
“দ্যা জাপানিজ ওয়াইফ” এটা কোলকাতার ছবি। ছবিটা নির্মাণ করার জন্য তিনটা ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। জাপানি, ইংরেজি এবং বাংলা। ছবিটির শুটিং হয় ২০০৭ সালে। মুক্তি পায় ২০১০ সালে। এটি একটি রোমান্টিক মুভি। পরিচালক অপর্ণা সেন। কাহিনী লিখেছেন কুনাল বসু।
স্নেহময় একজন গ্রামের স্কুল শিক্ষক। যিনি সুন্দরবনের একটি গ্রামে থাকেন। একটি পত্রিকায় ; মিয়াগি নামের একজন জাপানি মেয়ে কলমি বন্ধু হতে চায় , এমন একজনকে সে চিঠি পাঠায়। ভাঙা ভাঙা ইংলিশে। প্রতি সপ্তাহে চিঠির আদান প্রদানে তাদের মাঝে দেখা দেয়, অদৃশ্য প্রেম। অদৃশ্য ভালোবাসা। কারণ তাদের কখনোই দেখা হয় না। দুটি দেশ, দুটি ভাষা, দুটি জাতি। প্রকৃত ভালোবাসার একটি উদাহরণ এই সিনেমাটি। যা এখন বিস্ময়কর মনে হয়।
সিনেমা দেখলে বোঝা যায়, স্নেহময় হচ্ছে পয়েন্ট অভ ভিউ। স্নেহময় একটি চিঠিতে মিয়াগিকে বলে, ” আমার কোন বন্ধু নেই এখানে। হয়তো লাজুকতার কারণে আমি সবার সাথে কথা বলিনা। তুমিই একমাত্র বন্ধু, যার সাথে আমার ভাবের আদান প্রদান হয়। এবং তোমাকে চিঠি পাঠাতে যে খরচ হয় ; তা পুষিয়ে নিতে আমি টিউশনি করাচ্ছি।” স্নেহময় ও মিয়াগি চিঠি আদান প্রদানের মাঝে বিয়ে করে।
সন্ধ্যা নামের এক চরিত্রের সাথে স্নেহময়ের বিয়ের কথা থাকলেও সে সুযোগ নেয়নি। চমৎকার ভাবে স্নেহময় চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।
সিনেমাটা দেখতে দেখতে হয়তো আমরা ধরে নিবো যে মিয়াগি মারা যাবে এবং তাদের কখনো দেখা হবে না। চিঠির আদান প্রদানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, মিয়াগির ক্যান্সার। স্নেহময় হোমিও, কবিরাজ, এলোপ্যাথি সব ডাক্তারের সঙ্গে তার বিষয়ে কথা বলে। এই সেই নায়ক যে নায়িকাকে না দেখে প্রবল ভালোবাসার কারণে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওষুধ খুঁজতে থাকে। এটা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ডাক্তার যখন বলে, নাড়ী না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়। তখন সব ব্যর্থতা ঝড়ের কবলে পরে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্নেহময় মারা যায়। গল্পের শেষে দেখা যায়, মিয়াগি বিধবা ও বাঙালি নারীর বেশে স্নেহময়ের বাড়িতে আসে। মুভিটি না দেখলে এমন অভিব্যক্তি বোঝানো সম্ভব নয়।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অসাধারণ। তিন জায়গা অর্থাৎ জাপান দেখালে জাপানি মিউজিক। কোলকাতা বা সুন্দরবন দেখালে তেমন মিউজিক। এই সিনেমাটি দেখতে দেখতে দর্শকের মাইন্ডের চেন্জ হবে ক্ষণে ক্ষণে। দর্শক তার আকর্ষণ ধরে রাখবে। ভাববে, এই বুঝি স্নেহময়, সন্ধ্যাকে বিয়ে করে। ছোট ছোট অভিব্যক্তি কিন্তু অসম্ভব সত্য।
তারা দুজনে ইংরেজি ভাষায় কম্ফোর্টেবল নয় তবুও তাদের রোমান্টিকতার কমতি ছিলো না। মিয়াগি একবার পোলারয়েড ক্যামেরা পাঠিয়েছিলো। স্নেহময়, তার পরিবার, তার গ্রাম এবং সৌন্দর্য দেখবে বলে। ওখানে এক চিঠিতে লিখেছিলো, ” আমি অনেক খুঁজেও বাংলা ম্যানুয়াল পাইনি, তুমি ইংরেজি পড়ে বুঝে নিও।” কমিউনিকেশন করার প্যাটার্ন খুবই উপভোগ্য। নিষ্পাপ হৃদয়ের বিশ্বস্ত ভালোবাসা। কী গভীর ভালোবাসা ! স্বপ্ন এবং বাস্তবতা, ঘণিষ্ঠতা, কবিতার মতো ভালোলাগা, তাদের অন্তরের স্নিগ্ধতা সব খুঁজে পাওয়া যাবে এই সিনেমায়।
গল্পটি হচ্ছে , নিয়তি , ভাগ্য , শক্তি , ভঙ্গুরতা, বন্ধুত্বতা এবং আবেগের সংমিশ্রণ।
গল্পের শেষ দেখে আপনি নির্বাক হলেও অস্ফুট স্বরে বলবেন, ” What a love story ! Love will remain thousand years. ”
আমি তো প্রত্যাশা করি, দর্শক মুভিটি দেখে ; আর একবার দেখবে।
মুভিটির লিংক :
২৬টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
মুভি যা দেখেছি সবই ছোটবেলায়। এরপর সম্পুর্ন কোন মুভি খুব একটা দেখা হয়নি। কেন জানি আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। আপনার মুভি রিভিউ পড়ার পর এই গল্পটা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। সময় হাতে আসলে সবার প্রথমে আমি এই মুভিটাই দেখবো।
বরাবরের মতোই সুন্দর উপস্থাপনা।
আরজু মুক্তা
আমারও ধৈর্য কম। এক মুভি দেখতে ৩/৪ দিন লাগে। রাত ১২ টা থেকে ১ টার মাঝে একটু একটু করে দেখি।
শুভ কামনা সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমি দেখেছি এককথায় অসাধারণ! তবে আপনার বর্নণায় আর একবার দেখতে হবে বলে মন হচ্ছে।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
আমি অনেকবার দেখেছি। এবং প্রতিবারেই ভালোলাগা কাজ করেছে।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য
পপি তালুকদার
বর্ণনা শুনে মুভি টা দেখার ইচ্ছে পোষণ করছি।
আরজু মুক্তা
জি, অবশ্যই।
ধন্যবাদ আপনাকে
তৌহিদ
মুভিটি দেখেছি এবং ভাষাগত সমস্যার কারনে প্রেমাবেগ কখনো নিগৃহীত হতে পারেনা এটাই উপজীব্য লেগেছে আমার কাছে।
রিভিউ ভালো হয়েছে। শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
আমি প্রচুর ছবি দেখি, এ বিষয়ে সামান্য পড়াশোনার সুযোগ হয়েছে,
আপনি ছবি দেখেন/লেখেন যেনে ভাল লাগছে, এটি আমার দেখা ছবি, রাহুল বোস কে পছন্দ করি।
আপনি চাইলে ভাল রিভিউ লিখতে পারবেন, চালু রাখুন, তাহলে আমিও একটু কথা বলতে পারি ছবি নিয়ে।
অনেকদিন কথা বলা হয়নি ছবি নিয়ে।
আরজু মুক্তা
আমার রিভিও লিখতে ভালো লাগে। আর মুভি দেখাটা ও। সেই সাথে গানও।
মুভিটাকে জীবন ও সমাজের প্রতিফলন মনে হয়। শেখাও যায়।
শুভকামনা
আশরাফুল হক মহিন
খুবই ভালো লাগছে
দেখার ইচ্ছে হচ্ছে এখন
আরজু মুক্তা
তো দেখে ফেলেন।
শুভ কামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমি এখন আর মুভি দেখিনা। সেদিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর ‘বেলাশেষে’ দেখলাম। আপনার বর্ণনায় মুভিটির প্রতি ভালোলাগা কাজ করেছে। আশা করি সময় বের করে দেখবো। রাহুল বোসের অভিনয় ভালো লাগে। ছোট্ট একটা ভুল হয়েছে পরিচালকের নামের বানান ঠিক আসেনি। অপর্ণা সেন হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
আরজু মুক্তা
মুভি বলতে আমার তিন ঘণ্টা থেকে ১০ মিনিট যাই হোক। কাহিনী ভালো লাগলেই দেখবো। হয়তো রাত জেগে।
শুভ কামনা সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
“saying a lot without underlining too much,”
ছবিটি নিয়ে এই মন্তব্যটি দেখালাম, এই ছবিটি সহ রাহুলের আর ও কিছু দেখব বোলে ঠিক করেছি।
একটি কাজ করা যেতে পারে, আপনই বা আমরা একটি ছবি নির্বাচন করলাম, সাত দিন পর একটি রিভিউ তে সবাই আলোচনা করতে পারি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার আইডিয়া ভাইয়া। এভাবে মুভি দেখা হলো আড্ডাও হলো। রথ দেখা কলা বেচা দুটোই হলো। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি আইডিয়া দেবার জন্য
আরজু মুক্তা
দিদি, এবার মুভি না দেখে যাবেন কই?
ছাইরাছ হেলাল
মনে থাকে যেন, যা ভুলো মন আমাদের। মুভি দেখা চলবে।
আরজু মুক্তা
এটা প্লেটোনিক লাভের একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
আমি তো এক পায়ে রাজি। সবাই সিদ্ধান্ত নেন। আমি লিখবো।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি মুভির নাম দিন।
খাদিজাতুল কুবরা
লোভনীয় বর্ণনা পড়ে ছবিটি দেখবো। যদিও মুভি দেখার সুযোগ পাইনা।
আপুর ন হন্যতে বইটি কিনে পড়েছিলাম।
আরজু মুক্তা
শুনে ভালো লাগলো। মুভিটিও ভালো। দেখে নিয়েন।
শুভ কামনা
শামীনুল হক হীরা
একবার দেখতে বসেছিলাম একটু সমস্যার কারণে দেখা হয়নি,,তো দেখবো।।শুভকামনা রইল।।
আরজু মুক্তা
জি অবশ্যই।
শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
মুভিটি আমি দেখেছি। অপর্না সেনের এটি একটি অসাধারন মুভি। এই মুভির রিভিউ লিখে মুভিটিকে প্রকাশ করা যাবে না আসলে। মুভিটি মাস্ট ওয়াচ মুভি বলা যায়। শ্নেহময় এর অভিনয় মনে রাখার মত।
তুমি সাহস করে এর রিভিউ লিখেছ, এজন্য তোমায় ধন্যবাদ।
আরো মুভির রিভিউ চাই।
পোস্টের শেষে মুভির লিংক দিলে পাঠকরা উপকৃত হবে।
আরজু মুক্তা
জি এখন থেকে লিংক দেবো।
মুভিটা আমি ৭ বার দেখেছি। কীভাবে লিখবো? কীভাবে উপস্থাপন করবো? অনেক ভেবে এতোটুকু লেখা।
আপনাদের উৎসাহ পেলে চালু থাকবে এমন রিভিউ।
শুভ কামনা সবসময়