
– হ্যালো, কে বলছেন?
= আমি অনির্বাণ, কেমন আছিস বন্ধু?
– ভালো, হঠাৎ কি মনে করে কল দিলি?
= একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
ভাবলাম তোর সাথে আলাপ করি।
– তাই নাকি! কোন ব্যাপারে? সিরিয়াস কিছু?
= হ্যা রে সিরিয়াস ব্যাপার। ভাবছি বিয়ে করবো।
– বেশতো কর, এটাতো ভালো খবর, সিরিয়াস হবার কি আছে!
= রাগশ্রীকে বিয়ে করার কথা ভেবেছি।
– কি! রাগশ্রী!? তোর মাথা ঠিক আছে? অসুখবিসুখ করেনিতো?
= উহু, মাথা একদম ঠিক আছে। অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
– দাঁড়া,একটু ভাবতে দে। রাগশ্রী! তাই না?
= হু
– ভয়ংকর রাগী,
= রাগ ওর অলংকার
– বদ মেজাজী,
= এটা ওর অহংকার
– কাউকে পাত্তা দেয় না, খুব ভাব নিয়ে চলে,
= ওর ব্যাক্তিত্ব এমনই
– কড়া কড়া কথা বলে, একরোখা স্বভাব,
= হোক, আমার এমনই চাই।
– কিন্তু কেন? ওকে বিয়ে করার মানে হলো স্বেচ্ছায় আগুনে ঝাঁপ দেয়া। পুড়ে মরতে চাস! সামাল দিতে পারবি?
= আলবৎ পারবো।
ও যখন হাসে আমার পৃথিবী ফুলে-ফলে ভরে যায়। সূর্য উঠে সোনা রোঁদ গায়ে মেখে।
ও যখন কথা বলে আমার চারপাশে আনন্দের কোলাহল শুনি, আকাশের রঙ আরও নীল হয়, বাতাসে সুর খেলা করে।
ও যখন নিরব থাকে আমার সবকিছু থমকে যায়, নিস্তব্ধতা গ্রাস করে আমার সারাদিন সারাক্ষণ।
আমি ওকে ভালোবাসি।
– শুভ কামনা রইলো বন্ধু। তোর ভালোবাসা সার্থক হোক, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আশির্বাদ করি।
….দেড় বছর পর……
– হ্যালো,কে বলছেন?
= আমি অনির্বাণ।
– কেমন আছিস বন্ধু? বিয়ের পর আর কল দিলি না। কি খবর তোর?
= ভালো নেই। একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই, হেল্প কর প্লিজ।
– সিরিয়াস কিছু?
= রাগশ্রী.. ওর সাথে বনিবনা হচ্ছে না, কি যে করি!
– কেন! কি হয়েছে? ভালোবাসা খতম?
= জানি না। খুব জ্বালায়, লাইফটা তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে।
– কি বলিস! খুলে বল!
= তুই তো জানিস আমি খুবই বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ ছিলাম। বন্ধু বান্ধবীদের জীবনের বড় একটা অংশে স্থান দিতাম। কিন্তু রাগশ্রী সব উলোটপালোট করে দিয়েছে।
= মানে!
– মানে আর কি! বন্ধু রাখা যাবে কিন্তু বান্ধবী নট এল্যাউ।
সবাইকে আমার বোন বানিয়ে দিয়েছে, তাও সবাইকে দাওয়াত করে বাসায় এনে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে। আর যাদেরকে বাসায় আনতে পারেনি তাদের কাছেও পাঠিয়েছে, রাখী বন্ধনের ভিডিও দেখে তারপর নিশ্চিত হয়েছে।
– ওহ, এটা নিয়ে মন খারাপ করিস না,
মেয়েরা একটু হিংসুটে হয়। এরা হাজব্যান্ডের মেয়ে বান্ধবীদের খুব একটা সহ্য করতে পারে না।
= তোর শান্তির কথা মনে আছে অনিরুদ্ধ ?
– হু, তোর এক্স ছিলো। কেন তাকে নিয়েও ঝামেলা হচ্ছে?
= ও আমাকে একটা সোয়েটার গিফট করেছিলো প্রেম করার সময়। এই শীতে নতুন সোয়েটার কিনিনি,
ভাবলাম ওটাই পরি। কিন্তু রাগশ্রী…
– কি করেছে? আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ফেলেছে?
= না রে,
ফেসবুকে একটা পুরাতন জিনিস বেচাকেনার গ্রুপ আছে, সেখানে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি শুধু বললাম বিক্রি করলে কেন,কোন অসহায়কে দিয়ে দিতে,
– ও কি বললো!?
= বললো তোমার চাইতে অসহায় আর কে আছে! লজ্জা করে না শীতের ঠ্যালায় প্রাক্তন প্রেমিকার দেয়া সোয়েটার পরো? বেশি বকবক করলে তোমাকেও পুরনো জিনিসের গ্রুপে বিক্রি করে দিবো।
– আহারে, সো স্যাড।
কিন্তু কি করবি বল,বউ গুলো এমনই হয়। তা এতো রাতে কল দিলি, কিছু খেয়েছিস? ঘুমাবি কখন?
= আর ঘুম।
ঘুম,খাওয়া দাওয়া আমার কপাল থেকে উঠে গেছে বন্ধু..
– কি বলিস! খাওয়া দাওয়া কপাল থেকে উঠে গেছে মানে? রাগশ্রী রান্নাবান্না করে না?
= সে আর বলতে!
ও অনেক বেশি বেশি খেতে দিতো। চারজন মানুষের খাবার দিয়ে বলতো সব খেয়ে নিতে। মাঝে মাঝে খাওয়ার পর আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো, তবুও খেতাম। এতো খেয়ে আমি দিনদিন মটু হয়ে যাচ্ছিলাম।
– তারপর?
= তারপর একদিন ও শিং মাছের ঝোল রান্না করেছিলো, অনেক ঝাল দিয়ে। আমি খুবই নম্র ভাষায় ওকে বললাম এত ঝাল আমি খেতে পারি না। আমাকে ডাল দাও। ডাল দিয়ে খাই। তোমার হাতের ডাল আর খিচুড়ি আমার ভীষণ প্রিয়।
– বলতে থাক,
= ও কোন কথা না বলে সোজা রান্নাঘরে গেলো। কিছুক্ষণ পর দুমদাম শব্দ শুনে আমি দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি তরকারি রান্নার সব গুলো হাড়ি-পাতিল শীলপুতো দিয়ে আচ্ছামতো চ্যাপটা করছে আর ডাস্টবিনে রাখছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এগুলোর এই অবস্থা কেন করছো! রান্না করবে কি’সে?
– কি উত্তর দিলো!
= বললো এখন থেকে শুধু ডাল রাধবো, অথবা খিচুড়ি। এতোগুলো হাড়ির দরকার নেই।
সেই থেকে নাস্তা, লাঞ্চ, ডিনারে এগুলোই খাই। অফিসে থাকলে অবশ্য অন্যকিছু খেতে পারি। কিন্তু বাড়ি এলেই….। আমার ওজন দ্রুতই কমে যাচ্ছে দোস্ত।
– শোন অনির্বাণ আমি বুঝতে পারছি তোর উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ভাবিস না, আমি যেহেতু আছি তোর জন্য একটা উপায় বের করবোই। এক কাজ কর, তুই রাগশ্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দে। না থাকবে বাশ, না বাজবে বাশরী।
= রাইট, আমিও এই সিদ্ধান্ত নিতে চাই। এই জন্যেই তোর কাছে কল দিয়েছি।
– ওকে, তাহলে এটাই ফাইনাল। তুই কাল কোর্টে আয়, সব ব্যবস্থা করে দিবো।
…পরদিন…
– অনিরুদ্ধ
= হু?
– রাগশ্রী খুব ইমোশনাল
= তো?
– ও আমার খুব খেয়াল রাখে। এক মিনিটের জন্যেও আমার কাছে থেকে দূরে থাকে না।
= কিন্তু রাগশ্রী খুব রাগী। সে তোর লাইফ এলোমেলো করে দিয়েছে।
– না রে, আমিই এলোমেলো ছিলাম। ও আমাকে গুছিয়ে রাখে।
= তাহলে ডিভোর্স দিবি না? শাসনে রাখতে পারবি?
– উহু, শাসনে না, বুক দিয়ে আগলে রাখবো। ঐ পাগলীটা আছে বলেই আমি ভালোবাসতে শিখেছি।
= বেশ তাহলে বাড়ি যা। আমার সময় নষ্ট করার জন্য এবারের মতো মাফ করে দিলাম। ভালো থাকিস তোর রাগশ্রীর ভালোবাসায়।
– ধন্যবাদ বন্ধু।
– অনিরুদ্ধ, আরেকটা কথা..
= কি?
– রাগশ্রী বলেছে তোর সাথে আর না মিশতে। কথা বলতেও নিষেধ করেছে। কি যে করি, একটা আইডিয়া দে দোস্ত। আর শোন আমি বাসায় থাকলে তুই কিন্তু কল দিস না, তাহলে রাগশ্রী..
– অনির্বাণ!// 😡😡
#চলবে.
*ছবি- নেট থেকে নেয়া।
২১টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব সুন্দর লেখা।
খুনসুটি ভরা সংসার আর
একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীলতা।
ভীষণ মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা অন্তহীণ।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাসি কান্না আর খুনসুটি দিয়েই সংসার। এগুলো ছাড়া সংসার সৌন্দর্যহীন হয়ে যায়।
ধন্যবাদ ভাই। শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
লেখা পড়ে হাসতে হাসতে আমি শেষ! ভালোবাসাগুলো এমন কেন? আজকে একরকম তো কালকে একরকম। তবে যে দিন যামানা তাতে বান্ধবীর চেয়ে বোনই উত্তম বর্তমান প্রেক্ষাপটে। ২০ বছরের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে ফেসবুকের অকল্যানে। মানুষ এখন আর মানবিক নাই।
লেখাটি হাস্যরসের হলেও বাস্তবতার নিরীক্ষে লেখা। শুভকামনা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষ সুখে-আনন্দে থাকার মূল উপাদান থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। মানতে হবে, ফেসবুকেরও টুকটাক ভূমিকা আছে।
দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃক্ষিত ভাই।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদুল ইসলাম
যাক, উত্তর পেয়ে এই লেখাটির কথা মনে হলো। সাথে পড়াও হলো।
আলমগীর সরকার লিটন
এখন সময়ে এরকম হয় কিন্তু খুব সুন্দর লাগল ————–
সাবিনা ইয়াসমিন
এখনো এমন হয়। নয়তো গল্প হতো না।
ধন্যবাদ লিটন ভাই। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
ফয়জুল মহী
অনন্য সুন্দর রচিলেন।
ভালো লাগলো অনেক।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ মহী ভাই।
মাহে রমজানের শুভেচ্ছা আপনাকে। ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
এমা কি অবস্থা! এ দেখছি অনির্বানের ভালোবাসার মত হল। এই বলছে কিচ্ছু মাথায় নেই, লেখা আসছেনা। এখনি চলবে,,,
অসাধারণ! চলুক। রাগী মেয়ের মজার, ভালোবাসার গল্পে।🥰🥰
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসাতো আছেই, কিন্তু অনির্বাণ বেশি সময় শুধু নিজেরটাই বোঝে।
এমনি এমনিই লিখি, লেখা আসলেই মাথায় আসতে চায় না 🙁
দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃক্ষিত।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভালোবাসা এমনি হয়!
অণির্বাণ ও রাগাশ্রি কথোপকথন বেশ ভালো লাগলো।
ভালোবাসায় মানবিকতা আসুক।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়,দিদি।
সাবিনা ইয়াসমিন
পরবর্তী পর্ব কবে লিখতে পারবো জানি না প্রদীপ। তবে চেষ্টা করবো। তুমি নতুন লেখা দিও।
ভালো থেকো, শুভ কামনা 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
হা হা হা শেষ পর্যন্ত অর্নিবানের এই অবস্থা করে ছাড়লেন।কিছু গল্প থাকে যার শেষের দিকে শক খেতে হয়।গল্পটা দারুণ…..চলুক।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ মমি ভাই। সাথে থাকুন তাহলেই লিখতে পারবো।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা 🌹🌹
খাদিজাতুল কুবরা
রাগশ্রীরা আছে বলেই বাউণ্ডুলে ছেলে গুলো জীবন গুছিয়ে দেয়।
গল্প খুব ভালো লাগলো। এগুলো আমাদের চারপাশের বাস্তবতা। সম্পর্কগুলোকে কুক্ষিগত করতে গিয়েই সম্পর্ক হারিয়ে যায়।
স্বামী হোক বা স্ত্রী সম্পর্কে সামঞ্জস্য খুব দরকার।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
❝ সম্পর্কগুলোকে কুক্ষিগত করতে গিয়েই সম্পর্ক হারিয়ে যায় ❞
অনেক মুল্যবান একটা কথা বলেছেন। কুক্ষিগত জিনিসের উপর অধিকার থাকে কিন্তু পাওয়ার তৃপ্তি থাকে না। অনেকে এটা সঠিক সময়ে বুঝতে পারে, আর কেউ কেউ যতক্ষণে অনুভব করে ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।
খুব সুন্দর করে গল্পের মুল বিষয়টি ধরতে পারার জন্যে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। দোয়া ও ভালোবাসা অবিরাম ❤️❤️
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহারে অনির্বাণ! বেচারা বৌরে খুব ভালোবাসে কিন্তু বৌয়ের মেজাজের ভোল্টেজের কারনে দোটানায় পড়ে যায় একসাথে থাকা নিয়ে। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম প্রিয় আপু। ভালোবাসা অবিরাম 🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
অনির্বাণের জন্য এত্ত মায়া!!
চেষ্টা করবো আগামী পর্ব লিখতে।
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন। শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
এমন ভালোবাসাই থাক।
হাসিটা চেপে রাখলাম পরের পর্বের জন্য।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন সব সময়। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹