
আবছায়া আলো গিলে খায় ঘাসের দুপুর,
ফিরে আসা ফড়িঙের মতো গুনগুন করে নারী,
নক্ষত্র ঝরে পড়ে পায়ের তালুতে; বাজে স্নিগ্ধ নুপূর,
সেই সব আলো অন্ধকারে লন্ঠন হাতে ফেরে বাড়ি,
তাদের পাশেই বসে ফোকলা দাঁতের প্রাচীন বিকাল,
হেসে দেয় গড়াগড়ি, কতো মজলিস শেষ হলো,
জড়াজড়ি করে প্রেমাসক্ত মোরগঝুটির মতো,
বুকে নিয়ে বিষাক্ত ছুরির বিত্রস্ত আলিঙ্গন,
মরে গেলো যুগে যুগে অগণিত নরনারী,
তারা গলে যাওয়া মোম, তারা নিষিদ্ধ সময়ের দম!
ভোর রাতে শুকতারা উবে গেলে পড়ে থাকে ঘুম,
উষ্ণ স্পঞ্জের পালংকে মাথাচাড়া দেয় ছত্রাক,
কথা বলে করোটিতে চোখ, নাড়ে জল মৃত বক!
তবুও তোমার চোখের শ্রাবস্তীতে রেখে চোখ,
ভুলে থাকি প্রতি মুহুর্ত জুড়ে অগণন মৃত্যুশোক,
নিষিদ্ধ মন্ত্রোচ্চারণে শুনি- অক্ষয় হোক ঈশ্বরী!
ঘুম এলে দেয়ালে নাচে ক্রোম্যাগনন মানুষ,
ফিরে আসে তারা খুঁজে নিতে বহু পুরানো শিকার,
তখন তোমার আমার চোখে নামে বিলুপ্ত বিকার!
স্প্যানিশ ফ্লু এর মতো গাঁড় জ্বর আসে,
মানুষেরা বৃত্তাকার নাচে ব্লেন্ডারের চাকাটার মতো,
পাক খায় দ্রুত, অনেকটা বদ্ধ স্রোতে থাকা মাছ!
ছাদের বাগান চাঁদের আলো মেখে পায়না উচ্ছ্বাস,
পৌষের মেঘে অনিশ্চয়তার নাম আফ্রোদিতি,
এবং মোহিনী সে বাতাসে ভেসে দেয় তবু আশ্বাস!
খুঁজেছি মেমফিসে, আমুদরিয়ার বিরান বাতাসে,
যখন নিজেই আসো আমি থাকি ভিনদেশে
বাণিজ্য বসতে, যখন তোমাকে খুঁজি তুমি থাকো
পরিযানে হৃদয়ের গহীন প্রদেশে!
সেখানে উল্লম্ব ভূমি, শীতল সাপের মতো কাঁদে
প্রসারপিনার নিঃশ্বাস!
এ কেমন খেলা আদিগন্ত সরিষার ক্ষেতে নিয়তির,
সৌরদীপ্তি নিভিয়ে খোঁজা হলুদের অমৃত তিথি,
হয়তো সেখানে তুমি অলৌকিক রাজহাঁস,
পাবোনা জেনেও বলি- অক্ষয় হোক চেরীফুল
এবং আফ্রোদিতি!
যুদ্ধ মানে অন্ধকারে দুর্বার আরশোলা টিকটিকি,
অথবা মনের কোণে বাসনার তীব্র স্ফূরণ,
যুদ্ধ মানে উপস্থিত ঝড়, ভেঙ্গে যাওয়া তোরণ,
নিজের সামনে কুরুক্ষেত্রে দন্ডায়মান এক আমি!
তবুও তো রণক্ষেত্রে তার জন্য থামি,
কাঁটাবনে আহত খরগোশ খুঁজে তীব্র বেদনানাশক,
হয়তো কোথাও নেই অদৃশ্য চাঁদ, ম্রিয়মাণ জলপরী,
তবু আনমনে বলি- বেঁচে থাক নাগবল্লী ফুল,
অক্ষয় হোক ঈশ্বরী!
২৩টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
পড়তে পড়তে যে আবহটা সৃষ্টি হলো মনোজগতে! এই কবিতার বিজয় সেটাই। অনেক ভালো লাগলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক শুভকামনা জানবেন। মূল্যবান মন্তব্যে মুগ্ধতা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই এতো ঘোরাঘুরির পরেও এই যে বেঁচে থাকা। এ সত্যিই অনেক মূল্যবান। শুভ কামনা কবির জন্য
সৌবর্ণ বাঁধন
ধন্যবাদ সুপ্রিয় ব্লগার। এক ধাঁধার পথে ঘুরেই শেষ মনুষ্য জীবন।
ছাইরাছ হেলাল
নাগবল্লী ফুল আর ঈশ্বরীর সাথে কবিও বেঁচে থাকুক এমন লিখে লিখে।
এ লেখায় কীভাবে কী মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি না।
সৌবর্ণ বাঁধন
লেখায় আপনি মন্তব্য করেছেন সেটা অনেক ভালো লাগার বিষয়। শুভকামনা জানবেন কবি।
আরজু মুক্তা
বেদনায় বিধুর হয়েও বলতে হবে ” ভালো আছি। ” কঠিন মিথ্যা সবাই বলি।
সৌবর্ণ বাঁধন
ভালো আছি বললেও কেউই ভালো নেই৷ এটাই হয়তো জীবনের বহুল শিরোনাম। ধন্যবাদ জানবেন অনেক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তোমার লেখায় মন্তব্য করার চেয়ে পড়াটাই এনজয় করি খুব বেশি। এতো সুন্দর করে করে কিভাবে লিখো বুঝিনা ছা-তা। যুদ্ধটা এমনি অন্ধকারে দুর্বার নয়তো মনের ভিতরে স্ফুরণের ফোয়ারা। ভালো থেকো সুস্থ থেকো
সৌবর্ণ বাঁধন
দিদি অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা নিরন্তর।
রেজওয়ানা কবির
কথায় আছে ” মুখে বলি ভালোই আছি বুকে চেপে পাথর ”
যা অনেক কষ্টকর। এর নামই জীবন আর আমাদের বেঁচে থাকা।
মন ছোয়া লেখা।
শুভকামনা ভাইয়া।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা। বুকের চাপা পাথর হয়তো জীবনের অপরিহার্য অংশ।
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ ভাবনাময় প্রকাশ কবি দা অনেক শুভেচ্ছা রইল
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় ব্লগার।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চমৎকার প্রকাশ — কাঁটাবনে আহত খরগোশ খুঁজে তীব্র বেদনানাশক,
হয়তো কোথাও নেই অদৃশ্য চাঁদ, ম্রিয়মাণ জলপরী,
তবু আনমনে বলি- বেঁচে থাক নাগবল্লী ফুল!
অক্ষয় হোক ঈশ্বরী!
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার। সবসময় সুন্দর মন্তব্যের জন্য মুগ্ধতা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
প্রীতিময় শুভেচ্ছা রইল।
হালিমা আক্তার
কষ্ট লুকিয়ে রেখে হাসি ধরে যে রাখতে পারে তাঁকেই সমাজ সংসার ভাল বলে। এই যেন মিছে হাসির জোৎস্নায় ভেজা। শুভ কামনা রইলো।
সৌবর্ণ বাঁধন
আসলে আমরা সমাজ সংসারে যা হয় তাতো প্রায়শই অভিনয়। অভিনয় ছাড়া কিছুই চলেনা। অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
এমন একটা কবিতা লিখবেন, যে কবিতা আমাকে ভালো লাগায় আচ্ছন্ন করে রাখতে পারবে না,
এমন এক কবিতা, যে কবিতার কিছুই আমি বুঝবো না, শুধু কমেন্ট দিতে আসবো।
❝ বুকে নিয়ে বিষাক্ত ছুরির বিত্রস্ত আলিঙ্গন,
মরে গেলো যুগে যুগে অগণিত নরনারী!
তারা গলে যাওয়া মোম, তারা নিষিদ্ধ সময়ের দম! ❞
পোস্ট প্রিয়তে নিলাম।
ভালো থাকুন, কবিতা-রাজ্যে অক্ষয় হয়ে থাকুন।
শুভ কামনা 🌹🌹
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন আপু। সবসময় এতোটা উৎসাহ দেওয়ার জন্য অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা। হয়তো এখনো অনেকে কবিতা ভালোবাসে তাই কবিতা জন্ম নেয়।
ফারজানা আক্তার
অসাধারণ।সবকর মত গহীন কথা বুঝি নি।তবু ভাল লাগার রেশ সাথে করে নিয়ে গেলাম।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ জানবেন মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।