1472071_413962548731791_2082413558_n

পূর্ব কথাঃ

২৬শে অগাস্ট ২০১৫

বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে বড় মদক সীমান্তচৌকিতে এবং দলিয়ন পাড়া সীমান্তচৌকিতে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সদস্যরা অতর্কিত হামলা করে। এসময় বিজিবি সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। সেসময় বিজিবির একজন নায়েক আহত হন।

বান্দরবানের ওই এলাকাটি, নামঃ থানছি, এতই দুর্গম যে ৪৩৯ কিলোমিটার এলাকায় কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মানুষ বাস করলেও সরকারিভাবে কোনো স্থাপনা নেই। গতবছর পর্যন্ত এরকম অরক্ষিত সীমান্ত ছিলো ৫৩৯ কিলোমিটার। তবে এক বছরে ১০০ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবি তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে আসছে বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী নিয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী। আরাকান আর্মির সদস্যদের সাথে তীব্র যুদ্ধে একের পর এক ঘাঁটি দখল করে নিচ্ছে যৌথ বাহিনী।

একঃ

চোখ খুলতেই মাথায় প্রচণ্ড ব্যাথাটা অনুভূত হলো মেজর ওয়ালিদের।
কি হয়েছিল, মনে করার চেষ্টা করছে সে।
কিন্তু কিছুতেই পারছে না।
চারপাশে তাকালো। “ কোথায় আমি? ” – মনে প্রশ্ন তার।

ঘরটা পুরো অপরিচিত। একটা ছোট্ট কিন্তু সুন্দর ছিনছাম করে গোছানো ঘরে রয়েছে সে।
শুয়ে আছে ছোট্ট একটা খাটে। তার বিশাল দেহটা কোনমতে ধারণ করতে পেরেছে বিছানাটা। আর এক ইঞ্চি জায়গাও অবশিষ্ট নেই।
মাথার তীব্র ব্যাথা উপেক্ষা করে সে ভাবতে চাইলো সে কিভাবে আসলো এখানে।

এমন সময়েই ঝট করে খুলে গেল ঘরের একমাত্র দরজাটা। প্রবেশ করলো এক অপরূপ সুন্দরী।
লম্বা চুল কোমর ছুঁই ছুঁই। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের অধিকারী মেয়েটার চোখ দুটো সম্মোহন করার মত যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। চেহারাশৈলী দেখে মনে হবে স্বয়ং ইশ্বর একে নিজ হাতে পরম যত্নে বানিয়েছেন। নাহলে একজন নারী এত সুন্দর হবে কি করে!
“ আপনি জেগে গেছেন? ” – অপূর্ব কণ্ঠ মেয়েটার। অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি তার কণ্ঠে। শুনলে মনে হবে শুনতেই থাকি। মেজর ওয়ালিদও প্রথম অবস্থায় কোন জবাব দিতে পারলো না।

ওয়ালিদকে তাকিয়ে থাকতে দেখে গলা ঝেড়ে একটু পরিষ্কার করে নিল মেয়েটা। কিছু বলার আগেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা মেজর ওয়ালিদ তার ঘোর কাটিয়ে বলে উঠলো, “ আমি কোথায় আছি? কি হয়েছিল আমার? আর আপনিই বা কে? আমি এখানে আসলামই বা কিভাবে? ”
“ ধীরে, ধীরে একটা করে প্রশ্ন করুন, মেজর। এত প্রশ্ন একসাথে করলে জবাব দিব কিভাবে, বলুন? ” – হালকা অনুযোগ মেয়েটার কণ্ঠে। অভিমানেরও একটু সুর ছিল মনে হয়!
একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো ওয়ালিদ।
“ আমি, আমি আসলে দুঃখিত! ” – একটু নিচু স্বরে বললো সে। “ এভাবে জিজ্ঞেস করে ফেলেছি দেখে … ”
– থাক। বুঝেছি, আর বলতে হবে না।
কেমন যেন আহত গলায় বললো মেয়েটা।

এরপর কি বলা যায় ভেবে পাচ্ছে না ওয়ালিদ। এক দীর্ঘ মূহুর্ত অস্বস্তিকর নীরবতা ঘর জুড়ে। থমথমে ভাবটা কাটাতে মেয়েটা বলে উঠলো,

“ আমার পরিচয় বোধহয় দেওয়া দরকার। আমি স্মৃতিশ্বর। এ মহাবিশ্বের সকল স্মৃতি কে নিজের মধ্যে ধারণ করি। ”

“ মানে? ” – প্রচণ্ড অবাক হয়েছে মেজর ওয়ালিদ। “ মহাবিশ্বের সমস্ত স্মৃতিকে আপনি কিভাবে ধারণ করেন? ”

“ সে সব আপনার বোধগম্য হবে না। আপনি মিলিটারি মানুষ। আপনি কেবল যুক্তি ছাড়া কিছু বুঝবেন না। কিন্তু মেজর, এই মহাবিশ্ব বড়ই রহস্যময়। এখানে যা ঘটে বেশিরভাগই যুক্তির বাইরে ঘটে। মানুষ যা দেখে খুব কমই দেখে। আসলে যা ঘটে তার অর্ধেকও যদি মানুষ দেখতো তবে পৃথিবীতে যুক্তি নামের কোন বস্তু আদৌ থাকতো কিনা সন্দেহ আছে আমার! ”

দীর্ঘক্ষণ একটানা কথা বলে একটু থামলো স্মৃতি।

ওদিকে তার কথা শুনে আবারো ভীষণ রকমের ধাক্কা খেয়েছে ওয়ালিদ। কিসব বলছে মেয়েটা। পাগল না তো!
কিন্তু আচরণে তো সেরকম মনে হচ্ছে না। বরং কথাগুলো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে মেজর ওয়ালিদের। একদিকে পেশাদার প্রশিক্ষণ, অন্যদিকে অতিপ্রাকৃত কথাবার্তা, তাও এমন এক যুবতী যাকে কিনা দেখেই প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে অনেক পুরুষ! সেই মেয়ের কথা কি করে অবিশ্বাস করা যায়!

এমন পরিস্থিতিতে বড্ড অসহায় বোধ করছে ওয়ালিদ। একটুও শান্তি পাচ্ছে না সে। মাথার ব্যাথাটাও যন্ত্রণা দিচ্ছে অনেক।
আপনার কি খুব খারাপ লাগছে? জিজ্ঞেস করলো স্মৃতি। কণ্ঠে উৎকণ্ঠাটা স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে।
– না, না, আমি ঠিকা আছি। মাথায় সামান্য ব্যাথা করছে একটু।
– কি যে বলেন আপনি? অবস্থা দেখে আপনাকে ভীষণ অসুস্থ মনে হচ্ছে!
– ও কিছু না। আমরা ট্রেইনড অফিসার। আচ্ছা, আমার ঠিক কি হয়েছিল? আমি এখানেই বা কিভাবে এলাম? আর এই জায়গাটাই বা কোথায়?
সুযোগ পেয়ে প্রশ্নটা করে ফেললো ওয়ালিদ।
– কি বলছেন? আপনার মনে নেই আপনার কি হয়েছিল? আমি তো আরো ভাবলাম আপনাকে জিজ্ঞেস করবো আপনার জ্ঞান ফিরলে।
প্রচণ্ড অবাক হয়েছে স্মৃতি।

কি!
এবার একটু ভড়কে গেলো ওয়ালিদ। তাহলে তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে। কিন্তু তা কি করে হয়? তার তো ঠিকই মনে আছে তার নাম, তার র‍্যাঙ্ক, পোস্ট। তাহলে কি আংশিক কিছুক্ষণের জন্য তার স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেছে?
– কি ভাবছেন আপনি এভাবে?
– অ্যা, না কিছু না। আপনি আমাকে পেলেন কিভাবে?
– জঙ্গলের মধ্যে আমাদের এক কাঠুরে আপনাকে দেখতে পেয়ে খবর দিয়েছে। এরপরে আমি লোক পাঠিয়ে আপনাকে নিয়ে এসেছি। আমি আবার ভেষজ চিকিৎসা বিদ্যা জানি। সেজন্য আমাকে খবর দেয় ওরা।
– ওহ! আমার যতদূর মনে পড়ছে রাতে কর্ণেল লতিফের মেসেজ পেয়েছিলাম থানছিতে মিশনে যাওয়ার জন্য। চার প্লাটুন সৈন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরের অংশ আর মনে পড়ছে না। আচ্ছা যারা আমাকে নিয়ে এসেছে তারা কি আশেপাশে কোন সৈন্য দেখেছে? আহত বা নিহত?
– নাহ। দেখলে আমাকে বলতোই। আর হ্যা এই জায়গাটা থানছি থেকে উত্তরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার হবে দূরত্ব।
– আচ্ছা যে আমাকে উদ্ধার করেছে তার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
– সে তো এখন জঙ্গলে চলে গেছে। কবে আসবে ঠিক জানা নেই। ওরা আবার অনেকদিনের জন্য কাঠ কাটতে যায়। আর দলবেঁধে যায়।
– ওহ! আচ্ছা মোবাইল ফোন আছে আপনার?
– কোন কিছুর নেটওয়ার্ক নেই এখানে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ।

এসব জানা আছে ওয়ালিদের। তারা এখানে মিলিটারি ওয়্যারলেস ব্যবহার করে। সেনাবাহিনীর ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারদের বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই দূর্গম অঞ্চলে যোগাযোগ রক্ষা করে তারা। কিন্তু এখন তো তার কাছে কোন ওয়্যারলেস নেই। তাহলে সে কি করে হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করবে? আর তার মিশনেরই বা কি হয়েছিল? তার বাকি সৈন্যরা কই গেলো?
নাহ আর ভাবতে পারছে না সে। এত প্রশ্নের উত্তর সে এই দূর্গম অঞ্চলে অসুস্থ অবস্থায় এক রহস্যময়ী রূপসী নারীর সাথে বসে থেকে কি করে পাবে!

দুইঃ

থানছির ওই ঘটনার পরের ৬ দিন পরের কথা …
চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর বিএনএস নির্ভীকে সোয়াডসের (মেরিন কমান্ডো) নিজের অফিসে বসে হাতের কিছু কাজ সারছিলাম। এমন সময় ফোন আসলো। দ্বিতীয়বার রিং হতেই ফোনটা তুলে নিলাম …
“ হ্যালো, ডেল্টা কমান্ড! কমান্ডার আব্দুল্লাহ বলছি।” ডেল্টা কমান্ড সোয়াডসের আমার ইউনিটের সাংকেতিক নাম।
“ কমান্ডার আব্দুল্লাহ, আমি রিয়ার অ্যাডমিরাল শওকত হাসান বলছি। ”
রিয়ার অ্যাডমিরাল শওকত নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার।
– ইয়েস স্যার। বলুন।
– ইমিডিয়েটলি আমার অফিসে আসো।
– ওকে স্যার।

আঞ্চলিক কমান্ডারের অফিসটা খুব বেশি দূরে নয়। গাড়ি দিয়ে যেতে ৭-৮ মিনিট লাগে। ১০ মিনিটের মধ্যেই কমান্ডারের অফিসে পৌঁছে গেলাম। যাওয়ার পরে কোন ভূমিকা না করেই সরাসরি কাজের কথায় চলে গেলেন …

“ থানছির ঘটনা শুনেছ ? ”
– জ্বি স্যার। এক সেনা কর্মকর্তা নিখোঁজ হয়েছে নাকি? তাকে কি পাওয়া গেছে ?
– মেজর ওয়ালিদ। নাহ তাকে এখনো পাওয়া যায়নি আর সেজন্যই তোমাকে ডেকে এনেছি। শোন, সেনাবাহিনীর চার্লি কমান্ডের ৪টা টিম তাকে খুঁজছে। কিন্তু এত বিশাল আর দূর্গম এলাকা সামলে উঠতে পারছে না তারা। সেজন্য সোয়াডসের তিনটা টিম পাঠানোর অনুরোধ করেছে। তুমি ৪০ জন কমান্ডো নিয়ে ওই এলাকাতে অভিযান চালাবে।
– ওকে স্যার। কিন্তু পুরা এক প্লাটুন কমান্ডো মুভ করাবেন ?

একটু অবাক হলাম আমি। কতটা সিরিয়াস ব্যাপার হলে এক প্লাটুন কমান্ডো মুভ করা হয় জানা আছে আমার।
“ কমান্ডার ! আর্মিরা তাদের দুই প্লাটুন কমান্ডো মুভ করিয়েও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আর ওই এলাকার অবস্থা এমনিতেই ভালো না। এই অবস্থায় ওই মেজর ওয়ালিদকে খুঁজে পাওয়াটা অনেক জরুরী। ”
– যদি মারা গিয়ে থাকে ?
– সম্ভাবনা কম। সোর্স বলছে আরাকান আর্মির সদস্যদের কাউন্টার অ্যাটাক ভালভাবেই সামলে উঠেছিল ওয়ালিদের ফোর্স, কয়েকজন কেবল আহত হয়েছিল। কিন্তু হটাৎ করেই সে গায়েব হয়ে যায়। কিন্তু যদি মারা গিয়েই থাকত তাহলে তার লাশ পাওয়া যেত আশেপাশেই। ওই এলাকার আশপাশ পুরো চষে ফেলেছে আর্মিরা। আর তার লাশ কেউ নিবে না। জ্যান্ত দেখেই নিয়ে গেছে।
– তারমানে বলতে চাচ্ছেন এটা অপহরণ ?
– সম্ভাবনা বেশি।
– তাহলে এতদিনে তো আরাকান আর্মি থেকে মেসেজ আসতো। এই কয়েকদিনে তাদের বেশ কিছু ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। এত বিশাল ক্ষতি তারা সহ্য করতো না। আগেই ওয়ালিদকে ব্যবহার করে বাঁচতে চাইতো।
– সেটাই তো রহস্য। এইজন্যই তোমাকে পাঠানো হচ্ছে। র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগে থেকে তুমি এই ব্যাপারে যথেষ্ট দক্ষ আর তুমি একজন কমান্ডো। সবমিলিয়ে পার্ফেক্ট মনে হওয়াতেই তোমাকে এই অভিযানের প্রধান করে পাঠাচ্ছি।
– কথা দিচ্ছি স্যার, সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
– হুম। আল্লাহ ভরসা। অল দা বেস্ট, কমান্ডার।
– থ্যাংক ইউ স্যার।
– আর এখনই রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নাও। আজ রাতের মধ্যেই তোমরা থানছিতে যাবে। কালকে সকাল থেকে তোমাদের অভিযান শুরু।
– ওকে স্যার।
বলেই বের হয়ে গেলাম চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কমান্ডারের রুম থেকে।

তিনঃ

বেশ দূর্গম অঞ্চল এই থানছি। বান্দরবান জেলা সদর থেকে হেলিকপ্টারে করে যেতে প্রায় ২০ মিনিট লাগে। থানছি উপজেলা সদর কার্যালয় আর থানছি গেস্ট হাউজে আপাতত সশস্ত্র বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে।
সেখানে পৌঁছানোর পরেই আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন ওখানকার কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল ইমতিয়াজ ফারুক। আমাকে ওনার সাথে অফিসে যেতে বললেন।

আমার ইউনিটকে রেস্ট নিতে বলে ওনার সাথে গেলাম এই অপারেশনের অস্থায়ী ক্যাম্পের অফিসে। সেখানে যেতেই সরাসরি কাজের কথায় চলে এলেন তিনি। ম্যাপের অবস্থানগুলো দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে এই পর্যন্ত সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা যাদের কোড নেম চার্লি কমান্ড, কোথায় কোথায় অভিযান চালিয়েছে। উত্তর দিকে এখনো অভিযান চালানো হয়নি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে থানছি থেকে উত্তরে অভিযান চালানো।

জানালাম পরদিন সকাল থেকেই আমরা অভিযান শুরু করবো। পরদিন সকাল হতেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। আমার সাথে সোয়াডসের ৫ জন কমান্ডো, স্থানীয় একজন আদিবাসী যে একই সঙ্গে গাইড আর দোভাষীর কাজ করবে। বলে রাখা ভাল স্থানীয় উপজাতিরা নিজেদের ভাষাতেই কথা বলে। বেশিরভাগই বাংলা খুব ভালো পারে না, যারা আধ একটু পারে তাদের কথার সুর এতই অদ্ভুত যে বুঝতে পারাটা খুবই কঠিন। আর আছে ২০ জন সৈনিক এবং ৪টি প্রশিক্ষিত কুকুর।

প্রথম দুইদিন আমরা এইভাবে আশেপাশের প্রায় ৪০ কি.মি. জায়গাতে অনুসন্ধান চালিয়ে এসেছি। কোন কিছুই পাই নি। তৃতীয় দিন হটাৎ করেই এক সৈনিক বাইনোকুলার দিয়ে দেখে বললো, ” স্যার। সামনে ধোঁয়া উড়ছে। ”
কোন জনবসতি আছে সম্ভবত। গত কয়েকদিনই এইরকম বেশ কয়েকটা জনবসতির দেখা পেয়েছি। আরেকটু সামনে এগুতেই কুকুরগুলো কেমন আচরণ করা শুরু করলো। সন্দেহজনক কিছু পেয়েছে নাকি !

সবাইকে থামার নির্দেশ দিলাম। দুই কমান্ডোকে বললাম সাবধানে চেক করে আসতে। সামনে কি আদৌ গ্রাম নাকি অন্য কিছু নিশ্চিত হওয়া দরকার। গ্রাম হলে তো কুকুরগুলোর এইরকম করার কথা না।
১৫ মিনিট পরে দুইজন ফিরে আসলো। যা জানালো শুনে খুব একটা ধাক্কা খেলাম না। সামনে আরাকান আর্মির একটা সশস্ত্র ক্যাম্প। যা বুঝার বুঝে গেছি। সাথে সাথেই ক্যাম্পে মেসেজ দিলাম,

“ বেস কমান্ড! কাম ইন! বেস কমান্ড! দিস ইজ ডেল্টা কমান্ড! কাম ইন! ”
– ডেল্টা কমান্ড, দিস ইজ বেস কমান্ড। কর্ণেল ফারুক বলছি। কি অবস্থা আপনাদের ?
– গুড এনাফ। আমরা থানছি থেকে ৪০ কি.মি. উত্তরে আছি। এখান থেকে ১ কি.মি. সামনে আরাকান আর্মির একটা ক্যাম্প দেখতে পাচ্ছি। উই নিড ইম্মিডিয়েট সাপোর্ট। সোয়াডসের ২০ জন কমান্ডো আর দুই প্লাটুন সেনা এখনই মুভ করান।
– ওকে, ডেল্টা কমান্ড হোল্ড ইউর পজিশন। রিইনফোর্সমেন্ট দ্রুতই পৌঁছে যাবে। সাবধানে মিশন পরিচালনা করবেন। আগে সিউর হয়ে নিবেন কোন জিম্মি আছে কি না। মেজর ওয়ালিদও সেখানে থাকতে পারে, আর হ্যা গতকাল রাতে চাকমা রাজার মেয়ে আরিশাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার ব্যাপারেও তদন্ত করে দেখবেন।
ওকে স্যার। ওভার।
- ওভার অ্যান্ড আউট।

… (চলবে) …

৮২৩জন ৮২৩জন
0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ