
রমজান আলি নামে এক লোক। গত তিনবছর ধরে মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা ওঠায়। জোয়ান তাগরা চেহারার রমজান আলি কেন কাজ করে না জানতে চাইলে বলে, হার্টে সমস্যা, ব্রেইন স্ট্রোক করেছে। দু কথার বেশি জানতে চাইলে হু হু করে কাঁদে। লোকজন কান্নায় হতবিহ্বল হয়ে তাকে টাকা দান করে।
কেস স্টাডিতে জানা যায়, রমজানের দুটো ছেলে মেয়ে। তবে মেয়েকে তার ভীষন পছন্দ। তাই জন্মের পর থেকে মেয়েকে সে মশাতেও কামরাইতে দেয় নাই। যেভাবেই হোক মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দেয়াই তার একমাএ উদ্দেশ্য।
মেয়ে তার দেখতে মোটেও সুন্দর না। কালো, খাটো। তবে রমজানের কাছে সে বিশ্বসুন্দরী। পড়াশুনায় মোটেও ভালো না। রমজান তবুও গল্প দেয় মেয়ে তার অসম্ভব মেধাবী। তাই মেয়েকে এর ওর কাছে চেয়ে চিন্তে লেখাপড়া শেখায়। মেয়েরও লেখাপড়ার চেয়ে রূপচর্চায় আগ্রহ বেশি। রমজানও কমতি করে না মেয়েকে তার রূপচর্চার রশদ কিনে দিতে। মাসে দুবার মেয়েকে পার্লারে পাঠানো চাই-ই চাই।
এভাবে মেয়েটাও দিনে ফর্সা হয়ে যেতে লাগলো। হাল ফ্যাশানের কাপড়- চোপড়, আর হাইহিলে সজ্জিত এক মেয়ে দেখলে মনেই হয় না রমজানের মতো লোকের মেয়ে।
যথারীতি মেয়ের বিরাট বড় ঘরের সম্মন্ধও এলো। এজন্যই গত কয়েক বছর ধরে রমজান লোকজনের কাছে চাঁদা তুলছে। রাজনেতিক লোকজন, আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকে। মেয়ের সুখের জন্য রমজান হাতে পায়ে ধরতেও কার্পণ্য করে না।
প্রথম বছর সে চাঁদা তোলে মেয়ের আকদ হবে। সবাইকে বলে মেয়ের রাজ কপাল তাই কপালগুণে বিরাট বড় ঘরে সম্মন্ধ এসেছে। এখন তাদের যথাযথ মর্যাদা দেয়াই তার উদ্দেশ্য। মেয়ে সুখী হলেই সে এসব ছেড়ে দেবে।
লোকজন তার মেয়ের সুখের জন্য অনেক দেয়। রমজান মেয়ের আকদ সেরে বাকি টাকা দিয়ে ঘর পাকা করে ফেলে।
এর ক মাস পর রমজান আবার চাঁদা উঠায়। লোকে জানতে চাইলে বলে, এবার বিয়ে। মেয়ের বিয়ে হলেই সে এসব ছেড়ে দেবে। যথারীতি মেয়ের বিয়েও হল। সাথে রমজানের এবার হাল ফ্যাশানের ওয়াশরুম, রান্নাঘরও হলো। যারা দুহাতে সাহায্য দিল, তাদের না খাইয়ে বরপক্ষের অতি যত্নে খাইয়ে মেয়ের বিদায় হলো।
এর কিছুদিন পর লোকজন তার ব্যবহারে সব ভুলে গেল। এবার সে আবার টাকা উঠাতে নেমে গেল। আবার সেই আকুতি মিনতি, কান্না। কারন বিয়ের সময় গয়না দেবার কথা হয়েছে। দিতে না পারলে বড়ঘরকে অসম্মান করা হবে, মেয়ে সুখী হবেনা, সংসার হবে না।
রমজান বিনয়ী ও মিথ্যাবাদী। কিভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হয় সে জানে। মিথ্যাবাদীরা সবসময় বিনয়ী হয়, ভদ্র হয়, অল্পভাষী হয় এবং কথায় কথায় আল্লাহর দোহাই দেয়, আল্লার নাম নেয়।
এবারও বেশ টাকা উঠলো। যথাযথ নিয়মে রমজান এবারও মেয়ের গয়নার পাশাপাশি দুধেল গাই কিনলো, রান্না ঘর পাকা ও আধুনিক টাইলস বসালো।
কবছর পর,,,
রমজানের বউ গ্রামের মহিলাদের নিয়ে উনুনের পাশে বসে মেয়ের সুখে থাকার গল্প করছে। মহিলারা মুগ্ধ হয়ে শুনছে।
আমার মেয়ের বিরাট বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে। মেয়ে আমার দুধ- ভাত খায়।
ঘরের পেছন থেকে কে যেন বলে ওঠে, – তাতেও ছাই!
আবার বলে, মেয়ে আমার এসির বাতাসে ঘুমায়।
ঘরের পেছন থেকে বলে, – তাতেও ছাই!
আবার মা বলে, মেয়ে গাড়িতে চড়ে বেড়ায়।
ঘরের পেছন থেকে বলে, – তাতেও ছাই!
ঘরের পেছনে কে কথা বলে। সবাই দেখার জন্য ঘরের পেছনে যায়। কাকভেজা হয়ে রমজানের মেয়ে বৃষ্টিতে বসে কাঁপছে। পরনে অতি মলিন ও কমদামী কাপড়।
ঘটনা জানা গেল, বড় লোকের অতি আদরের মদপ্য ছেলে তাকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছে।
****
রাস্তায় বাসে, রিকসায় বের হলেই চাঁদার মাইক বাজতে শোনা যায় ‘ আল্লার রাস্তায় দিয়া যান আখিরাতের পুঁজি বাড়ান’। আমরা ধর্মভীরুরা হুরহুর করে পকেট খালি করি, আখিরাতের পুঁজি বাড়াই।
এ টাকায় মসজিদের দেশ বাংলাদেশে মসজিদ হয়। একমাইলের মাথায় তিনটা মসজিদ হয়। মসজিদ ঘরে নামাজ পড়ে তিনজন মুসল্লি। যেখানে নামাজ পড়ে দোয়া করার লোক থাকে না আমরা সেখানে দান করি বেহেশতে যাবার আশায়।
যিনি নামাজ পড়ান। দানের টাকায় সেই হুজুরের বাড়ি পাকা হয়, বউ এর হীরার নাকফুল হয় , জমি জিরাত হয়। তিনি বিনা পরিশ্রমে বড়লোক হয়ে যান।
অনেকদিন যাবত রাস্তার সামনে এই মাইক ঝোলে। একসাথেই মসজিদের কাজও শেয হয় হুজুরের বাড়ির কাজও শেষ হয়।
বাংলাদেশে হুহু করে এমন আল্লার ঘর তৈরি হচ্ছে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়ার ফলাফল আলাদা মসজিদ। আর তা তৈরি অতি সহজ। একজন ইমাম নিয়োগ দিয়ে তার হাতে রাস্তার পাশে মাইক নিয়ে বসিয়ে দেওয়া। আর ভীরু জনগন সমস্ত খরচ বহনকারী।
তুরস্কের এক মসজিদে বাংলাদেশী একদল জামাত গেছে। তারা সেখানে রাত্রী যাপন করবে ও দ্বীনের কাজ করবে। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর মসজিদের ভেতর থেকে কালো মোচঅলা এক লোক বেড়িয়ে এলো। তাকে মুছল্লীগন সব খুলে বললে তিনি জানালেন- আমি তো এই ঘর ভাড়া নিয়েছি দশবছরের জন্য। এখানে থেকে আমি আমার শুকর পালন করবো।
মুছল্লীগন নাউজুবিল্লাহ বলে ভেতরে তাকালেন। কয়েকশত শুকর ভেতরে বিশ্রামরত।
মুসল্লীগন অবাক! বলে কি? কেমন করে সম্ভব!!!
কেসস্টাডি বলে, বহুকাল ওই মসজিদে নামাজ পড়ার মতো কোন লোকই আসে না। দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকার পর তিনি ভাড়া নিয়েছেন।
আমাদের দূর্বলতাগুলি কাঁচের বয়ামে জ্বীনের মতো। স্বচ্ছ তবুও আমরা বিশ্বাস করে ফেলি। আর তা ব্যবহার করে চলে নানা ভিখ্খাবৃত্তি। আমরা কখনো কখনো তাকে দায় ভেবেও বসি। যেগুলো বন্ধ করা উচিত।
ইংরেজি প্রবাদ- ‘কাট ইওর কোট একর্ডিং টু ইওর ক্লথ’। সাধ্য ও প্রয়োজন দুটোকেই আমাদের পাশাপাশী রাখা আবশ্যক। আর দায়? অবশ্যই প্রয়োজনীয়তাই মানুষের দায় হওয়া উচিত!
ছবি- নেটের
১০টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্লেষণ মূলক পোস্ট। এক এলাকায় এতো গুলো মসজিদ না করে প্রয়োজন অনুসারে করা উচিত। সবাই যখন এক মসজিদে নামাজ আদায় করবে তখন সবার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। তবে আমাদের এলাকার মসজিদ গুলোতে লোক সমাগম ঘটে। মিথ্যা বলে টাকা নেওয়ার কি জঘন্য অভ্যাস। আমি এদের কে টাকা দেই না। রমজান মাসে মসজিদের হুজুর রাখা নিয়ে ঝগড়া থেকে মানুষ খুন করে ফেলা হয়েছে। এটা আমার এক মামা বাড়ির ঘটনা। ভাবতে অবাক লাগে। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অশেষ কৃতজ্ঞতা আপা। এমন অসাধারণ মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা অশেষ। ভালো থাকুন।।।।
ছাইরাছ হেলাল
যা হওয়া উচিৎ নয় এমন অনেক কিছুই হচ্ছে, তাই বলে ভাল কিছু হচ্ছে/হবে না তা কিন্তু ভাবছি না।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী জনাব, শুভ কামনা জানবেন।।।
নার্গিস রশিদ
এক নাগাড়ে পরে ফেললাম। কারন এইসবই হচ্ছে আমাদের দেশে। বেশী বেশী করে লিখে আসল ব্যাপারটা মানুষকে জানিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে । শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পরিবর্তনের ঢের সময় লাগবে ম্যাম।।।
শুভ কামনা অশেষ।।।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
এমন ঘটনা যথেষ্টই দেখা যায় আপু!
আমাদের গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলন আছে
’ভিক্ষার চাল একবার পেটে পড়লে সে নাকি ভিক্ষা ছাড়তে পারে না’
আজ মানুষ নগ্ন সুখের আশায় সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে কুণ্ঠা করে না।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এটা একদম ঠিক বলেছেন। কৃতজ্ঞতা ভাই।।।।
রিতু জাহান
আমি কোনো মসজিদে টাকা দেই না,,,
আমি তো পরিকল্পনা করেছি হজ্জ্ব এর টাকা কোনো গরীব লোকদের রুজি রুটির একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিব।
কারণ আমার টাকা তারা আমেরিকার কাছে গচ্ছিত রাখবে আর তারা অস্ত্র কিনে মানুষ মারবে তা হবে না।
পরিবর্তন আসবে, তবে এ সভ্যবতা ধ্বংস হওয়ার পর।
ভালো লিখছো,,,
রোকসানা খন্দকার রুকু
এটা ঠিক বলেছ। আমরা পরিবর্তন দেখতে পারবো না বোঝা যায়। কৃতজ্ঞতা অশেষ রিতু।