
প্রচন্ড বৃষ্টিতে ছাঁতা মাথায় ফার্মগেইট ওভার ব্রীজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুঃখবিলাসী। নামটি যেমন অদ্ভুত মেয়েটিও তেমন অদ্ভুত! দেখতে এতটাই সুন্দরী যে এই সুন্দর ব্যাপারটাই আজ তার জীবনের রুপরেখা পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
তখন প্রায় রাত ২ টা। এই মাঝরাতে দুঃখবিলাসী আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে কাউকে খুজেছে সে! পড়নে টকটকে লাল শাড়ী,শাড়ীর আচল কোমরে বাঁধা, এতে করে নাভীপর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক,চোখে গাঢ় করে কাজল দেয়া আর চুলগুলো এলোমেলোভাবে পিঠের কাছে বেনীতে লেপ্টে আছে।
এই মেয়েটির নামই দুঃখবিলাসী। এই মাঝরাতে সে মনে হয় দুঃখ খুঁজতেই বের হয়েছে। হতেও পারে!
আবির নিরবে সিগারেটে টান দিচ্ছে আর ভাবছে এতকিছু আছে অথচ তাকে প্রায় এভাবে রাতের বেলা রাস্তায় বের হতে হয় কেন??? রাস্তায় কি সুখ আছে?.? নিয়তি এমন কেন???নাকি,,,,???আবির কি এই জীবনটা ডিজার্ভ করে???
ইস্কুজ মিস,,,,,
পিছন ফিরে আবির,,,,,
অনেকটা অবাক হয়ে,,,,,এত সুন্দরী মেয়ে এতরাতে এই মাঝরাস্তায়,,,,,!!!!
খানিক স্বাভাবিক হয়ে জ্বি আমাকে???
হ, আপনারে কইতাছি,,,
হুম বলেন,,,
যাবেন???
কি ? কই যাবো?
ভাবখানা এমন যে, কিছুই বোঝেন না? কন যাইবেন কিনা? আরেকটু দেরী হলে দর আরও বাড়বে,কাস্টোমার আরও আসবো,হেইজন্যই কইতাছি যাইবেন নাকি?
আবিরঃ হু,হ্যা করে কোনকিছু না চিন্তা করেই, ঠিকআছে আসেন গাড়িতে।
দুঃখবিলাসী গাড়িতে ওঠার পরই শুরু করলো,
আমি কিন্তু এক রাত ৩০০০ টাকাই নিমু আর ভোরের মধ্যেই আবার চলে যামু,বাড়ীতে আমার কাম আছে।
আবিরঃ কোথায় যাবেন??
দুঃখবিলাসীঃ কোথায় যামু মানে ? আপনি যেহানে নিয়ে যাইবেন?
আবিরঃ ওকে,এবার বলেন আপনার নাম ?
দুঃখবিলাসীঃ আমার আবার নাম? ? যার কাছে যে নাম, তয় এহন সবাই দুঃখবিলাসী নামেই চেনে।
আবিরঃ দুঃখবিলাসী, বাহ! চমৎকার নামতো।
দুঃখবিলাসীঃ কি যে কন ! নামের আবার চমৎকার আছে নাকি?
স্যার আমার বেশি টাইম নাই আপনি কি হোটেলে নিয়ে যাবেন নাকি বাসায়? যা করার তাড়াতাড়ী কইরা আমার পেমেন্ট বুঝায় দেন।
আবির অদ্ভুতভাবে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এতো সুন্দর মেয়ে এই পেশায়??? কি অদ্ভুত পৃথিবী?
আবির মেয়েটিকে বলল তোমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবো তারপর তোমার জীবনের গল্প শুনবো।
দুঃখবিলাসীঃ আমাগো আবার গল্প? কি যে কন স্যার? আপনার মাথা আউলায় গেছে।
আবিরঃ তুমি এই পেশায় কেন??
মেয়েটি চোখে মুখে বিরক্তি এনে তাতে আপনার কি?
যদি বলি আপনাগো মতো মানুষের জন্য!
আবিরঃ আমি শুনতে চাই, বলো,তোমার হালকা লাগবে (মনের অজান্তে কখন যে আবির মেয়েটিকে তুমি বলছে সে নিজেও জানে না)।
দুঃখবিলাসী এই প্রথম তার অতীত স্মৃতিচারন করতে লাগল, হারিয়ে গেল সেই পুরোনো ভয়ানক কালো অতীতে,,,,,,,বলতে লাগল,,,,,,,
আমার নাম ছিল নীতু। আমার বাবা ছিল প্রাইমারী স্কুলের মাষ্টার। আমরা দুই বোন, আমি বড়। আমি একটু বেশি সুন্দরী জন্য এলাকার সবার নজর তখন আমার উপর।
আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। বাবার সাথে ঢাকায় দূর সম্পর্কের খালার বাসায় বেড়াতে আসি। কিছুদিন থাকার পর খালা বাবাকে বলে আমাকে ঢাকায় রেখে যেতে, এখান থেকেই আমি পড়াশুনা করবো,কেননা খালা ছিল নিঃসন্তান আর খালু বাইরে সরকারি জব করে। খালা ঐ বাসায় একা থাকে। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও আমি বাবাকে বললাম যে এখানকার পরিবেশ ভালো, এখান থেকে পড়াশুনা করলে আমি ডাক্তার হতে পারব। পরে বাবা আমার কথায় রাজি হয়ে খালার বাসায় আমাকে রেখে চলে যায়।
তারপর চলতে থাকে খালা আর আমার সংসার। খালার কাজে সাহায্যের পাশাপাশি আমার নতুন স্কুল আর পড়াশুনা ভালোই চলতে থাকে। খালা আমাকে বাসায় প্রাইভেট দেয়। স্যারটার নাম ছিল আতিক, বয়স প্রায় ৪০ হবে হয়তো,,,পড়ায় ভালোই।
তখন আমার বয়স ১৩/১৪ হবে। কিছুদিন যেতেই সেই স্যার নানা বাহানায় আমার পিঠ,গলায় হাত দেয়, আমার চরম অস্বস্তি হতো,কিছু বলতেও পারতাম না। এভাবে প্রায় তিনি আমার পায়ে পা ঘষতে থাকত, হাতে চাপ দিত, আমি যতবার হাত/পা সরিয়ে নিতাম, তিনি ততই নানা অজুহাতে আমাকে মারধোর করত। আমি খালাকেও লজ্জায়,ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না।
একদিন খালা বাজারের জন্য বাইরে গেছে, আমিও বাসায় সেদিন একা। আসলে আমার জীবনের প্রথম দূর্ঘটনার একমাত্র সাক্ষী ছিল বৃষ্টি। সেদিন আমি অংক করছিলাম, স্যারকে দেখে বুকের ভিতর মোঁচড় দিয়ে উঠেছিল। নিরুপায় আমি মনে মনে খালার আশার পথ গুনছিলাম। সেই স্যার আমি একা দেখেই প্রথমে আমার হাতে হাত, পায়ে পা স্পর্শ করে আমার শরীরকে আমি চিৎকার করা স্বত্বেও খাবলে খাবলে খেল,,,অচেতন আমি তখনো বুঝিনি আমার সাথে কি ঘটছে? শুধু এটুকু বুঝেছি আমার শরীরের উপর ভয়ানক কোন জন্তু/জানোয়ারের অসভ্যতামি😭😭😭আমার চিৎকারেও কোন কাজ হয়নি। তখনো আমি একজন পরিপূর্ন নারীতে পরিনত হইনি।
খালা বাইরে থেকে আসতেই আমি খালাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদি। খালা বুঝতে পারেনি কেন আমি সেদিন ওভাবে কেঁদেছি। খালা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর আমি শান্ত নিরব স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। অনেকবার খালা জিজ্ঞেস করার পরেও আমি বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করার কথা বলেছিলাম সেদিনের ঘটননার পর আমি অনেকদিন স্বাভাবিক হতে পারিনি। আমি ভয়ে, সংকোচে, লজ্জায় নিজে নিজে সবসময় নিজের মাঝে গুমরে থাকতাম,আর সেই ভয়াবহ ঘটনা মনে মনে ভুলতে চাইতাম।
এভাবে দেখতে দেখতে আমি ক্লাস নাইনে উঠলাম। আমার বাবা মায়ের সাথেও প্রায় চিঠিতে কথা বলতাম,বাবা এসে মাঝে মাঝে আমায় দেখে যেত,অনেকটা সব ভুলে আবার পড়াশুনায় মন দিতে চেষ্টা করলাম।
হঠাৎ,খালু একবার ঢাকায় এসে আমাদের তার চাকুরীর জায়গা পাবনায় নিয়ে গেল। খালা নতুন কোয়াটারের সব গোছাতে ব্যস্ত। আমিও নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম। প্রায় একমাস পর খালার প্রয়োজনে খালা এক সপ্তাহের জন্য বাড়ী গেল। আমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে ভেবে খালা সব রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিয়ে গেছে।
সন্ধ্যায় খালু বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা চাইতেই আমি তাকে ড্রইং রুমে চা দিতে গেলাম। আমার খালুর বয়স আনুমানিক ৫২/৫৩ হবে। উনি পেপার হাত থেকে নামিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে আমায় পাশে বসতে বলল গল্প করার জন্য। তারপর তিনি এই গল্প,সেই গল্প করতে করতে আচমকা আমার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ল,আমার মনে পড়ল সেই আতিক স্যারের কথা। ঠিক তারই মত খালু নামক শয়তান লোকটা হিংস্র প্রানীর মত আমাকে চূর্ন বিচূর্ন করে দিলো😭। নিরুপায় আর নির্বাক আমার আর কিছুই করার ছিল না সেইসময়ও।
এভাবে সাতদিন আমাকে সেই নরপিশাচের সাথে থাকতে হলো। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। এতটাই অসহায় হয়ে পড়ছিলাম যে কোন কিছু না ভেবেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে খালা আসলেই চলে যাবো।
এরপর খালা আসার পর খালাকে মিথ্যা বান্ধবীর বাসার অজুহাত দিয়ে সেদিন বেড়িয়ে পরলাম। কোথায় যাবো কিচ্ছু জানি না,,,,,,,, আমার মাথায় শুধু একটা বিষয়ই ঘুরছিল,প্রথমবার দুর্ঘটনা ভাবতাম কিন্তু এবার???আমার সাথেই এতো দুর্ঘটনা ঘটবে কেন???আর না যেখানে চোখ যায় চলে যাবো।
আমার মা বলত বেশি সুন্দরী হলেও সমস্যা,রুপ মানুষকে ধ্বংস করে। আমি ছোটবেলায় মায়ের এই কথা শুনে হাসতাম যা আজ সত্যি বলে মনে হলো,,,,,,,
এভাবে সারাদিন সারারাত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ট্রেনে ঢাকায় চলে আসলাম,তারপর গার্মেন্টেসে চাকুরী নিয়ে এক রুম নিয়ে থাকতেই উৎপাত আবার শুরু হলো,,,,পরিচয় হলো পতিতালয়ের নেত্রী রহিমা বিবিজানের সাথে। আমায় সে সেই এলাকায় টার্গেট করে লোকজনকে আমার পিছনে লাগায় দিয়েছিল রহিমা বিবিজান। অনেকবার না করা স্বত্বেও বিবিজান আমাকে ছাড়েনি। দূর ও!!! এই শরীরতো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে তাই আর কি লাভ এই শরীরের মায়া করে! শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম এ পথেই বাকিটা পথ হাঁটবো।
আমার কাছে মনে হয়েছিল সবারইতো শরীরটা দরকার, তাই এই শরীর বেঁচেই খাই। নরপিশাচরাও বাঁচুক, আমিও বাঁচি।
তারপর থেকেই আমার এই পথে হাঁটা। বলতে বলতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো দুঃখবিলাসী।
আবির মেয়েটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এত সুন্দর ভাষায় যে মেয়ে কথা বলতে পারে,এতো সুন্দর দেখতে যে তার পরিনতি আজ এই??????? কেউ তাকে দেখলে বুঝবে না যে সে কল গার্ল। কেন পৃথিবীর মানুষ এমন??.,
দুঃখবিলাসী এরপর চোখ মুছতে মুছতে বলতে লাগল,
স্যার যেদিন থাইকা এই পেশায় আইছি সেদিন থাইকা আর শুদ্ধ ভাষায় কথা কই না। এইখানে ভাষা কিচ্ছু না শরীরটা আসল। এই পথে আইসা নিজের নামও পাল্টাইছি দুঃখ আমার জীবন তাই আমি এহন”দুঃখবিলাসী “। বলতে বলতে হি হি করে অদ্ভুতভাবে হাসতে থাকলো মেয়েটি। এইভাবেই মাঝরাতে আমি দুঃখ খুঁজি স্যার,বুঝলেন!
এরপর আবার শুরু করলো,,,,,,,
স্যার বৃষ্টি কইমা গেছে, কোথায় নিয়া যাবেন?রাইতও শেষ, যা করার তাড়াতাড়ি করেন। আমাগো কেউ পাশে রাইখা গল্প করে না,শরীর হাঁতরায়, কাম শ্যাষ, টাকা লইয়া আমরা আউট।
আচ্ছা স্যার আপনাদের এত সুখ,এতো টাকা পয়সা, বাড়িতে সুন্দরী বউ তাও আপনারা এতো রাইতে অন্য মাইয়া মানুষের কাছে থাইকা কি সুখ পান???
আবির বিলাসীর কথায় মুচকি হেসে নিজের ভিতরকে আড়াল করে এবার নিজের অজান্তেই মেয়েটির এক হাত চেপে ধরলো।
এই প্রথমবার দুঃখবিলাসীর ভিতর অন্য কারো স্পর্শে আলাদা ফিলিংস কাজ করলো। তার ভিতর ভালোবাসার অভাববোধ কাজ করলো,আকাশের চাঁদটিকে রোমাঞ্চকর মনে হতে লাগলো বিলাসীর।
গুনগুন করে খুব গান গাইতেও ইচ্ছে করছিল তার। তার হাতের আঙ্গুল ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে কাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছিল বিলাসীর। কি অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতিতে ডুবে যেতে মন চাচ্ছিল বিলাসীর।
এতদিনের এই পেশায় আসার পর আজই প্রথম দুঃখবিলাসী বুঝলো,শরীরতো অনেক হলো,মনেরওতো অনেক চাহিদা আছে। একটা অপরিচিত শরীর ভোগ করাতে ক্ষনস্থায়ী অনুভূতি হয় ঠিকই কিন্তু যদি এই ভোগ করায় ভালোবাসার মিশ্রন থাকতো তবে তার অনুভূতি হয়তো আরও বহুগুন বেড়ে যেতো!
অপরদিকে আবিরও দুঃখবিলাসীর দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এর আগে কখনো এভাবে প্রেম নিয়ে কোন পতিতার দিকে আবির এভাবে তাকায়নি। কি মায়াময় চোখ!!!!! যে চোখেই সারাক্ষন ডুবে থাকা যায়, শরীর দরকার হয় না।
এবার দুঃখবিলাসী নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রন করে বলে উঠলো,
স্যার আপনি মহামানব নাকি? আমাগো কেউ আইনা এইভাবে বসায় রাখে না।
আবির কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল! বিলাসীর কথায় চেতন হয়ে বললো,
আচ্ছা বিলাসী কেউ,কখনো তোমাকে বলেনি তোমার চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর???
কি যে কন স্যার,,আমাগো চোখের দিকে কেউ তাকায় না, তাকায় শরীরের দিকে। স্যার ভোর হইয়া গেছে এবার টাকা দেন আমি যাইগা। আপনিতো কিছু করলেন না।।।।
আবির তার পকেট থেকে ১০ টা ৫০০ টাকার নোট বের করে দিল। এরপর বিলাসীর হাতে হাত রেখে বললো যাওয়ার আগে আমার বুকে মাথা রেখে আকাশ দেখবে একবার ???
বিলাসী কিছু না বলে আবিরের বুকে মাথা রেখে নিশ্চুপভাবে আকাশ দেখতে লাগলো। তারপর গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল। এরপর জানালার ফাঁকে আবিরকে বললো,আপনাকে আবার কোথায় পাবো স্যার ?.
আবির মিষ্টি হেসে একটি কার্ড এগিয়ে দিয়ে,
ভালো থেক দুঃখবিলাসী, বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
দুঃখবিলাসী তার যাওয়ার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে রইলো।
এরপর মাসখানেক কেটে যাওয়ার পর, একদিন দুঃখবিলাসী আবিরের খোঁজে বনানীর সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখলো,বাসার সামনে হট্টোগোল মানুষ আর সাংবাদিক দিয়ে ভর্তি সেই বাড়ী। বিলাসী আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখল একটি লাশ বাসা থেকে বের করছিল জানাজার জন্য। আত্নীয় স্বজনরা কাঁদছিল। এ কার লাশ ভাবতেই একটি মেয়ে বয়স ২৬/২৭ হবে সে বিলাসীর দিকে এগিয়ে এসে বললো,,,,
আবির তোমার কথা বলেছিল, আবিরের মুখে তোমার প্রশংসা শুনতে শুনতে তোমাকে কল্পনায় মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। আমি আবিরের বউ। ছয় মাস হলো,আবিরের ক্যনসার ধরা পড়ে,লাস্ট স্টেজ, ডাক্তার সময় শেষ বলেই দিয়েছিল। তখন থেকেই আবির প্রায় মাঝরাতে জীবনের বাকি ইচ্ছে পুরনের জন্য রাস্তায় বের হতো।
তোমার সাথে কাটানো সেই রাতের কথা ও আবির আমাকে বলেছিল, তারপর তোমার প্রতি তার অনুভূতি ও স্বীকার করেছিল। আমাদের ছয় বছরের সম্পর্কে আমার প্রতি যে অনুভূতি হয়নি আবিরের সেই অনুভূতি এক রাতে তোমার প্রতি হয়েছিল।
আবির জানতো তুমি আসবেই,,,,,,,বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে লাগল মৌ। এরপর একটা চিঠি বিলাসীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছুটে চলে গেল মৌ।
বিলাসী বুঝতেই পারছিল না যে তার সামনে কি ঘটছে??? শুধু সেই বাসার সামনের হাজার হাজার মানুষের ভীরে আবিরের লাশ নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু দেখার নাই সেইসময়। কি হয়ে গেল এসব??? সে তো শুধু আবিরকে একবার দেখতে এসেছিল, কেন এসেছিল সে নিজেও জানে না। আর এমনদিন আসলো যেদিন আর আবির পৃথিবাতেই নাই😭😭। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে
দুঃখবিলাসী চিঠিটি খুলতেই,
দুঃখবিলাসী,
“দুঃখে যাদের জীবন গড়া,তাদের আবার দুঃখ কিসের”?
তোমার সাথে কাটানো সময় ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ট সময়। কেন জানি নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করছিল। শুধু এটুকুই বলা পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা তোমার চেয়েও দুঃখী।
আবির।
দুঃখবিলাসী চিঠি হাতে দাঁড়িয়েই কাঁদতে লাগল। হঠাৎ এক সাংবাদিক পটপট করে বিলাসীর ছবি তুলছিল, ব্যাপারটি টের পেয়ে দুঃখবিলাসী সেখান থেকে দৌঁড়ে পালাতে লাগল,,,,,
পরদিন খবরের কাগজে বড় করে লেখা “পতিতার সাথে প্রেম ছিল বিশিষ্ট সাংবাদিক আবিরের “।
খবরের কাগজ হাতে নিয়েই দুঃখবিলাসী ভাবতে লাগল,মানুষ কত নিস্ঠুর ! যিনি দেশের সংবাদ তৈরি করতো,তিনি আজ মরে গিয়েও মিথ্যা সংবাদে পরিনত হল😭😭😭😭। কি বিচিত্র মানুষ???? আর মানুষের মনমানসিকতা।।।।।
আবির মারা যাওয়ার পর প্রায় ১৫ দিন বিলাসী আর বাইরে যায়নি। মহল্লায় থাকতে হলে বের হতেই হবে এই পেশার কারো শোক বলে কিছুই নাই। একবার এ পেশায় আসলে বের হওয়ার কোন উপায় নেই।
পাড়ার রহিমাবিবিজানের চাপাচাপিতে আজ আবার বের হলো দুঃখবিলাসী।
আজও প্রচন্ড বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ঢাকা শহর যেন এক মুহূর্তেই তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনের তুলনায় আজ পার্থক্য এই যে আজ বিলাসীর ঠোঁটে রং চং এর লিপস্টিক নেই। আজ শুধু লাল শাড়ী পড়ে,হাতে লাল চুড়ি পড়ে ছাঁতা মাথায় সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুঃখবিলাসী।।।।।।।।
নতুন কাস্টোমারের খোঁজে নাকি নতুন দুঃখ আগমনের খোঁজে????? নাকি নতুন দুঃখ-কে বরন করতে??? কে জানে?????
ছবিঃ নেট থেকে।
২০টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
পড়লাম, ঘুম পেয়েছে!!!! কমেন্ট কাল দেব!!!
রেজওয়ানা কবির
প্রথম হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কালকের কমেন্টের অপেক্ষায় থাকলাম।।। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
যে কোন পেশায় আসা মানুষকে আমরা ঘৃনা করি মনে মনে অপছন্দ করি। কিন্তু একবারও ভেবে দেখি না কেন সে এমন হলো। সে কেন এ পেশায়।
সমাজে কিছু মুখোশধারী শয়তান আছে যারা সম্পর্কে এবং সম্মানে বড় তাঁরাই এ ঘটনাগুলো ঘটিয়ে থাকে । দুখখ বিলবাসীর মতো আমরা কাউকে বলতেও পারি না। নিরবে সেটি মেনে নেয়াই জীবন হয়ে দ্বারায়।
শুভ কামনা তাদের জন্য। আর এমন গল্প লেখা চালু থাকুক!!! শুভ কামনা!!!
রেজওয়ানা কবির
সেটাই আমরা মানুষের পিছনের গল্প শুনতে চাই না এটাই সমস্যা। আর প্রাইভেট টিউটর দ্বারা অনেকেই এভাবে হ্যারাস হয় অনেক শিশু সেই বয়সে বাবা মাকে বললেও বাবা মা অনেকেই বিশ্বাস করে না। একটা শিশু বড় হওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা আর সুস্থ পরিবেশ খুব জরুরী তানাহলে বাংলাদেশে অগনিত বিলাসী তৈরী হয় প্রতিনিয়ত।
আর ভালো মানুষ ও আছে পৃথিবীতে এটাও সত্যি।যেমন ছিল আবির।
ভালোবাসা অনুভূতি সারাজীবনেও একসাথে থাকলেও অনেক সময় তৈরী হয় না কিন্তু এক সেকেন্ডে সে অনুভূতি হতে পারে।।
জীবন এরকমই।।।।।।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু, শুভ্কামনা।।।।
ছাইরাছ হেলাল
সময়ের যাঁতাকলে কে কোথায় কখন হারিয়ে যায় কে জানে! স্মৃতিটুকুই সম্বল, সুখ বা দুঃখের।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া, স্মৃতি নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। ভালো থাকবেন, শুভকামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর গল্প অনেক শুভেচ্ছা রইল আপু
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া, শুভকামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভারী মিষ্টি একটা গল্প পড়লাম। আসলেই — দুঃখে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দুঃখ কিসের ? নারী আর দেহলোভী মানুষের কারণে দেশের আনাচে কানাচে কত নীতু’রা আজ দুঃখবিলাসী হয়ে নির্মম নিষ্ঠুর জীবন যাপন করছে তার হিসেব কে রাখে ! দুঃখবিলাসীদের জীবনের মানে কী তবে —“আজও প্রচন্ড বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ঢাকা শহর যেন এক মুহূর্তেই তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনের তুলনায় আজ পার্থক্য এই যে আজ বিলাসীর ঠোঁটে রং চং এর লিপস্টিক নেই। আজ শুধু লাল শাড়ী পড়ে,হাতে লাল চুড়ি পড়ে ছাঁতা মাথায় সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুঃখবিলাসী।।।।।।।।
নতুন কাস্টোমারের খোঁজে নাকি নতুন দুঃখ আগমনের খোঁজে????? নাকি নতুন দুঃখ-কে বরন করতে??? কে জানে????? ”
ধন্যবাদ আপু।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। এরকম হাজার হাজার বিলাসী আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর বেশি আর কিছুই বলতে পারলাম না ভাই। শুভকামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার প্রতিও শুভ কামনা রইলো আপা।
সাবিনা ইয়াসমিন
একটা মানুষের জীবনে কত ঘটনা/দূর্ঘটনা ঘটে যায় সেটা তার কাছে না গেলে, পাশে গিয়ে দুদন্ড সময় দিয়ে না শুনলে বোঝার উপায় থাকে না। আমরা বাইরের রুপ দেখে পর্যালোচনা করি, নিজে নিজে মানুষটাকে নিয়ে যা খুশি ভেবে নিই। অথচ মানুষটার ভেতরে আসলেই কি আছে ক’জন জানতে পারি!
দুঃখবিলাসীদের দুঃখকে আপন করে নিতে হয়, অনিচ্ছায় বা স্বেচ্ছায়। তাদের দুঃখকে ছুঁয়ে দেখবে এমন আবিরের সংখ্যা নগন্য।
গল্পটা ভালো লেগেছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আসলেই একটা মানুষের আমরা বাইর দেখেই জাজ করি কিন্তু তার ভিতরে কি ঘটে তা জানার বা বোঝার চেষ্টা করিনা। দুঃখকে ছুঁয়ে দেখা আবিরের সংখ্যা অনেক কম জন্যইতো এতো এতো বিলাসীর জীবন। শুভকামনা সবসময় আপু।।।
ত্রিস্তান
গল্পের আতিক স্যার আর খালুকে ওখানেই ছেড়ে দেবেন না প্লীজ। এটাকে একটা ছোটগল্পের সিরিজ করে নিন। আমি এই মানুষরূপী পশুগুলোর ভয়ানক পরিণতি দেখলে খুব শান্তি পাবো।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ঠিকই বলেছেন। গল্পে ওদের শাস্তি দিতেই পারি!! কিন্তু বাস্তবে কয়জন আতিকের শাস্তি হয় বলেন খুবই দুঃখজনক।।।। ওকে তবে ছোট গল্পের সিরিজ করব।।। ভালো থাকবেন। শুভকামনা।
হালিমা আক্তার
নিষ্ঠুর পৃথিবী, মরার পরেও মিথ্যা সংবাদে পরিনিত হয়।
আমাদের সমাজে হাজারো দুঃখবিলাসী রয়ে গেছে।যা্রা নরপশুদের বলি হয়ে, অন্ধকার জগতে দিন কাটাচ্ছেন।
চমৎকার বাস্তবতার চিত্র। শুভ কামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু বাস্তব থেকেইতো উপাদান খুঁজি। কিন্তু খুব কষ্ট হয় যখন বিলাসী কে নিজের জায়গায় চিন্তা করি যখন। এভাবে আর কত???
ভালো থাকবেন,শুভকামনা।
আরজু মুক্তা
দুঃখবিলাসীকে আমি ভালো বেসে ফেললাম।
শুভ রাত
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু। ভালোবাসতেই হবে তো সে যে দুঃখ খুঁজে বেড়োয়!!!
শুভকামনা।