
বহুদিন পর সিনেমা দেখলাম। “হাওয়া” আমাদের “স্কয়ার” পরিবারের প্রোডাকশন বলে গর্ববোধ করতেই পারি। SKS TOWER-এর STAR CINEPLEX -এ পুরো সময়টা উপভোগ করেছি সবাই মিলে।
“হাওয়া”য় নানাদিক থেকে পরিচালক তাঁর দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।আমার ইন্টারমিডিয়েটে পড়া Samuel Taylor Coleridge-এর গল্প Ancient Mariner-এর সাথে কিছুটা মিল থাকলেও ছোটো ছোটো অনেক জায়গাতে পরিচালক তার মৌলিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এর একটি জায়গা হলো শালিক পাখির উপস্থিতি ও পরিণতি। তাকে ছেড়ে দেওয়া ও ফিরে আসা নৌকার বেঁচে থাকা দুই মাঝির ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। নৌকার জেলেদের আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাহলে পাখিটি কিভাবে ফিরবে? তাকে পুরোপুরি ইগনোর করাটা খুব বোকামি হতো। সুতরাং তার পরিণতি যেভাবে পরিচালক নির্ধারণ করেছেন, সেখানেই তার শিল্পের মুনশিয়ানা। নৌকার প্রধান জেলে পাখিটি ছেড়ে দেওয়ায় তাকে মানবিক বলে মনে হয়েছে। কিন্তু যে মানুষটি নৌকার একা নারীকে রেপ করতে যায়, যে একের পর এক খুন করে, যার পূর্ব পরিচয় খুনি-ডাকাত, সে পাখিটিকে বাঁচিয়ে রাখার দায় নেবে, এমনটা ভাবা বোধ হয় বোকামি হবে। লোকটার ভেতর ততক্ষণে আর কোনো মানবিক বোধ অবশিষ্ট থাকে না।গভীর সমুদ্রে ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে ভাসতে চাইবে, খাবারযোগ্য সামনে যা পাবে তাই খাবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘হাওয়া’ সিনেমায় প্রধান মাঝির শালিকের মাংস খাওয়ার ঘটনায় পাখি হত্যাকে বা পাখির মাংস খাওয়াকে ‘উৎসাহিত’ করা হচ্ছে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। শুনলাম পরিবেশবাদীরা নাকি এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আবার কে যেন বলল সিনেমাটা নিয়ে মামলাও হয়েছে। এই দৃশ্যটি দেখানোয় বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে ব্যক্তি পাখিটিকে পুড়িয়ে খাচ্ছে, সে কিন্তু নায়িকাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছে, কয়েকটা খুনও করে ফেলেছে। খুন করাও নিশ্চয় আইন লঙ্ঘনের সামিল। যে লোকটি ধর্ষণ করতে যাচ্ছে, খুন করছে, সে পাখির মাংস খাচ্ছে, ফলে এই খুনির কাছ থেকে মানুষ পাখির মাংস খাওয়াতে অনুপ্রাণিত হবে ভাবাটা কতটা যৌক্তিক? তবে কি সিনেমার ভিলেনগুলো যেভাবে খুন-ধর্ষণ বা মাত্রাতিরিক্ত অন্যায় করে সেগুলো দেখে আমরা সেগুলো করার জন্য অনুপ্রাণিত হই? সেইসব পরিচালক বা সিনেমার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে? ফিকশনে আইন লঙ্ঘনের বিষয় খুঁজতে গেলে কত উপন্যাস ও ঔপন্যাসিকের বা গল্পকারের বিরুদ্ধে যে মামলা করা যাবে তার ইয়ত্তা নেই। সুতরাং অযথা তরুণ এই নির্মাতাকে কোনো ভোগান্তির মধ্যে ফেলা আদৌ যৌক্তিক মনে হচ্ছে না।
সিনেমার কন্টেন্ট,বিন্যাস, ডায়ালগ, বডি ল্যাংগুয়েজ, লাইটিং এবং সর্বোপরি অভিনয় অসাধারণ মনে হয়েছে। পরিশেষে ভিন্নধারা চলচ্চিত্র নির্মাণের যে যাত্রা শুরু হয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাতেই পারি।
৬টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
’হাওয়া’ দেখার আকাঙ্খা বাড়িয়ে দিলেন!
মুগ্ধতা রাখলাম অপরিসীম!
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিম নজরুল
শুভকামনা রইল ভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমাদের দেশে ভালো কিছু হলেই তার পেছনে উঠে পরে লাগে কেন লোকজন বুঝিনা। এইজন্যই কিছু হয় না। অত্যাচারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
শুভকামনা ভাই 🌹
হালিম নজরুল
তবুও এগিয়ে যেতে হবে আমাদেরকে।
আলমগীর সরকার লিটন
আপনার কথায় শুনে মনে হয় সিনেমাটা দেখা লাগে
অনেক শুভেচ্ছা রইল কবি হালিম দা
হালিম নজরুল
ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাই।