আমার কথা!
প্রতিটা মা’য়েরই শৈশব থেকে কৈশোরের দিকে বেড়ে ওঠাকালীন ছেলেশিশুকে বুঝতে দিতে হবে, তার জন্মের প্রবেশদ্বার হচ্ছে মায়ের যোনি আর এ পথ বেয়ে পৃথিবীতে এসে তার বেঁচে থাকার একমাত্র উপাদানই ছিল তার মায়ের বুকের দুই মাংসপিণ্ড থেকে নিঃসৃত দুগ্ধ। তবেই বেড়ে ওঠা এ ছেলের মগজে যৌনতার অনুভূতি ক্রিয়াশীল হওয়া শুরু হলে সে নারী চরিত্রটিকে প্রেমের দৃষ্টিতে আবিষ্কার করার চেষ্টা করবে। ভালোবেসে কাছে টানতে চাইবে, যৌনোন্মাদ হয়ে আক্রমণ করে বসবে না। সন্তান গড়ে তুলতে এক্ষেত্রে মায়েদেরই সচেতন হতে হবে। বাবাদের সচেতনতা হবে সন্তানের মা’কে সন্মান করার মধ্য দিয়ে। এ জগতে সকল সন্তানই মা’কে সর্বাপেক্ষা বেশি ভালোবাসে। হতে পারে এর কারণ মায়ের গর্ভ, যার সাথে সন্তানের নাড়ীর সম্পর্ক। এরপর আছে মায়ের স্তন্য পানের সম্পর্ক।
তারপর যা বেশি ভূমিকা রাখে তাহলো, সন্তানের বেড়ে ওঠাকালীন তার মায়ের সাথে বাবার সম্পর্ক। এই সম্পর্কই পরবর্তীতে সন্তানের মানসিক বিকাশে সর্বাধিক ভূমিকা রাখে। পিতা-মাতার প্রেমময় সম্পর্ক সন্তানের মাঝে মানবিক গুনাবলীর বিকাশ লাভে ভূমিকা রাখে। আর বিপরীতে বিপরীতই হয়। সেই সন্তানটাই সভ্য হয়ে গড়ে ওঠে, যার মা-বাবা প্রেমময় জীবন যাপন করে। আর যে সন্তান বেড়ে ওঠা কালীন তার মা-বাবার মধ্যে দূরত্ব অনুভব করে সে হয়তো এক্ষেত্রে কিছু বলতে পারে না, কিন্তু ভেতরে যন্ত্রণাবোধ করে খুব। এই অস্থিরতা তাকে বিগড়ে দেয়। আবার মা-বাবার একের সাথে অন্যের ঝগড়া-বিবাদে তার ভেতরের সুরিপুকে ছাপিয়ে কুরিপু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যে সন্তান এ অনুভবে বেড়ে ওঠে যে, তার পিতা (অথবা মাতা) তার মাতা (অথবা পিতা) কে অসন্মান বা অবজ্ঞা করছে, শিশুকাল থেকে সেটা তার মনে প্রভাব ফেলতে ফেলতে স্থায়ী রূপ লাভ করে। পিতা-মাতার জীবন সায়াহ্নে এসে সন্তানের প্রকাশে এরই প্রতিফলন ঘটে চলে। কারণ জগতটাই যে কর্মফলের চক্রে ঘূর্ণায়মান।
এককথায়, শিশুর সুপ্ত মস্তিষ্কে যেভাবে ধারণা বপন করা হয় সেভাবেই পরবর্তী জীবনে এর প্রতিফলন ঘটে। আবার ভুল ধারণার বীজ বপন করে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবনে এসে যখন তার চিন্তার দুয়ার খুলে যায় আর ভিন্ন উপলব্ধির সৃষ্টি হয়, অনেক মানুষই তখন বিভ্রান্তির বেড়াজালে পড়ে কূলকিনারাহীন হয়। বর্তমান বিভ্রান্ত প্রজন্মের সৃষ্টি এভাবেই। খুব কম মানুষই সত্য উদঘাটনে সঠিক পথে ফিরতে পারে।
প্রজন্মকে সঠিক পথে রাখতে তাই মা-বাবার পরে শিক্ষাঙ্গন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর তাই শিক্ষাঙ্গনের সঠিক শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারের কঠিন নজরদারি আবশ্যক।
শিক্ষাঙ্গনের বাইরে যে প্রকৃতির পাঠ, এটা নিয়ন্ত্রণ মানুষের কম্ম নয়। বরং এটার আদলেই মানুষকে চলতে হবে। প্রকৃতিবিরুদ্ধ ভুল শিক্ষা তাই বিভ্রান্ত প্রজন্মের জন্মদাতা।
৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
শিশু বেড়ে ওঠে বাবা মায়ের আশ্রয়ে। সন্তান প্রথম শিক্ষাটা এখানেই পায়। এই শিক্ষা বড় হবার পরেও সে গ্রুহন করে পরিবার থেকেই। এরপর শিক্ষাঙ্গন এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। দুঃখের কথা এই যে এর কোনোটিই একজন শিশুকে মানুষ হবার উপযুক্ত পরিবেশ নয় আজকাল। বিভিন্ন ভাবে সে নেগেটিভ ধারণায় আঁটকে যেতে থাকে, যা থেকে সে আর ফিরতে পারেন।
চমৎকার একটি বিষয়ে লেখা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
নিয়মিত লিখুন এখানে।
শুভ কামনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ। লেখাটি ভেতরের তাড়না থেকে আসে, প্ল্যানমাফিক লেখা হয়ে ওঠে না। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাব।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পরিবার পরিবেশ এখন কোনটাই অনুকূল নয়। তবুও চেষ্টা করতে হবে। অসাধারণ শিক্ষনীয় পোষ্ট দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
নিয়মিত লিখুন!!!শুভ কামনা।।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এজন্য নাগরিক সচেতনতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তবতা দিয়ে সন্তানকে লালন করতে হবে। আজকাল মা-বাবা অতি আবেগে আপ্লূত থাকেন বলে সন্তানরা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার সুযোগ নেয়। নীতিগত প্রশ্নে স্থির থাকলেই কেবল সন্তানটিও জানবে তার পথ কোনটি।
আরজু মুক্তা
সবকিছুই পরিবার থেকেই শুরু হয়। সাথে পরিবেশ, স্কুলের কাউন্সিলিং এবং শিক্ষকদের ভুমিকাও জরুরি।
এ ধরণের সূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে আরও লিখুন।
শুভ কামনা
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পরিবার, সমাজ আমাদের সবথেকে বড় শিক্ষাক্ষেত্র কিন্তু আমরা এখান থেকে যে শিক্ষা পাচ্ছি তা আমাদের জন্য পরিপূর্ণ নয়, শুদ্ধ নয়। সমস্ত ব্যবস্থাটাকে গড়ে তুলতে হবে নতুন আঙ্গিকে কিন্তু সেই মানের মানুষের বড় অভাব। আমরা সবাই ভালোটা চাই কিন্তু তারজন্য যে পরিশ্রম, ধৈর্য্য, মনোবল থাকা জরুরী সেটা আমাদের কারো মধ্যেই নেই। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
হালিমা আক্তার
একটি শিশু প্রথমে শিক্ষা লাভ করে পরিবার থেকে। পরিবারের অনেক কিছুই তাকে প্রভাবিত করে। তাই পরিবার থেকে তাকে আচরণ বিধি শেখাতে হবে। পাশাপাশি স্কুলে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। শুভ কামনা অবিরাম।