
পৃথিবীর চোখ আজ রক্তবর্ণ। নিয়েছি তো উজাড় করে কিন্তু বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উল্টো তার ক্ষয় করে গেছি। তারই যেনো হাহাকার আজ। প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার কাছে এই দুর্দম প্রকাশের কাছে আমার ব্যাক্তিগত হতাশা বা দুঃখ কতো ক্ষুদ্র কতো অকিঞ্চিৎকর বা কতোটুকুই তার দাম, মানুষ বরাবর তার নিজের দুঃখটাকে বড় করে দেখে। অন্যের কাছে তা অকারণ হা হুতাশ। মন প্রসঙ্গ টানে পুরাতন স্মৃতি যা সে ফেলতে চায় বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। যতো ভোলার চেষ্টা করে ততো যেনো ভেসে ওঠে। ঠিক গাছ যেমন ঝরে পড়া ফুলগুলির বোটা রেখে চিহ্ন রাখে একদা এক ফুলে ছিলো এ ডালে। তবু আমার দুঃখের বোঝা প্রকৃতির কাছে তুলে রাখি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার বেলায়। গোধূলি আঁকড়ে হেলে পড়া সূর্য যেনো হাঁপিয়ে গেছে আমার দীর্ঘশ্বাসের ভার বইতে বইতে।
আমি নিতু।
এ দোতালা বাড়ির বিশাল বারান্দায় সুদীর্ঘকাল এক সন্ধ্যা কাটে আমার। আজ আমার শেষ দিন এ বারান্দায়। রাজমিস্ত্রি যখন একটা ইটের পর একটা গেঁথে বাড়িটা ওঠাচ্ছিলো আমার সামনে তখন তার প্রতিটা ইটে আমার স্বপ্ন সাজানো ছিলো। ছিলো আমার ও আমার স্বামীর দিন রাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। একটা রুম যখন পরিপূর্ণ রূপ পেতো আমি সেখানে সাজিয়ে ফেলেছিলাম আমার স্বপ্ন সংসার।নিজ স্বপ্নে গড়া প্রতিটা ইট গেঁথে গেঁথে বাঁধা বাস্তবে রূপ নেয়া এ স্বপ্ন সংসার ছেড়ে আমাকে কাল চলে যেতে হবে। শুধু এ বাড়ি এ ঘর সংসার নয় যে দেশে আমার জন্ম যে দেশে আমার বাবার সমাধি যে দেশে আমাকে জন্ম দেয়া মা থাকবে,থেকে যাবে বাবাহারা একমাত্র ছোটো বোন।
একেবারে অপরিচিত পাড়া প্রতিবেশী নতুন দেশে আমার বসতিস্থাপন করতে হবে। শেকড় ছেড়ে একটা পরিপূর্ণ গাছ উপড়ে নিয়ে নতুন জমিতে স্থাপন কতোটা সহজ? কতোটা সে বেঁচে থাকে? যদিও বেঁচে যায় তার কতোটা শাখা পত্র পল্লব ঝরে যায় তার কি কোনো হিসেব রাখা যায়? আমি যেনো ঠিক পরিপূর্ণ একটা গাছ। আমাকে নিয়ে তো যাওয়া হবে অন্য ভূমিতে কিন্তু আমার থেকে ঝরে যাবে আমার শৈশব ভূমি। যেখানে আমার সবকিছু।
জেল থেকে বের হয়ে আজ এক বছর হলো। বিনা অপরাধে তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করে এসে যেনো মনে হতো এ গৃহকোণ কারাদণ্ড কালের ঘিঞ্জি চার দেয়ালের ঘরের চেয়ে ভয়ঙ্কর। পাড়া প্রতিবেশীর বাঁকা চোখের চাহনি তাদের কড়া কথার বাণ আমাকে প্রতিদিন ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। সংসারের এমন সব কঠিন বাস্তবতা না বোঝা আট বছরের মেয়েটা আমার খেলার সাথি হারিয়েছে। প্রতিদিন কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ফেরে মেয়ে আমার। ঘুমের মধ্যে ফুঁপিয়ে ওঠে বার বার। এলোমেলো কথা বলে মেয়ে আমার। কোন কথার ছলে মেয়েকে বোঝাব আমি যেনো ভাষাহারা। হে ঈশ্বর, এ তোমার কেমন জগৎ সংসার?
ঈশ্বরের দরবারে আমার অন্তরের তীব্র ব্যাথার নিগূঢ় উপলব্ধির যেনো কোনো উত্তর নেই। হয়তো আমার প্রার্থনা ভগবানের কাছে মনে হয়েছে নিছক নৈর্ব্যক্তিক প্রার্থনা,দুধের শিশুকে কোল থেকে ছিঁড়ে যেদিন আমায় নিয়ে গেলো থানা তারপর কোর্ট তারপর জেল আমার মুখের কোনো ভাষা যেনো কারো শ্রবণ ইন্দ্রিয় পর্যন্ত পৌছাতে অক্ষম ছিলো। জেলের সে ঘরে আমার মেয়ের কান্নাটাই শুনতে পেতাম শুধু। আর কোনো চিৎকার আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাতো না কখনো। নাতো কোনো প্রশ্ন। ইশ! কতো কতো সে প্রশ্ন? কেনো এসেছো জেলে? খুন করেছো নাকি চুরি করেছো নাকি চিটারি করেছো? আমি যেনো এক মরা লাশ ছিলাম।
বাবা মারা যাবার পরে আমাদের দুই বোনকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছিলো মা। আমি বড়। প্রচুর পরিশ্রমী আমি। পড়াশোনাটা করতে না পারার আক্ষেপ ছিলো না। কারণ, পড়াশুনা করানোর মতো সামর্থ্য আমার মায়ের ছিলো না। এমন গহীন গায়ের গরিব মেয়ের এমন স্বপ্ন দেখতে নেই। তবু টেনেটুনে এসএসসি দিয়ে সাতবাড়িয়া কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। আমাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে আমার মা চেষ্টা যে করেনি তা নয় করেছে। আর তার জন্য যখন পয়সাওয়ালা আমার আত্মীয়দের কাছে মা গেছে সাহায্যের জন্য তখন তারা আমার গায়ে গতরের দিকে তাকিয়ে শব্দের বাণ ছুঁড়েছে যা সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিলো না। মানুষের মনের চামড়া আর যাই হোক গণ্ডারের চামড়া তো হতে পারে না। কচ্ছপের খোলসটা কচ্ছপকেই মানায় মানুষের মানায় কি না আমার জানা নেই।
তাই বিয়ে দিলো মা আমার তার শেষ সম্বল দিয়ে সুজানগরের এক পরিশ্রমী ছেলের সাথে। আমার শ্বশুর নেই। স্বামী পুরুষটি আমার বড় ভালো। আমরা দুজনে অনেক পরিশ্রমে একটু একটু করে আমাদের ঘর সংসার করতে লাগলাম। এ দোতলা বাড়িটা শহরে বড় একটা দোকান। কিছু জমি দুই মেয়ে একমাত্র দেবর শ্বাশুড়ি নিয়ে বেশ প্রাণভরা এক সংসার আমার। আমাদের দাম্পত্য জীবনে যে সুখ, যে মাধুর্য পেয়েছি হয়তো তা খুব কম মেয়ের ভাগ্যেই জোটে। ঈশ্বর আমাকে বড় আশীর্বাদে যেনো ভাসাতে লাগলেন। যে ভগবান রূপ পরিগ্রহ করে নিখিল জগতের কল্যাণের জন্য চেতন অচেতনাত্মক সর্বত্র পরিভ্রমণ করেণ, সে বাচস্পতিদেব, জ্ঞানাধিপতি প্রকাশমান তার সত্ত্বগুণের দ্বারা আমায় যেনো উদ্ভাসিত করলেন। আমার মনের সকল কিছু তার জানা। ভক্তির প্রার্থনা অর্চনার দ্বারা আমি তাকে স্বরণ করেছি সকাল সন্ধ্যা। তাই প্রতিদিন ভোরের পূজা আর সন্ধ্যা পূজায় আমি তার গুণগান করতে ভুলতাম না কখনো।
অনেক পরিশ্রম করতে পারি বলে গ্যাস ইলেক্ট্রিক চুলা বাদ দিয়ে আমি চুলায় রান্না করতাম। আমি জানি খুব বেশি সাশ্রয়ী না হলেও স্বাস্থ্যকর আর স্বাদের কারণে আমি চুলায় রান্না করতাম।
দোতলার একপাশে দেবর একটা রুম নিয়ে থাকে। তার আসা যাওয়ার খবর আমি একটু কমই পাই। সংসারের এতো কাজের ভিড়ে এতো কিছু খেয়াল রাখাও সম্ভব নয়। ছোটোছটো দুই বাচ্চা। আমি যেনো সবকিছু নিজের মতো করে ভাবতে থাকি সবকিছু। সহজ সরল জীবন জীবনের নিয়মে চলবে। কিন্তু কোথা থেকে যেনো ঠাকুর আমার উপর নারাজ হলেন জানি না। আমাকে ফেললেন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে। এরচেয়ে যদি ঠাকুর আমাকে তুলে নিতেন আমি যেনো বেঁচে যেতাম।
আমার দেবর পাশের বাড়ির এক মেয়ের সাথে সম্পর্কের জের ধরে তার রুমে নিয়ে আসলো আমি টেরও পেলাম না। দেবরও আমার বেশ ভালো ইনকাম করে। বাজারে দোকান একটা বাড়িও কিনেছে। কথা ছিলো বিয়ে করে বউ নিয়ে উঠবে সেখানে। মেয়েটির মনে হয়তো অবিশ্বাস জন্মেছিলো এ ছেলে তাকে বিয়ে করবে না। তাই হয়তো মিথ্যে অভিযোগ করলো স্থানীয় নেতাদের কাছে। তার অভিযোগ তাকে ফুসলিয়ে আমার দেবর রুমে এনে ধর্ষণ করেছে। আমি আমার দেবরের সহযোগী।
ব্যস কাজ হলো সাথে সাথে থানায় অভিযোগ হলো। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলো আমি মেয়েটিকে ধর্ষণে দেবরের সহযোগিতা করেছি। স্থানীয় নেতারা যেনো ঝাঁপিয়ে পড়লো আমাকে জেলে দেবার জন্য। শুধুমাত্র মেয়েটির মুখের কথায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলো ধর্ষণের সহযোগিতা করার জন্য। পেপারে ছাপা হলো। কিন্তু নিজ ইচ্ছায় প্রাপ্ত বয়ষ্ক একটা মেয়েকে কি করে ফুসলিয়ে আনা যায়? নিজ ইচ্ছায় ডেট করতে এসে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়াটাকে কি ধর্ষণ মামলার ধারায় পড়ে?
অল্পবয়সী উঠতি ব্যবসায়ীর রাতারাতি এমন উন্নতি দেখে সবার নজর ছিলো আমার স্বামীর উপর। একজন নারীর মিথ্যে অভিযোগে একজন নারীর এমন শাস্তি। আইন নাকি বলেই দিয়েছে বেদ বাক্যের মতো যে নারী অভিযোগকারী ভিকটিম যা বলবে তাই-ই বেদবাক্য। দণ্ডায়মান চোখবন্ধ আইনের দণ্ড হাতে নারীর কুম্ভকর্ণের এ নিদ্রাভঙ্গ ভেঙ্গে ফেলবে কোন মন্ত্রশক্তি আমার অজানা। ‘বিধর্মী ‘ আমরা নাকি!! কি কি যে শব্দের বাণে জর্জরিত হতে লাগলো স্বামী আমার তার ব্যবসার যায়গা লক্ষী ঠাকুরের সামনেই।
আচ্ছা! বিধর্মী মানে কি? যার কোনো ধর্ম নেই তাই তো? কিন্তু আমি তো জন্মসূত্রে সনাতন ধর্মে। সকাল সন্ধ্যায় আমি আমার ধর্মের ন্ম জপি। বিশ্বাসেরও আর এক নাম ধর্ম। তবে কেনো এমন শব্দের বাণে আমাদের জর্জরিত করা হয় যে আমরা ‘বিধর্মী ‘? কাউকে বিধর্মী বলা মহা অন্যায় এবং পাপ। জেলে যাবার আগে বাচ্চাকে একটু প্রাণভরে বুকে আঁকড়ে নিঃশ্বাস টেনে নেবার সুযোগটা আমাকে দিলো না আইন। আমি নিরবে চলে গেলাম জেলে।
আমার নিত্য পরিধেয় পোষাক পাল্টে কয়েদির পোষাক পড়লাম। আমি প্রতিটা দিন পার করতাম নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে। সুজানগর থেকে পাবনা বেশ দূরের পথ। পাবনা জেলে আমি। স্বামী আমার দেখতে আসেন। কিছু খাবার কিনে দিয়ে যান মেয়েদের খবর বলেন। আমি নির্বাক শ্রোতা হয়ে শুনে যাই। পাশে অনেক মানুষের চিৎকারে তার সামান্য কথাই আমার কানে আসে। তবু ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আমি বুঝে নেই তার সব কথা।
সে কাঁদে শুধু। দ্রুত ছাড়িয়ে নিব নিব তোমায় এমন শব্দ শুনে শুনে আমার তিনটা মাস কেটে যায় জেলে। দুধের বাচ্চাকে রেখে এমন নিরপরাধ প্রতিটা মুহূর্ত প্রতিটা দিন আমার কেমন কাটে আমি আর ভগবান তার হিসেব রাখেন। আমার খিদের অনুভূতিটা মরে গেছে। শরীর যখন আর নড়তে পারতো না বলতো আমি ক্ষুধার্থ আমাকে খাবার দেও তখন স্টিলের প্লেটটা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যেতাম আমি। জেলে পাতলা ডালের হোলি চলে। যতো ইচ্ছে নিতে পারো আবার পারো না। কোনো বাচ বিচার নেই তুমি বিশ্বাসমতে কোন জাত!পাতে তোমার কি পড়লো তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ইচ্ছে হলে খাও নতুবা অভুক্ত থাকো। হুম, আমি অভুক্ত থাকতাম। স্বামী পাউরুটি আর কলা কিনে দিয়ে যেতো তার ভাগ দিতে হতো জেলে থাকা নেতাগ্রস্থ মেয়েদের। সে ভাগ দিয়ে যা থাকতো আমি কোনোরকম পেটের খিদে মিটিয়ে বেঁচে থাকার শক্তিটুকু রাখতাম।
খুব ইচ্ছে হতো স্বামীকে বলি মেয়ে দুইটাকে নিয়ে আসতে দেখা করার সময়। কিন্তু এমন নির্লজ্জ্ব মিথ্যে বাস্তবতার সামনে আমি আমার সন্তানদের দাঁড় করাতে চাই নাই। তাই এ তিনমাস আমি আমার সন্তানদের এক পলক দেখারও সুযোগ পাইনি। জেল থেকে যেদিন বের হলাম। আমি বাড়িতে আসার পরে আত্মীয়-স্বজনের প্রথম প্রশ্নই থাকতো জেলে কেমন ছিলাম! আমি প্রথম এক দুইবার সংক্ষেপে উত্তর না দিয়ে বিশদ বর্ণনা করতাম। তারপর হাঁপিয়ে যেতাম। তারপর তো একেবারে চুপসে গেলাম। আর এখন এমন পরিস্থিতি যে আমাদের ব্যবসা বাড়ি ছেড়ে দিতে হয়েছে। খুবই অল্প টাকায় বাড়িটা বিক্রি করে দিতে হয়েছে স্থানীয় পয়সাওয়ালাদের কাছে। জানি না বর্ডারের ওপারের দেশে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করে আছে। সারা রাত যাবে আজ গোছাতে গোছাতে সব। জানি না এ চোখের পাতায় কবে আমার ঘুম এসে বসবে।
সেই যে বিনিদ্র কাটে আমার প্রতিটা রাত আর ভোর হয় বুকের পাঁজরে শূন্যতা নিয়ে। তা যে শুরু হয়েছে তার যেনো শেষ হবার আর নাম নেই। ভোরের আযান পড়েছে, সূর্য উঠবে যাত্রা পথের সমস্ত কাজ আমার শেষ। এখন শুধু পা বাড়ানো। এ দেশ থেকে এ আমার শেষ যাত্রা। আমি চলে যাচ্ছি বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড ছেড়ে।
,,রিতু জাহান,,,রংপুর।
২২টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
চলে যাওয়াতেই কি সমাধান? আপনি যাই মনে করপন, এই সনাতনদের একটা ব্যাপার খারাপ লাগে। ওরা থাকে বাংলাদেশে। উৎসব পালন করে ওাশের দেশের মতো। আবার কেউ কেউ তো খুব চেতে চায়। ওদের নামে কিছু বললে।
যাই হোক। মেয়েরা কি এভাবেই নীরবে নিভৃতে মুখ লুকাবে বারবার? আর কেনই বা নিতু চুপ থাকলো পুরা ব্যাপারটা গলা উঁচিয়ে না বলে। প্রতিবাদ আমার ভালো লাগে। হয় লেখায় প্রতিবাদ থাকবে না হয় রোমান্টিকতা।
হা হা। এটা আমি আমার মতো বললাম।
ভালো থাকবেন।
রিতু জাহান
আপু,,, স্যরি বলে নিচ্ছি আগেই।
সনাতনদের এ দেশের তথাকথিত সংখ্যালগু সম্প্রদায় ঠিক কতোটুকু শান্তিতে থাকতে দিয়েছে?
কিছু ঘটনা আমার স্ব-চোখে দেখা। স্বামী আর বাবার প্রফেশনের জন্য।
প্রতিবাদ করেছিলো বলেই আজ নীরার এই দেশত্যাগ। চাঁদা দিতে হয় সনাতনী কেউ ব্যবসা করতে গেলে প্রতিনিয়ত জানেন কি??
যদি রাজনৈতিক মাঠে তাদের মামু না থাকে তবে তো আরো কষ্ট।
আর যদি বলেন টানের কথা মানে ভারত টানেন কথা তবে আমাদেরও কিন্তু মদিনার প্রতি টান কম না।
বিষয়টা ঐ ধর্ম তীর্থস্থানের জন্যই।
ভালো থাকবেন আপু,,,,,
আরজু মুক্তা
আপু, আপনি বুদ্ধিমতী। তিনটা পয়েন্ট বলছি। ঝগড়া নয়।
১) আমার নানা আসামের। ওখানে তিনি সেইসময় ফাস্ট স্ট্যান্ড করেছিলেন এন্ট্রান্স পরীক্ষায়। তখন ওখানে কোন কলেজ না থাকায়। আসাম সরকার তাকে কারমাইকেল পাঠান। এখানে ডিগ্রী পড়েন এবং চাকরীও। বিয়ে করেন ধুবরীর জমিদারের মেয়েকে। পরে তাঁরা রংপুরেই। কিন্তু তাঁর বাকি ভাই বোন, নানীর ভাই বোন ওখানেই। তাঁদের চিঠি গুলো যদি আপনাকে পাঠাই। বুঝতেন তারাও কেমন নির্যাতন করে।
২) আমি চট্টগ্রামে ২০ বছর। আমার তো ছোট ফ্যামিলি, ছোট গরু ধরেন ২০ হাজার হলেই কোরবানি হয়। আমার পাশের কাকা। একবার মনে হয় পাঠাবলি আর কোরবানি ১/২ দিন আগপিছ হয়েছিলো। উনি আমাদের মতো ২০ হাজার দিয়ে পাঠা কিনেছিলেন। তাহলে ওখানকার পরিবেশ আলাদা। দাওয়াতও সমানে চলে। ওদের সাথে মিশে অনেক শিখেছি।
৩) আমরা কিন্তু সৌদির চাঁদ দেখে ঈদ করিনা। কিন্তু বাংলাদেশে যেদিন নববর্ষ এর বন্ধ। ঐ দিন সনাতন রা শেষ চৈত্রে সাতমিশালী সবজি খায়। তাহলে কী দাঁড়ালো?
আমি সাধারণত: এই ধরনের গল্প বা আর্টিকেল এড়িয়ে যাই।
আপনার জন্য শুভ কামনা
রিতু জাহান
নিজেদের সাথে এমন ঘটনা অহরহ আছে। তেমনি তার উল্টা দিকও আছে।
আমার নানাশশুরও আসাম থেকে পড়াশুনা করে রংপুর কারমাইকেল এর প্রথম ছাত্র। যাইহোক,,,, আমার বেশিরভাগ সহপাঠী হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
দেশভাগের পরে যোগেন বসাক খুলনাকে যখন বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যোগ করলেন তখন ও এলাকার নেতা হিন্দু আর বেশিরভাগ মানুষ হিন্দু হবার কারনে, কোনোরকম রেশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো।
মন্দির ভাঙা থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত নানান কুকর্ম করে এদের দেশছাড়া করার পায়তারা করে।
সবচেয়ে বড় কথা আমি ধর্ম চিনি না মানুষ চিনি।
আর এমন সব পোষ্ট এড়ানো না এড়ানো আপনার মনের ব্যপার। এটা বাস্তব অমানবিক নিষ্ঠুর একটা ঘটনা যা এ পরিবারটার সাথে হয়েছে।
একটা জিনিস, শেঁকড় ছেড়ে যেতে কেউ চায় না।
সাবিনা ইয়াসমিন
কি বলবো বুঝতে পারছি না। কিছু কথা/গল্প/ঘটনা লেখায় প্রকাশ করা হয়তো সহজ নয়, কিন্তু পাঠপ্রতিক্রিয়া জানানো প্রায় অসম্ভব মনে হয়।
একজনের কুকর্মের সাজা পুরো একটি পরিবার বহন করে এমন চিত্র আমাদের সমাজে হরহামেশা দেখা যায়। একমাত্র সিনেমা/নাটকে পরিস্থিতি পালটে যায়, কিন্তু বাস্তবে কোন ভিন্নতা নেই।
মাঝে মাঝে ভেবে পাইনা প্রলোভন-ধর্ষণের সঠিক সংজ্ঞা কি! আদৌ কি প্রকৃত ধর্ষিতারা বিচার চাইতে যায়/পায়!
মানুষের প্রতিহিংসাই একটা স্বতন্ত্র ধর্ম। এর কাছে সব ধর্ম পরাজিত। কোন ধর্মেই অশান্তির বাণী নেই, নীতিহীন বিধান নেই। কিন্তু প্রতিহিংসার ধর্মে কেবল হিংসা আর লোভ জয়ী হয়। সবল সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে অসহায় ধার্মিক বিধর্মীদের ঠাঁই নেই। সনাতনী নীতুদের পিছল পথে চলতে হয়/ বাধ্য করা হয় আজীবন উদ্বাস্তু হয়ে বেঁচে থাকার জন্য।
রিতু জাহান
চমৎকার করে বললেন।
আমি রাই এর আম্মু। রাই জানে না তার আম্মুর বুকের ওমে অন্যধর্মের ঘ্রাণ। ও জানে এ বুকে তার পরম শান্তি।
অশান্তির বাণী আসলেই কোনো ধর্মে নেই। মানুষ সবার আগে মানুষ এটা ভাবতে মানুষকেই আবার মানুষ হতে হবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
★ছোট ছোট কিছু বাক্য/ শব্দ সম্পাদনা করা লাগবে।
রিতু জাহান
যেমন?
সাবিনা ইয়াসমিন
ঠিক হয়ে গেছে।
এখন শুধু যায়গাকে জায়গায় আনতে হবে 🙂
রিতু জাহান
যায়গা বানানটা দুইভাবেই লেখা যায়,,,, বিবর্তন বাঙলা একাডেমির ডিকশিনারিতেও দেখলাম।
হালিমা আক্তার
গল্পটা পড়ে নিলাম। কমেন্টস সময় নিয়ে করবো।
রিতু জাহান
ধন্যবাদ আপু,,,
হালিমা আক্তার
যে মেয়েটি মিথ্যা মামলা করলো সেতো একই ধর্মের। আর দেশ ত্যাগের কথা বলতে গেলে বলতে হয়। আমার পরিচিত এক কলিগ যারা এদেশে খুব ভালোভাবে অবস্থান করছে। ইচ্ছে করেই দেশের সব কিছু বিক্রি করে ভারত চলে যাচ্ছ। আর বিশ্বের সব দেশেই সংখ্যালঘুরা নিপীড়িত নির্যাতিত। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। শুভ কামনা রইলো।
রিতু জাহান
আপনার জন্যও শুভকামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর একটা গল্প বুনানো পাঠ করলাম রিতু আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই
ছাইরাছ হেলাল
গল্পে বাস্তবতা উঠে এসেছে, সংখ্যালঘুরা পৃথিবীর সব দেশেই কোন না কোন ভাবে নিগৃহীত।
সময় সমাজ বুঝে ভিন্ন ভিন্ন ডিগ্রিতে, শক্তিমানের কাছে শক্তিহীনেরা খুব ই অসহায়।
রিতু জাহান
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা কবি।।
শক্তিমানেরা সব সময় শক্তি দেখাতে প্রস্তুত থাকে।
সৌবর্ণ বাঁধন
আপনার লেখা খুব সুন্দর। বিশেষ করে স্বগোতক্তির ভঙ্গিতে বলা গল্পটির ভাষার গঠন অনেক মজবুত ছিল! প্রতিটি দৃশ্য মানসপটে ফিল্মের মতো চলে আসছিল। আরো অনেক গল্পের প্রত্যাশায়! শুভকামনা অনেক।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা,,
ভালো থাকবেন সব সময়,,
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক পরে পড়লাম। আপনার লেখা বরাবরই চমৎকার ।।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু,,,, ভালবাসা জানবেন। ভালো থাকবেন সব সময়।