চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সি আর বি’তে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে এবং মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত অনন্য দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য আজ চট্টগ্রামের দলমত নির্বিশেষে সবাই সোচ্চার। প্রত্যকেই একতাবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে চলেছে। চট্টগ্রামবাসীর এ আন্দোলনের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সরকারি দল আওয়ামীলীগের একাত্মতা প্রকাশ। এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ। এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে চট্টগ্রামবাসীর অস্ত্বিত্তের লড়াইয়ে সবাই এখন এক মঞ্চে সমবেত হয়েছে। তথাপি অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় অটল এবং অবিচল। রেলওয়ের ডিজির কথা অনুযায়ী কোনো সমস্যা নেই সি আর বি’তে হাসপাতাল নির্মাণ হবেই। তাঁর এমন দৃঢ় এবং আত্ম-প্রত্যয়ী মনোভাবকে হাল্কা করে দেখার খুব একটা সুযোগ আছে বলে মনে হয়না। নিশ্চয়ই এটার পেছনে বড় কোন প্রভাবশালী অপ-শক্তি আড়ালে আবডালে হাসপাতাল নির্মাণে মদদ দিচ্ছে। শক্তি যোগাচ্ছে তাঁদের এই হীন প্রয়াস বাস্তবায়নের জন্য। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সি আর বি’কে গ্রাস করার জন্য। দখল করার জন্য।
বাঙ্গালী জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখ এবং বেদনার বিষয় হচ্ছে ভূমিদস্যুরা প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে বাহুবল বিত্ত্ব বৈভব ক্ষমতা অনেকক্ষেত্রে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু অসৎ নৈতিকতা বিবর্জিত মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে পাহাড় পর্বত টিলা কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে, সবুজ সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত বনাঞ্চল বৈধ বা অবৈধ উপায়ে কেটে ফেলছে, সবুজ মাঠ প্রান্তর খাল বিল ডোবা পুকুর জলাশয় দখল আর ভরাটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁদের অবাধ দখল চালিয়ে যাচ্ছে। চোখের নিমিষেই বিরাট বিশাল পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে, বনের গাছ গাছালী কেটে উজাড় করে ফেলছে। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর এসব বিষয়ে জরিমানা করছে কিন্তু পাহাড় কাটা বন উজাড় বন্ধ করার বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না বা তাঁদের আইনগত কোনো ব্যবস্থা মানুষের কাছে দৃশ্যমান নয়। যে কারণে দেশের পরিবেশ প্রতিবেশ প্রকৃতি এবং বনজ ও জলজ জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অতি বৃষ্টি, ভারী বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। আমাদের ভুপৃষ্ট ধীরে ধীরে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে। আমরা শুধু গাছ কাটি কিন্তু গাছ লাগাই না। গাছের পরিচর্যা করিনা। শঙ্কা জাগে মনে বাংলাদেশ কী অচিরেই গাছপালা, নদী খাল্বিল,পুকুর ডোবা জলাশয় বিহীন মরুভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে ? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশের সংরক্ষিত বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাহাড় নদী খাল সবকিছু বিলুপ্ত হয়ে যাবে। চট্টগ্রামের অনন্য সুন্দর ফুসফুস খ্যাত সি আর বি যদি হাসপাতালের দখলে চলে যায় তাহলে আমরা কী এমন আরেকটা সি আর বি’র মতো নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তৈরি করতে সক্ষম ? যদি তা না হয় তাহলে সি আর বি’কে কেন ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা গড়তে নই ভাঙ্গতেই খুব উৎসাহী এবং পারদর্শী। গাছ লাগাতে নয় কেটে পরিবেশ নষ্ট আর নিজেদের আখের গোছাতেই সবাই ব্যস্ত। পাহাড় কাটে সমতল করে বিরাট বিশাল আবাসন প্রকল্প করতে সবাই যেন মরিয়া। আমরা যে যা কিছু বলি না কেন। যা কিছু মনে করি না কেন। রেলের ডিজির কথাই মনে হয় সত্য হবে — কনো সমস্যা নাই, হাসপাতাল হবেই। একদিকে প্রকৃতিকে হত্যা করা হবে আরেকদিকে বড় লোকের চিকিৎসা সেবা চলবে। দুঃখী আর গরীবের অক্সিজেনের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হবে আরেক দিকে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে ধনীদের বাঁচানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা আর প্রচেষ্টা চলবে। গরীবের প্রাকৃতিক অক্সিজেন ক্ষেত্র সঙ্কুচিত, শেষ বা ধ্বংস হয়ে গেলে কার কী ! বরং পাঁচ তারকা মার্কা হাসপাতালে টাকা দিয়ে ধনীরা তো অক্সিজেন নিতে পারবে। হয়তবা সি আর বি’র ধ্বংস আমাদের শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। যদি চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সি আর বি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবে বলে মনে হয়না।
১৮টি মন্তব্য
মাছুম হাবিবী
নিউজটা পড়েছি। কখনো চট্রগ্রাম যাওয়া হয়নি তবে সি আর বি জায়গাটা চট্রগ্রামের প্রাণকেন্দ্র এত সুন্দর শ্যামল জায়গাটাকে এভাবে নষ্ট করার মানে হয়না। কর্তৃপক্ষ চাইলে অন্য কোথাও হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে পারেন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চট্টগ্রামবাসীর চাওয়াটা তাই। চট্টগ্রামে রেলওয়ে বন্দরসহ অনেকের অনেক খালী জায়গা পড়ে আছে । যেকোনো একটা স্থানে ধনী আর গরীব সবার জন্য হাসপাতাল তৈরি করা যায়। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী
উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে প্রকৃতি। প্রতিশোধ নিতেও ভুল করছে না প্রকৃতি। সামুতে পড়েছি আগে এই রকম লেখা মন্তব্য করি নাই। এখানে করলাম কারণ দুঃখ লাগছে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার দুঃখবোধ আমাদেরও ভাই। ঠিক বলেছেন — “প্রতিশোধ নিতেও ভুল করছে না প্রকৃতি”। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রেখে যাওয়া মানে তাঁদেরকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়া। আপনার মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া।
উর্বশী
চট্রগ্রাম বাসীর চাওয়া পূরণ হোক।প্রকৃতি তো তার কাজ করেই যাবে। ছাড় দেয়,তবে ছেড়ে দিবেনা। মহান আল্লাহ পাক সকলের সহায় হোক। আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা সব সময়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
চট্রগ্রাম বাসীর চাওয়া পূরণ হোক।প্রকৃতি তো তার কাজ করেই যাবে। ছাড় দেয়,তবে ছেড়ে দিবেনা —- আপনার যুক্তিপূর্ণ মতামতের জন্য ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
আমি প্রায় এক বৎসর চট্টগ্রামে ছিলাম। যখন পলোগ্রাউন্ড এ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতাম। আমরা সি আর বি তে বসে সময় কাটাতাম। আমার কাছে সৌন্দর্যের এক আঁধার মনে হয় সি আর বি। এতো সুন্দর একটা জায়গায় হাসপাতাল কেন করা হবে। চট্টগ্রামে তো জায়গার অভাব নেই। কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার যুক্তিপূর্ণ মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
রিতু জাহান
চট্রগ্রামের ফুসফুস বলা চলে সিআরপি। অথচ তাকে নষ্ট করার পায়তারা করছে একদল জানোয়ার।
আগে মুভিতে দেখতাম বিদেশি এজেন্টরা টাকা দিয়ে আর এক দেশের সম্পদ মানে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ নষ্ট করে দিতো। অমরেশ পুরি থাকতো সে সব মুভির ভিলেন আর বিদেশের বলতে বুঝতাম এজেন্ট।
যাইহোক, আমার দেশেও এন হচ্ছে কি না আমি বলতে পারি না। তবে আমার দক্ষিণের সুন্দরবনও নষ্ট হচ্ছে। সে নদী এখন খাল প্রায়,,
আমরা হসপিটালে টাকা দিয়ে অক্সিজেন কিনব কিন্তু গাছ বা বন রাখব না।
চমৎকার একটা বিষয়তুলে ধরেছেন ভাই। ধন্যবাদ৷
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার যুক্তিপূর্ণ মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে একমত — “তবে আমার দক্ষিণের সুন্দরবনও নষ্ট হচ্ছে। সে নদী এখন খাল প্রায়,,
আমরা হসপিটালে টাকা দিয়ে অক্সিজেন কিনব কিন্তু গাছ বা বন রাখব না’ ।
আলমগীর সরকার লিটন
সবকিছুতেই চিন্তভাবনা করা দরকার
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মানুষের প্রয়োজনেই এসব হাসপাতাল, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ তৈরি করতে হবে কিন্তু অবাধে প্রকৃতি ধ্বংস করে এসব করলে ভবিষ্যতে কেউ কি সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারবে? প্রকৃতি যদি না থাকে তাহলে কিভাবে অক্সিজেন পাবো, গাছপালা থেকে প্রয়োজন মিটাবো? অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দিদি আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
অক্সিজেনের মূল্য বুঝলো না। সিআরবি প্রাণ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা , আপনার ছোট্ট কথার মানবিক মূল্য অনেক। শুভ কামনা নিরন্তর।
ছাইরাছ হেলাল
অন্য ভাবে বলি, কর্তারা এক সময় বলেছিল, প্রয়োজনে আর একটি সুন্দর বন তৈরি করা হবে!!
তাই আমাদের চিনার কিচ্ছু নেই, শুধুই দেখে যাওয়া।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
“অন্য ভাবে বলি, কর্তারা এক সময় বলেছিল, প্রয়োজনে আর একটি সুন্দর বন তৈরি করা হবে” — ভাইয়া মুখে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু কার্যকলাপ হচ্ছে ঠিক বিপরীত। মতামতের জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা অবিরাম।