
থমকে যাওয়া সময় ( খো লা চি ঠি)
অনেকদিন থেকে ভাবছি তোমায় কিছু লিখি। কিন্তু কিছুতেই লেখা হয়ে ওঠেনা অসুস্থতার জন্য।ভাবনায় অনেক্ কিছু এসে যায়। চলমান যান্ত্রিকতার যুগে সব মানুষগুলো যেন বেশী যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে।আর হবেই না কেন? কেউ আর কারো জন্য চাতকের মত অপেক্ষায় থাকেনা।
আগের মত ডাকঘর নেই। রানার বা ডাক হরকরা এখন তো মানুষের দ্বারে দ্বারে দৌড়ায় না। প্রিয়জনের কোনো চিঠি এখন আর সযতনে জমায় না নিরাপদ স্থানে। প্রযুক্তি আবৃত মানুষগুলো সব সময় কথা বলে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে। যুগ দিনকে দিন এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে, মহাকালকে ছুঁতে চায়।
এই ডিজিটাল যুগে একটি এনালক যুগের লেখা তোমায় লিখছি। মেঠোপথ পেরিয়ে মোড় ঘুরলেই একটি গাছ। পথিকেরা যাওয়া — আসার মাঝে খানিকটা জিরিয়ে নেয় ক্লান্ত দেহ। ধরে নাও আমিও ক্লান্ত পথিকের একজন গাছের গোড়ায় বসে। ঝরাপাতার মত শব্দ ঝরাই সাদা কাগজে। আচ্ছা, তুমি এই এনালক যুগের জং ধরা লেখার টুকরো কাগজ সযতনে রাখবে?
আগে তো সারাদিনের ব্যস্ততায় সময়গুলো তাড়া করে ফিরতো তোমার সাথে কাটানো ফেরারী স্মৃতি গুলো।
সেই সজীব সকাল, ঘুঘু ডাকা দুপুর, সিঁদুর রঙের বিকেল মনে পড়ে যায়। এখন এই প্রহরগুলো পার হয় হাসপাতালের ধবধবে সাদা বিছানায় বেলা — অবেলায়।
ঝুল বারান্দায় গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আকাশ দেখতাম, সেটা কমে গিয়েছে অসুস্থতার বেড়াজালে ।
জানিনা তুমি কোথায় আছো? কেমন আছো?
এটা তো বাস্তব আর মস্তিষ্কের প্রশ্ন হয়ে গেল। তবে আবেগীমন জানে তুমি কোথায় ও কেমন আছো! তোমার অস্তিত্ব জেগে আছে আমার মনের সকল সীমানাজুড়ে, প্লাবিত প্রেমে।
হঠাৎ সেদিন চোখের কোণে শীতলতা জাগলো।হয়তো বিরহী শিশির কনা অজান্তে বারি ঝরার উপক্রম। কিছু অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। সাঁঝের ধুপছায়ে নীড়ে ফেরা পাখিদের মেলা দেখি। অতীতের ফেরারী সময়ে হারিয়ে যাই সবুজ শ্যামলী ময়ে।
ভরা পূর্নিমায় চারিদিক জ্যোস্না ঝলমল করছে। চাঁদ ডেকে বলে যায়, আমায় দেখছে মায়াবী আলোয়। আমিও তাকে দেখি। এখনো স্বপ্নগুলো তাড়া করে ফিরে।আচমকা যদি দেখা পাও শান বাঁধানো ঘাটে কলসি কাখে নিয়ে দাঁড়িয়ে —- তখন কি উঁকি দিবে আমার মনের অন্তপুরে?
যেখানে, যেভাবে থাকো,ভাল থেকো।ভালোবাসার নিটোল স্মৃতি নিয়ে নিজস্ব অস্তিত্বে।
এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম সৈকতে অনুভবের ছোঁয়ায়।
দুঃ খ আমার সাজঘর,কান্না আমার বাসর,
স্বপ্নের বুনন গুলি ডেকে বলে সময়ের প্রহর।
তোমার দেখা স্বপ্ন গুলো নীল আকাশে ছেড়ে দিলাম,
আমি না হয় অবুঝ হলাম তোমার মাঝে মন হারালাম।
আমি একাকিত্ব শূন্য বারান্দায় বসে, ক্লন্তিহীন ভাবনার তাঁত বুনে যাব।দূর থেকে দেবদারু গাছ আমায় চেয়ে দেখবে। সবুজ পাতায়, বৃষ্টির ফোঁটায় মধুর আলিংগন। আমিও মুগ্ধতায় চেয়ে চেয়ে উপভোগ করবো । যদি হয় ঝুম বৃষ্টির সুমধুর ক্ষণ, দু’ হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির জল ছোব।
তুমি কি তখনো দূর থেকে আমায় দেখবে?
শব্দের কথামালার বৃষ্টি না হয় আজ বন্ধ রাখি।
ভালোবাসা ও অভিমানের সারাংশ টুকু,নীল সাদা মেঘের কাছে, নীল খামে ভাসিয়ে দিব স্পর্শ ও সীমারেখা ছাড়িয়ে।
–অসমাপ্ত ডাইরি—-।
১২টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
বাস্তবতার মিল আছে আপু ———-
উর্বশী
আলমগীর সরকার লিটন ভাই।
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ।
দারুন বলেছেন।সময় করে পড়ার জন্য অফুরান শুভ কামনা রইলো। ভাল থাকুন।
মোঃ মজিবর রহমান
জানিনা তুমি কোথায় আছো? কেমন আছো? বাক্যটি মধুর মনে হই।
অভিভুত! অপুর্ব কাব্যময় যাদুর ছোয়ায় লিখা মনে গেল গেঁথে, তুমি থাক যদি পাশে। অনেক দিন পর সুন্দর পরিভাষায় প্রেমের রহস্যঘেরা মন রাঙ্গিয়ে যাওয়া লিখা পড়লাম। ব্যাথা বেদনা জ্বালা যন্ত্রনা তাই প্রেম অতীত জাগানিয়া।
শুভেচ্ছা রইল ভালোবাসার।
উর্বশী
মোঃ মজিবর রহমান ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
চমৎকার মন্তব্য করেছেন। পড়ে মনে হলো আর এক চিঠির উপকরণ খুঁজে পেলাম।বেশ ভাল লাগলো। খুব ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
হালিম নজরুল
চমৎকার।
কোথায় কোথাও পত্রসাহিত্য।
কোথাও আবার কবিতার মাধুর্য।
ভাল লাগল বেশ।
উর্বশী
হালিম নজরুল ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সময় করে পড়ার ও ভাল লাগার জন্য অজস্র শুভকামনা। এমন মন্তব্য লেখার সাহস যোগানোর সহযোগিতা করে, দীর্ঘ জীবি হন, ভাল থাকুন সব সময়।
আরজু মুক্তা
দুইবার পড়লাম। কাব্য কথার মাধুর্যে হারিয়ে গেলাম।
না বলা অনেক কিছুই আমরা মনে মনে বলি অথবা প্রকৃতির সাথে শেয়ার করি। অনেক সময় প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে এমন আবেগময় হয়েও পথ ফুরাবার আগেই দুজনে ভাগ হয়ে যাই। মন বোঝা দায়। কেউ অপেক্ষা করে। কেউ্ হারিয়ে যায়।
ভালো লাগলো। শুভ কামনা
প্রিয়তে দিলাম।
উর্বশী
আরজু মুক্তা আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইলো।
সময় নিয়ে দুইবার পড়েছেন আপনি এটা তো দারুন প্রাপ্তি আমার।এরকম মন্তব্য লেখার পরিধি বাড়িয়ে দেয় পাশাপাশি সাহস যোগায়।সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভাল ও নিরাপদে থাকুন শুভ কামনা সব সময়।
ছাইরাছ হেলাল
চিঠিতে কবিতার স্বাদ,
এমন ডাইরি অসমাপ্ত থাকুক সেটি চাই, তবে আরও আরও সহ।
উর্বশী
ছাইরাছ হেলাল ভাইয়া,
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ সালাম।
সময় করে পড়া ও সুন্দর মন্তব্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এমন মন্তব্য লেখার সাহস যোগানোর সহযোগিতা করে। খুব ভাল থাকুন, দীর্ঘ জীবি হন শুভ কামনা সব সময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারন চিঠি ও কবিতা মিলেমিশে মোহনীয়। এমন করেই সমৃদ্ধ করুন লিখে লিখে। আমরা পডি ও শিখি। চিঠি একসময় বিরাট আগ্রহের বিষয় ছিলো পড়তেও ভালো লাগতো। আর এখন মযাসেন্জারের বিরক্তিকর যুগ!
শুভ কামনা আপু। ভালো থাকবেন।
উর্বশী
রোকসানা খন্দকার রুকু আপু,
আন্তরিক ধন্যবাদ সহ ভালোবাসা রইলো।
সময় করে পড়া ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি তো আপনাদের সবার কাচে থেকেই শিখছি এখনো। আমার শিক্ষানবিশ সময় চলছে তাই মনে করি।তবে লেখাকে নরুন রুপদান দেয়ার চেষ্টা করছি মাত্র আপু।ভুলত্রুটি ধিরিয়ে দিবেন বলে আশা রাখি।
খুব ভাল থাকুন শুভ কামনা সব সময়।