
প্রতিটি শিশু প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয়। পারিবার থেকে সহযোগিতা পেলেই শিশুটির প্রতিভা বিকশিত হয়। ইহাই চিরন্তন সত্য। যদি শিশুর প্রতিভার প্রতি বাবা-মা নজর রাখতে পারেন তবেই সেই শিশুটি সমাজে একদিন আলোকিত মানুষ হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিজেকে অংশীদার করতে পারে। প্রতিভার পাশাপাশি কিছু কিছু মানুষ অসাধারণ মেধার অধিকারী হয়ে থাকে। আজ এমন একজন মেধাবী মানুষের গল্প বলছি।
কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া শিশুটি কুমিল্লা মডার্ণ স্কুলে প্রাইমারী শিক্ষা শেষে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এস,এস,সি পাশ করে ভর্তি হোন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। সফলতার সহিত এইচ,এস,সি পাশ করে চলে আসেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (BAU) ৮৭ ব্যাচের ছাত্র আ,ফ,ম জামাল উদ্দিন “কৃষি অনুষদ” থেকে অনার্স ও মাষ্টার্স পর্ব শেষ করে তিন বছর একটি এন,জি,ও তে চাকুরী করেন। ১৯৯৭ সালে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে পিএইডি’র উদ্দেশ্য সস্ত্রীক জাপান চলে যান। জাপানে তাকে আবার এম,এস করতে হয়। সফলতার সঙ্গে পি,এইচ,ডি শেষ করে ২০০৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। ক্যারিয়ার গঠনের প্রচুর সযোগ থাকা সত্বেও দেশে কোন চাকুরীর ব্যাবস্থা না করেই দেশের টানে প্রান্তিক কৃষকের লাভের চিন্তায় তিনি বিদেশের লোভ জলাঞ্জলী দেন।
দেশে আসার পর শুরু হয় তাঁর নতুন যুদ্ধ। একটি চাকুরীর আশায় প্রতিনিয়ত তাঁকে ঘুরতে হয় সরকারী বিভিন্ন । কৃষি সংলিষ্ট বিভিন্ন কৃষি দপ্তরে ধর্না দিয়েও যখন চাকুরীর কোন ব্যাবস্থা হচ্ছে না তখন তিনি হতাশায় পড়েন। একদিন চলে যান খামার বাড়িতে। একদিন হুট করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে দেশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। একজনকে তাঁর সিভি দিয়ে বলেন যে কোন একটা চাকুরী আমার খুব প্রয়োজন। প্রথম জন তাঁর সিভিটি ১০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে দেখে পাশে থাকা একজন ম্যাডামকে দিয়ে বলেন, আপা দেখেন তো ছেলেটার জন্য কিছু করা যায় কিনা। এমন একটি সিভি আমি প্রথম দেখলাম। ম্যাডাম সিভিটি দেখে তাঁকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বললেন আগামীকাল সকালে গুলশানে দেখা করতে। পরদিন সকালে ছুটে যান গুলশানে। ভদ্রলোকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁকে একটা চাকুরীর ব্যাবস্থা করে দেন। দেশের মাটিতে শুরু হলো তাঁর জীবনের আরেক যুদ্ধ। বর্তমানে তিনি শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্বের অধ্যাপক।
অধ্যপনার পাশাপাশি তিনি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল ফসলের উদ্ভাবক। তার মধ্যে গোল্ডেন পূর্না বা সাউ চেরী টমেটো ও সাউ সুইট পটেটো-২ বা অরেঞ্জ স্টার অন্যতম। এই জাত দুটি দেশের বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধিত। সবই তিনি তার পেশার স্থান শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নামকরণ করেছেন।
জামাল উদ্দিন হর্টিকালচার নিয়েই সময় কাটান না। তিনি দেশের কথা ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভাবেন। দেশের প্রতিটি মানুষ কি করে ভালো থাকবে তার কথা ভাবেন। প্রতিটি পথকলি শিশুর মুখে হাসি ফোঁটাতে চান। বছরের একটি দিন যেন বস্তিবাসীরা একবেলা একটু ভালো খাবার খেতে পারেন ভালো জামা-কাপড় পড়তে পারেন সেই চিন্তা করেন। তিনি চিন্তা করেন রাজধানী সহ দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলার মানুষ কিভাবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারেন। কি ভাবে কার্বনের হার কমিয়ে অক্সিজেন বৃদ্ধি করা যায়। সেই ভাবনা থেকে তিনি গড়ে তুলেন Green Bangladesh – A Society for Agriculture and Environmental Innovation
আমরা যারা ঢাকা শহরে ছাদকৃষি বা ছাদবাগান করি তাঁদের প্রান ড. আ,ফ,ম জামাল উদ্দিন। পরিত্যাক্ত ছাদকে কি ভাবে কৃষি কাজে ব্যাবহার করা যায় সেই লক্ষে তিনি 90 minutes schooling শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাদবাগানীরা এৎববহ ইধহমষধফবংয এর ব্যানারে সমবেত হোন। বিশ^বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ ভিসি মহোদয় এৎববহ ইধহমষধফবংয এর জন্য উম্মুক্ত করে দেন। প্রতি শুক্রবার তিনি ছাদকৃষির বিভিন্ন সমস্যা ও রোগবালাই নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দেন। মানুষকে ছাদকৃষিতে আগ্রহী করে তুলেন। বিনা পয়সায় গাছ ও বীজ সদস্যদের মাঝে বিতরন করেন। করোনাকালে সশরীরে উপস্থিতি বন্ধ হয়ে গেলে গত ১৯ মাস যাবত তিনি অনলাইনলাইভের মাধ্যমে 90 minutes schooling এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
গ্রীন বাংলাদেশ শুধু ছাদকৃষি নিয়ে কাজ করে না। হতদরিদ্রের মাঝ শীত বস্ত্র থেকে শুরু করে ঈদের দিনে পথকলি শিশুদের ভালো জামা-কাপড় ও খাবারের ব্যাবস্থাও করে। দুঃস্থ ও অসহায়দের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে। বজ্রপাত থেকে কিভাবে মানুষকে রক্ষা করা যায় সেই ভাবনাও কাজ করে তাঁর মাঝে। সারা দেশে তালগাছ রোপনের মাধ্যমে এই দূর্যোগ থেকে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য তিনি কয়েক হাজার তালের বীজ সংগ্রহ করে চারা করেছেন। যা গ্রীণ বাংলাদেশের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। সর্বদা এমন আরো নানান ধরনের জনহিতকর কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখেন । তিনি বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক অক্সিজেন প্রাপ্তির জন্য ছাদকৃষিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন । গোটা দেশকে সবুজায়ন করাই তার লক্ষ্য।
প্রতিটি মানুষের জীবনে সুখ ও কষ্ট থাকে। উনার ভিতরেও কষ্ট আছে। সব কষ্টগুলোকে তিনি হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছেন মানুষের জন্য। তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যতটা প্রিয় ততোটাই প্রিয় সাধারন মানুষের কাছেও।
দুই সন্তানের জনক এই গুণী মানুষটি কাজের মাধ্যমে সবার কাছে বেঁচে থাকুক আমৃত্যু এই দোয়াই হোক সবার। স্যালুট ড. আ,ফ,ম জামাল উদ্দিন আপনাকে।
ভালো থাকুন। সুস্থ্য থাকুন এই দোয়াই করি।
৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
মহান রাব্বুল আলামিন আরও অনেক অনেক সফল কাজ করে দেশের কাজ করার সুবর্ন সুজোগ দেবেন , ইনশাল্লাহ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তার আরো উত্তরোত্তর সাফল্য ও সম্মান কামনা করছি। এমন দেশপ্রেমিক আমাদের দেশে আরো দরকার। দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি , পরিবেশের সুস্থতা নিয়ে সবাই ভাবে না। তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ তাকে নিয়ে লিখবার জন্য। অনেক দিন পর সোনেলায় আপনার পদধূলি পেলাম। শুভ বিজয়া
অনন্য অর্ণব
আমি একটা লাইনেই আটকে গেলাম, একজন ওভার ট্যালেন্ট মানুষ যিনি শিল্পোন্নত দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী তিনি মাটির টানে যখন দেশে ফিরে আসলেন তখন একটা চাকরির জন্যে তাঁকে দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিতে হয়েছে।
এজন্যেই বোধহয় মনীষী বলেছেন “যে দেশে জ্ঞানের কদর নেই, সে দেশে জ্ঞানীর জন্ম হয় না”।
হালিমা আক্তার
দেশের জন্য আমরা সবাই যদি এমন করে ভাবতাম ও কাজ করতাম , তাহলে দেশ অনেক দুর এগিয়ে যেত। আল্লাহ উনাকে নেক হায়াত দান করুন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর পোস্টের জন্য। শুভ কামনা রইলো
আলমগীর সরকার লিটন
স্যালুট জানাই শামীম দা কেমন আছেন বেশ কয়েকদিন পর
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
একজন মানবিক মানুষের বিষয়ে জানতে পেরে ভালোই লাগছে।
মনির হোসেন মমি
মানুষের মানবীয় গুণ না থাকলে সে পরিপূর্ণ মানুষ। মহতি মানুষটির মহতি কর্মগুলো আরো সফতা পাক।
স্যালুট।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এজন্যই তো গুণীজনেরা দেশে থাকতে চান না। তাদের কদর করা হয় না বলেই। বিদেশের মাটিতে গিয়ে তারা অন্যদেশের সফলতায় সহযোগিতা করেন।
শুভ কামনা এমন মানুষদের জন্য।।।
আপনি অনেকদিন পর সুন্দর বিষয় নিয়ে আসলেন। আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।