উপকূল বা সৈকতের পাখি খোঁজার নেশায় নিঝুমদ্বীপের দমার চরে নৌকায় ঘুরছি। হরেক প্রজাতির সৈকতের পাখির দেখা পেলাম। মূলত এবারের সফর ছিলো Indian skimmer বা পানিকাটা পাখির ছবি তোলার জন্য। দমার চরে পাখির ছবি তুলে বিরবিরিয়া চরের দিকে ছুটলাম। তখন নদীতে ভাটা চলছে। ভাটায় পানি কমায় নদীটি একটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক প্রজাতির হাঁস পাখির ছবি তুললাম। কিছুটা পথ সামনে গিয়ে দেখলাম পাখিটি একটি সিমেন্টের খুঁটির উপর বসে আছে। ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে দেখতে পেলাম সাপের মতন কি যেন একটা পায়ের নখের থাবায় আঁটকে আছে। কিছুটা সামনে গেলাম। পাখিটি মনের সুখে তার শিকার করা খাদ্য বস্তুটি ঠুঁকরিয়ে ঠুঁকরিয়ে খাচ্ছে। মাঝিকে নৌকা ভিড়াতে বললাম। পছন্দ মতন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পাখিটির বেশ কিছু ছবি তুললাম।
এতক্ষন যে পাখিটির কথা বলছিলাম সেটি আমাদের দেশীয় চিল অ্যাক্সিপিট্রিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৭৬-৮৪ সে.মি. দৈর্ঘের ও ৬০০ গ্রাম ওজনের মাঝারি আকারের শিকারী শঙ্খচিল পাখি। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Haliastur indus (Boddaert, 1783)
শঙ্খের মত সাদা এদের মাথা, ঘাড়, বুক, পেটের তলা’র পালক যার উপর মরিচা ধরা খাড়া ছোট রেখা থাকে এবং কেবল প্রাথমিক পালক কাল; ঠোঁট ছোট, লেজ সবসময় গোলাকার ডগাযুক্ত; ডানায় থাকে লাল, সর-রং, বাদামি এবং কাল আর দেহের নিচের দিক বহু রেখা সংবলিত; সবসময় লেজ ও ডানা একই দৈর্ঘ্যের। তাই বুঝি এদের নাম হয়েছে শঙ্খচিল! কিন্তু ডানা দু’টি ও শরীরের অন্যান্য অংশ খয়েরী। শঙ্খচিলের গড় দৈর্ঘ্য ৪৮ সে.মি.। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহেরা অভিন্ন।
শঙ্খচিল উপকূলীয় এলাকা, সবুজবন, জলাভূমি,প্লাবিত ধান ক্ষেত, পুকুর, মেহনা, প্রোতাশ্রয়, জলাধার, নদী, আবর্জনার স্তুপ ও জেলেপল্লীতে বিচরন করে। সচারচর একা, জোড়ায় বা ছোট ছোট দলে থাকে। কোথাও বসে বা আকাশে বৃত্তকারে উড়ে এরা ভূমিতে আহার খুঁজে। পায়ের লম্বা নখর দিয়ে এরা শিকার করে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, কাঁকড়া, সাপ ব্যাঙ, টিকটিকি পোকা, মুরগীর বাচ্চা সহ সব ধরনের উচ্ছিষ্ট খাবার। এরা পরিবেশ দূষনমুক্ত রাখতে সহায়ক।
ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে বড় গাছে ডালপালা ও সবুজ পাতা বিছিয়ে অগোছালো মাচার মতন বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখিটি সাদা রঙের ৩-৪টি ডিম পাড়ে। উভয়ে ডিমে তা দেয়। ২৬-২৭ দিনে ডিম থেকে ছানা বের হয়। উভয়ে ছানাদের পরিচর্যা করে থাকে।
শঙ্খচিল বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের সব জায়গায় বনপ্রান্তে ও লোকলয়ে পাওয়া যায়। ইহা ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃত রয়েছে।
শঙ্খচিল দেশে ও বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রানী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
আপনার ছবি তোলার হাত অসাধারন। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার যাকে বলে। পাখির পেছনে জীবন অতিবাহিত করছেন। আহা….. বিলুপ্ত প্রায় বন্য প্রাণী। তার মধ্যে এই সেই শঙ্খচিল। দারুন।
অনেক অজানারে জানার সুযোগ করে দিচ্ছেন।সাধুবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সাবধানে থাকুন।শুভ কামনা।
১২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ছবিগুলো অসাধারণ লেগেছে ভাইয়া। শঙ্খচিলের রূপে, রঙে মুগ্ধ হলাম। কত অসাধ্যকে সাধন করছেন। ঈশ্বর সহায় হোন আরো অনেক অনেক পাখির ছবি তোলার জন্য। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা অবিরাম
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই, কবি জীবনান্দ দাশের এই সেই শঙ্খচিল।
আপনিও ভালো থাকুন এই মহামারী থেকে।
শুভেচ্ছা নিবেন।
বন্যা লিপি
আপনার ছবি তোলার হাত অসাধারন। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার যাকে বলে। পাখির পেছনে জীবন অতিবাহিত করছেন। আহা….. বিলুপ্ত প্রায় বন্য প্রাণী। তার মধ্যে এই সেই শঙ্খচিল। দারুন।
অনেক অজানারে জানার সুযোগ করে দিচ্ছেন।সাধুবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সাবধানে থাকুন।শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনিও ভালো থাকবেন বফু।
হালিমা আক্তার
খুবই তথ্যবহুল লেখা। অজানার ভান্ডার থেকে নতুন কিছু জানতে পারলাম।
শামীম চৌধুরী
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ কামনা রইলো।
তৌহিদুল ইসলাম
দেশীয় চিল দেখতেও কিন্তু অসাধারণ। লেখায় অনেক তথ্য নতুন করে জানলাম। সুন্দর পোষ্ট ভাই।
শুভকামনা জানবেন।
শামীম চৌধুরী
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান, তোমার জন্যও রইলো শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
শঙ্খ চিল শালিকের বেশে….. আবার আসিবো ফিরে।
এই প্রথম দেখলাম এবং জানলাম।
শুভ কামনা ভাই
শামীম চৌধুরী
জ্বি আপু, এই সেই জীবনানন্দ দাশের শঙখচিল।
শুভেচ্ছা রইলো আপু।
জিসান শা ইকরাম
শঙ্খচিল সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।
পাখির ছবি তোলার জন্য কত যে ভ্রমন আর কস্ট করেছেন, তাই ভাবছি।
অনেক অনেক শুভ কামনা ভাই।
শামীম চৌধুরী
কষ্টতো বটে,তবে এই কষ্টে প্রচুর আনন্দ পাই।ভালো থাকবেন ভাই।