
শকুন একপ্রকার পাখি। যদিও এখন দুর্লভ। এটি মৃত প্রাণীর মাংস খায়। শকুন মানুষের কাছে অপছন্দের একটি পাখি। অথচ এরা উপকারী। তবে, এরা প্রয়োজন না হলে জীবন্ত প্রাণী শিকার করে না বা খায় না।
একবার আমাদের গরু মরেছিলো। রাতে মরদেহটা মাঠে রেখে আসা হয়েছিলো। সকালে উঠে দেখি, কোত্থেকে শকুনের দল এসে অর্ধেক সাবাড় করেছে। আর আশ্রয় নিয়েছে সবচেয়ে উঁচু গাছটাতে।
এখন মানুষের মাঝে শকুন। চারপাশে শকুন। এমনকি শকুনের মধ্যেও শকুন। এদের অপরাধ অনেকটাই দৃশ্যমান। আবার তাদের কাজটা ইতিবাচক মনে হলেও পেছনে নেতিবাচক দিক থেকেই যায়। আলোর নিচেই তো অন্ধকার। আমাদের চামড়ার চোখ। আবার সবটা দেখতে পারে না। এটা কী আমাদের অপূর্ণতা না বিবেচনা বোধের অভাব?
১৯৯৪ সালে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন কেভিন কার্টার। তিনি একজন ফটোগ্রাফার। তাঁর ছবিটার নাম ছিলো “The vulture and the little girl ” ১৯৯৩ সালে যখন সুদানে দুর্ভিক্ষ চলছিলো, ছবিটি সেই সময়ে তোলা। একটি কঙ্কালসার বাচ্চা মেয়ে আর সবার মতো ছুটছিলো রিলিফ ক্যাম্পের দিকে। মরুভূমির তপ্ত রোদে তার হাড়গুলো যেনো ঠিকরে বের হচ্ছে। ক্ষুধায় আর চলতে পারছে না। হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্লান্তিতে দুর্বল শরীর থমকে যায়। একটা শকুন তার পিছু নেয়। ক্ষুধার্ত শকুনও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে কখন সেই ছোট দেহটি খাবলেে খাবে। দুটি ক্ষুধার্ত প্রাণীর রুদ্ধ শ্বাসের লড়াইয়ের একটি ছবি বিখ্যাত হয়ে যায়। সেই কাঙ্খিত ছবিটি নিউইয়র্ক টাইমস চড়া দামে কিনে নেয়। আর কেভিন ভাসতে থাকেন খ্যাতি, সম্মান আর প্রশংসায়।
সে সময় এক ফোন ইন্টারভিউয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, মেয়োটির শেষ পর্য়ন্ত কী হয়েছিলো? উনি উত্তরে বলেছিলেন, ” তিনি জানেন না। তার ফ্লাইট ধরার তাড়া ছিলো।” অপর প্রান্ত থেকে লোকটি বলেছিলো, ” তাহলে ওখানে দুটা শকুন ছিলো, যার একটার হাতে ক্যামেরা ছিলো। ”
ছবি তোলা অপরাধ নয়। কিন্তু শিশুটিকে না বাঁচানো ছিলো অপরাধ। কেভিন বুঝেছিলো সৃষ্টির ক্ষুধা। আর সেই শকুনের ছিলো পেটের ক্ষুধা। কোন পার্থক্য নেই। অদৃশ্য একটা পাপবোধ থেকে কেভিন শকুন হয়েছিলেন। আর অসময়ে বুঝে দগ্ধ হয়ে করেছিলেন আত্মহত্যা।
পাপ কখনো মানুষের অগোচরে ঘটে যায়। আমরা জানি ও না। হয়তো অসময়ে বুঝি। তাই বলে কী অনুশোচনা থাকবে না? চারিপাশের শকুনদের মধ্যে নাই মানবিকতা ; নাই অনুশোচনা। নাই আত্ম উপলব্ধি। বিবেকের তাড়নাও অনুপস্থিত।
আমরা কী এই ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে জ্বলে উঠতে পারিনা ?
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
কেভিন কার্টারের ঘটনাটি জানি, যে যে পেশায় থাকুক না কেন মানুশ তো তাঁকে হতেই হয়,
এই উপলব্ধি সে অর্জন করেছে, আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে।
অতর্কিত কোন এক প্রাণ-পথের আলো
অন্তহীন সুনিলতার দ্বীপ জ্বেলে মুছে ফেলবে
যত্র তত্রের স্তুপ স্তুপ আগুনমুখো শঠতা
জীবনের সকল সবল প্রাঙ্গণে;
আরজু মুক্তা
আসলেই মানুষ হতে হয়।
শুভ কামনা
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার লিখায় আমি বুঝলাম ইতিপুর্বে জানতাম না, তা যখন বিশ্বজিৎ কে সন্ত্রাসীরা দা, বাঁশ, ইত্যাদি দ্বারা আঘাত করে হত্যা করেছিল তখন শ শ ক্যামেরা ছবি তুলেছিলো কিন্তু ক্যামেরা গুলি যদি অস্ত্রএর কাজে ব্যাবহৃত হত তবে বিশ্বজিৎ হইতো বেঁচে যেতো।
আরজু মুক্তা
সেটাই। মানবিকতা নাই। মানুষ বাঁচানোর থেকে ছবি তোলায় ব্যস্ত।
ধন্যবাদ ভাই।
হালিমা আক্তার
কেভিন কার্টার বুঝতে পেরেছিলেন কোনটি তাঁর মুল দায়িত্ব। অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যদিও আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। আমাদের বিবেক মরে গেছে। অনুশোচনায় দগ্ধ হয় না আমাদের হৃদয়। মৃত বিবেক গুলো আবার জেগে উঠুক। শুভ কামনা অবিরাম।
আরজু মুক্তা
তাই চাই।
শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা এমন ভুল অনেক করি। অনিচ্ছায় করে বসি। তবে জেনে শুনে যেন না করি এই কামনা ও চাওয়া।
আরজু মুক্তা
সেটাই জেনে শুনে যেনো না করি।
শুভ কামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পুরো ঘটনাটা ই জানি। মানুষ শকুনের চেয়ে ও অধম। পাপবোধ হোক আর প্রকৃতির প্রতিশোধ হোক তার এমন অপমৃত্যু কষ্ট লেগেছে। আজকাল এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে বিপদে পাশে না দাঁড়িয়ে মোবাইলে ছবি তুলে, ভিডিও করে ভাইরাল হচ্ছে, নাম কামাচ্ছে। কতটা মনুষ্যত্ব খোয়া গেলে মানুষ এতোটা জানোয়ার হতে পারে! চমৎকার উপস্থাপনা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
আরজু মুক্তা
মানবিকতা নাই। দুইদিন আগে এক এফবি ফ্রেন্ড মা মারা গেছে, সেটা কেমনে যে লিখলো। আমি বুঝলামনা।
নার্গিস রশিদ
চারদিকে মানবিকতার বড়ই অভাব । সত্যটি ফুটিয়ে তুলেছেন ।
আরজু মুক্তা
নাই মানবিকতারর মা নেই।
ধন্যবাদ আপা
শুভ কামনা সবসময়
তৌহিদুল ইসলাম
সব ভালো সবার জন্য ভালোকিছু বয়ে আনতে নাও পারে। নির্ভর করে অন্তরের মানুষটা কেমন তার উপরে। এর প্রমান আপনার লেখার কেভিন চরিত্রের মধ্যেই পেলাম। এরকম আরো উদাহরণ আছে। মানবিকতা আজ ভূলুণ্ঠিত!
চমৎকার পোস্ট আপু।
আরজু মুক্তা
মানুষ বড় অসহায়। মানবিকতা জাগ্রত হোক।
ধন্যবাদ ভাই
শুভ কামনা
রেজওয়ানা কবির
কিছু মানুষ সত্যি শকুনের মত। মর্মান্তিক ঘটনা।আসলেই সব ভালো সবার জন্য ভালো না। শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
সব ভালো ভালো না। আলোর নিচে অন্ধকার।
শুভ কামনা সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
আত্মগ্লাণি এবং অনুশোচনা বোধ যার মাঝে থাকে, সেই প্রকৃত মানুষ হতে পারে। অনুশোচনা একজন মানুষকে নির্মল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে। পাপ- পুণ্যের সংজ্ঞা দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ হয় না। মানুষের মাঝে আত্মবোধ/ অনুশোচনা বোধ থাকা জরুরী।
নিজের জন্য যেটা ভালো সেটা সবার জন্য ভালো না-ও হতে পারে।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
অনুশোচনা আসল। আমরা তো ফেরেস্তা না। ভুল তো সবসময় চলছে।
শুভ কামনা সবসময়