
আপু লেখা কি ছেড়ে দিলেন? অনেকদিন কিছু পাইনা।
ম্যাম গল্প চাই? গল্প পড়ব!
কি ব্যাপার মা বই বের করে হাপায় গেলা?
কি রে দোস্ত বলছিলাম তোর আয়ু শ্যাষ!!!!
বুড়ি লেখায় নিয়মিত হ?
বুড়ির গলা কাপে, হাত কাপে, মন কাপে। আনচান, টনটন, পনপন করে কারন ব্লগ খালি যায়, ফেবু খালি যায়,,,,,পাঠক হারিয়ে যায়,,,,
কুফা বেগম সবসময় লেগে থাকে বুড়ির পিছে। শখের ফ্রিজের সার্কিট নষ্ট, শখের ফোন নষ্ট , ল্যাপটপের বয়স আটবছর সেও টাইপ হয় না। সব ঈদের আগেই কেন হতে হবে? ওই কুফা বেগমের মন রাখতে?
বুড়ি নিজের জন্য ঈদের কেনাকাটা কোনকালেই করে না। এদিকে বন্ধু বান্ধবসহ যারা গিফট পাঠিয়েছে তাদের জন্যও কেনা হয়নি। কারণ মধ্যবিত্তের সর্দিময় জীবন। বাড়ি, ঘর,জমি জিরাত সব করো আবার স্ট্যাটাস মেইনটেইন কর। চাইলেই লাগামহীন জীবন যাপন করা যায় না। নুন আনতে যেন পান্তা ফুরোয়।
এদিকে আমেনা বুয়া কাজের বেতন পায়,খাবার পায়, শাড়ি পায়। ছেলের বেতন পায়,নাতির বেতন পায়। স্লিপের চাল পায়,বৃদ্ধ ভাতা পায়,সরকারের লাইনে দাঁড়িয়ে কমদামে তেল- ডাল পায়। ঈদের পর তার ঘরে বেশ কিছু টাকা জমা হয়। এমন জমা তার ঘরে প্রতি মাসেই হয়। তবুও তাকেই গরীব বলা হয়।
টাকার জন্য বুড়ি রমজানে নাক ডুবিয়ে খাতা কাটে, পরীক্ষায় ডিউটি দেয়। শখ পুরন করতে হলে বাড়তি ইনকাম তো দরকার? প্রয়োজনকেই মধ্যবিত্তের শখ বলা হয়।
বুড়ির জামাই ছমাস থেকে বৌকে একটা ফোন দেবার কথা বলেও দেন না। ফোনের কথায় তেনার মাথা গরম। পেট চলে না, কিসের আবার শখের লেখা লেখি। বেনিফিটেড শখই পালতে হয়। তাই তিনি জমি না কিনলে টাকা দেন না। তিনি শাশুড়ির কথায় চলেন। বুড়ির হাত খোলা, তাকে বিশ্বাস করেন না।
কদিন আগে তিনি বোধহয় ভিমরতিতে ধরে বুড়িকে ফোন দেখতে বলেছেন। বুড়ি নেটে গিয়ে দেখে এসেছে। iPhone pro-13 বাজারে নেমেছে।
-বউ, ফোন দেখেছ?
-হ্যাঁ, তো!
-দাম!
-বেশি না। মাত্র ১৩৯০০০ মতো!
-কি বল্লা( গলায় তার কথা আটকে গেল)। আর কিছু চোখে পড়েনি। দেখ এ কথা আর দু’বার বলোনা। বেতন কত পাই আর কতজন সামলাতে হয় জানো। বাবা,মা বেকার ভাই। তুমিও তো কামাই কর! নিজের টাকায় শখের ফোন কেন গিয়ে। এমনি গরমে নদীতে পানি মাপছি, তার উপর এত টাকা টাকা। অল্পে পানিতে পরে যেতাম।
-সাঁতার তো জানেন, সমস্যা কি? সহকারীরা টেনে তুলবে। (ফোন কেটে দিলেন, ঘটাস্)
বুড়ি নিজেও কামাই করে, করলে কি হবে ছোট বেতনের শখ বেশি। রমজানে গরীব আত্নীয়, পরশী, কাজের মানুষ দুচারঘরকে বাজার করে দেয়া, যাকাতের কাপড় দেয়া, সন্তান তুল্য যাদের বুড়ি পড়ার খরচ দেয় তাদেরও টুকটাক কেনাকাটায় তার সব টাকা শ্যাষ!
বুড়ির জামাই বলে, গরীবের ঘোড়া রোগ থাকতে নেই। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।
কি জানি কার নাম? আপনারা মুমিনরা বলেন আখিরাত সারাজীবনের, দুনিয়া দুদিনের। যদি মরে গিয়ে দ্যাখেন সব ফক্কা ফক্কা তাহলে তো দুটোই গেল। মুমিনদের আবার দুনিয়ার এতো সম্পদ করে লাভ কি?
-ছ্যা ছ্যা ছ্যা নাস্তিক বুড়ি। এসব বলতে নেই!!!যাও নামাজ পড়।
-বুড়ি চিমসে গিয়ে জায়নামাজে বসে। সেখানেও মন ফোন চায়। মন যে সবসময়, সব বয়সে বাচ্চাই থাকে। সে জায়নামাজ ভিজায়- ‘ হে মালিক, মুঝে এক ফোন দিলাদো!!!‘
মালিক বলেন- ‘নাফরমান বান্দি তেরা সুকুনছে জিনেকা কৈ হক নেহি! তেরা সাব কুছ ছিন লুঙ্গা ম্যায়!!!‘
এক রাতে বুড়ির মাথায় ফোন কেনার বুদ্ধি আসে। সোজা আঙ্গুলে ঘী না উঠলে বাঁকা তো করতেই হবে। সে সারারাত জেগে বিরাট লিষ্ট করে ফেলে। কারণ আর সহ্য করা যাবে না ফেমিনিয়ন মারিং কাটিং এ নাম দিতে হবে। যে যেমন তাকে তেমন না দেখালে হবেই না।
বুড়ি চোখের সমস্যা, ডাঃ এর কাছে যাবে। জি, কে আফজাল খানের নাম শুনে রোগীর সাথে কেউ যেতে চায় না। কারন তিনি ভোর রাত পর্যন্ত রোগী দ্যাখেন। চোখের মতো সিরিয়াস জিনিস ঘন্টা খানেক তো লাগবেই তাঁর। বুড়ির জামাই ও এ ডাঃ এর নাম শুনলে দশহাত দুরে পালায়।
এ সুযোগে বুড়ি বিল করে ফেলল। রমজান মাসে যেহেতু লোকের বাসায় থাকা যাবে না। তো হোটেল-মোটেল সহ বেশ পেট মোটা একাউন্ট হল।
জামাই চিমসে কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় পাঠাচ্ছি। কারণ বিয়ে করেছে আধা কানা বউ। চোখের বাকিটুকু গেলে সুস্বাদু রান্না করে খাওয়াবে কে?
বুড়ি বাজারে মাছের আড়তের পাশ দিয়ে যেতে যেতে জামাইকে ফোন দেয়- যা সুন্দর একটা মাছ। ধরলা নদীর হবে বোধহয়!
-কত কেজি? কত দাম!
-১০০০ টাকা কেজি, ১০ কেজি হবে।
জামাই খাবার কিনতে কার্পণ্য করেন না, টাকা পাঠান বিকাশে। বুড়ি অবশ্য মাছের কাটা বাচতে পারে না। তাই পাবদা মাছই তার পছন্দ। সে তরমুজ আর পাবদা মাছ কিনে বাড়ি ফেরে।
-বাজার করেছ ঠিকঠাক!
-হ্যাঁ তো! তরমুজের ভীষন দাম। দুটো নিলাম। আরও নিতে হবে। আপনিও সাথে সাথে রাখবেন, যা গরম পরেছে।
-আচ্ছা রাখব। আর কাল তরমুজ কেনার টাকা পাঠাব।
-থ্যাংকু!!!! বুড়ির বিকাশের পেট মোটা হতে থাকে!
উফ্ফ গরমে জীবন শেষ! রমজানে ফ্যানটাও নষ্ট। কোন ফ্যান কত নম্বর ফ্যান এটা কি বুড়ির জামাই জানে, না খবর তার আছে? সারাবছর থাকে নদীতে। এই রান্না ঘরের এক ফ্যানের টাকা সে আরো কয়েকবার নিয়েছে। অন্যখাতে সেটা বারবারই খরচ হয়ে যায়। গরমেই রান্না চলে।
-আচছা ফ্যানের টাকা কাল পাঠাব! কত লাগবে?
-(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) কতো যে লাগে পাঠান কিছু! ভাই বোকা পুরুষ তিনহাজার টাকা পাঠায়! তাও রান্না ঘরের ফ্যান।ভালো ফ্যানই তো অনেক কমেই পাওয়া যায়!
বুড়ির বাকি সব লিষ্ট হল। গ্রামের বাড়ির পুকুরে মাছ ছাড়তে হবে, সামনে বৃষ্টি, নেট দিয়ে মাছের খামার ঘিরে দিতে হবে, লাল একটা গরু পেয়েছে সেটা কিনতে হবে, গরুর খাদ্য কিনতে হবে, জমিতে অতিবৃষ্টির ওষুধ দিতে হবে এ রকম ডজনখানেক তালিকা। জামাই কিন্তু কোনটারই দাম জানেন না। সামান্য টেকনিকে মিথ্যা এড়িয়ে বললেই হবে। বিকাশের ব্যালান্সে ‘ বুড়ির ইতনি খুশি ইতনি খুশি আজতাক কাভি নেহি হুয়া- এমন ভাব। বুড়ির মন ফুরুং- ফারুং। অবশেষে,,,,
অবশেষ বলে জীবনে কিছু নেই। জীবন খুবই ছোট সেখানে ‘ লুটানে অর লুটনে ম্যায় হাম কই কসরত নেহি ছোড় ছ্যাকতে হ্যায়।‘
অবশেষ নাই কেঠায় কয়। পরিবার – আত্মীয় মিলে হাফ ডজন করোনা বেটির করোনা বাবু জন্ম নিয়েছে। খোঁজ না নিয়ে ঢুকলেই বিপদ! এদিকে শশুরবাড়ি সহ অনেক কেনাকাটা বাকি। বুড়ি ভাবছে বিকাশের টাকাকটা নিয়ে সুখী মানুষের পোশাক পরে কোথাও যাওয়া যায় কিনা?
কারন বুড়ির জামাই আজই জানিয়েছেন তার কার্ড ফাঁকা। তাই তিনি কোন ঈদের আত্মীয় খাওয়ার বাজার করতে পারবেন না। তার মানে বিকাশে জমানো টাকা দিয়ে বাজার করতে হবে।
তো ভাই /ভাবীরা টেনশান লেনেকা কৈ বাত নেহি! বুড়ি হাল ছাড়েনি, জীবন হাল ছেড়ে দেবার জন্য নয়। সামান্য দোয়া করতে থাকুন। হবে ইনশাআল্লাহ!!!!
ছবি – সেটাও ধার করা।
৮টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর এক রমকথা রুকু আপু ভাল থাকবেন
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই।
ফয়জুল মহী
আসলে মধ্যবিত্ত তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছে। পরিবারের শখ পূরণ অনেক অনেক কষ্টকর
রোকসানা খন্দকার রুকু
সঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ ভাই।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সুন্দর গল্প!
রম্য কথণে মধ্যবিত্তের জীবনবোধ
চলমান সময়ের নিষ্ঠুরতা, মিলেমিশে একাকার।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
মধ্যবিত্ত মানেই বিপদ। ধন্যবাদ ভাই।
হালিমা আক্তার
ফোন আর কেনা হলো না। মধ্যবিত্তের জীবন থেকে এভাবেই প্রয়োজনীয় শখ গুলো হারিয়ে যায়। উপভোগ্য রম্য রচনা। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কেনা হলো না। তবে চেষ্টা অব্যহত💜💜