ঈদ যে কারোর জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনে।মমির জন্য আসছে ঈদের দিনটি ছিল বেদনা এবং আনন্দের মাঝা মাঝি।আর কয় দিন পরই ঈদুল ফিতর।সেই জন্য মার্কেটগুলোতে ঈদেরঁ কেনা কাটার দুম পড়েছে।মমি এবার তেমন কিছুই  ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না হয়তো মনে আষাঢ়ের মেঘ জমেছে।আজ সারাক্ষণ শুধু একই ভাবনা কি কিনব কার জন্য কিনব যার জন্য কেনার কথা ছিল সে হয়তো অন্য কারো বাহু ডোরে দূলে দূলে মার্কেট টু মার্কেট ঘুড়ছে।আর প্রথম প্রেমিকার কথাতো এখন ইচ্ছে করলেও মনে আসে না মমির তবে মমির মনে প্রথম প্রেমে সমাধির পর প্রথম ফের দেখা হয় এবং তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কুকুরের মতন তাড়িয়ে দেয়ার দৃশ্যটি মমিকে মাঝে মাঝে ভাবিয়ে তুলে, কি এমন ক্ষতি হতো তখন একটু দাড়ালে একটু কথা বললে।

তখনও মেহেদীর লাল রং মুছে যায়নি হঠাৎ তার আগমন মমিকে অপ্রস্তুত করে দেয়।প্রিয়তমার বিয়ের একটি বছর পর ফের আসা এ যেন বিশাল কষ্টের সমুদ্রে ছোট্র একটি ইটের টুকরোয় ঢিল ছুড়ে মুছতে যাওয়া পুরো কষ্টের স্পন্দনকে বাড়িয়ে দিল শতগুণে।মমি যেখানে ছাত্র প্রাইভেট পড়াত ঠিক সেই বাসার দরজা বরাবর সে এবং তার এক বোনকে সাথে নিয়ে  দাড়িয়ে ছিল,ঠিক কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল মমি তা বলতে পারবে না।পড়নে লাল পাইড়ের কাতাল শাড়ী কপালে লালচে গোলাপী টিপ হাতে রেশমী চুড়ি,ইন্ডিয়ান বাঙ্গালী রমণীর মত সেজেছিল সেদিন, তার কপালের ঘামের শিশিরের ফুটাটি বলে দেয় সে অনেকক্ষণ যাবৎ দাড়িয়ে আছে। মমি ছাত্রদের ছুটি দিয়ে বাসা থেকে বের হতেই চোখে পড়ে বিউটিকে চমকে উঠার কথা কিন্তু মমি যেন কিছুই দেখেনি এক প্রকার ভান করেই তাকে পাশ কেটে চলে যাচ্ছে, অমনি বিউটির হাতটি কব্জা করল মমির হাতটি।থমকে দাড়ায় মমি চোখেঁ যেন মরিচের গুড়োয় লাল হয়ে ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে তাতে কিছুটা অপ্রস্তুত বিউটি।

-কি…..ব্যাপার আমি সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছি আর আপনি কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন।

-দাড়িয়ে না থেকে গানটি গেলেই পারতে “আমি কখন এসে দাড়িয়ে ছিলাম……

-আপনিতো দেখছি আগের মতনই আছেন একটুও বদলান নি।

-আমাদের মতন ছেলেদের বদলানোটা কেউ দেখতে পায় না।নীরবে বদলায় নীরবেই সব ব্যাথা সয়ে যায়।

-সরি….

-কিসের জন্য?

-আপনি রেগে আছেন?দেখুন……আমার কিছুই করার ছিল না।আমি পরিস্হিতির স্বীকার।আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

বিউটির চোখে-মুখে অপরাধের অনুসূচনার স্পষ্ট রেখা প্রতীয়মান আরো কিছু  বলতে গিয়ে ঠোটে স্বরের কাপুনিতে শব্দরা করে হরতাল।

-দেখো এখানে এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে কোন মেয়ে লোকের সাথে আমি কখনই কথা বলি না।

সে দিন ঐ পর্যন্তই কথা হয়েছিল মমির হারিয়ে যাওয়া প্রিয়ার সাথে ।এর পর সে শত চেষ্টা করেও তাদের দুজনের সাথে কোন বাক্য সৃষ্টি হয়নি।অবশেষে ব্যাথা ভরা হৃদয়ে বিউটিকে চলে যেতে হয়েছিল।

চাদঁ উঠুক আর নাই উঠুক কাল ঈদের খুশি।স্বভাবত আজ চাদঁ রাত এ রাতের মহিমা প্রেমিক যুগলের চেয়ে বেশী কেহ অনুভব করে না।আজ রাতটা পাঠালতলী রাণী তার খালার বাসায় থাকবে সকালে চলে যাবে ঈদ করতে নিজ এলাকায়।শুধু মাত্র মমির জন্যই থেকে যাওয়া।এ দিকে অশান্ত মমি মনকে শান্ত করতে সব কিছুকে জায়েজ মনে করে মনকে রঙ্গীন করে তুলে ছয় ইঞ্চি পচ্চিশ মালের বিনিময়ে।তাও এলাকা থেকে নয় তা পেতে যেতে হয়েছিল বেশ কয়েক জন বন্ধুদের সাথে চান্দিনায়।রাত যখন দশটা তখনও বাসায় ফিরেনি অশান্ত মমি তাহলে রাণীঁর পথ চাওয়া কি বিফলে যাবে!অধীর আগ্রহে বার বার খোজঁ নিচ্ছে বাসায়,মমি বাসায় কি না।না আর ধৈর্য্যের বাধ যে সয় না অপেক্ষার ত্যাক্ত জীবানুগুলো বলতে শুরু করে…. (3 ^:^ .”সে যে কেনো এলো না কিছু ভালো লাগে না,এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাব”।রাত বরোটা নাহ্ এখনও ফেরেনি,রাত একটায় মমি বাসায় ফিরে।ততক্ষনে রাণীঁর দু’চোখে তন্দ্রা দেবী ভর করে রাণীকে নিয়ে যায় স্বপ্ন জগতের রাজপুত্রের কাছে।

ফজরের আযানের সাথে সাথে ছেলে বুড়ো সবাই জেগে উঠে।বেশীর ভাগ পুরুষ এবং পোলাপানেরা ছুটে পুকুর ঘাটে কিংবা নদীতে।নতুন সাবান আর সেম্পুতে দেহকে পবিত্র করে ঈদের নামাজের জন্য নতুন জামা কিংবা পুরাতনকে নতুন করে পড়ে।মমিও যথারিতী নতুন জামা পড়ে নামাজ শেষে কার অপেক্ষায় যেন অস্হির।হ্যা সেই অনন্যা যার জন্য সে অধীর আগ্রহে খবরের অপেক্ষায় বসে আছে।ঠিক সে সময় অনন্যার বডিগার্ড ময়না একটি চিরকুট নিয়ে আসে তখন বেলা প্রায় এগারোটা।ঈদের আমেজ চলছে বাহিরে কেউ চটপটি খাচ্ছে কেউ এ বাড়ি ও বাড়ী যাচ্ছে ঈদের সালামির জন্য।চিরকুটে সামান্য লেখা ঠিক সাড়ে এগাোটায় যেন পুকুর পাড়ের দিদিদের বাসায় থাকেন।ঘড়ির দিকে তাকায় মাত্র দশ মিনিট বাকী উঠে পড়ে মমি দিদিদের বাসায় পৌছে দিদির সাথে আড্ডা দিচ্ছে।মাঝে মাঝে জানালার ফাক দিয়ে নজর রাখছে অনন্যা আসছে কি না।ঐতো অনন্যা আসছে ।ঈদের নতুন পোষাকে আরো চমৎকার লাগছে তাকে যেন এ এক ভিন্ন প্রিয়া কষ্মিনকালেও তার সাথে মমির কোন সাক্ষাত ছিল না।দিদি অনন্যা এবং মমিকে এক রুমে রেখে পাশের রুমে চলে যান।দু’জনেই খাটে মুখোমুখি বসে আছে বেশ কিছুক্ষন নিশ্চুপ তারপর নীরবতা ভেঙ্গে অনন্যার প্রথম কথা বলা।

-কেমন আছেন,ঈদ মোবারক।

-হুম!ঈদ মোবারক।তারপর বলো কেনো এখানে ডেকেছ,

-কথা বলতে।

-বাসায়তো কথা বলতে পারতে।

-না,বড় ভাইয়া আমাদের সম্পর্কের কার কাছে যেন শুনেছেন।আমার কাছে ভাইয়া জানতে চেয়েছিল আমি হ্যা না কিছুই বলিনি বলে ভাইয়া অনেক বকেছে….।অনেক কষ্ট করে শতর্কে এখানে এসেছি।

মমি মৃধু হাসছে তা দেখে অনন্যার মনে রাগ যেন মাথায় চড়ে গেল।অনন্যা খুবই সহজ সরল মেয়ে।ছলচাতুড়ী বুঝে না।মমি যে কাকে ভালবাসে কিংবা ভালবাসবে তা সে নিজেও জানেন না।প্রথম প্রেমে হারে এলো গলো মিলি,বন্দরের ঝুমুড়,স্টিল আছে রাণী,বাড্ডার কোটিপতির একমাত্র কন্যা আফরোজা এবং ঘরের কোণে বসত করে অনন্যা।অনন্যার প্রেমে সাড়া দেয়া মমির একটি বিশেষ কারন আছে তা সবাই অবগত আছেন।তার ভালবাসায় ছিল প্রতিশোধের আগুন সেই আগুনকে নিবানো নয় আগুনকে ছড়িয়ে দিতেই মমির এ প্রেমে আগ্রহ।

-কি ব্যাপার কিছু বলছেন না?

-আমি সাধারনত তেমন একটা কথা বলি না তুমি তা জানো?কেনো ডেকেছ তাই বলো?

-চুমো দিব বলে,

-বলে কি মেয়েটি তা দিতে বিশ্বাসের প্রয়োজন আছে।

-সেই বিশ্বাস আপনার প্রতি আমার আছে বলেতো বলছি।

-তুমি কি জানো আমার মনের কথা কি?

-জানি,

-কি ভাবে?

-হৃদয়কে প্রশ্ন করে।

-বাহ্ রোমান্টিক, এ সব আবেগ ছাড়ো আবেগে ভালবাসা টিকে না।

-এক দিন জীবনটাইতো থাকবে না,তাই বলে কি জীবন স্হির থাকে ?

মমিকে সে প্রচন্ড ভাবে ফিল করে প্রতিনিয়ত।মমি নিজেকে প্রশ্ন করে কচিঁ মনে আঘাতটা সে সইতে পারবে না। যদি সব ভালবাসা সঠিক হতো তবে বিরহ আসার প্রয়োজন ছিল না।অনন্যা তার বুকে লোকানো পবিত্র কোরান শরিফের আরবী লেখা একটি পাতা বের করে মমির সামনে রাখে অনন্যা হাত রাখে পবিত্র কোরানের উপর অনেকটা সংকোচে সব শেষে মমিও হাত রাখে।

চলবে….

অতৃপ্ত জীবন….ভালবাসা১১

৯৫৩জন ৯৫৩জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ