
মানুষ হতাশ হয় কখন? কষ্ট, যন্ত্রণা এসবই বা কখন আসে? প্রিয় কোথাও গভীর চোট লেগে গেলে। কিংবা মিথ্যেটাকে মিথ্যে জেনেও মেনে নিলে। আমার সেরকম চোট লাগলো।
আমার কেবলই মনে হচ্ছিল কেউ চোখের সামনে হঠাৎ করে প্রিয় কিছুতে ধারালো কিছু বসিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। আমি খুব চেষ্টা করছি ছোটবেলার মতো কাদামাটি দিয়ে সেটার রক্ত বন্ধ করার কিন্তু তা মোটেও হচ্ছে না। পুস্পিতা আমার এতো যত্নের এতোদিন বুঝিনি, আজ বুঝলাম। অঝোরে ভেতরটাতে রক্তের বন্যা বইছে। মুহুর্তে হাসি মিলিয়ে চোখমুখ কেমন ছাই রঙ্গা হয়ে গেল।
অন্যদিন কোথাও থেকে ফেরার পথে আমরা দুজন অনেক গল্প করতে করতে আসি। আজ আমি কিছুই বলছি না এটাতে পুস্পিতার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে অনেক ইন্টেলিজেন্ট বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে নিশ্চিন্তে পান চিবোতে চিবোতে চলে এলো।
কফি শপের সামনে রিকশা থামিয়ে বললো, তার ভীষন কফির তেষ্টা পেয়েছে। বুঝলাম, এটাও স্বাভাবিক করার চেষ্টা। আমার কফি তেষ্টার বদলে তখন ভীষন বমি পাচ্ছিল। আমি নিশ্চুপ কফি খেয়ে বাসায় ফিরে হরহর করে বমি করে বেসিন ভাসিয়ে ফেললাম।
এরপর প্রায় বিকেলে আমাদের চা- কফি, বার্গার- ফুচকার আয়েশীপনায় সেই ভদ্রলোক ঘোষণা ছাড়াই এসে হাজির হন। আমি বুঝতে পারি পুস্পিতা হয়তো তাকে ডেকে নেয়। আমি যথেষ্ট সহজ হবার চেষ্টা করি। মনে মনে যুদ্ধ করি কিন্তু পারি না। চুপচাপ থেকে পুস্পিতাকে অপছন্দের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করি। আমার ধারনা, সে বুঝতে পেরেও ভদ্রলোককে আমি যেন মেনে নেই সে চেষ্টাই চালাচ্ছে। কথায় কথায় তার প্রশংসায় ভাসিয়ে; প্রেমে পড়লে মানুষ যেমন বেহায়া হয়, সেরকম বেহায়ামী করতে লাগলো।
বড় বোন হবার দায়িত্ব আমাকে বারবার খোঁচাচ্ছিল। এ সম্পর্কের মানে তাড়া করছিল। আমরা ভালো বন্ধু তার মানে এই নয় যে তার অন্যায় আবদার, হেয়ালীপনায় সায় দিবো। একজন ভালো বন্ধু সবসময় ভালো পরামর্শই দিবে। কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
কেমন করে বোনকে বোঝাবো- কিছু মানুষ শেয়ালের মতো ওত পেতে থাকে খপ করে গিলে ফেলবার আশায়। আমরা ফাঁদে পা দিতেই জীবনের সমস্ত সোনা রঙ ছিনিয়ে নিয়ে হাওয়া হয়। তারপর অনেক চাইলেও জীবনের রঙ আর ফেরত আসে না।
তাছাড়া পুস্পিতা ভীষন জেদী আর একরোখা। অনেক সময় ভুল করলেও সে জেদের কারনে সেটাই স্টাবলিস্ট করতে চায়, মোটেও সে ভুল করেনি। তবুও একদিন ফুচকা খেতে খেতে বলেই ফেললাম,
– পুস্পিতা এ সম্পর্কের মানে কি? কেমন করে হলো এসব। ইনি তো তোমাকে সংসার, বিয়ে কিছুই দিতে পারবেন না।
– হয়ে গেছে আপু! প্লিজ তুমি একটু হেল্প করো, আমি তাকে ছাড়তে চাই না। সারাজীবন এমন করেই পাশে থাকতে চাই।
– তুমি কি পাগল হয়েছ? একসময় ওই লোকের বউ জানবে। সংসারী লোকের রশিতে টান পড়লে সুরসুর করে সংসারে ফেরত যায়। আর তুমি জানো না সে মেয়ে এলাকার এমপির বোনের মেয়ে । তার কতো ক্ষমতা। তখন তোমার কি হবে? কলেজে জানাজানি হলে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
– আমার কিছু করার নেই! আর তেমন কিছুই হবে না। তুমি অযথাই ভাবছো। আর সে আমাকে অনেক ভালোবাসে।
আমার ভীষন রাগ হলো। কারন অন্যায় মাটি চাপা দিয়েও রাখা যায় না। আমি তাকে আবারও বোঝালাম-
তোমার ব্যক্তিত্বের সাথে এসব যায় না। ছি! তুমি এতোটা নিচে নেমে গেছ। আমার তো ঘৃনা হচ্ছে। আন্টিমনি জানবে, আঙ্কেল জানবে। আঙ্কেল জানলে তো বাঁচবে না বোন। এইসব বন্ধ কর।
ফুচকা খাওয়া শেষ করে সে বেড়িয়ে গেল। বলে গেল আমি যেন তাকে আর কোনদিন ফোন না দেই। আমার মতো রান্নার রেসিপি বিক্রি করে খাওয়া বোনের সম্মানহানী সে করতে চায় না। আর আমি নিজেও ধেয়া তুলসি পাতা না। জীবনে অনেক নখরামী করেছি। এখন বয়স হয়েছে বলে সন্ন্যাসী সাজছি। চান্স পেলে এখনও করবো এসব নানা কথা।
প্রথমে ভাবলাম, হয়তো সিরিয়াস কিছু নয়। ঠিকই ফোন দিবে, আবার ডাকবে। কিন্তু না পুস্পিতা আর ফোন দেয় নি। গত তিনমাস তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমি আশেপাশে থেকে তার খোঁজ নেই কিন্তু তাকে সংকোচে ফোন দেই না। আর তার বিশ্বস্ব ভদ্রলোকের সবচেয়ে সিক্রেট বিষয়টিও তাকে বলা হয়নি। কারন সে ভদ্রলোকের প্রেমে এখন হাবুডুবু, খাবি খাচ্ছিল। তাকে বললেও বিশ্বাস করতো না। বরং আমাকেই উল্টো ভুল বুঝতো।
চলবে——-
৭টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
মানুষ প্রিয় কোথাও চোট লাগলেই কষ্ট পায় সত্যি কথা। আপনার গল্পের একটা টুইস্ট থাকে যেটার আগ্রহে নেক্সট পর্ব পড়ার জন্য অধীর অপেক্ষা করে পাঠকরা হঠাৎ এসে ছেড়ে দেন ব্যাপারটা দারুন যা পাঠকরা দারুন উপভোগ করে। ভালোবাসা বলে করে হিসেব করে হয় না এটা মনের ব্যাপার বলেইতো শত বাঁধা থাকলেও ঐ একজনকেই ভালো লাগে, ভালোবাসে।পুস্পিরও হয়ত তাই হয়েছে। তবুও অপেক্ষায় থাকলাম বাকিটা জানার জন্য।
শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
থাকুন অপেক্ষায়, আসছি।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বেপথের পথিকের কাছে সৎ পরামর্শ তিতাই হয়!
এহেন সম্পর্কের পরিনাম কখনো ভালো হয় না
জানি না শেষ পর্যন্ত এর কি আছে কপালে।
শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা ভাই 🌹
হালিম নজরুল
সময়ের অভাবে পুরোটা পড়তে পারলাম না। পরে এক ফাঁকে পড়ে মন্তব্য করব।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আচ্ছা পড়লেই হবে। অশেষ শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা 🌹
হালিমা আক্তার
ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ভালো মন্দ বিচার করার বোধ হারিয়ে ফেলে বলেই পরে আফসোস করতে হয়।