আসলে বেশ কিছুদিন যাবত কলমে লেখা আসছে না। সত্যি কথা হচ্ছে ব্যস্ততার কারণে লেখা হয়ে উঠছে না। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদ সামনে রেখে মনে পড়লো ঈদ কার্ড এর কথা।
জীবন চলার পথে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। আবার স্মৃতির উঠোনে বসে অতীতের জাবর কাটি। স্মৃতি রোমন্থন বার বার নিয়ে যায় কৈশোরের হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোতে।
ঈদ এবং ঈদকার্ড দুটো যেন একই সুতোয় বাঁধা। যখন ফোর বা ফাইভে পড়ি তখন ঈদ কার্ড তেমন ছিল কিনা মনে পড়ে না। তবে ভিউ কার্ডের প্রচলন ছিল খুব। বিশেষ করে তখনকার দিনের জনপ্রিয় নায়ক নায়িকাদের ছবি সম্বলিত ভিউ কার্ড পাওয়া যেত। আমাদের স্কুলের পাশে অনেক বইয়ের দোকান ছিল। সেখানে প্রচুর ভিউ কার্ড পাওয়া যেত। সুখের বিষয় আমার কখনো ভিউ কার্ড কেনা হয়নি। এর প্রথম কারণ ছিল সময়ের সাথে অর্থের লড়াই। দ্বিতীয় কারণ ছিল মাকে ভীষণ ভয় পেতাম। অযথা পয়সা নষ্ট করলে মার একটাও মাটিতে পড়তো না।
আমাদের সময় ঈদের মধ্যে লম্বা ছুটি পেতাম। রমজান শুরু হওয়ার আগেই আমাদের স্কুল ছুটি হয়ে যেত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়। ঈদের ছুটিতে আমাদের বান্ধবী জামিলা ডাকযোগে একটি ভিউ কার্ড পাঠিয়ে ছিল। সেটি ছিল জনপ্রিয় নায়ক জাফর ইকবালের পারিবারিক ছবির ভিউ কার্ড। তখনকার সে অনূভুতির কথা বলে বোঝানো যাবে না। অনেক দিন যাবত সেটি সংরক্ষিত ছিল। বাসা বদলের ফলে সেটি হারিয়ে গেছে। তার স্মৃতি টুকু আজও ছুঁয়ে যায়। এস এস সি র পর সেই বান্ধবীর সাথে আর যোগাযোগ হয় নি। জানি না কোথায় আছে, কেমন আছে।
ঈদ কার্ডের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ৯০ এর দশকে। যেন ঈদ কার্ড ছাড়া ঈদের পূর্ণতাই পেত না। নতুন জামা কাপড় কেনার সাথে ঈদ কার্ড কিনতেই হবে। পাড়ার অলিতে গলিতে বাহারি ঈদ কার্ডের পসরা বসতো। এর উদ্যোক্তা ছিল পাড়ার শিশু কিশোররা। তখন প্রযুক্তির প্রভাব ছিল না। তবে সকলের মাঝে ছিল এক সম্প্রীতির বন্ধন। কেউ কেউ ঈদ কার্ড নিজ হাতে তৈরি করে নিতো। জরি, চুমকি, কালার পেন দিয়ে নিজ মনের মতো করে শৈল্পিক রূপ দিতো। উৎসবের সৌরভ ছড়িয়ে পড়তো চারদিকে।
ঈদ কার্ড আদান প্রদান হয়েছে। কোন সখা দের সাথে নয়, সখি দের সাথে। কোন এক সময় বহু দুরের একজনকে ঈদ কার্ড পাঠিয়ে ছিলাম। সেও একখানা ঈদ কার্ড পাঠিয়ে ছিল মোর তরে। তবে এর সাথে ভালোবাসার কোন সংমিশ্রণ ছিল না। থাকলে পথ হয়তো অন্য রকম হতো।
পাড়া পড়শীর ঈদ কার্ডে ছন্দ লেখার দায়িত্ব পালন করতে হতো। যেন ওটা আমারই কাজ ছিল। এটা আনন্দ সহকারেই করতাম। ঈদ কার্ড দেয়ার সংখ্যা কম হলেও প্রাপ্তি প্রচুর। স্কুলে চাকরি করার সুবাদে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রচুর ঈদ কার্ড পেতাম। যার প্রত্যেকটির সাথে জড়িয়ে ছিল শিশু মনের নিষ্পাপ ভালবাসা। মনে হচ্ছে এইতো সেদিনও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঈদ কার্ড পেয়েছি। হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল তা। এখন মোবাইলে ঈদ মোবারক আসে। সেই ভালোবাসার সুবাস আসে না। মোবাইল নামক যন্ত্র টি কি সব কিছু কেড়ে নিল!
২টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
ঈদ এবং উৎসব পর্বগুলোর ভিউকার্ড/ কার্ড নিয়ে আমি লিখেছিলাম ৪/৫ বছর আগে।
গেছে যে দিন!
কেবলই স্মৃতির ভারা রেখে
গেছে এগিয়ে।
আসে যেসব সময়ের ফোঁড়!
শুধুই গেঁথে যেতে থাকে যত
পুরোনোকে আরো বেশি
দহনে রাখতে মনে
হালিমা আক্তার
চমৎকার অণু কবিতা। ফেলে আসা দিন গুলো বেশি মনে পড়ে। ঈদ কার্ড নিয়ে আপনার লেখা ব্লগে থাকলে সময় করে পড়ে নিবো ইন শাহ আল্লাহ। ঈদ মুবারক।