ভোর ৪টায় বিমান থেকে সিঙ্গাপুর চাঙ্গী ইয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেসন পাস করে এজেন্টের জন্য অপেক্ষা করছি ।এজেন্টটের লোক আসে সকাল ৮টার দিকে আমি তার সাথে ইয়ার পোর্ট থেকে বের হয়ে চলে গেলাম মেডিক্যাল চেক আপে।মেডিক্যাল চেক আপে আমাকে পুরো লেংটো করে পরীক্ষা করল যা আগে কখনও করেনি।চেকআপ শেষ মাইক্রো দিয়ে চলে গেলাম উডল্যান্ড আমার চাকরীর অফিসে।তখন বেলা ১২টা অফিস থেকে খাবার এলো।খাবার খাওয়া শেষ হবার পর উডল্যান্ডের ইন্ড্রাষ্টট্রিয়াল এরিয়া একটি ব্লকে সেখানে আমার থাকার স্হান।উডল্যান্ড থেকে সেরাঙ্গন যেতে মাত্র ১৫/২০ মিনিট লাগে।যেহেতু আজ কাজ নেই তাই বিকালটা সেরাঙ্গনে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে গেলাম বাস ষ্টেশনে।প্রতি ১০ মিনিট অন্তর অন্তর বাস আসে।বাসের ষ্টেশনটি মেইন রোড হতে একটু বাহিরে অবস্হিত যাতে অন্য গাড়ী চলতে অসুবিদা না হয়।বৃষ্টি বাদলের জন্য আছে ছাউনি।বাসে উঠলাম দুটি ট্রেনের মত কামড়া জয়েন্ট করে বিশাল প্রায় ১০০টি সিটের একটি বাস।জাষ্ট টাইমে বাস এসে ভিড়ল ষ্টেসনে।বাসে উঠে সিক্সটি সেন্স দিলাম টিকেটের বক্সে ।কয়েন টিকেক বক্সের পাশে দেখলাম আর একটি কার্ড সিষ্টেমস টিকেট বক্স।এই কার্ডে ব্যাংক কার্ডের মত টাকা রিচার্জ করতে হয়।কয়েন বক্সের বদলে প্রিপেইড টিকেট ক্যাশ কার্ড বক্স একটু উন্নত পদ্ধতি এই পদ্ধতিতে যে প্যাসেঞ্জারের ষাট সেন্সের ভাড়া দিয়ে দুই ডলারের স্হানে যাওয়া বন্ধ হল। এই ভাবে প্রতিনিয়ত সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে ডিজিটালের পথে।একমাত্র চালকই এক বাসের কর্মচারী।মাঝে মধ্যে টিকেট চেকারও দেখতে পাওয়া যায়।প্রথমে মোস্তফা এন্ড সামছুদ্দিন প্লাজায় ঢুকে ক্যাসেট বিভাগে ক্যাসেট দেখছি।বেশ কিছু নতুন ইংরেজী ছবি এসেছে কিন্তু ক্যাসেটের মুল্য অনেক চিন্তা করলাম কিভাবে পছন্দ করা ক্যাসেট গুলো কম দামে ক্রয় করা যায়।প্রতিটি ক্যাসেটের গায়ে ষ্টিকারে মূল্য লেখা থাকে।অপেক্ষাকৃত কম দামের কয়েকটি ক্যাসেট মূল্যের ষ্টিকারগুলো খুলে বেশী দামের ক্যাসেটের গায়ে লাগিয়ে বেশী দামের ক্যাসেটের ষ্টিকারগুলো কম দামের ক্যাসেটের গায়ে লাগালাম।এ কাজ করতে প্রায় ঘন্টাখানেক সেই স্হানে থাকতে হয়েছিল ।চিন্তা করলাম এখন ক্যাসেট ক্রয় করব না আর এক বার এসে সেই মূল্য চেঞ্জ করা ক্যাসেটগুলো ক্রয় করব তাই সেই ক্যাসেটগুলো নিদিষ্ট স্হানে রেখে দিয়ে প্লাজা হতে বাহিরে আসার জন্য গেইটে আসার সঙ্গে সঙ্গে সিকুরিটি আমাকে আটকিয়ে দিল।অত্যান্ত বিনয়ের সাথে সিকুরিটি আমাকে জিজ্ঞাসা করল।
-ক্যাসেট বিভাগে এতক্ষন তুমি কি করেছ?
-কিছুই না,ক্যাসেট দেখছিলাম।
-তাই বলে দীর্ঘ সময়?
-কোন সমস্যা?
-Ok,আসো আমার সাথে।তারপর সে আমাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে সিসি ক্যামেরায় ধারনকৃত দৃশ্যগুলো দেখাচ্ছে।
-তুমি দেখো সেখানে তুমি কত সময় নিয়ে কি করেছিলে।
আমাকে যখন সিসি ক্যামেরায় আমার কুকামের দৃশ্য দেখাচ্ছিল তখন আমার হাত পায়ে কাপন ধরে যায়।মূখ দিয়ে তেমন কোন শব্দ বের করতে পারছিনা।ভাগ্যিস আমি যা চেঞ্জ করেছি তা ক্যামেরায় ধারন হয়নি তখন সেখানে কেবল আমার দীর্ঘক্ষন উপস্হিতিই লক্ষ্য করা যায়।সি সি ক্যামেরার ধারনকৃত দৃশ্য দেখানোর পর তেমন কোন ক্লু না পাওয়াতে সরি বলে আমাকে বাহিরে যেতে বলে।মোস্তফা প্লাজা এমন একটি মার্কেট যেখানে দুই নম্ভর বলে কথা নেই।প্রত্যকটি জিনিসের উপর মূল্য লেখা থাকে।স্ক্যান করে মূল্য নির্ধারন করে।কেউ ভুলে কোন জিনিসের দাম না দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে গেইটে উচ্চস্বরে টিক টিক শব্দ করবে।ধরা পড়লে জেল জরিপানা এবং স্বদেশে ফেরত পাঠাবে।বুকে থু থু দিয়ে আল্লাহর কাছে সুকরিয়া জানিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে।
সেরাঙ্গনে আমাদের এলাকার দোকানে গেলাম।অমর ভাইয়ের জন্য দেশ থেকে চিঠি নিয়েগিয়েছিলাম মূলত সেই উদ্দ্যেশ্যই সেরাঙ্গনে আসা।কুসল বিনিময় করে টেলিফোন বুথে গিয়ে বুথে কার্ড ঢুকিয়ে দেশে ফোন করার চেষ্টা করছি।অনেক সময় নিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হঠাৎ ভিন দেশী হিন্দী ভাষার কিছু নগ্ন কথার শব্দ কানেএলো।এক ইন্ডিয়ান মহিলা ২৫/৩০ বছর হবে টেলিফোনে তার মেয়েকে মন্ধ কথা বলে শাসন করছে।কথগুলো এ রকম….
-আমি এখানে কাজ করি কি কাজ জানিস?পরপুরুষের সাথে রাত কাটাই দিন কাটাই আর সেই(বাজে শব্দ)টাকা দিয়ে তুমাকে পড়াই তুমি তাল পাবে কি করে…ইত্যাদি অকথ্য ভাবে মা তার মেয়ের সাথে টেলিফোনে কথা বলছে।
জীবন বাচাতে মানুষের থাকে কত রকমের পেশার ধান্ধা।
আমার সেই মুহুর্তে আর বাড়ীতে টেলিফোন করা হল না।পেটের জন্য মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়।পেশা হয়ে উঠে কারো কাছে ভাল কারো কাছে মন্দ।মহিলাটির সাথে আগে থেকে পরিচয় ছিল।সে আমাকে দাদা বলে ডাকত।আজ সুযোগ পেয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।এ পথে আসাটা ছিল তার স্বামীর নাটকীয়তা।ইন্ডিয়া কেরেলায় ছিল তার বাবা-দাদার নাম ডাক ওলা পরিবার।তার স্বামীর বংশের কোন পরিচয় নেই মেয়েটি যখন ক্লাশ নাইনে পড়ত তখন হতেই তার সাথে ভাব হয়।ছেলেটি দেখতে বেশ স্মার্ট।একদিন মেয়েটি তার বাবা মাকে উপেক্ষা করে ছেলেটির হাত ধরে রাতের আধারে সিনেমার কল্পকাহানীর মত স্বর্ন লংকার নিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে বিয়ে করে বিয়ের বছর খানেক সংসারে একটি ফুটফুলে মেয়ে সন্তান জম্ম নেয়।তার পর একদিন ঘটে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা।স্বামীর সাথে বের হন স্বামীর কোন এক আত্মীয়র বাড়ীতে ।সেই বাড়ীতে রেখে স্বামী কোথায় যেন চলে যায় সে আর ফিরে আসেনি।পরক্ষনে মেয়েটি বুঝতে পারে সে এক নিশিদ্ধ পল্লীতে বিক্রয় হয়ে গেছে।সেখান থেকে ঘটনাক্রমে একদিন আবার সে বিক্রয় হয় সিঙ্গাপুরের পার্টির কাছে।তার সন্তান বড় হচ্ছে তারই আশ্রিত এক বোনের বাড়ীতে।তার সন্তানের জন্য আজ যত কষ্ট।
চলবে…..
(প্রথম ছবিটি নিজ ড্রইং)
১৯টি মন্তব্য
খসড়া
অদ্ভুত ভাললাগায় ভরে গেল মন। চলুক।
মা মাটি দেশ
বিশেষ ধন্যবাদ (y)
মর্তুজা হাসান সৈকত
বাহ! বেশ লিখেছেন।
মা মাটি দেশ
শুভেচ্ছা রইল আমার লেখায় মন্তব্যের জন্য।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
শুন্য শুন্যালয়
ভাইরে কি কামডা করছিলেন , শুনে তো আমারই হাত পা কাঁপছিল … এরকম আর কইরেন না …
বরাবরের মতোই ভালো লাগা … (y)
মা মাটি দেশ
না বোন “নেড়া বেল তলা এক বারই যায়”পরবর্তীতে এরকম লাখ টাকার অফারও ফিরিয়ে দিয়েছি শুধু পাপ হবে জেনে।ধন্যবাদ সাথে থাার জন্য।
তন্দ্রা
ভালো কিন্তু ঐ রকম কামটা আর কইরেন না।
মা মাটি দেশ
না ,সেটা ছিল তৎক্ষনাট দুষ্টু বুদ্ধি।ধন্যবাদ।
শিশির কনা
দিন দিন আপনার লেখা বেশ শক্তিশালী হচ্ছে ভাই । ভালো লেগেছে খুব। -{@
মা মাটি দেশ
এর পর আসবে অতৃপ্ত জীবন…..ভালবাসা এর ৫ম পর্ব।ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।মন থেকে উৎসাহ দিলেন কিনা জানিনা তবে আমি কিন্তু বোন হৃদয় থেকে দিলাম -{@ -{@দুটো শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ।
নীলকন্ঠ জয়
ভুলেও ঐ কাম আর কইরেন না ভাই। 🙂
মা মাটি দেশ
নারে ভাই ওটা ছিল দুষ্টুবুদ্ধির কাজ।ধন্যবাদ
স্বপ্ন
ভালো লেগেছে খুব (y)
মা মাটি দেশ
(y) ধন্যবাদ।
মিথুন
বেশ গুছিয়ে লিখেছেন ভাইয়া. ভালো লাগলো.
মা মাটি দেশ
(y) (y) শুভেচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
ভালোই লেগেছে । বেশ লিখছেন আজকাল।
ছবি আপলোডের সময় ‘ কিছুই না ‘ তে ক্লিক করে আপলোড করবেন।
তাতে আপনার লিখতে সুবিধা হবে ।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ সমস্যা সমাধানে।