাদের বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় এসব লিখলে পাবলিক তুনাধুনা করে ছাড়তো 😃😃
কবে যে বিখ্যাত হবো!! 😞😞
নাজমুল হুদা
হা হা হা, ভাইয়া দুলাভাইয়েরা কিন্তু এমনেই বিখ্যাত থাকে শালা বাবুদের কাছে😀😀
তবে লেখকরা তুলাধুনা তখনেই হয় যখন প্রচারণার জায়গাটা থাকে সীমিত, যদি বড় পরিসরে হয় তখন লেখক আরো অনুপ্রাণিত হয় তুলাধুনা হওয়ার চান্স থাকে না। প্রটোকল দেয় লেখার সমালোচনা।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা কি জামেলা তাই না? বুঝলে অনেক কিছুই না বুঝলে কিছুই না।
নাজমুল হুদা
তখন মনে হয়েছিলো আমি কোনো ভিনগ্রহের মানুষ।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা যাক ভালই হল বাস্তবে না হলেও কল্পনায় জীবন ধন্য।
বন্যা লিপি
হা হা হা হা ……বেশ মজা পেলাম। মনে পড়ে গেলো আমি যখন গল্প উপন্যাস পড়তাম সেই স্কুলিং বয়সে, সেই সময়ের কথা।
এক সাথে অনেকগুলো বই নিয়ে আসতাম চাচ্চুর বুক সেলফ থেকে। কত যে আম্মা বাজেয়াপ্ত করেছেন। কোনোদিন একটা পাতাও উল্টে দেখেননি। তবু ভাবতেন এগুলো গোল্লায় যাবার জন্য দোষী।
শহিদুল্লাহ্ কায়সারের বিখ্যাত এই উপন্যাস আমার পড়া হয়নি। তবে টেলিভিশনে যখন ধারাবাহিক প্রচার হতো দেখতাম। সরকারী গনমাধ্যমে এই রকমের ভাষা স্বাভাবিক ভাবেই সেন্সর্ড হবার কথা নয়।
ওটাই বড় কথা “বুঝলে অনেক কিছু, না বুঝলেই যতো জঞ্জাল!! “
আরজু মুক্তা
“Reading for pleasure ” নামে একটা বি এ পড়েছিলাম,”The forbidden things lasted longer than others ”
মানুষও তেমনি। আসল জিনিস না জেনে একটু তেই মাতামাতি!
সাবিনা ইয়াসমিন
অবাক বইপ্রেমীদের কান্ড। প্রথম পাতা পড়েই তারা বুঝে ফেলে পুরো কাহিনী কি ছিলো।
রম্য আরেকটু জমতে পারতো। তবুও ভালো হয়েছে। শুভ কামনা 🌹
আকবর হোসেন রবিন
‘সাহিত্য এইরকমেই হয়।লুকানো থাকে না কিছু। সাহিত্যে সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তুলেন লেখকরা।’ কথা গুলো ওপার বাংলার লেখকদের জন্য খাটে। আমাদের এখানে লেখকরা এখনও হাত খুলে লিখতে পারেনা। এখানের পাঠকরাও সবকিছু হজম করতে পারেনা। আশাকরি একসময় পরিবর্তন আসবে।